আল্লাহর ভয়ে

আল্লাহর ভয়ে

আব্দুস সালাম বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। বাবা রহমত সাহেবের ইচ্ছে ছিল সালামকে মাদ্রাসায় পড়াবেন। তার ইচ্ছে ছিল ছেলেকে হাফেজ কিংবা আলেম বানাবেন। কিন্তু সালামের সা রহিমা বেগমের ইচ্ছে তার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে। তাই মার ইচ্ছাতেই সালামকে তার বাবা এলাকার স্কুলে ভর্তি করেছিলেন। সালামের বাবার সবসময় ভয় ছিল তার ছেলে কখনো বিপথে চলে যাবে না তো?
সালাম তার বাবার সমস্ত ধারনা মিথ্যে করে দিয়ে জিবন পরিচালিত করতে লাগল। সালাম ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে ইসলামিক বিষয়ে আগ্রহ বেশি।

সালাম ইন্টার পাশ করে অনার্স করছে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর। তার ভার্সিটির আজ প্রথম দিন। ভার্সিটিতে পা রাখতেই অস্থিরতা ঘিরে ধরল সালামকে। ভার্সিটির প্রত্যেকের গেটআপ, ফ্যাশন, এসব দেখে তার নিজেকে খুবই ক্ষীণ মনে হতে লাগল। সবাই যেখানে এসেছে অনেক দামি পোশাক আশাক সাথে একেক জনের একেক স্টাইল। সেখানে ও খুব সাদাসিধা পোশাকে। এতসব অস্থিরতা নিয়ে অনেক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর অধ্যক্ষ এলেন। নবিন বরণ অনুষ্ঠান শেষে সবাই সেদিনের মত বিদায় নিল।

সালামের দৈনন্দিন রুটিনের একটা অংশ ছিল বিকেলে আসর নামাজের পরে নদীর পারে ঘুরতে যাওয়া। বিকেলের ফুরফুরে বাতাস তার হৃদয়ে ছোয়া দিয়ে যেত। যথারীতি সে আজকেও গেল বিকেলে। আজকে সে একটু অবাক হল। সাধারণত নদীর ধারে এসময় কোনো মানুষ আসে না। তাহলে ওটা কে কালো কিছু পড়ে আছে!! না ওটা কোনো মানুষ নয় মনে হয়। স্থিরভাবে দাড়িয়ে আছে অনেক্ষণ। মরে মনে ভাবল সালাম। সালামের এখন একটু ভয় ভয় করতে লাগলো। ওটা কি আসলেই কেউ দাড়িয়ে আছে? সালাম দেখার জন্য একটু এগুতে লাগল। হঠাৎ করে কালো কিছু পড়া বস্তুটা নড়ে উঠল আর সালামের তিকে তাকালো। সালামের বুকটা ধপ করে উঠল। পরক্ষণে বুঝতে পারল তার নিজের চেয়েও বেশি আতংকিত দেখাচ্ছে ওই এক জোড়া চোখকে। সালাম এতক্ষণে বুঝতে পারল এতক্ষণের স্থির বস্তুটা আসলে কালো বোরকা ও হিজাব পড়া একটা মেয়ে। সালাম একটু পিছিয়ে এসে বলল স্যরি। আমি মনে করেছিলাম আপনি মানুষ না, মানে আপনি অন্য কিছু।

মেয়েটিঃ আসলে আমি এখানে নতুন। কালকেই এসেছি। মানে ভার্সিটিতে পড়ার কারনে আসতে হয়েছে। আর আপনিতো ওই ভার্সিটিতেই পড়ছেন মনে হয়!!
সালামঃ হ্যা। আপনিও ওখানে?
মেয়েটিঃ হ্যা।
সালামঃ আমা…………( হঠাৎ মাগরিবের আজান কানে এলো সালামের। সালাম বললঃ আচ্ছা এখন আসতে হবে।
মেয়েটিঃ আমারও
সালাম মাগরিবের নামাজ পড়ে নিল।
সালাম বাসায় আসতেই তার বাবা জিজ্ঞেস করল বাবা তোর ভার্সিটির অবস্থা কেমন?
সালামঃ কয়েকদিন গেলেই বুঝতে পারব বাবা।

সালাম ওর রুমে চলে গেল। হঠাৎ বিকেলের কথা মনে পড়তেই সালামের একটু হাসি পেল।
পরদিন সালাম ভার্সিটি গেল। ক্লাসে ঢুকেই আবার অসস্থিতে পরল। ক্লাসে ছেলেরা তো আছেই মেয়েরাও কেউ কোনো প্রকার পর্দা করেনি। একেক জন একেক রকম করে আরো সেজে গুজে এসেছে। সালামের অবচেতন মন কাউকে খুজছে। সালাম আশেপাশে তাকালো। ভাবছে অন্তত একজনের তো পর্দা করা উচিত ছিল। কিন্তু কোথয় সে?
আর কিছু না ভেবে সালাম আনমনা হয়ে বসে থকল।

এমন সময় স্যার আসল। স্যার সবার নাম জিজ্ঞেস করল। একে একে সবার পরিচয় পর্ব শেষ হল। এমন সময় ক্লাসের বাইরে থেকে আওয়াজ আসল… may i come in sir!
সালাম এতক্ষণ মাথা নিচু করে ছিল,, আওয়াজ শুনেই চমকে উঠল। এ তো সেই মেয়েটাই মনে হয়! পূর্ণ পর্দা করা। আগের মতো শুধু চোখ দুটোই দেখা যাচ্ছে। পূরো ক্লাসে একমাত্র ওই যে পর্দা করেছে। মেয়েটি এসে বসল।

ক্লাস শেষ পুরো ক্লাসে সালাম মাথা নিচু করেই কাটিয়ে দিল। বাইরে বেরিয়ে একেকজন একেক কাজ করতে লাগল। সালাম সোজা বাড়ির পথ ধরল। এমন সময় মেয়েটা সালামের সামনে এসে দাড়াল।
মেয়েটাঃ আসসালামু আলাইকুম।

সালাম চমকে উঠল। এরকম মেয়েও আছে এখানে?
মেয়েটিঃ আমার নাম সিদ্রাতুল মুনতাহা। আপনি?
সালামঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম আমি আব্দুস সালাম।
সিদ্রাঃ আসুন!
সালামঃ হ্যা? হ্যা।
সিদ্রাঃ ভার্সিটিতে তো আপনিই একমাত্র আছেন যে হয়তো অহংকার মুক্ত! আর উত্তম আচরন কারি!
সালামঃ হয়তো।
সিদ্রাঃআপনি নামাজ পড়েন?
সালামঃ ইনশাআল্লাহ আল্লাহর রহমতে পড়ি। নিশ্চয় আপনিও?
সিদ্রাঃ হ্যা।
সালামঃ ভার্সিটিতে তো আপনিই একমাত্র ব্যাতিক্রম।
সিদ্রাঃ তাইতো দেখছি। তাছাড়া এখন এটাই স্বভাবিক। এই মডার্ন যুগে এসে কারো সময় আছে রাসুল সাঃ এর কথা মানার! সবাই নিজেকে নিয়েই ব্যাস্ত। বেপর্দায় চলার সময় এটাও মনে থাকে না যে তারা অন্যায় করছে, পাপ করছে। তাদের কাছে এটা খুবই স্বাভাবিক মনে হয়।
সালামঃ আপনার অসস্থি লাগে না, পুরো ভার্সিটিতে আপনি একা পর্দা করেন?
সিদ্রাঃ রাসুল সাঃ এর দেখানো পথে চলতে আমার কোনো অসস্থি কিংবা লজ্জ্বা নেই। তাছাড়া এতেই বরং নিজেকে নিরাপদ মনে হয়। বেপর্দায় চলে, বিভিন্ন জায়গায় নিজের ছবি প্রচার করলে সাময়িক ভাবে সেলিব্রেটি পাওয়া যায়। তবে তা পাহাড় পরিমাণ গুনাহের বিনিময়ে। সেলিব্রিটি হয়ে বাইরের দৃষ্টিতে মনে হয় সম্মান বাড়ছে। প্রকৃতপক্ষে সম্মান কমছে। কিন্তু এখন এসব কেউ বুঝে না।
সালামঃ যথার্ত বলেছেন। মানুষ যদি একটু মন দিয়ে ভাবত তাহলেই বুঝতে পারত। আচ্ছা এখন তো আমাদের যেতে হবে। এখন আসরের সময় হয়ে এসেছে।
সিদ্রাঃ ও হ্যা। চলুন।
সিদ্রা আর সালামের এতক্ষণের আলোচনায় ওদেরি ক্লাসের আরো কয়েকজন শামিল ছিল তা তারা টেরই পায়নি..………………….

