একটি শিক্ষামূলক ছোট গল্প-বাবার ভালবাসা

একটি শিক্ষামূলক ছোট গল্প-বাবার ভালবাসা

একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন, এই পৃথিবীতে কেউ আপনাকে ‘কারণ’ ছাড়া ভালবাসে না। আপনি দেখতে সুন্দর ও আকর্ষনীয়- মানুষ আপনাকে ভালবাসবে। অনেকে আপনার চেহারার প্রশংসা করবে। আপনি খুব মেধাবী স্টুডেন্ট, আপনার ভবিষ্যত উজ্জ্বল- মানুষ আপনাকে ভালবাসবে। অনেকেই আপনাকে আরও ভালো করতে উৎসাহিত করবে। আপনি ভালো গান গাইতে পারেন- মানুষ আপনাকে ভালবাসবে। আপনার গান শুনতে চাইবে। আপনাকে গান গেয়ে আরও বড় কিছু হওয়ার স্বপ্ন দেখাবে। আপনি ভালো লিখতে পারেন- মানুষ আপনাকে ভালবাসবে। আপনাকে বাহবা দিবে। নতুন কোনো বই অথবা পত্রিকার কলাম লিখতে উৎসাহিত করবে। অথবা ফেসবুকে আপনার পোষ্টের কমেন্ট বক্সে ভালবাসার ফুলঝুরি ফুটাবে। বিপরীত লিংগের মানুষ থেকে শুরু করে একই লিংগের মানুষগুলোও আপনাকে ভাল লাগার কথা ব্যক্ত করবে। আপনি সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারেন। কথার যাদুতে যে কাউকে মুগ্ধ করতে পারেন- মানুষ আপনাকে ভালবাসবে। আপনি তাদের আড্ডার মধ্যমণি হয়ে থাকবেন। সবাই আপনার সাথে কথা বলতে চাইবে। প্রয়োজনে মোবাইলে ১৪ টাকায় ২৫ মিনিট কিনে নিবে। আপনি ভালো খেলেন- মানুষ আপনাকে ভালবাসবে। আপনি মাঠে নামলেই মাঠের চারপাশ থেকে দর্শকের হাততালি ও চিৎকারের ধব্বনি ভেসে আসবে। পৃথিবীতে ভালবাসাটা তাদের জন্যই বরাদ্দ, যাদের অবশ্যই কোনো না কোনো গুণ আছে। ভালোলাগার মত একটা সাইড থাকতেই হবে। অতঃপর সেই ভাললাগাটাকে কেন্দ্র করেই মানুষ তাকে ভালবাসবে। বিচিত্র কোনো এক কারণে, মানুষ একদমই সাদামাটা ও সাধারণ কাউকে ভালবাসতে পারে না। না পায় তারা আশেপাশের মানুষের ভালবাসা, না পায় তারা বিশেষ মানুষটির ভালবাসা। কেবলমাত্র নিজের মা-বাবা এবং রক্তের সম্পর্কের মানুষগুলো ছাড়া। বিশেষ মানুষটির ভালবাসা সে কোনোভাবে পেয়ে গেলেও, সেই বিশেষ মানুষটি একটা সময় তাকে ছেড়ে চলে যায়, তাকে প্রতারিত হতে হয়। গভীর রাতে বালিশ জড়িয়ে কাঁদতে হয়। সেই বিশেষ মানুষটিও তাকে ‘কারণ’ ছাড়া ভালবাসেনি। সেই কারণটি ছিল স্বার্থ। যেকোনো প্রকার স্বার্থের জন্যই সে তার মত একদমই সাধারণ কাউকে ভালবেসেছিল! স্যরি ভুল বললাম, ভালবাসার অভিনয় করেছিল। যারা মাত্রাতিরিক্ত আবেগের সুরে বলবে, ‘ভালবাসতে কোনো কারণ লাগেনা’ অথবা ‘আমি তোমাকে কোনো কারণ ছাড়াই ভালবাসি’ বুঝে নিয়েন, সেটি আসলে মারাত্মক রকমের মিথ্যে কথা হয়ত এটা পৃথিবীর সেরা মিথ্যা কথা।

আপনে আমি কি করছি, নিচের ঘটনাপ্রবাহ পড়ে নিন-

মা: জানিস, আজ ক’দিন ধরে পা দুইটা ফুলেছে, হালকা ব্যথা হয়। পাশের বাসার আপা বললেন, কিডনীর সমস্যা হলে নাকি এমন হয়? তোর বাবাতো ব্যস্ত মানুষ, চল্ না একটু তোকে সাথে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাই।

ছেলে: মা, কি যে বলো! এসব কিছুই না। হাঁটাহাটি করো বেশি বেশি, ঠিক হয়ে যাবে। আর আমার সময়টাই বা কই? সারাদিন ক্লাস করে এসে কি আর এনার্জি থাকে, তুমিই বলো??

গার্লফ্রেন্ড: আজ কথা বলতে একদমই ভালো লাগছে না, শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছে।

ছেলে: কি বলো?? কখন থেকে?? ঔষধ খাইছো?? আমাকে জানাওনি কেন?? এক্ষুণি বের হও, আমি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছি! দেরি কর না, না হলে জ্বর এসে যাবে কিন্তু।
মা: আজতো তোর ছুটি, চলনা বাবা তোকে নিয়ে একটু বাজারে যাই। প্রতিটা দিন বাজারের ব্যাগ টানতে টানতে আমার কোমড়টাই ব্যথা হয়ে গেছে। আজকে তুই আর আমি একসাথে বাজার করবো।

ছেলে: মা, একটা মাত্র দিন ছুটি পাইলাম, আজকের দিনটাও একটু শান্তিতে থাকতে দিবা না??

গার্লফ্রেন্ড: এই, আমার কিছু জিনিসপত্র কেনা দরকার, তুমি আসোতো, জানোইতো শপিং ব্যাগ ধরলে আমার হাত লাল হয়ে যায়।

ছেলে: একদমই চিন্তা কর না, তুমি রেডি হতে হতেই দেখবা বান্দা হাজির!!

মা: বাবা কতদিন তোর সাথে হাঁটতে বের হই না। যখন ছোট ছিলি তোর পিচ্চি পিচ্চি আঙুল দিয়ে আমার আঙুলগুলো শক্ত করে ধরতি, একা একা হাঁটতেই চাইতি না ভয়ে, কান্না করে দিতি মনে আছে তোর? চলনা আজ একটু হেটেঁ আসি, বেশি দূরে যাবো না, বাসার আশে পাশেই না হয় হাঁটলাম।

ছেলে: মা প্লিইইইজ… আজ ভালো লাগছে না, অন্যদিন যেও।

গার্লফ্রেন্ড: আজ দেখা করবা? কাছেই কোথাও?

ছেলে: অবশ্যই! এটা আবার বলতে হয়? কিন্তু দূরে কোথাও যাবো। শোনো আজ তোমার হাতটা ধরে বোটানিক্যাল গার্ডেনের প্রতিটা অলিতে গলিতে হেঁটে বেড়াবো আর বাদাম চিবাবো!!
মা: কিরে বাবা, মাকে ভুলেই গেছিস! একটা বারও মনে হয় না মায়ের কথা! আজ দুইদিন ধরে আমার ফোন ধরিস্ না, নিজেও একটা বার কল দিস না।

ছেলে: মা, আর বোলো না, যা ব্যস্ত ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে!! আর ফোনেও টাকা নাই যে কল দিবো!! ছেলের ভালোবাসায় অন্ধ অবুঝ মা নিজের জমানো ক’টা টাকা থেকে ছেলেকে ফ্লেক্সি পাঠায়, সাথে বিকাশ করে আরো কিছু টাকা- যাতে ছেলেটা ফলফলাদি কিছু কিনে খায়। ছেলেটার যে পরীক্ষা! ফ্লেক্সি আর বিকাশে টাকা পেয়েই ছেলে খুশিতে আটখানা হয়ে মেয়েটাকে ফোন দেয়- “আজ সারারাত তোমার সাথে কথা হবে, তোমার হয়ত ফ্লেক্সি লাগবে? তাই পাঠিয়ে দিয়েছি!!! ফোনে আগেই টাকা ছিল এখন আরো বেশি, আর শোনো কাল তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে!!!” ফেইসবুকে বসেই ছেলেটা নিউজ ফিডে দেখে বন্ধুরা সবাই মাকে নিয়ে সেই সেই স্ট্যাটাস দিয়েছে। এক মূহুর্ত দেরি না করে তুফান বেগে কিবোর্ড চালিয়ে ছেলেটা লিখলো- “আজ মা দিবস!!! পৃথিবীর সব মাকে আমার সালাম!! মায়ের ভালোবাসার চাইতে আর কারো ভালোবাসার তুলনাই হয়না!! বাকি সব ভুয়া! অনলি মায়ের ভালোবাসা ইজ রিয়েল!! আই লাভ ইউ মা“

অথচ পাশের ঘরে শুয়ে থাকা জ্বরে কাতর মা ছেলেকে ডাকছে পানির জন্য। ছেলে লেখাটা পোষ্ট করেই বিরক্তিমাখা কন্ঠে চেঁচিয়ে বললো- “উফ্ আম্মু! এত ডাকাডাকি কেন করছো?? জ্বর হলেতো মানুষ চুপ থাকে, তুমি দেখি কথা বলেই যাচ্ছো!! নিজে নিয়ে খাও, আমি ব্যস্ত এখন!” কি ভাবছেন? কথাগুলো কাল্পনিক? নারে ভাই! একটু ভেবে দেখুন, ঠিকই মিলিয়ে যাবে নিজের সাথে কিংবা খুব পরিচিত কারো সাথে।

গল্পের বিষয়:
ইসলামিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত