আল্লাহর সত্ত্বাগত নাম

আসমাউল হুসনা হচ্ছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া-তা’আলার বতকতময় নামসমূহ, যা হচ্ছে ইলমে তাওহীদের অর্ধেক। তাওহীদ সংক্রান্ত জ্ঞান দুইভাগে বিভক্ত। একভাগ হচ্ছে, আল্লাহ সম্বন্ধে জানা এবং দ্বিতীয় ভাগ হচ্ছে, আল্লাহর ইবাদত করা। আল্লাহ সম্বন্ধে জানার সবচেয়ে উত্তম উপায় হচ্ছে উপলব্ধিসহ আল্লাহর পবিত্র নামসমূহ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া-তা’আলা অসংখ্যবার আমাদেরকে তাঁর মহামহিমান্বিত সত্ত্বা সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন- জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু। অন্যস্থানে বলেছেন, জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর। আল্লাহ সম্বন্ধে যথাযথ জ্ঞানলাভ করার মধ্য দিয়েই আল্লাহর হামদ তথা প্রশংসা করা, সানা তথা গুণাবলী বর্ণনা করা, শুকর তথা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং তাকওয়া তথা খোদাভীতি অবলম্বন করা সম্ভব হয়। বস্তুত রাসুলুল্লাহ (স.) ব্যতীত অন্য কোন মানুষের পক্ষে আল্লাহ সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞানলাভ করা সম্ভব নয় এবং পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর প্রশংসা করা, গুণাবলী বর্ণনা করা, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং তাকওয়া অবলম্বন করাও সম্ভব নয়। তথাপি রাসুলুল্লাহ (স.) তাহাজ্জুদের নামাজে সেজদারত অবস্থায় কায়মনোবাক্যে নিবেদন করতেন- হে আল্লাহ, আমার পক্ষে তোমার গুণাবলীর যথাযথ প্রশংসা করা সম্ভব নয়। তুমি তেমনি, যেমন তুমি নিজের গুণাবলী বর্ণনা করেছ। (সহিহ বুখারি)

আল্লাহ বলেছেন- সুন্দর নামসমূহ আল্লাহর। তোমরা সেসব নাম ধরে আল্লাহকে আহ্বান করো।
আল্লাহর পবিত্র নাম এবং গুণাবলী বর্ণনা করা আল্লাহ-ভীতি এবং আল্লাহ-প্রীতির উৎকৃষ্টতম নিদর্শন। এক সাহাবি প্রতি রাকাতে সুরা ইখলাস পড়তেন। জিজ্ঞেস করা হলে বললেন- কারণ এটি রহমানের (আল্লাহর) গুণবাচক সুরা এবং আমি তাঁর গুণাবলী তিলাওয়াত করতে ভালবাসি। (সহিহ বুখারি)

আল্লাহর সত্ত্বাগত নাম : “আল্লাহ” শব্দটি আমাদের সৃষ্টিকর্তার সবচেয়ে প্রচলিত নাম। কুরআনুল কারীমে এ নামটি প্রায় ৩৫০০ বার ব্যবহৃত হয়েছে। সুপ্রাচীন ব্যাবিলনিয়ান সভ্যতার ম্যনুস্ক্রিপ্টে, ওল্ড এবং নিউ টেস্টামেন্টে (ইলোহ এবং ইলোহীন) আল্লাহ নামের সাদৃশ্য এড়ফ এর নাম পাওয়া যায়। কুরাইশরাও এ নাম জানত। সব সভ্যতায়ই আল্লাহ নামক এড়ফ ছিলেন সকল প্রভুদের প্রভু। তাঁর নিচে মানুষেরা বিভিন্ন মনগড়া ঝবসর এড়ফ এর অবতারণা করেছিল। কোন সভ্যতাই আল্লাহ নামক মহাপ্রভুর মূর্তি স্থাপন করেছে বলে জানা যায়নি। আল্লাহ নাম এসেছে “আলাহা” থেকে যার অর্থ পবিত্রতা, সাহায্য, দয়া ও শান্তি পাওয়ার জন্য যেদিকে মুখ ফেরানো হয়। সুতরাং আল্লাহ হচ্ছেন তিনি যার দিকে সবকিছু ফিরে যায়। ইমাম বায়যাবীর মতে, আল্লাহ শব্দটি এসেছে “আলিহা” নামক মূলশব্দ থেকে। কারো মতে আল্লাহ অর্থ উঁচুতে উত্থাপন। তবে, সবচেয়ে শক্তিশালী মত হচ্ছে আল্লাহ শব্দটি আলিহা-ইয়া’লাহু (বাব সামি’আ ইয়াসমা’উ) থেকে আগত যার অর্থ ইবাদত তথা উপাসনা করা। সুতরাং আল্লাহ হচ্ছেন তিনি, যিনি ইবাদত পাওয়ার একমাত্র যোগ্য। ইমাম শাফেয়ীর মতে, আল্লাহ একটি নাম (চৎড়ঢ়বৎ ঘড়ঁহ), যার কোন অর্থ নেই। এটি কেবল একটি বিশেষ নাম। আল্লাহ সমস্ত সুন্দর নামসমূহের সৃষ্টিকর্তা এবং তিনিই এসবের ধারক। হাদিসে ইঙ্গিত দানকারী ইসমে আজম তথা সৃষ্টিকর্তার সর্বপ্রধান নামের ব্যাপারে প্রণিধানযোগ্য দুটি মতামতের একটি হচ্ছে আল্লাহ এবং অপরটি আল-হায়্যুল কায়্যুম।

সবচেয়ে মহান এবং মৌলিক চারটি যিকরের প্রতিটির মধ্যে আল্লাহ শব্দের উল্লেখ রয়েছে। যথা- ১. সুবাহানাল্লাহ, ২. আলহামদুলিল্লাহ, ৩. আল্লাহু আকবার, ৪. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
আল্লাহ নামের বৈশিষ্ট্য : আল্লাহ নামটির কতিপয় বৈশিষ্ট্য হলো-
১. এ নামটি উচ্চারণ করতে অত্যন্ত সহজ, যেন ঠোটই নাড়ানোর প্রয়োজন হয়না।
২. আরবি শব্দের মধ্যকার “লাম” বর্ণের উপর তাশদীদ থাকলে কখনোই তা জোরালো (পুর) স্বরে উচ্চারণ হয়না বরং উচ্চারণ হয় ক্ষীণ (বারিক) স্বরে। একমাত্র আল্লাহ শব্দের সম্মানার্থে লাম এর উপর তাশদীদ থাকা সত্ত্বেও এর উচ্চারণ হবে তাফখীম (পুর) বা জোরালো। কেবল লাম এর পূর্বে কাসরা বা যের থাকলে উচ্চারণ ক্ষীণ হয়।
৩. কুরআনের ৩৩টির মতো আয়াত আল্লাহ শব্দ দ্বারা শুরু হয়েছে। এই নামটি ব্যতীত কেবল আল্লাহর গুণবাচক নাম রাহমান দ্বারাই কয়েকটি আয়াত শুরু হয়েছে। আল্লাহর অন্য কোন নাম দিয়ে কুরআনের আয়াত শুরু হয়নি।
৪. আল্লাহ নামটি থেকে একটি একটি করে হরফ বাদ দিয়ে গেলেও এটি অর্থপূর্ণ থাকে এবং এর অর্থ সেই মহান সত্ত্বার দিকেই প্রত্যাবর্তিত হয়।

এ নাম নিয়েই নবী-রাসুলগণের আগমন ঘটেছে। এ নাম নিয়েই কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে, এই নাম নিয়েই শরি’আহ প্রণীত হয়েছে। এ নামই ঈমান এবং এ নাম অস্বীকার করাই কুফর। এ নামের বরকতে জান্নাত এবং এ নামের অসন্তুষ্টিতেই জাহান্নাম। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া-তা’আলার মহিমান্বিত এ নামের সাথে সর্বদা আমাদের তাকওয়া ও ভালবাসার সম্পর্ক বজায় রাখুন। আমিন।

গল্পের বিষয়:
ইসলামিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত