তিন লক্ষ টাকার দোয়া

এক হুজুর অর্থের প্রয়োজনে তিন লক্ষ টাকার দোয়া করতে লাগলেন। তাঁর আমল এতো ভাল ছিল যে তিনি তিন লক্ষ টাকার দোয়া করতে সাহস করলেন। তারপর এই দোয়া কবুল হল কিভাবে এই নিয়ে আজকের তিন লক্ষ টাকার দোয়া নামক গল্প।

‘আল জান্নাতু ক্বাইয়া’ন’ অর্থাৎ জান্নাত একটি ফাঁকা ময়দান। শুধুমাত্র তোমাদের আমল সেই ময়দানকে ভরে দেয়। কখনো মহল, কখনো বাগান, কখনো সুন্দরী হুর ইত্যাদি যেরূপ এবাদত সেরূপ সম্পদ সেখানে জমা হয়। হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াকুব (রঃ) এর স্বপনের একটি ঘটনা থেকে বিষয়টি বুঝতে সুবিধা হবে-
হযরত মাওলানা ছিলেন কাশফ্ওয়ালা বুযুর্গ, একজন কামেল ওলী। যারা মুহাক্কেক আলেম তারা অধিকাংশই মজযূব হয়ে থাকেন। হযরত মাওলানার মধ্যেও সেই রকম মজযূবিয়াতের শান বিদ্যমান ছিল। যখন যে-ধারণা জাগে তখন তাই করতে লেগে যান। কেন করছেন, কী প্রয়োজনে করছেন তা কেউ জানে না। শুধু মনে লেগে গেছে তাই করে যাচ্ছেন। মজযূবগণের অভ্যাসই ঐ রকম।

একবার রাতে হঠাৎ কী এক ধারণা জন্মাল, তিনি তখন তিন লক্ষ টাকার জন্য দোয়া করতেন লাগলেন, ‘‘ইয়া আল্লাহ্! আমাকে তিন লক্ষ টাকা দান করুন।’’ কিন্তু কেন তিন লক্ষ চাচ্ছেন? কী প্রয়োজন টাকার? কিছুই জানেন না, শুধু মজযূবের একটা বিশেষ অবস্থার প্রতিফলন আর কি! অর্ধেক রাত অতিবাহিত হয়ে গেল দোয়া করতে করতে ‘‘হে আল্লাহ্! আমাকে তিন লক্ষ টাকা দিয়ে দিন।’’ তিন-চার ঘন্টা অতিবাহিত হল। রাত দুইটা বেজে গেল। দোয়া করার অবস্থায় বসে বসেই মাওলানার ঘুম এসে গেল।

স্বপ্নে দেখেন সাদা রংয়ের একটা বিরাট অট্রালিকা। কয়েক মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত সেই সাদা মহলটি। এত সাদা যেমন দুধ সাদা হয়ে থাকে। যেন একটা মনোমুগ্ধকর ‘হোয়াইট হাউজ’ বানিয়ে রাখা হয়েছে। তার উপরে প্রতিটি দেওয়ালের ধারে ধারে মনি-মুক্তা খচিত করা হয়েছে। প্রতিটি মুক্তা সূর্যের চেয়ে অধিক উজ্জ্বল। মহলের চারিদিকে আলোর বিচ্ছূরণ, শত শত সূর্য যেন স্নিগ্ধ আলো বিকিরণ করছে। মহলটি মাওলানার খুবই পছন্দ হল। সেখানে অনেক লোক বিচরণ করছিল। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘ভাই এই মহলটি কার?’’ ওরা উত্তরে বলল, ‘‘এটা মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াকুব ছাহেবের মহল। এটা জান্নাত। জান্নাতের মধ্যে আল্লাহ্ তা’য়ালা এই মহলটি তাঁর জন্য বানিয়েছেন।

মাওলানা এই কথা শুনে খুব খুশী হলেন। মহলের মধ্যে প্রবেশ করতে চাইলেন। কিন্তু দারোয়ান এসে বাধা দিল। বলল, “এখন প্রবেশের সময় হয়নি। যখন সময় হবে তখন প্রবেশ করবেন। সময় হওয়ার আগে প্রবেশ করা যাবে না।” অগত্যা মাওলানা মহলটির চারিদিকে ঘুরে ফিরে দেখতে লাগলেন। খুব ভাল লাগল। সুবহানাল্লাহ! অদ্ভুত সুন্দর এই মহল। যার বাহিরেই এত সুন্দর ভিতরে আরো কত সৌন্দর্য্যই না আছে! দেখতে দেখতে তিনি এক কোণায় গিয়ে দেখেন সেখানে দেওয়ালের একটি মোতি নাই। মোতিটা সেখান থেকে খসে পড়েছে। জায়গাটি অন্ধকার হয়ে পড়েছে। মহলটির সব জায়গায় আলোয় আলোকময় অথচ এই কোণায় একটি মোতি নাই, অন্ধকার হয়ে পড়েছে। ব্যাপার কিছু বুঝতে পারলেন না। মাওলানা লোকদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, “ভাই এখানে মোতি লাগানো হয়নি কেন? নাকি লাগানো হয়েছিল পরে খসে পড়েছে? আর খসে পড়ল-ই-বা কিভাবে? লোকেরা বলল, “মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াকূব ছাহেব আল্লাহ্ তা’য়ালার কাছে তিন লাখ টাকা চেয়েছেন। তাই আল্লাহ্ হুকুম দিয়েছেন যে, মহলের একটি মোতি খুলে পাঠিয়ে দাও। এটার দাম তিন লক্ষ টাকার চেয়েও বেশী। তাই এই মোতি খোলা হয়েছে।

এই কথা শুনেই মাওলানার ঘুম ভেঙ্গে গেল। এখন তিনি অন্য রকম দোয়া শুরু করলেন, “ইয়া আল্লাহ্! আমি তিন লক্ষ টাকা চাই না, তিন হাজার টাকা চাই না, তিন শত টাকাও চাই না। যদি আমার জান্নাতের মহল সরঞ্জাম খসিয়ে দুনিয়াতে পাঠানো হয় তাহলে তো আমার জান্নাত ফাঁকা ময়দানই থেকে যাবে। আখেরাত ধ্বংস করে আমি দুনিয়ায় নিতে চাই না। সেখানেই আমি নিব।’’ এই দোয়া এখন শুরু করে দিলেন। দোয়া করতে করতে কয়েক ঘন্টা কেটে গেল। আবার ঘুম এসে গেল। দেখেন আবার সেই মহল। সেই কোণায় যখন গেলেন তখন দেখেন সেই মোতিটি সেখানে লাগানো হয়েছে। লোকেরা বলল, “মাওলানা তিন লক্ষ টাকা চেয়েছিলেন, কিন্তু পরে আবার আল্লাহর দরবারে আরজ করেছেন যে, এখন তার টাকার দরকার নাই। তাই আবার মোতিটি সেখানে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে ।’’

সুতরাং দুনিয়ার এবাদত আর যাবতীয় দুঃখ-কষ্টের সওয়াব জান্নাতে সম্পদ হয়ে প্রতিফলিত হয়ে ফাঁকা ময়দানকে ভরে দেয়। যে এখান থেকে সওয়াব না পাঠাবে তার জান্নাত ফাঁকা ময়দান হয়েই পড়ে থাকবে। জান্নাতে দুধের নহর, মধুর নহর, হুর গেলমান সব-কিছু নেয়ামত অবশ্যই আছে। কোরআন পাকে এসবের বর্ণনায় অনেক আয়াত রয়েছে। আবার হাদীস শরীফে আছে ‘আল জান্নাতু ক্বাইয়া’ন’ অর্থাৎ জান্নাত একটি ফাঁকা ময়দান। এর তাৎপর্য হল যেমন আমাদের দেশের ময়দানে লোহার খনি আছে, তামা আছে, পিতল আছে, এমন কি সোনার খনিও আছে। সকল সম্পদই আছে; কিন্তু তবু ফাঁকা ময়দান । কারণ আমরা সেগুলি উত্তোলন করি না।

আবার যে দেশের লোকেরা পরিশ্রম করে সেগুলি উত্তোলন করেছে তারা সোনাও পেয়েছে, রূপাও পেয়েছে, সব সম্পদই তারা ভোগ করতে পেরেছে। সুতরাং দুনিয়াতে যারা পরিশ্রম করে এবাদত করেছে আর সওয়াবের উদ্দেশ্যে দুঃখ-কষ্ট বরণ করেছে তাদের জান্নাতের ফাঁকা ময়দানটি সম্পদে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। তাদের ময়দানে দুধের নহর, মধুর নহর, হুর-গেলমান সবই ফুটে উঠবে। (খুতবাতে হাকীমুল ইসলাম, খন্ড- ২পৃষ্ঠা- ২২৩)

গল্পের বিষয়:
ইসলামিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত