হযরত হাজী সাহেব (রঃ) বয়ান করেন যে, মাওলানা ফখরুদ্দীন নিজামী (রঃ) অত্যন্ত উচ্চ স্তরের বুযুর্গ ছিলেন। মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে মানুষের এছলাহী কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। একদিন এক মুরীদ তাঁর কাছে আরজ করল, “আল্লাহকে দেখার আমার বড় ইচ্ছা। দয়া করে কোন অজিফা বলে দিন যেন আল্লাহ্ তা’য়ালাকে দেখতে পাই।” তিনি বললেন, “ফরজ নামাজ তরক করে দাও।”
মুরীদ খুব আশ্চর্যান্বিত হলেন যে, ফরজ নামাজ ছেড়ে দেয়া কি সম্ভব? তিন দিন পর আবার হাজির হয়ে বললেন, “হযরত! আল্লাহকে দেখার বড় বাসনা। কোনো একটি অজিফা বলে দিন।”
তিনি বললেন, “তোমাকে অজিফা তো বলে দিয়েছি যে ফরজ নামাজ ছেড়ে দাও।”
এই কথা শুনে তিনি আবার ফিরে গেলেন। দুই তিন দিন পর হাজির হয়ে আবার সেই অনুরোধ করলেন। তিনি ঐ একই জওয়াব দিলেন। মুরীদ চলে গেলেন। কিন্তু ফরজ ছেড়ে দেয়ার হিম্মত হল না। তাই সুন্নত ছেড়ে দিয়ে রাত্রে শুয়ে পড়লেন। স্বপ্নে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আল্লাইহে ওয়া সাল্লামকে দেখতে পেলেন, তিনি বলছেন, “হায় আল্লাহর মায়ার উম্মত! আমার কী অপরাধ যে আমার সুন্নত ছেড়ে দিয়েছ? তখনই সেই ঘুম ভেঙ্গে উঠে পড়লেন তিনি এবং অযূ করে সুন্নত আদায় করলেন।
লোকটি সকাল বেলায় এই ঘটনা হযরত নিজামী (রঃ) কে শুনালেন।
হযরত নিজামী (রঃ) বললেন, “যদি ফরজ নামাজ ছেড়ে দিতা তবে আল্লাহ্ তা’য়ালা নিজেই দেখা দিয়ে বলতেন, “আমার ফরজ কেন ছেড়ে দিয়েছো?”
(খুতবাতে হাকীমুল ইসলাম, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২৭৬)
আসল কথা হল ঐ মুরিদ তাঁর জীবনে কখনো সুন্নাত ও ফরজ নামাজ কাযা করেননি। তাই তাঁর মযার্দা আল্লাহ ও রাসূলের নিকট এতো বেশি ছিল।
ব্যাখ্যা: ঐ উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন মুরিদ সুন্নত তরক করেছিলেন ঠিকই কিন্তু ঘুম ভেঙ্গে আবার সুন্নত আদায় করার সুযোগও হল আবার রাসূলুল্লাহ (সা) এর দীদারও নসীব হল। ফরজ তরক করলেও ঐরূপ সময় থাকতেই আদায়ের সুযোগ হতো আবার উদ্দেশ্যও পূর্ণ হতো। সুতরাং তরক করা একটি ভাণ মাত্র। আল্লাহওয়ালাদের কথা বিনা দ্বিধায় মেনে নিলে পরে বুঝা যায় যে, তাঁদের আদেশ বা উপদেশ কোরআন-হাদীসের বিরুদ্ধে যায়নি। কামেল পীর এবং নেসবত কায়েম হয়েছে এরূপ মুরীদের ক্ষেত্রেই শুধু এরূপ আমল করা সম্ভব। নতুবা গোমরাহীর ভয় রয়েছে।