ইবাদতের বসন্তকাল রমজান

ইবাদতের বসন্তকাল রমজান

ঋতুরাজ বসন্ত যেমন প্রকৃতিতে অপার সৌন্দর্যের মোহনীয় রূপ এনে দেয়। তেমনি রমজান মাস পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে বান্দার জন্য নেয়ামত স্বরুপ রহমত,বরকত,মাগফিরাত, তাকওয়া লাভ ও ইবাদতের সীমাহীন সুযোগ এনে দেয়।তাই রমজানকে বলা হয় ইবাদতের বসন্তকাল।

আরবী মাস সমূহের মাঝে সবচেয়ে মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব পূর্ণ মাস হলো পবিত্র রমজান।মহানবী সা.বলেছেন, “রজব মাস আমার উম্মতের মাস। সকল মাসের উপর তার শ্রেষ্ঠত্ব সকল উম্মতের উপর আমার উম্মতের শ্রেষ্ঠত্বের ন্যায়।শা’বান মাস আমার মাস। সকল মাসের উপর তার শ্রেষ্ঠত্ব সকল নবীর উপর আমার শ্রেষ্ঠত্বের ন্যায়।আর রমজান মাস আল্লাহর মাস। সকল মাসের উপর তার শ্রেষ্ঠত্ব আল্লাহর সৃষ্টির উপর তার শ্রেষ্ঠত্বের ন্যায়(১)”।

এই মাসেই মহাগ্রন্থ আল কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে।এই মাসে দোজখের দরজা বন্ধ করে বেহেশতের সমস্ত দরজা খুলে দেয়া হয় ।শয়তানকে জিঞ্জিরে বন্দী করা হয়।এই মাস কেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে ইসলামের অন্যতম রোকন ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত রোজা পালনের জন্য।তাই রমযান মাসের চাঁদ উদিত হলেই প্রত্যেক সুস্থ,মুকীম প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের উপর পুরো মাস রোযা রাখা ফরয।একজন ঈমানদারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো তাকওয়া অর্জন।তাকওয়া হচ্ছে আল্লাহর ভয় ও তাঁর সন্তুষ্টি লাভের আশায় আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ ও চিন্তা থেকে আত্মরক্ষা করার মাধ্যমে অন্তরের জ্যোতি বৃদ্ধি করা।মহান আল্লাহ রোজা ফরজ করার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন বা মুত্তাকী হওয়ার পথকে সুগম করে দিয়েছেন।আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেছেন,

“يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ব বর্তীদের উপর, যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পার(২)”।

তাকওয়া অর্জনের পাশাপাশি আল্লাহ নৈকট্য অর্জন করার ক্ষেত্রেও রোজার সমতুল্য অন্য কিছু নেই।হাদিসে বর্ণিত আছে,

” عن أبى أمامة الباهلى قال : قلت يا رسول الله مرنى بأمر ينفعنى الله به، قال : عليك بالصوم فانه لا مثل له.

হযরত আবু উমামা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে এমন কোনো আমলের আদেশ করুন, যার দ্বারা আল্লাহ তাআলা আমাকে উপকৃত করবেন। তিনি বললেন, তুমি রোযা রাখ, কেননা তার তুলনা হয়না(৩)”।

মহান আল্লাহ বান্দার সমস্ত ইবাদতের মধ্য থেকে শুধু মাত্র রোজাকে নিজের জন্য নির্ধারন করেছেন।হাদিসে বর্নিত আছে,

“عن أبى هريرة رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : قال الله : يترك طعامه وشرابه وشهوته من أجلى، الصيام لى وانا اجزى به، والحسنة بعشر امثالها.

হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ বলেন,বান্দা একমাত্র আমার জন্য তার পানাহার ও কামাচার বর্জন করে, রোযা আমার জন্যই, আমি নিজেই তার পুরুষ্কার দিব। আর (অন্যান্য) নেক আমলের বিনিময় হচ্ছে তার দশগুণ(৪)”।

আল্লাহ এই মাসে প্রতেটি নেক আমলের সওয়াব বৃদ্ধি করে দেন।যার পরিধি দশ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত এমনকি আল্লাহ চাইলে তার চেয়েও বেশি দেন।

রোজাদারের সাধারণ কর্ম গুলোকেও সওয়াবের তালিকা ভূক্ত করেন।মহানবী সা. বলেছেন, ” রোজাদারের নিদ্রা ইবাদতের সমতুল্য, তার নীরব থাকা তাসবীহ পড়ার সমতুল্য, অথাৎ রোজাদার যদি চুপ থাকে তাতেও সুবহানাল্লাহ পড়ার সমান সওয়াব হবে।সে রোজা অবস্থায় সামান্য ইবাদত করলে অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশী সওয়াবের অধিকারী হয়।তার দু’আ কবুল হয় এবং গুনাহ (সগীরা) মাফ হয়(৫)”।

রমজান মাস রোযাদারের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে গুনাহ মাফ ও দোয়া কবুলের বার্তা বাহক ।হাদিসে বর্ণিত আছে, “হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন-

من صام رمضان ايمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه،

যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমযান মাসের রোযা রাখবে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করেদেওয়া হবে(৬)”।

অন্য রেওয়ায়াতে বলা হয়েছে, “হযরত আবু হুরায়রা রা. র্বণনা করেন, নবী করীম সা.ইরশাদ করেছেন,

الصائم لا ترد دعوته،

রোযাদারের দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না(৭)”

তাই রমজান মাস হলো পাপমোচন ও দোয়া করার মাধ্যমে আত্মিক উৎকর্ষ ও পরকালীন কল্যাণ লাভের সর্বোত্তম সময়।সেই সাথে পূর্ণ এক মাসের রোজা, তারাবি, তাহাজ্জুদ, কোরআন তেলাওয়াত ও অন্যান্য নেক আমলের মাধ্যমে মহান পরওয়ারদেগারের নৈকট্য অর্জন করার সুবর্ণ সুযোগ।

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পবিত্র রমজান মাসে রোজা রেখে সহিহ্ আমল দ্বারা ইবাদত করার মাধ্যমে আত্মসংযম, সত্যবাদিতা, ধৈর্যশীলতা, সহনশীলাতা,তাকওয়া ও মাগফিরাত লাভ করে আখেরাতের পাথেয় অর্জন করার তাওফিক দান করুক।পরিপূর্ণ কামিয়াবি দান করুক। আমীন।

টীকা:-

১.তানযীহুশ শরীআহ, ২য় খন্ড, ১৬০ ও ১৬১ পৃষ্ঠা।

২.সূরা বাকারা ১৮৩ নং আয়াত।

৩.সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ২৫৩১।

৪.সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৮৯৪।

৫.বায়হাকী।

৬.সহীহ মুসলিম,হাদীস:৭৬০(১৬৫)।

৭.মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৮৯৯।

গল্পের বিষয়:
ইসলামিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত