একবার একজন ভদ্র মহিলা কিডনী প্রদাহে আক্রান্ত হ’লেন। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা করালেন। কিন্তু কোনভাবেই নিরাময় সম্ভব হচ্ছিল না। কিডনী প্রতিস্থাপন ব্যতীত কোন উপায় নেই বলে ডাক্তাররা জানালেন। তিনি ছিলেন ধনী মহিলা। তাই তিনি পাঁচ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এক দৈনিক পত্রিকায় কিডনী কেনার জন্য বিজ্ঞাপন দিলেন। খবরটি বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ল। পরের দিন এক গরীব মহিলা বিজ্ঞাপনে প্রদত্ত ঠিকানা অনুযায়ী হাসপাতালে আসলেন এবং পাঁচ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তার কিডনী বিক্রি করতে রাযী হ’লেন। ডাক্তার তার কিডনী পরীক্ষা করে দেখলেন তার কিডনী ভালো আছে।
যেদিন কিডনী প্রতিস্থাপন করা হবে, সেদিন অসুস্থ ভদ্র মহিলাটি সেই কিডনী দাতা মহিলার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসলেন। এসে দেখলেন তিনি কান্নাকাটি করছেন। জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কাঁদছেন কেন? কিডনী দিলে কি আপনার কোন সমস্যা হবে? নাকি কেউ আপনাকে নিষেধ করেছে? মহিলাটি বলল, কেউ আমাকে নিষেধ করেনি; আমি স্বেচ্ছায় কিডনী বিক্রি করছি। কারণ আমার অসহায় সন্তানদের জন্য এ অর্থের খুবই প্রয়োজন। কিন্তু কিডনী দানের পরে যদি আমার কিছু হয়, তাহলে আমার ইয়াতীম সন্তানদের দেখাশুনা কে করবে? তারা কার কাছে আশ্রয় নেবে? এটাই আমার চিন্তার কারণ। এ কথা বলতে বলতে তিনি আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। তার অবস্থা দেখে অসুস্থ মহিলাটি কিছুক্ষণ ভাবলেন। তারপর শান্তভাবে বললেন, চিন্তা করবেন না বোন! আপনাকে কিডনী দিতে হবে না। কিডনী বিক্রি করে আপনি যত টাকা পেতেন, সেই পরিমাণ টাকা আমি আপনাকে দিয়ে দিব। বিনিময়ে আমাকে কোন কিছু দিতে হবে না। গরীব মহিলাটি যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। কান্নার পরিবর্তে তার চোখে আনন্দাশ্রু দেখা দিল। মুখে ফুটে উঠলো আনন্দের দ্বীপ্ত রেখা। অসুস্থ বোনের প্রতি তিনি অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন এবং তার সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে প্রাণ খুলে দো‘আ করলেন।
অসুস্থ মহিলাটি হাসপাতাল থেকে ফিরে এলেন। তারপর কিছুটা যেন সুস্থতা বোধ করতে লাগলেন। কিছু দিন এভাবেই যাওয়ার পর একদিন তিনি হাসপাতালে গেলেন এবং কিডনী চেক আপ করালেন। কিন্তু এবারের রিপোর্ট দেখে ডাক্তাররা হতবাক হয়ে গেলেন। কি বিস্ময়কর! আপনার কিডনীতে তো রোগের কোন চিহ্ন নেই। এতো একদম সুস্থ। এটা কিভাবে সম্ভব হ’ল?
মহিলাটি বললেন, হ্যাঁ সম্ভবতঃ আল্লাহ আমাকে স্বীয় অনুগ্রহেই সুস্থতা দান করেছেন। মহিলাটি বুকভরে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সেই হাদীছটি তার মনের গহীনে বার বার অনুরণিত হ’তে লাগল। যেখানে তিনি বলেছেন, دَاوُوْا مَرْضَاكُمْ بِالصَّدَقَةِ ‘তোমরা ছাদাক্বার মাধ্যমে তোমাদের রোগীদের প্রতিষেধকের ব্যবস্থা কর’ (ছহীহুল জামে‘ হা/৩৩৫৮; সনদ হাসান)।
তিনি আরো বলেন,مَنْ يَسَّرَ عَلَى مُعْسِرٍ، يَسَّرَ اللهُ عَلَيْهِ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، ‘যে ব্যক্তি কোন অসচ্ছল ব্যক্তিকে অবকাশ দিবে, দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহ তার সাথে সহজ ব্যবহার করবেন’ (ইবনু মাজাহ হা/২৪১৭, সনদ ছহীহ)।
আল্লাহ বলেন,الَّذِيْنَ يُنْفِقُوْنَ أَمْوَالَهُمْ فِيْ سَبِيلِ اللهِ ثُمَّ لَا يُتْبِعُوْنَ مَا أَنْفَقُوْا مَنًّا وَلَا أَذًى لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ، ‘যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, অতঃপর যা ব্যয় করেছে, তার পিছনে খোঁটা দেয় না এবং কোন কষ্টও দেয় না, তাদের জন্য তাদের রবের নিকটে প্রতিদান রয়েছে। তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিত হবে না’ (বাক্বারাহ ২/২৬২)।
বিশিষ্ট বিদ্বান আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (১১৮-১৮১ হি.)-এর নিকটে জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন যে, গত ৭ বছর যাবৎ আমার হাঁটুতে একটি ফোঁড়া উঠে খুব কষ্ট দিচ্ছে। এ পর্যন্ত অনেক ডাক্তারের নিকটে বিভিন্ন চিকিৎসা গ্রহণ করেছি। কিন্তু কোন উপকার পাইনি। এখন আমি কি করতে পারি? আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রহঃ) বললেন, তুমি অমুক স্থানে একটা কুপ খনন কর। পানির জন্য সেখানকার মানুষ খুব কষ্ট পাচ্ছে। আশা করি ফোঁড়াটির মূল অংশ বের হয়ে যাবে এবং রক্ত বন্ধ হয়ে যাবে। অতঃপর লোকটি তাই করল এবং আল্লাহর রহমতে সে আরোগ্য লাভ করল (বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান ৫/৬৯; যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৭/৩৮৩)।
পরিশেষে বলব, দান-ছাদাক্বা করলে পরকালে যেমন ছওয়াব মিলবে, ইহকালেও তেমনি উপকার পাওয়া যাবে। তাই সাধ্যপক্ষে আমাদের সকলকে দান-ছাদাক্বা করা উচিত। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন-আমীন!