সুলতান মুরাদ এক রাত বিছানায় শুয়ে দমবন্ধ হয়ে আসছে। কেন এমন অস্থির লাগছে বুঝতে পারছে না। এমতাবস্থায় তিনি নিরাপত্তাকর্মীকে ডাকলেন। বাদশাহ হিসেবে সুলতান মুরাদের অভ্যাস ছিল যে, পোশাক পরিবর্তন করে প্রজাদের খোঁজ খবর নেওয়া। এ হিসেবে তাদেরকে বলল চল, কিছু সময় লোকদের ভীড়ে কাটিয়ে আসি। যেতে যেতে শহরের এক কোনায় পৌঁছে গেল। সেখানে গিয়ে দেখল এক মানুষ মাটিতে লুটিয়ে আছে। এই অবস্থা দেখে সুলতান মুরাদ ঐ লুটিয়ে পড়ে থাকা লোকটিকে নেড়ে দেখলেন। দেখতেছে লোকটি মৃত। আর লোকটির পাশ অতিক্রম করে অনেক লোক আসছে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ লোকটিকে স্পর্শও করে দেখছে না। সুলতান মুরাদ মানুষদেরকে ডেকে বলল, ভাই এদিকে এসো। মানুষ একত্রিত হল, কিন্তু তারা সুলতানকে চিনতে পারল না। সুলতান জিজ্ঞেস করল, কিরে ভাই আপনারা লোকটি এভাবে মৃত পড়ে আছে দেখতেছেন, তারপরও কেউ লোকটিকে উঠাচ্ছেন না কেন? চলুন তাকে উঠিয়ে তার ঘরে পৌঁছে দিই।
তখন লোকেরা বলে, এই লোক বড় গোনাহগার মানুষ। তখন সুলতান মুরাদ বললেন, ভাই গোনাহগার হলেও সে কি আল্লাহর বান্দা নয়? সে কি আমার নবীর উম্মত নয়?? চলো, তাকে উঠিয়ে তার ঘরে দিয়ে আসি। মানুষ সুলতানের কথায় প্রভাবিত হল আর লাশটি ওয়ারিসের কাছে পৌঁছে দিল। যখন ঘরে গেল লাশটি নিয়ে তার স্ত্রী এই লাশ দেখে অজোরে কাঁদতে লাগল, লোকেরা চলে গেল। সুলতান মুরাদ এবং নিরাপত্তাকর্মী দাঁড়িয়ে মহিলাটির কান্না দেখতে লাগল। কাঁদতে কাঁদতে মহিলাটি বলল, আল্লাহর শপথ করে বলছি, নিঃসন্দেহে তোমরা আল্লাহর অলী এবং নেক বান্দা।
একথা শুনে সুলতান মুরাদ আশ্চর্য হয়ে গেল। মহিলাটিকে জিজ্ঞেস করল, ইহা কিভাবে সম্ভব? মানুষ তো সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, লোকটি বড়ই পাপী। এমনকি কেউ এর লাশ স্পর্শও করছে না। তখন ঐ লোকটির স্ত্রী বলল, আমিও মানুষের মত এই একই বিষয়ে একমত। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। প্রকৃতবিষয় হল আমার স্বামী প্রতি রাতে মদের দোকানে যেত। পকেটে যত টাকা থাকত, তা দিয়ে মদ কিনে আনত। ঘরে এনে মদগুলো ঢেলে দিত। আর বলত, দেখ কিছু মুসলমানের গোনাহের বোঝা তো কমাতে পেরেছি।
একইভাবে তিনি প্রতি রাতে সরাইখানায় গিয়ে একটি পতিতা নিয়ে আসত। আর ঐ পতিতাকে এক রাতের উপার্জন দিয়ে কক্ষে বিশ্রামে রাখত। আর ঐ কক্ষের দরজা বন্ধ করে দিয়ে বলত কেউ যেন তোমার কাছে না আসে। আর ঘরে এসে বলত, আল্লাহর শোকরিয়া, আজ এই মেয়েটিকে এবং একজন মুসলমান যুবকের পাপের বোঝা কিছুটা হালকা করতে পারলাম।
আর মানুষ তাকে এসব জায়গায় আসতে যেতে দেখে বড়ই পাপী মনে করত। আমিও তাকে বলতাম, মনে রেখ যে, তুমি যেই দিন মরবে সেই দিন কেউ না তোমাকে গোসল দিবে, না তোমার জানাজা পড়বে, না তোমাকে দাফন করবে।
আর সে মুছকি হেসে বলত, চিন্তা কর না। তুমি দেখবে যে, আমার জানাজা যুগের বাদশাহ, উলামায়ে কেরাম এবং আল্লাহর অলীরা পড়বে।
ঘটনা শুনে সুলতান মুরাদ দুই চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলে, আমিই তো সুলতান মুরাদ, এই সময়ের বাদশাহ। কাল আমিই নিজ হাতে তোমার স্বামীকে গোসল দিব। আমিই এর জানাজা পড়াব। এর দাফন কার্যও আমি সমাধা করব। সত্যিই পরদিন এই লোকের জানাজা হয়েছিল তুরস্কের রাজদরবারে সুলতান মুরাদের রাজকীয় মসজিদের মাঠে। এতে শরীক হয় বিখ্যাত উলামায়ে কেরাম এবং যুগের আউলিয়ায়ে কেরাম। সাথে ছিলেন অসংখ্য সাধারণ জনতা।
শিক্ষাঃ এমন-ই ছিল মুসলিম শাসক এবং শাসিত। তাদের মাঝে একমাত্র আল্লাহভীতি ছিল বলেই তাঁদের সোনালী ইতিহাস মানুষকে আজো অনুপ্রাণিত করে। আল্লাহ, আমাদেরও এমন সৌভাগ্য দান করুন।