প্রচন্ড রোদের মধ্যে হযরত আবু বকর (রাঃ) তাঁর ঘর থেকে বের হয়ে আসলেন। মসজিদ-ই-নববীর দিকে হাঁটতে শুরু করলেন আবু বকর (রাঃ)। পথেই দেখা হয়ে গেল উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর সাথে।
–আবু বকরকে জিজ্ঞেস করলেনঃ
– “এই গরমের মধ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলেন যে!”
– “কি করবো? দুঃসহ ক্ষুধা তাড়িয়ে নিয়ে এসেছে আমাকে বাড়ি থেকে।”
– “হে আবু বকর, আমি নিজেও যে একই কারণে ঘর থেকে বের হয়ে এসেছি।”
দুজনে কথা বলতে বলতে এগিয়ে গেলেন। হঠাৎ দেখলেন রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগিয়ে আসছেন তাঁদের দিকে। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই কথা তুললেন,
– “কি ব্যাপার? এই অসময়ে কোথায় যাচ্ছ তোমরা?”
– “ইয়া রাসুলুল্লাহ! ক্ষুধার কষ্টই আমাদের বাড়ি থেকে বের করে এনেছে।’
– “সেই পবিত্র স্বত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমিও যে একই কারণে বের হয়ে এসেছি ঘর থেকে। চলো সামনে এগিয়ে যাই।
তিনজন মিলে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছলেন আবু আইয়ুব আল-আনসারী (রাঃ) এর বাড়িতে। আবু আইয়ুব (রাঃ) এর স্বভাব ছিল প্রতিদিন রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য খাবার তৈরী করে অপেক্ষা করা। তিনি সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম না এলে বাড়ির সবার সাথে সেই খাবার ভাগাভাগি করে খেতেন আবু আইয়ুব।
সেদিনও অপেক্ষা করছিলেন তিনি। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাবারের সময় না আসায় তিনি সবাইকে নিয়ে খাওয়া শেষ করে ফেলে বাহিরে গিয়েছিলেন। খাবার শেষ হয়ে গেছে। আর রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর দুই সঙ্গীকে নিয়ে এলেন। তিনি হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রাঃ) এর স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন,
– “আবু আইয়ুব কোথায় গিয়েছে?”
– স্ত্রী জবাব দিলেন, “বাহিরে গিয়েছে। এখুনি এসে পড়বে।”
এই অবস্থায় আবু আইয়ুব আল-আনসারী (রাঃ) এসে একছড়া কাঁচা-পাকা-আধাকাঁচা খেজুর নিয়ে এলেন। রসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
.
– “এতো খেঁজুর আনলে কেন? শুধু পাঁকা খেঁজুর আনলেই পারতে।”
-তিনি বললেনঃ “সব ধরণের খেঁজুর পেশ করেছি যেটা ভালো লাগে গ্রহন করবেন। অনেক সময় পাঁকা খেজুরের থেকে আধাপাঁকা খেঁজুর মজা লাগে।”
তিনি তাড়াতাড়ি একটি বকরী জবাই করে তা কিছু গোশত আগুনে ঝলসালেন আর বাকিটুকু ভুনা করার ব্যবস্থা করলেন। তাঁর স্ত্রী রুটি বানিয়ে ফেললেন ইতিমধ্যে। মেহমানদের সামনে খাবার পরিবেশন করা হলো এক সময়ে।
রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেতে নিয়ে থেমে গেলেন হঠাৎ। তারপর একটি রুটির উপরে কিছু ভুনা গোশত রেখে সেটি আবু আইয়ুব আনসারী’র হাতে দিয়ে বললেন,
“একটু আমার মেয়ে ফাতিমার কাছে দিয়ে এসো এই খাবার। অনেক দিন হয় আমার মেয়ে এমন খাবার খেয়েছে।”
আবু আইয়ুব আনসারী ফাতিমা (রাঃ) খাবার দিয়ে ফিরে এলেন। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দুই প্রিয় সাথীকে নিয়ে খাবার খেলেন। খাবার শেষে খাবারের দিকে তাকিয়ে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
“রুটি, গোশত, খুরমা, পাকা ও আধ-পাকা খেজুর!” এইটুকু বলতেই গলা ধরে এলো তাঁর। দু’চোখ ভর্তি পানি নিয়ে আবার কথা বললেন রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম,
“মহিমান্বিত আল্লাহ পাকের শপথ, এইসবই হচ্ছে সেই নিয়ামত – যার বিষয়ে তোমাদেরকে কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে।” অতঃপর তিনি পড়লেনঃ
“এরপর অবশ্যই সেদিন তোমরা নেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।” [সুরা তাকাসুরঃ ৮]
এত কষ্টের পর খাবার খেয়ে হিসেবের কথা শুনে সাহাবীগণ অবাক হয়ে বললেনঃ “এই খাবারেরও হিসেব দেয়া লাগবে?”
রসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “তোমরা যখন কোন নিয়ামত গ্রহণ করার জন্য হাত বাড়াবে, তখন ‘বিসমিল্লাহ’ বলবে। তারপর তৃপ্তি নিয়ে খাবার শেষ করার পরে
বলবে –
‘আল’হামদুলিল্লাহিল্লাযি হুয়া আশবা’আনা ওয়া আন’আমা ‘আলাইনা ওয়া আফদ্বালা’
অর্থঃ “সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাকের যিনি আমাদেরকে পরিতৃপ্ত করেছেন এবং আমাদেরকে নিয়ামত দান করেছেন যা অনেক উত্তম।”
তাহলে এই দুয়া আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের জন্য যথেষ্ট হবে।
আল্লাহ রহম করুন — আমিন–আলহামদুলিল্লাহ
সুত্রঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীস । হায়াতুস সাহাবাঃ খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৫১৫ – ৫১৮ আত তারগীব ওয়াত তারহীব, জাকিউদ্দিন আব্দুল আযীম আল-মুনযিরি (রহিমাহুল্লাহ) সুওয়ারুম মিন হায়াতিস সাহাবাঃ খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১২৪ – ১৩০