আল্লাহওয়ালাদের চরিত্র

খলীফার কম্পন শুরু হয়ে গেল
মাহবুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গাউছুল আযম বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.) এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল তিনি সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে দ্বিধাবোধ করতেন না। মিম্বরে দাঁড়িয়ে সত্যকে তিনি নির্দ্ধিধায় প্রকাশ করতেন। অন্যায়, অত্যাচারের ব্যাপারে বড় বড় যালিমদের ভৎর্সনা করতেন।
প্রকাশ থাকে যে, যখন খলীফা আলমুকতাদ্ব লিআমরিল্লাহ আবুল ওফা ইয়াহ্ইয়া ইবনে সাঈদকে কাদ্বী নিযুক্ত করলেন তখন গাউছুল আযম (রহ.) মিম্বরে দাঁড়িয়ে খলীফাকে ঘোষণা করে দিলেন আপনি অতি বড় একজন অত্যাচারীকে কাদ্বী পদে নিযুক্ত করেছেন। মহান পরওয়ারদিগারের দরবারে আপনি কি জবাব দিবেন যিনি স্বীয় সৃষ্টির প্রতি অতি দয়াবান। গাউছুল আযম (রহ.) এর উক্ত কঠিন ঘোষণা শ্রবণ করে খলীফার কম্পন শুরু হয়ে গেল। সাথে সাথেই আবুল ওফা ইয়াহ্ইয়া ইবনে সাঈদকে কাদ্বী পথ থেকে খলীফা সরিয়ে দিলেন। (ওয়াইয জি: ৩১)

মেহমানের ক্বদর
আমীরুল মু’মিনীন সায়্যিদুনা হজরত ওমর ইবনুল আব্দুল আযীয (রহ.) একদা মেহমানের সাথে রাতযাপনের সময় বাতিটি নিভে গেল। তিনি নিজে উঠে বাতিটিতে তেল ভরলেন। মেহমান বললেন, আমীরুল মু’মিনীন। আমাকে বললেই তো হত। সায়্যিদুনা হজরত আব্দুল আযীয (রহ.) বললেন, মেহমান থেকে দেনা নেওয়া ঠিক নহে। মেহমান পূনরায় বললেন, খাদিমকে বললেই তো সে বাতিতে তেল ভরে দিত। উত্তরে বললেন বেচারা এইমাত্র ঘুমিয়েছে। সায়্যিদুনা হজরত আব্দুল আযীয (রহ.) মেহমানকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘বাতিতে তেল ভর্তির পূর্বে যে ওমর ইবনে আব্দুল আযীয, বাতিতে ভর্তির পরে সেই ওমর ইবনে আব্দুল আযীযই।’ (কিমিয়ায়ে সা’আদাত)
সায়্যিদুনা হজরত ফারুকে আযম (রা.) এর আদত মুবারক ছিল যে, যখন কোন মেহমান তাঁর ঘরে আসতেন তখন তিনি মেহমানের সম্মানার্থে নিজেই দাঁড়িয়ে যেতেন এবং তাঁর খেদমত করতেন। লোকেরা তাঁকে এ সম্মানের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলতেন, হুজুরে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমায়েছেন, যে ঘরে মেহমান থাকেন, মেহমানের সম্মানার্থে ফেরেশতারা দাঁড়িয়ে থাকেন এ জন্য আমার লজ্জা হয় যে মহান আল্লাহতায়ালার ফেরেশতারা যেখানে দাঁড়িয়ে থাকেন আর আমি তথায় বসে থাকব। (দুররাতুন নাছিহীন)
হজরত গঞ্জেওশকর (রহ.) বলেন, সায়্যিদুনা হজরত ইমাম আযম আবু হানিফা (রহ.) এর আদত মুবারক ছিল কোন মেহমান আসলে তিনি নিজে মেহমানেরই হাত ধৌত করাতেন। আর বলতেন ইহা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত। অপরাপর আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুসসালামেরও সুন্নত।
সায়্যিদুনা ইমাম মালেক (রহ.) নিজে মেহমানের হাত ধৌত করাতেন এবং পানি পান করাতেন।
একবার সায়্যিদুনা হজরত আবু বকর ছিদ্দীক (রা.) সাহাবায়ে কেরামের একটি দলকে দাওয়াত দিলেন। অতঃপর নিজেই তাঁদের হাত ধৌত করালেন। (আসরারুল আউলিয়া)

মেয়েটির দীনদারী
বর্ণিত আছে যে, সায়্যিদুনা হজরত ওমর (রা.) এর খেলাফতকালে একদা রাত্রিবেলায় ঘুরে ঘুরে একস্থানে থেমে গিয়ে এক দেওয়ালের সাথে কান লাগিয়ে কী যেন শুনতে লাগলেন। ঘরের ভিতর থেকে তাঁর কানে এ সুর ভেসে আসল যে, এক মহিলা স্বীয় মেয়েকে বলছে হে বেটী! উঠ এবং দুধের সাথে পানি মিশাও। উত্তরে মেয়েটি বলছে হে আম্মাজান! আপনি কী আজ হজরত ওমর (রা.) এর হুকুম শুনেননি। মা মেয়েকে বলল, আমীরুল মু’মেনীন কী হুকুম দিয়েছেন? মেয়েটি বলল, হজরত ওমর (রা.) এর পক্ষ থেকে একজন ঘোষক এ ঘোষণা দিয়েছেন যে, ‘দুধের মধ্যে পানি মিশিয়ে বিক্রি করো না।’ মা বলল, দুধের মধ্যে পানি মিশিয়ে দাও। এ স্থানে তোমাকে না হজরত ওমর (রা.) দেখছেন, না তাঁর ঘোষক দেখছেন। মেয়ে বলল, আম্মাজান! আমি এমন হতে পারব না যে, প্রকাশ্যে আমীরুল মু’মেনীনের আনুগত্য করব আর গোপনে তাঁর বিরোধীতা করব।
হাদিস শরিফ এবং ইতিহাসের কিতাব সমূহে উলামায়ে কেরাম উপর্যুক্ত ঘটনা উল্লেখের পর লিখেন উক্ত মেয়েটির দীনদারী এমন তাক্বওয়ামূলক কথাবার্তা শুনে সায়্যিদুনা হজরত ওমর (রা.) অত্যন্ত আনন্দিত হলেন।
শুধু আনন্দিত নয় স্বীয় সন্তানদের মধ্য থেকে একটি ছেলের সাথে উক্ত মেয়েকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে দিলেন। আর উক্ত মেয়ের বংশ থেকেই সায়্যিদুনা হজরত ওমর ইবনুল আব্দুল আযীয (রহ.) এর মত বিশ্বখ্যাতি সু-শাসক খলীফা জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
বেরাদরানে ইসলাম! উপর্যুক্ত ঘটনায় আমরা একজন আল্লাহওয়ালা মেয়ের চরিত্র প্রত্যক্ষ করলাম। সত্যিই এমন চরিত্র মেয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। আমরা যদি এ মেয়েটির চরিত্র অনুসরণ করি তাহলে মহান আল্লাহপাক ও তাঁর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্তুষ্টি দূরে নয়, অতি নিকটে।
(চলবে)

গল্পের বিষয়:
ইসলামিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত