কোরআনে বর্ণিত আজাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি

কোরআনে বর্ণিত আজাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি

মুসা (আ.)-এর জাতি

ফেরাউনের মৃত্যু গোটা বিশ্বের জন্য দৃষ্টান্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা, সেনাবাহিনী, পারিষদবর্গ ও প্রাসাদের জৌলুস ফেরাউনকে উদ্ধত করেছিল। নিজের ক্ষমতার ব্যাপ্তি দেখে নিজেই বিস্মৃত হয়েছিল ফেরাউন। তাই সে নিজেকে খোদা দাবি করেছিল। মুসা ও হারুন (আ.) তার কাছে ঈমানের দাওয়াত নিয়ে যান। কিন্তু ফেরাউনের উন্মত্ততা আরো বেড়ে যায়। সে আল্লাহর নবী মুসা (আ.)-কে হত্যা করতে মনস্থির করে। সদলবলে মুসা (আ.)-কে ধাওয়া করে। আল্লাহর হুকুমে সাগরে পথ সৃষ্টি হয়। মুসা (আ.) পার হয়ে যান। কিন্তু ফেরাউন সাগরে ডুবে মারা যায়। আল্লাহর আজাব দেখে ফেরাউন তাওবা করার চেষ্টা করেছিল; কিন্তু তার তাওবা গৃহীত হয়নি, বরং তাকে পৃথিবীবাসীর কাছে দৃষ্টান্ত হিসেবে রেখে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আজ আমি তোমার (ফেরাউন) দেহ রক্ষা করব, যাতে তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হয়ে থাকো। অবশ্যই মানুষের মধ্যে অনেকে আমার নিদর্শন সম্পর্কে উদাসীন।’ (সুরা : ইউনুুস, আয়াত : ৯২)

এ বিষয়ে আসমানি ধর্মগ্রন্থ বিশেষজ্ঞ ড. মরিস বুকাইলি লিখেছেন, সব সাক্ষ্য-প্রমাণ থেকে এ কথাই প্রতীয়মান হয় যে লোরেট ১৮৯৮ সালে রাজাদের উপত্যকায় (কিংস ভ্যালি) থিবিসে দ্বিতীয় রামাসিসের পুত্র ও মহাযাত্রাকালীন ফেরাউনের (মিনফাতাহ) মমি করা লাশ আবিষ্কার করেন। সেখান থেকে তা কায়রোতে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯০৭ সালের ৮ জুলাই এলিয়ট স্মিথ এ মমির আবরণ অপসারণ করেন। তিনি তাঁর ‘দ্য রয়াল মমিজ’ নামক গ্রন্থে (১৯১২) এর প্রক্রিয়া ও লাশ পরীক্ষার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। কয়েকটি জায়গায় কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও মমিটি তখন সন্তোষজনকভাবেই সংরক্ষিত ছিল। তখন থেকেই তার মাথা ও গলা খোলা। অবশিষ্ট দেহ কাপড়ে ঢাকা অবস্থায় দর্শকদের দেখার জন্য কায়রো জাদুঘরে রাখা আছে। সম্ভবত ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কায় লাশের ঢাকনা আর খুলতে দেওয়া হয় না। ১৯১২ সালে এলিয়ট স্মিথের তোলা ছবি ছাড়া পুরো লাশের আর কোনো ছবিও জাদুঘরে নেই।

ঐতিহাসিক চিহ্ন-দ্রব্য সংরক্ষণ করা মানুষের স্বাভাবিক কর্তব্য। কিন্তু এ মমির ক্ষেত্রে সেই কর্তব্য অনেক বেশি বড় ও ব্যাপক হয়ে দেখা দিয়েছে। কারণ এ মমি হচ্ছে এমন একজনের লাশের বাস্তব উপস্থিতি, যে মুসা (আ.)-কে চিনত। তার পরও সে তাঁর হেদায়েত প্রত্যাখ্যান করেছিল। তাঁর পলায়নকালে তাঁর পশ্চাদ্ধাবন করেছিল এবং সেই প্রক্রিয়ায় প্রাণ হারিয়েছে। আর কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী তার লাশ পরবর্তী সময় মানুষের জন্য নিদর্শনস্বরূপ। আল্লাহর হুকুমে তা ধ্বংস থেকে রক্ষা পেয়েছিল। (সূত্র : কোরআন, বাইবেল ও বিজ্ঞান)

সিনাই উপদ্বীপের পশ্চিম সাগরতীরে যেখানে ফেরাউনের লাশ সাগরে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল, আজও জায়গায়টি অপরিবর্তিত আছে। বর্তমানে এ জায়গার নাম জাবালে ফেরাউন বা ফেরাউন পর্বত। এরই কাছাকাছি আছে একটি গরম পানির ঝরনা। স্থানীয় লোকেরা এর নাম দিয়েছে হাম্মামে ফেরাউন। এর অবস্থানস্থল হচ্ছে আবু জানিমের কয়েক মাইল ওপরে—উত্তরের দিকে। স্থানীয় লোকেরা জায়গাটি চিহ্নিত করে বলে, ফেরাউনের লাশ এখানে পড়ে থাকা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল।

গল্পের বিষয়:
ইসলামিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত