ঢাকা ভার্সিটির হলে একটা সীট পাওয়া মানে ভয়ংকর ঘটনা। আমি একজনকে চিনি যিনি গর্ব করে বলতেন, জগন্নাথ হলে আমার একটা সীট আছে। তবে সেটা চকির নিচে।
জায়গা না পাবার কারণে যুবক বালিশ তোষক নিয়ে চকির নিচে শুয়ে পড়ে। এতে তার কোনই সমস্যা হয় না। চকির নিচে ছোট ডিম লাইট, মিনি টেবিল ফ্যান, সব মিলিয়ে ছোট খাট এক সংসার পেতে বসেছেন !
যুবকটি এখনো আছেন সেই হলে; প্রোফেসর হিসেবে !
……
ম্যাট্রিক পরীক্ষা পাশ করতে তার সাত বছর লেগেছে। প্রতিবার রেসাল্ট আঊট হবার পর তার ধারণা হত প্রিন্টিং মিস্টেইকের কারণে তার নাম আসেনি। তাকে নিয়ে হাসাহাসি লেগেই থাকত।
যুবক চিটাগাং কলেজে ভর্তি হতে গেলে তখনকার প্রিন্সিপ্যাল তাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। যুবকটি চলে যেতে যেতে প্রিন্সিপ্যালকে শুধু একটি কথা জানিয়ে যায়- একদিন আমি এই কলেজে প্রিন্সিপ্যাল হয়ে আসব।
যুবকটির নাম রেজাউল করিম। পরবর্তীতে তিনি এই কলেজে প্রিন্সিপ্যাল হয়ে যোগ দেন।
এই গল্পটি অনেকেই জানেন।
এক তরুণের জামা কাপড় খুব ময়লা থাকার কারণে পার্কের সিকিউরিটি গার্ড তাকে প্রবেশ করতে দেয় নি। বাচ্চা বয়সের সেই ছেলেটি আবার একদিন এই পার্কে আসে। তখন সে পার্কটির মালিক।
তাকে ঢুকতে না দেবার অপমানটাই তাকে সফল করে তুলেছে।
—
কিছুদিন আগে জ্যাক মা’কে নিয়ে একটি আর্টিকেল পড়লাম।
” প্রাইমারিতে দুইবার ফেল, মাধ্যমিকে তিনবার ফেল, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরিক্ষায় তিনবার ফেল, চাকরির জন্য পরিক্ষা দিয়ে ৩০ বার ব্যর্থ হয়েছি আমি।
চীনে যখন কেএফসি আসে তখন ২৪ জন চাকরির জন্য আবেদন করে৷ এর মধ্যে ২৩ জনের চাকরি হয়৷ শুধুমাত্র একজন বাদ পড়ে, আর সেই ব্যক্তিটি আমি৷
এমনও দেখা গেছে চাকরির জন্য পাঁচ জন আবেদন করেছে তন্মধ্যে চার জনের চাকরি হয়েছে বাদ পড়েছি শুধুই আমি৷
প্রত্যাখ্যানের পর প্রত্যাখ্যানই দেখেছি আমি৷ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ১০বার আবেদন করে ১০বারই প্রত্যাখ্যাত হয়েছি৷”
যার কথা বলছি তিনি হলেন পৃথিবীর ৩৩ তম ধনী ব্যক্তি – জ্যাক মা।
লক্ষ করলে দেখবে তিনি খুব বেশি ট্যালেন্ট ছিলেন না। ট্যালেন্ট হলে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দশবার ফেল করতেন না। তার সফলতার মন্ত্র কী জানো ?
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তুমিও পরীক্ষা দিলে হয়ত টিকবে না। সেও টিকে নি। কিন্তু তুমি প্রত্যাখ্যান হবার পর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দশবার পরীক্ষা দিতে না। তার এবং আমাদের মাঝে পার্থক্যটা এখানেই।
তিনি লেগে ছিলেন। হাল ছাড়েন নি। আমরা একটুতে না হলেই হাল ছেড়ে কেটে পড়ি।
সবাই মেধা নিয়ে জন্মায় না। আলাদীনের চেরাগ নিয়ে ফু দিলেই সবার সামনে একটা দৈত্য এসে হু হা হা হা হা করে ওঠে না।
লাইফে স্ট্রাগল করতে গিয়ে সবাইকেই অবহেলিত হতে হয়। তবে সবাই অপমান গুলোকে ‘ জেদ’ এ পরিণত করতে পারে না।
ধাক্কা খেয়ে বের হয়ে লাইট বন্ধ করে হা হুতাশ করাটা সহজ। ধাক্কাটাকে দাঁত চিপিয়ে জেদ বানানোটাই কঠিন…
দুঃখ, কষ্ট, অবহেলা- অপমান এইসব জিনিস একদল মানুষকে দুর্বল করে দেয়। জীবনের আশা পানসে করে দেয়। বাঁচতে ইচ্ছে করে না। সব কিছু নিষ্ঠুর মনে হয়।
আরেকদল মানুষকে কঠিন করে তোলে… বাঁচার আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। শোধ নেবার অদম্য এক ইচ্ছে তাকে সুন্দর করে তোলে।
পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে মানুষের করুণা এবং অবহেলার প্রয়োজন আছে। কিছু একটা করার প্রেরণা তো এখান থেকেই আসে।