ইহুদীর নেকীর বদলা

ইহুদীর নেকীর বদলা

ইহুদীর নেকীর বদলা

এক শহরে দুই ব্যক্তি মৃত্যু শয্যায় শায়িত, মুমূর্ষ অবস্থা। একজন মুসলমান, আরেকজন ইহুদী। ইহুদীর মনে মাছ খাওয়ার ইচ্ছা সৃষ্টি হয়; কিন্তু কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।

মুসলমানের মনে যায়তুন তেল খাওয়ার ইচ্ছা জাগে। আল্লাহ তা’আলা দুইজন ফেরেশতাকে ডাকেন। একজনকে বললেন, অমুক শহরে মৃত্যুমুখে পতিত এক ইহুদী মাছ খেতে ইচ্ছা করছে। তােমার দায়িত্ব একটি মাছ নিয়ে তার বাড়ির পুকুরে রেখে আস, যাতে মাছ খেয়ে তার মনের আশা পূরণ করে।

অন্যজনকে বললেন, অমুক শহরের একজন মুসলমান মৃত্যুর নিকটবর্তী। যায়তুন তেল খেতে তার মনে চায়। আর যায়তুন তেল তার আলমারীতেই আছে। তুমি গিয়ে তার তেল বের করে নষ্ট করে ফেল। যাতে সে তার চাহিদা মেটাতে না পারে।

দুই ফেরেশতা তাদের মিশন বাস্তবায়নে চলছে। রাস্তায় উভয়ের সাক্ষাৎ হয়। পরস্পর জিজ্ঞেস করে কে কি জন্যে যাচ্ছে? একজন উত্তরে বলল, অমুক ইহুদীকে মাছ খাওয়াতে যাচ্ছি। অপর জন বলল, অমুক মুসলমানের যায়তুন তেল নষ্ট করতে যাচ্ছি।

দুজনেই আশ্চার্যবােধ করে যে, আমাদের দুজনকে উল্টো দুটো কাজের নির্দেশ দেয়ার হেতু কি? কিন্তু যেহেতু আল্লাহ পাকের হুকুম তাই যার যার কাজ করতেই হল।

নির্দেশ পালন শেষে ফিরে উভয়ে আরজ করল হে আল্লাহ! আমরা আপনার হুকুম অনুযায়ী কাজ করেছি; কিন্তু আমাদের বুঝে আসছে না একজন মুসলমান যে আপনার আনুগত্যশীল এবং তার কাছে যায়তুন তেল মওজুদ ছিল তা সত্ত্বেও আপনি তার যায়তুন তেল নষ্ট করার নির্দেশ দিলেন!

পক্ষান্তরে একজন ইহুদী কাফের তার কাছে মাছ ছিল না অথচ তাকে মাছ খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন! আল্লাহ তাআলা উত্তরে বললেন, আমার কাজের হেকমতের খবর তােমাদের জানা নেই।

আসলে আমার আচরণ মুসলমানের সাথে একরকম আর কাফেরের সাথে অন্যরকম। কাফেরের সাথে আমার মুআমালা হলাে- যেহেতু কাফেরও দুনিয়াতে নেক আমল করে কখনও। যেমন ছদকা খয়রাত করে, ফকীরের সাহায্য করে। তার নেক আমল যদিও আখেরাতে অগ্রাহ্য আমি কবুল করিনা।

তবে আমি তার নেক আমলের হিসাব দুনিয়াতেই মিটিয়ে দেই। যাতে সে যখন আখেরাতে আমার নিকট আসে তখন কোন প্রাপ্য অবশিষ্ট না থাকে। কোন নেকীর প্রতিদান আমার নিকট বাকী না থাকে।

আর মুসলমানের সাথে। আমার আচরণ ভিন্ন আর তা হল, মুসলমানের গুনাহের হিসাব দুনিয়াতে থাকতেই আমি মিটাতে চাই যাতে সে যখন আমার নিকট আসবে তখন পাপমুক্ত পাক সাফ অবস্থায় আসতে পারে।

সুতরাং ইহুদী লােকটি যত নেক আমল করেছিল তার প্রতিদান দেয়া হয়েছে। শুধুমাত্র একটা নেকীর বদলা বাকী রয়েছে, আর সে এখন আমার কাছে আসছে। যখন তার দিলে মাছ খাওয়ার বাসনা হল, তখন আমি তার খাহেশ পূর্ণ করে তাকে মাছ খাইয়ে দিলাম, নেকীটির বদলা হিসেবে, যাতে সে আমার কাছে আসার আগেই তার নেকীর হিসাব সম্পন্ন থাকে। (দুনিয়াতে প্রাপ্তির পর আখেরাতে শূন্য হাত)

অপর দিকে মুসলমানের অসুস্থতা ভােগের মধ্যে তার সব গুনাহ মাফ করে দিয়েছি, শুধু একটি গুনাহ বাকী রয়েছে। এমতাবস্থায় সে আমার নিকট আসবে। যদি এভাবে এসে যায়, তবে তার আমলনামায় একটি গুনাহ থেকে যায়।

এজন্য আমার ইচ্ছা তার যায়তুন তেল ধ্বংস করে তার মনের আশা ভেঙ্গে দিয়ে তার দিলে আরও একটি আঘাত দেয়া। এর ফলে তার গুনাহটিও ক্ষমা করে দেয়া। যাতে সে আমার সাথে নিস্পাপ পবিত্র আমলনামা নিয়ে সাক্ষাৎ করতে পারে।

মােটকথা আল্লাহ পাকের হেকমত কে বুঝতে পারে? আমাদের জ্ঞানের ক্ষুদ্র পরিসরে তার হেকমত বেষ্টন করা সম্ভব নয়। আল্লাহর হেকমতের নিয়ন্ত্রণে জগতের সবকিছু পরিচালিত। সবখানেই তার হেকমতে পরিপূর্ণ।

মানুষের সাধ্য নেই তার হেকমত বুঝার। কখন তাঁর কী হেকমত কে জানে? আমাদের সবার ধারণার উর্ধ্বে তার হেকমত ও কুদরত।

হযরত হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদুল মিল্লাত শাহ আশরাফ আলী থানবীর (রহ.) এর ৩০০ গল্প বই থেকে সংগৃহীত

দ্বীনি কথা শেয়ার করে আপনিও ইসলাম প্রচারে অংশগ্রহণ করুন।

গল্পের বিষয়:
ইসলামিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত