দরবেশ ও বাঘের গল্প

দরবেশ ও বাঘের গল্প

দরবেশ ও বাঘের গল্প শুরু:

নির্জন কক্ষে এক দরবেশ বাস করতেন। সেই কক্ষে এক ইঁদুর এসে বাচ্চা প্রসব করল। পরে দরবেশকে দেখতে পেয়ে সব কয়টি পালিয়ে গেল। কিন্তু একটি ইঁদুরের বাচ্চা রয়ে গেল। বাচ্চার প্রতি বুযুর্গের দয়া হল। তিনি বাচ্চাটিকে দুধ ইত্যাদি পান করাতে লাগলেন। একদিন দেখলেন বাচ্চাটি মন ভার করে বসে আছে। তিনি তার দুঃখের কারণ জিজ্ঞেস করলেন। বাচ্চা বলল “আজ একটা বিরাট ইঁদুর আমাকে ধাওয়া করেছিল, আজ কোন রকমে প্রাণ বাঁচিয়েছি; কিন্তু একদিন না একদিন সে আমার উপর জয়ী হবে এবং আমার প্রাণ বধ করবে। তাই আমার দুঃখ। বুযুর্গ বললেন, “তাহলে আমি এখন তোর জন্যে কী করতে পারি?” সে বলল, আমাকে বিড়াল বানিয়ে দিন।” বুযুর্গ তখন আল্লাহ পাকের দরবারে দোয়া করলেন এবং তার শরীরে হাত বুলালেন সঙ্গে সঙ্গে সে একটি বিড়ালে পরিণত হয়ে গেল। কয়েকদিন পর দরবেশ দেখলেন-

বিড়ালটি বিমর্ষ মনে বসে আছে। তিনি আবার তার দুঃখের কারণ জিজ্ঞেস করলেন। বিড়াল বলল, “আজ মহল্লার গলিতে গিয়েছিলাম। এক কুকুর আমাকে তাড়া করেছিল। বড় কষ্ট করে প্রাণ বাঁচিয়ে এসেছি। কিন্তু এভাবে কতদিন প্রাণ বাঁচাতে পারব; তাই আমি চিন্তিত।” দরবেশ বললেন “তাহলে তুই এখন কী চাস?” বিড়াল বলল “আমাকে কুকুর বানিয়ে দিন।” বুযুর্গ আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন এবং বিড়ালের গায়ে হাত বুলালেন অমনি বিড়াল কুকুর হয়ে গেল। পাঁচ সাত দিন পর দেখলেন কুকুরটি বিষন্ন মনে বসে আছে। তিনি কারণ জিজ্ঞেস করলেন। কুকুর বলল, “আজ আমি জঙ্গলে গিয়েছিলাম সেখানে একটি নেকড়ে আমার উপর হামলা করেছিল।” বুযুর্গ বললেন, “তাহলে তুই এখন কী চাস?” সে বলল, “আমাকে নেকড়ে বানিয়ে দিন ।” বুযুর্গ দোয়া করে তার উপরে হাত বুলালেন। আর অমনি কুকুরটি নেকড়ে হয়ে গেল।

কয়েক দিন পর বুযুর্গ দেখলেন আবার সে মন খারাপ করে বসে আছে। বুযুর্গ জিজ্ঞেস করলেন, “মন খারাপ হওয়ার কারণ কী?” সে বলল, “আমি জঙ্গলে গিয়েছিলাম সেখানে একটি বাঘ আমাকে ফেড়ে খাওয়ার জন্যে তাড়া করেছিল।” বুযুর্গ বললেন, “এখন তবে তুই কী চাস?” সে বলল “আমাকে বাঘ বানিয়ে দিন। দরবেশ আল্লাহর দরবারে দোয়া করে তার গায়ে হাত বুলালেন তখন সে একটি বাঘ হয়ে গেল।

বাঘ হয়ে সে মনের আনন্দে জঙ্গলে গেল। জঙ্গলে যেতেই আগের সেই বাঘটি তাকে দেখে বলে উঠল “আরে বহুরূপী! খুব রূপ বদলিয়েছিছ বটে, কিন্তু তোর মধ্যে আর আমার মধ্যে এখনও অনেক পার্থক্য রয়েছে। তুই হলে মানুষের তৈরি বাঘ, আর আমি হলাম আল্লাহর তৈরি বাঘ। (দরবেশের তাছাররুফের মধ্যেমে তৈরি বাঘ) আর আল্লাহর তৈরি আসল বাঘের ক্ষমতা এখনই পরীক্ষা হবে। হাকিকত এখনই খুলে যাবে দাঁড়া!” এই কথা শুনে সে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল, “তাহলে আমার প্রাণে বাঁচার কি কোন পথ নাই?” বাঘ বলল, “একটি মাত্র পথ আছে। আগে তুই তাকে খতম করে আয় যে খোদার উপর খোদকারী করেছে, তোকে ইঁদুর থেকে বাঘ বানিয়েছে। আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে যে হস্তক্ষেপ করেছে তাকে খতম করলেই তোকে ছাড়ব।”

এ কথা শুনে বাঘ চলল বুযুর্গকে হত্যা করতে। জঙ্গল থেকে দরবেশের কামরায় এসে সে উপস্থিত হল। বুযুর্গ দেখলেন বাঘটি নখ বের করে থাবা প্রস্তত করে সামনে এসে ঘড় ঘড় করছে। তিনি বললেন, “আজ তোর এ কি অবস্থা?” সে বলল, আজ আমি তুকে খাবো ।” বুযুর্গ বললেন, “আমার আগের সকল দয়া এবং উপকারের কথা কি তুই ভুলে গেছিস?” সে বলল, “ধেৎ তোর উপকার! এখন আমার জান যায়, উপকারের কথা ভেবে জান হারাতে পারি না। সেই বাঘের সঙ্গে আবার দেখা হয়েছে। সে হলো আসল বাঘ । আর আমি যে ইঁদুর থেকে বাঘের রূপ ধরেছি তা সে জানতে পেরেছে। আমাকে বলেছে, “আল্লাহর সৃষ্টিতে যে হস্তক্ষেপ করে তোকে ইঁদুর থেকে বাঘ বানিয়েছে তাকে খতম করে আয় না হলে তোর রক্ষা নাই।” বুযুর্গ বললেন, “ও আচ্ছা এই কথা? ঠিক আছে তুই বস, স্থির হও। তোর জান রক্ষা হবে। আমি ব্যবস্থা করছি।” তখন এই বাঘ স্থির হয়ে বসল। বুযুর্গ সুযোগ পেয়ে দোয়া করলেন এবং তার গায়ে হাত বুলালেন। অমনি বাঘ আবার ইঁদুর হয়ে গেল। সকল বিশৃঙ্খলা দূর হয়ে আবার শান্তি ফিরে আসল। (আল-এফাযাতুল ইয়াউমিয়্যাহ্- খন্ড ৫, পৃষ্ঠা- ১৯৮)

গল্পের বিষয়:
ইসলামিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত