রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নবুয়তপূর্ব জীবন

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নবুয়তপূর্ব জীবন

‘আমি তো তোমাকে বিশ্বজগতের প্রতি কেবল রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি’ (সূরা আম্বিয়া : ১০৭)। মূলত তাঁর আগমনই ছিল মানবকূলের জন্য অপূর্ব নিয়ামত, রহমত ও চিরন্তন শান্তির মহান সওগাত। নবুয়তপূর্ব তাঁর শৈশব ও যৌবনকালের প্রতিটি কৃতকর্মে তা প্রতিভাত হয়েছিল সুস্পষ্টভাবে।

পুণ্যময় জন্ম :
মহানবী সা: মক্কার বিখ্যাত বনু হাশিম বংশে ৯ অথবা ১২ রবিউল আওয়াল (ফিলের বছর) সোমবার দিবস রজনীর সন্ধিক্ষণে সুবহে সাদিকের সময় মা আমিনার কোলকে আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন। ইংরেজি পঞ্জিকা মতে তারিখটি ছিল ৫৭০ অথবা ৫৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২০ অথবা ২২ এপ্রিল।
নামকরণ : দাদা আবদুল মুত্তালিব প্রাণপ্রিয় পৌত্রের নাম ‘মুহাম্মদ’ রেখে তাঁর আকিকা সম্পন্ন করেন। মা আমিনা তাঁর নাম রাখেন আহমদ।

দুগ্ধপান :
শিশু মুহাম্মদ সা:-কে প্রথমে তাঁর শ্রদ্ধেয়া মা প্রায় সাত দিন এবং এরপর কয়েকদিন আবু লাহাবের দাসী ছুওয়ায়বা দুধ পান করান। অতঃপর প্রথা অনুযায়ী হালিমা সাদিয়া এই পরম সৌভাগ্যের অধিকারী হন। দুগ্ধপানকালে হালিমা রা: মুহাম্মদ সা:-এর অলৌকিক ও বরকতময় অনেক দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে আশ্চর্যান্বিত ও হতবাক হয়ে যান।

মুহাম্মদ সা:-এর প্রথম বাক্য : মা হালিমা বর্ণনা করেন, ‘যে সময় আমি মুহাম্মদ সা:-এর দুধ ছাড়ালাম, তখন তাঁর পবিত্র জবান হতে উচ্চারিত হয়েছিল, ‘আল্লাহু আকবার কাবীরা ওয়াল হামদুলিল্লাহে হামদান কাছীরা ওয়া ছুবহানাল্লাহে বুকরাতাও ওয়াছিলা’।

বক্ষ বিদারণ :
মুহাম্মদ সা:-কে নিষ্পাপ, নিষ্কলঙ্ক করে অতিশয় মহান ব্যক্তিত্বে পরিণত করার অভিপ্রায়ে মহান আল্লাহ নবুওয়াতের পূর্বে ফেরেশতাদের মাধ্যমে দ্বিতীয়বার বক্ষ বিদারণ করিয়েছিলেন।

মা আমিনার ইন্তেকাল : মহানবী সা:-এর ছয় বছর বয়সে মা আমিনা তাঁর পিতামহের মাতুলালয় দেখানো ও স্বামীর কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্য নিয়ে উম্মু আয়মনকে সাথে নিয়ে ইয়াছরিব (মদিনা) গমন করেন। সেখানে এক মাসকাল অবস্থান শেষে প্রত্যাবর্তনকালে আবওয়া নামক স্থানে মা আমিনা ইন্তেকাল করেন এবং তথায় সমাহিত হন।

পিতামহের স্নেহ ছায়ার আশ্রয়ে : মা আমিনার ইন্তেকালের পর উম্মু আয়মন মুহাম্মদ সা: -কে নিয়ে মক্কা আসেন এবং পিতামহ আবদুল মুত্তালিবকে সোপর্দ করেন। সেখানে অপত্য স্নেহ ও ভালোবাসায় লালিত-পালিত হতে থাকেন তিনি।
আবদুল মুত্তালিবের পরলোক গমন : ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, আট বছর দুই মাস দশ দিন বয়সে তিনি তাঁর পিতামহকেও হারান।

স্নেহশীল পিতৃব্যের তত্ত্বাবধানে :
পিতামহের ইন্তেকালের পর মহানবী সা: চাচা আবু তালিবের আপত্য স্নেহে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত লালিত-পালিত হন। তিনি বিশ্বাস করতেন, তাঁর ভবিষ্যৎ হবে অতিশয় প্রোজ্জ্বল ও গৌরবোজ্জ্বল।

সিরিয়া ও বসরা ভ্রমণ :
বার বছর বয়সে মহানবী সা: পিতৃব্য আবু তালিবের সাথে ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে সিরিয়া ও বসরা সফর করেন। এ সফরে মহানবী সা: বাণিজ্যিক নিয়মনীতি জেনে নিজেই স্বাধীনভাবে ব্যবসায় শুরু করেন। স্বভাবজাত সততা ও বিশ্বস্ততায় ক্রমান্বয়ে তিনি সফলতার স্বর্ণশিখরে আরোহণ করেন। ন্যায়পরায়ণতা ও সত্য কথনের জন্য তিনি ‘আল আমীন’ এবং ‘আস-সাদিক’ উপাধি লাভ করেন।

ফুজ্জার যুদ্ধ :
মুহাম্মদ সা:-এর চৌদ্দ কিংবা পনের বছর বয়সে উকাজ মেলায় জুয়া খেলা, ঘোড়দৌড় ও কাব্য প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে কায়স ও কিনানার গোত্র সমষ্টির মধ্যে জিলহজ মাসে এক ভয়ানক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয়। এই সুযোগে তিনি যুদ্ধের বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করেন এবং অশ্বারোহণ ও সৈনিক পরিচালনার কৌশল রপ্ত করেন।

খাদিজা রা:-এর সাথে বিয়ে :
মহানবী সা:-এর বিশ্বস্ততা, উত্তম আচরণ, মধুর ব্যবহার ও ওয়াদা পালনের খ্যাতিতে মুগ্ধ হয়ে তৎকালীন আরবের চল্লিশ বছর বয়সী সম্ভ্রান্ত ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মহিলা খাদিজা রা: প্রায় পঁচিশ বছর বয়সী রাসূল সা:-এর সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। চাচাদের সাথে পরামর্শ করে মহানবী সা: তাতে সম্মত হলে তাঁরা পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন।

কাবা গৃহ পুনর্নির্মাণ :
মহানবী সা:-এর পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে কুরাইশগণ পবিত্র কাবা ভবনের সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেন। মেরামতকার্য শেষে হজরে আসওয়াদ যথাস্থানে স্থাপনে গোত্রগুলোর মধ্যে বিবাদ দেখা দেয়। বিবাদ মীমাংসায় মহানবী সা: সবাইকে বললেন, ‘আমাকে একখানা কাপড় দাও’। কাপড় দেয়া হলে তিনি তা বিছিয়ে হজরে আসওয়াদ উক্ত কাপড়ের মধ্যস্থলে স্থাপন করে বললেন, ‘প্রত্যেক গোত্রকে এই কাপড়ের চার পাশ ধরতে হবে’। সন্তুষ্টচিত্তে সবাই তা ধরলো ও উঁচু করে যথাস্থানে নিয়ে রাখলো। অতঃপর তিনি নিজ হাতে হজরে আসওয়াদ তুলে যথাস্থানে রাখলেন ও তার উপর গাঁথুনি দিলেন।

গল্পের বিষয়:
ইসলামিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত