নবী-রাসূল ও বিজ্ঞ-প্রাজ্ঞ ব্যক্তিগণ তিন (৩) সংখ্যা দ্বারা ধর্মীয় বা জীবন সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়াবলি এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন যা মানব জীবনে জানা ও কার্যে পরিণত করা একান্ত প্রয়োজন। ‘জানা ও জানানো’ নীতিরই ফসল নিম্নের উপস্থাপনা।
৩ টি বিষয় আমলের দূর্গ-
১. এরূপ বিশ^াস রাখা যে, আমলের তাওফিক আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়। (যাতে গর্ব ও অহংকার না জন্মে)।
২. প্রতিটি আমল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে করা। (যাতে প্রবৃত্তির চাহিদা বাধাপ্রাপ্ত হয়)।
৩. আমলের প্রতিদান ও বিনিময় শুধুমাত্র আল্লাহর কাছেই চাওয়া। (যাতে অন্তর থেকে রিয়া ও লোভ দূরীভুত হয়ে যায়।
তিনটি বিষয় ধ্বংসের কারণ-
যখন আল্লাহ পাক কোন বান্দাহকে ধ্বংস করতে ইচ্ছা করেন, তখন তার মধ্যে তিনটি অবস্থার সৃষ্টি করেন। যেমন-
০১. তাকে ইলম দান করেন, কিন্তু তদনুযায়ী আমলের তাওফিক প্রদান করেন না।
০২. নেককারদের সংস্পর্শে থাকার সুযোগ দান করেন, কিন্তু তাঁদের মর্যাদা অনুধাবন করার শক্তি এবং তাঁদের সম্মান করার শক্তি অন্তর থেকে ছিনিয়ে নেন।
০৩. নেককাজ করার সুযোগ দেন, কিন্তু এখলাছ থেকে বঞ্চিত রাখেন। আল্লামা ফকীহ আবুল লেইছ সমরকন্দী রহ. বলেন, এগুলো বদনিয়ত এবং আত্মার অপবিত্রতার ফলেই হয়ে থাকে।
তিন ব্যক্তি সম্পর্কে আশ্চর্যবোধ-
হযরত আবুজর গিফারী (রাদ্বি.) বলেন-তিন ব্যক্তি সম্পর্কে আমার আশ্চর্যবোধ হয় এবং হাসি পায়-তারা হলেন,
০১. মৃত্যু পিছনে লেগে থাকার পরও যে ব্যক্তি পার্থিবতার আশাবাদী। অর্থাৎ স্বীয় চাহিদা পুরা করতে ব্যস্ত কিন্তু মৃত্যুর চিন্তা করে না।
০২. ঐ গাফিল ব্যক্তি যার সম্মুখে কিয়ামত উপস্থিত। অর্থাৎ কিয়ামত বিশ^াসী হওয়া সত্ত্বেও মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতির ব্যাপারে গাফিল।
০৩. যে ব্যক্তি মুখ ভরে হাসে অথচ খবর নেই যে, আল্লাহ পাক তার প্রতি সন্তুষ্ট না অসন্তুষ্ট।
আবু জর গিফারী (রাদ্বি.) বলেন, আরো তিনটি বিষয়ে আমার আশ্চর্যবোধ হয় এবং কান্না আসে। তা হলো-
০১. প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণের বিয়োগ।
০২. মৃত্যু (আমার ঈমানের সাথে হবে কি না)।
০৩. হাশরের মাঠে আমার আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হওয়া। যেহেতু আমি জানি না আমার জন্য ফয়সালা জান্নাতের হবে না জাহান্নামের হবে।
মনঃপুত তিনটি যুগ-
হযরত আবুদ দারদা (রাদ্বি) বলেন-
০১. আমি দারিদ্রতাকে ভালবাসি। যাতে আল্লাহ পাকের দরবারে বিনীত হয়ে থাকতে পারি।
০২. আমি অসুস্থতাকে ভালবাসি। যাতে এর দ্বারা আমার গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
০৩. আমি মৃত্যুকে ভালবাসি। যার দ্বারা আল্লাহর দীদার লাভ করতে পারি।
তিনটি কথা গুরুত্বপূর্ণ-
কোনো এক বুজুর্গ কারো নিকট চিঠি লেখার সময় তিনটি কথা অবশ্যই লিখতেন-
০১. যে ব্যক্তি আখিরাতের উদ্দেশে আমল করে, আল্লাহ পাক তার দুনিয়াবী কাজ সমাধা করে দেন।
০২. যে ব্যক্তি নিজের এবং আল্লাহ পাকের মধ্যকার সম্পর্ক ঠিক করে লয়, আল্লাহ পাক তার এবং মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক ঠিক করে দেন।
০৩. যে ব্যক্তি স্বীয় অভ্যন্তরীন অবস্থা ঠিক করে নেয় আল্লাহ পাক তার বাহ্যিক অবস্থা ঠিক করে দেন।
ইয়াহইয়া বিন মুয়ায (রাদ্বি) ’র তিনটি দুআ ও আশা-
০১. হে আল্লাহ! আপনি দুনিয়াতে রহমতের মাত্র এক অংশ অবতীর্ণ করেছেন, এর দ্বারা ইসলামের ন্যায় মহামূল্য সম্পদ আমাদেরকে দান করেছেন। যখন আপনি ১০০ রহমত অবতীর্ণ করবেন তখন আপনার কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়ার আশা করব না কেন?
০২. হে আল্লাহ! আপনার অনুগতদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে সাওয়াব নির্ধারিত রয়েছে। আর আপনার রহমত গুনাহগারদের জন্য। আমি তো আপনার অনুগত না হওয়া সত্ত্বেও আপনার সাওয়াব পাওয়ার আশা রাখি। তাহলে গোনাহগার হয়ে আপনার রহমতের আশা করব না কেন?
০৩. হে আল্লাহ! আপনি স্বীয় বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করার জন্য বেহেশত প্রস্তুত করেছেন। কাফিরদের তা থেকে নিরাশ ও বঞ্চিত করেছেন। আর ফেরেশতাদের তো বেহেশতের প্রয়োজন নেই। আপনি ও ফেরেশতার মুখাপেক্ষী নন। সুতরাং বেহেশত আমাদের ব্যতিত আর কার জন্যে?
বেহেশতিদের তিনটি অভ্যাস-
০১. অপকারীর প্রতি অনুগ্রহ করা।
০২. অত্যাচারী ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেওয়া।
০৩. কারও জন্য কিছু ব্যয় করা, বিনিময়ে কিছু না পাওয়া গেলেও তাদের ব্যয়ভার বহন করতে থাকা।
তিনটি বিষয়ে আমল ধ্বংস করেঃ
০১. মিথ্যা বলা ০২. চুগোলখুরী করা ০৩. কারও সতর দেখা।
তিনটি মজলিস আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত-
০১. শুধু পার্থিব আলোচনার মজলিস।
০২. শুধু হাসির মজলিস।
০৩. যে মজলিসে গীবত করা হয়।
ভালো মানুষের তিনটি গুণঃ
০১. কারও উপকার করতে না পারলে ও ক্ষতি না করা।
০২. কাউকে খুশী করতে না পারলেও দুঃখ না দেওয়া।
০৩. কারও প্রশংসা করতে না পারলে ও বদনাম না করা।
মুমিনের পরিচয় তিন এর পরিবর্তে তিন গ্রহণ-
হযরত মালিক বিন দীনার রহ. বলেন, মুমিন হতে হলে তিনটি জিনিসের পরিবর্তে তিনটি জিনিস গ্রহণ কর।
০১. অহংকারের পরিবর্তে বিনয়,
০২. লিপ্সার পরিবর্তে সন্তোষ।
০৩. হিংসার পরিবর্তে হিতাকাঙ্খা।
সূত্র: ইমাম গাজ্জালী (রহ.’র গ্রন্থাবলি ও তাম্বিহুল গাফিলীন। চলবে।