সালাম ও সিদ্রার আলোচনায় তাদের ক্লাসের আরো কয়েকজন শামিল ছিল তা তারা টেরই পায়নি।
#সালাম বাসায় গিয়ে নামাজ পড়ে নিল। ভার্সিটি থেকে সালাম কে স্টাডি বিষয়ক কিছু কাজ দিল সালাম সেগুলো শেষ করে রাতে আমি ঘুমোতে গেল।

সালামকে কারা যেন টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে। আর সালাম চিৎকার করে বলছে আমাকে ছেড়ে দিন আমি এটা করতে পারব না। আমাকে ছেড়ে দিন।

ধপ করে উঠে বসল সালাম। স্বপ্ন ছিল। কিন্তু এটা কেমন স্বপ্ন? সালাম ভয়ে ভয়ে ঘুমিয়ে পরল। সকালে উঠে সালাম কিছুতেই ভেবে পেল না এরকম স্বপ্ন কেন দেখল!
এসব ভাবতে ভাবতে সালাম আজ আর ভার্সিটি গেল না। ওদিকে সিদ্রা ভার্সিটি গিয়ে দেখল অবাক কান্ড। তাদের ক্লাসে ৫ থেকে ৬ জন মেয়ে বোরকা আর হিজাব পরিহিতা। সিদ্রা বেশ ভালোই অবাক হল। হঠাৎই ওই মেয়ে গুলোর মধ্যে থেকে একজন সিদ্রার দিকে এগিয়ে এসে বলল অশেষ ধন্যবাদ আপনাদের।

সিদ্রা কিছু বুঝতে পারল না। তারপর ও মনে মনে খুশি হল।
ক্লাস শেষে ওই মেয়ে গুলো সিদ্রাকে ডেকে বলল কালকে আপনাদের কথা বার্তা শুনেই আমাদের এই পরিবর্তন। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। সিদ্রা এতক্ষণে বুঝতে পারল আসল ঘটনা। সিদ্রা বলল আপনাদেরকেও ধন্যবাদ বুজার জন্য। সিদ্রা মনে মনে ভাবল যাক একটা ভালো কাজ করা গেল। সিদ্রা এতক্ষণে খেয়াল করল সালাম ভার্সিটিতে আসে নি। কিছু হয়নি তো?
সিদ্রা আর কিছু না ভেবে বাসার দিকে রওনা দিল।

এদিকে সালাম কিছুটা চিন্তিত তার রাতের স্বপ্ন নিয়ে। সালামএর দিকে তাকিয়ে তার বাবা বলল তোকে চিন্তিত মনে হচ্ছে কেন রে? সালাম কিছু বলতে না গিয়ে ও রাতের ঘটনা তার বাবাকে খুলে বলল। তার বাবা বলল এই সামান্য ঘটনা নিয়ে এত চিন্তিত হওয়ার কি আছে? স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই। সালাম হ্যা সূচক মাথা নাড়ল।

পরদিন সালাম ভার্সিটি গেল আর ছুটির সময় খেল বড়সড় ধাক্কা। চার পাঁচটা ছেলে সহ একটা মেয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে বলছে, সেদিন তুই কোন মেয়ের সাথে বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলি! আর এখানে হুজুর গিরি দেখানো হচ্ছে? এসব কথা বলার জায়গা এটা নয়। সালাম বলল, কেন এখনে এসবের নিষেধের কিছু তো দেখছি না।

ওদের মধ্যে একটা ছেলে এগিয়ে এসে সালামকে থাপ্পড় দিয়ে বলল আবার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে?
এরপর থেকে আর এখানে বেশি বাড়াবাড়ি করলে খবর আছে!

আমার দোষটা কোথায় এটা বলতে পারলে আপনারা যা বলবেন আমি তাই করব।
তোকে কলেজ থেকে বের করে দিলে ভালো হবে না? এত কথা বলছিস কেন? যেটা বলছি সেটাই করবি।
সালামঃ আপনাদের কথা শোনার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। আর আমাকে কলেজ থেকে বের করার আপনারা কে?
মেয়েটাঃ আমি এখানের অধ্যক্ষের মেয়ে। তোকে বের করতে দু মিনিটও সময় লাগবে না।
সালামঃ ও তাই বলে এভাবে জুলুম করবেন!
সালাম আর কিছু না বলে চলে গেল।

এদিকে মেয়েটা বলল এই ছেলেটা বড্ড বাড় বেড়েছে। এর কিছু একটা করতে হবে। আমার বাবা কিছুই করবে না। ওনি কারো দোষ না পেলে কিছুই করবেন না। তাই আমাদের আগে দোষের ব্যাবস্থা করতে হবে। পরদিন সালাম ভার্সিটি এলে ছুটির পর কয়েকজন মিলে হঠাৎই তাকে একটা গাড়ীতে উঠিয়ে নিয়ে গেল। সালাম জ্ঞান হারালো। যখন জ্ঞান ফিরে দেখে সে একটা ঘরে বন্ধি আর তার হাত পা বাঁধা। সালাম চিৎকার করে বলল আমাকে এখানে কে এনেছে? আমাকে কেন আটকে রেখেছেন?
সালাম দেখল ঘরে প্রবেশ করল একটি মেয়ে আর সালাম তাকে কখনো দেখেনি।

মেয়েটা এসে সালামের হাত পায়ের বাঁধন খলে দিল। সালাম বলল ধন্যবাদ আপনাকে।
কিন্তু হঠাৎই মেয়েটা সালামের ওপর ঝাপিয়ে পড়ল সে কিছু বুঝে উঠতে পারেনি। সে এক ঝটকায় মেয়েটাকে ফেলে বেরিয়ে এল। বলল কি হচ্ছে এসব?

মেয়েটা সালামে কাছে এসে কু প্রস্তাবের কথা বলল। সালাম বলল আমার কি মাথা খারাপ? এটা বলে সালাম বেরিয়ে যেতে চাইল কিন্তু ঘরে ঢুকল সেদিনের ছেলে গুলো। সালাম দেখেই বলল তাহলে আপনারাই আমাকে এখানে ধরে এনেছেন।

ছেলেগুলো বলল, ঐ মেয়েটা যা বলছে তোকে তাই করতে হবে।
সালামঃ কখনোই নয়। আমি এসবের চেয়ে আল্লাহর গজব আর আজাব কে বেশি প্রধান্য দিই।
তাহলে তোকে এখানেই থাকতে হবে আজিবন।
সালামকে আবার বেধে ওরা চলে গেল।
সালাম কাঁদো কাঁদো অবস্থায় বলল এসব কি হচ্ছে? সালামের খুব কষ্ট হচ্ছিল। যে কোনো মুল্যে সে বের হতে চাইছিল ও। সে ভাবল যাই হয়ে যাক সে কখনো পাপ কাজ করবে না। আল্লাহর ওপর ভরসা।

এভাবে রাত হয়ে গেল। ওদিকে সালামের বাবা মার চিন্তায় করুণ অবস্থা। অনেক খোজাখুজির পর শেষে বাধ্য হয়ে তারা পুলিশের শরণাপন্ন হল। পুলিশ তাদের খোজাখুজি চালিয়ে যেতে থাকল। কিন্তু সালামের কোনো খোঁজ পেল না। এদিকে সালামের নিখোঁজের খবর সিদ্রার কানে যেতে দেরী হল না। সিদ্রা তার ভার্সিটির বান্ধবীর কাছে গিয়ে খোঁজ জানতে চাইল কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারল না। অবশেষে সিদ্রার মাথায় এল সেদিনের মেয়ে গুলোর কথা। যারা আড়ালে দাঁড়িয়ে সিদ্রা আর সালামের কথা শুনছিল। সিদ্রা অনেক কষ্টে তাদের ঠিকানা জোগাড় করে তাদের কাছে গেল। তাদের কে জিজ্ঞেস করল।

সিদ্রাঃ আপনারা ঐ দিন যে ছেলেটাকে আমার সাথে কথা বলতে দেখেছিলেন তার কোনো খোঁজ কি জানেন? তাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।
না। আমরা তো ওর কোনো খবর জানি না। তবে………
সিদ্রাঃ তবে কি বলুন?
মানে, আজকে কলেজ ছুটির পর দেখছিলাম ওর সাথে নিহার ঝামেলা হতে।
সিদ্রাঃ নিহা কে আর কি ঝামেলা?
ওদের কি নিয়ে কথা কাটাকাটি হচ্ছিল আর আরো কিছু ঝামেলা হয়েছিলো। আর নিহা এই ভার্সিটির অধ্যক্ষের মেয়ে।
সিদ্রাঃ ওরা কিছু করেনি তো সালামকে?
হতে ও পারে। ওরা আগে ও এরকম করেছিল। আমি আগে ওদের বন্ধু ছিলাম। ( ওদের মধ্যে রিপা বলল)
সিদ্রাঃ ওহ তাহলে ওরাই এরকম করেছে। কিন্তু এখন কিভাবে সালামকে খুঁজে পাব?
রিপাঃ আমি কিছু সাহায্য করতে পারি। ওদের সম্পর্কে আমার ভালোই ধারণা আছে আমার।
সিদ্রাঃ তাহলে আপনি আমার সাথে আসুন প্লিজ!
রিপাঃ অবশ্যই যাব। যারা আমার উপকার করেছে তাদের সাহায্য অবশ্যই করব।
সিদ্রাঃ ওরা কোথায় যেতে পারে?
রিপাঃ আমাদের আগে ওর বাবার কাছে যেতে হবে।
সিদ্রাঃ ওর বাবার কাছে কেন?
রিপাঃ ওর বাবার কাছে জানা যেতে পারে নিহা কোথায় থাকতে পারে।
সিদ্রা ও রিপা নিহার বাসায় গেল।
রিপাঃ আঙ্কেল আসসালামু আলাইকুম।
নিহার বাবাঃ আরে রিপা না! মডার্ণ একটা মেয়ে হঠাৎ এরকম হয়ে গেল কিভাবে?
রিপাঃ আঙ্কেল আল্লাহ হেদায়েত দান করলে সি সম্ভব। আঙ্কেল নিহা কোথায়?
নিহার বাবাঃ ওর খবর রাখা কি আর আমার পক্ষে সম্ভব? কত বুঝায় ওকে একটু ভালো ভাবে চল। ও কারো কথায় পাত্তা দেয় না। এখন কোথায় আছে কে জানে? তবে বলে গেছে ওর বাসায় ফিরতে রাত হতে পারে।
সিদ্রাঃ ও কোথায় গেছে কিছু বলে গেছে?
নিহার বাবাঃ না কিছু বলেনি। তবে যাওয়ার সময় সাথে করে বাসা থেকে কিছু খাবার দাবার নিয়ে গেছে।
রিপাঃ আচ্ছা আঙ্কেল আমরা এখন তাহলে আসি।
নিহার বাবাঃ আচ্ছা এসো।
সিদ্রাঃ ও খাবার দাবার নিয়ে গেছে মানে এমন কোনো জায়গায় গেছে যেখানে তেমন দোকানপাট নেই।
রিপাঃ ওও তার মানে ওরা ওখানে যেতে পারে।
সিদ্রাঃ কোথায়?
রিপাঃ আছে। আমরা কালকে যাব ওখানে খুজতে। ওখানে থাকতে পারে।
সিদ্রাঃ কালকে?
রিপাঃ হ্যা এখন ওখানে যাওয়া নিরাপদ না। তাছাড়া আমরা ওখানে একা যেতে পারব না।
সিদ্রাঃ কিন্তু কোথায় জায়গাটা?
রিপাঃ এটা এখন বলতে পারব না। তুমি যদি একা চলে যাও! আল্লাহর ওপর ভরসা রাখ। সালামের কিছু হবে না। ও তো কোনো দোষ করেনি।
সিদ্রাঃ আচ্ছা।
সিদ্রা বাসায় চলে এল। সিদ্রা খুবই চিন্তিত। সালামের কিছু হয়ে যাবে না তো! না আল্লাহ আছেন। নিজেকে এই আশ্বাস দিয়ে সিদ্রা ঘুমিয়ে পড়ে।

এদিকে সালামকে এখনো দড়ি দিয়ে বেধে রাখা হয়েছে। সারাদিন কোনো খাবার দাবার ও দেয়া হয়নি। রাতেও কিছু দেয়া হয়নি। পুরো ঘর অন্ধকার। হঠাৎ আলো জ্বেলে কেউ ঢুকল। খাবারের একটা থালায় করে প্রায় পঁচা ভাত আর লঙ্কা। সালামের শুধু হাত খুলে দিল আর খাবার গুলো খেয়ে নিতে বলল লোকটা। সালাম খেতে আপত্তি করাতে তার মুখে খাবার ঠেসে দিতে লাগলো লোকটা। সালামের ঠোট ফেটে রক্ত বেরহতে লাগলো। লোকটা বলল খাবার খেয়ে নে। পরে এগুলোও জুটবে না। থালা রেখে লোকটা চলে গেল।

ব্যাথায় সালামের চোখ দিয়ে পানি পরছে। হে আল্লাহ আমি কি দোষ করেছি যে আমাকে এই শাস্তি দিচ্ছ!

সালাম ভাবে, এখান থেকে মুক্তি পাবে কিভাবে সে? হয়তো কোনো আশায় নেই। আমার বাবা মা নিশ্চয় অনেক চিন্তিত এখন। ভেবেই সালামের কান্না পায়।

এসব নিশ্চয় আল্লাহর পরিক্ষা। আল্লাহই আমাকে উদ্ধার করবেন। কিছুক্ষণ পর ঘরের দরজা খুলে দুজন লোক প্রবেশ করল। সালাম এখনো খাবার খায়নি দেখে একজন রাগে তার মুখে অনবরত থাপ্পড় মারতে লাগল। সালামের দূর্বল শরীর থাপ্পড় গুলো সহ্য না পেরে অজ্ঞান হয়ে গেল।

খুব ভোরবেলা সালামের জ্ঞান ফিরল। পেটের ক্ষিদে আর ঐ লোক গুলোর থাপ্পড়ে পুরো শরীর ব্যাথা করছে সালামের। চোখেও ঝাপসা দেখছে, ঠিকমতো দেখতে পারছেনা।

হঠাৎ দরজা খুলে ভোরের মৃদু হাওয়া ঢুকতে লাগল। ঝাপসা চোখে ঠিক বুঝতে পারল না, তবে মনে হল দরজার সামনে সিদ্রা দাঁড়িয়ে আছে। চোখ মুখ চমকে ভালো করে দেখলো সিদ্রাই দাঁড়িয়ে আছে। আর সাথে আরো কয়েকজন পুলিশের ড্রেস পড়া লোক দাঁড়িয়ে আছে। পুলিশ তাড়াতাড়ি ভেতরে ঢুকে সালামের বাঁধন খুলে ফেলে। সালামের দাঁড়ানোর শক্তি ছিল না। দুজন পুলিশ তাকে কাঁধে করে গাড়িতে বসায়। সালাম দেখে ওই চার পাঁচ জন লোকও গাড়িতে আছে। হাতখড়া পড়ানো অবস্থায়। সিদ্র্ সালামকে জিজ্ঞেস করল, আপনি ঠিক আছেন তো?
সালামঃ হ্যা।
সিদ্রা পুলিশকে বলল গাড়ি কোনো হাসপাতালে নিয়ে যেতে। পুলিশ আগে থানায় গিয়ে লোকগুলোকে রেখে এসে একটা হাসপাতালে যায়। সালামের কিছু চিকিৎসা শেষে তাকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। সিদ্রা আর রিপাও যায়। সালামের বাবা সালামকে বুকে জড়িয়ে বলে তোর মতো ছেলেকে কে কেন কিডন্যাপ করল?

সিদ্রা সব কিছু সালামের বাবাকে বুঝিয়ে বলল। পুলিশও সব শুনে নিহার বাড়ি যায়। গিয়ে দেখে নিহা বাড়িতে নেই। নিহার বাবা আছে। বাড়িতে পুলিশ দেখে হতভম্ব হয়ে পড়ে নিহার বাবা। পুলিশ নিহার কথা জিজ্ঞেস করাতে বললেন, সকালে কোথাও বের হয়েছে। নিহার বাবা জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে? তখন রিপা সব খুলে বলল নিহার বাবা কে। নিহার বাবা কাঁদো কাঁদো অবস্থায় বললেন আমার মেয়েটার এও করা বাকি ছিল!!

সিদ্রা বলে উঠল হয়তো ওখানে গেছে, যেখানে সালামকে আটকে রেখেছিল!
পুলিশ আর দেরি না করে ওখানে গিয়ে দেখে সিদ্রার ধারণা ঠিক। নিহা পুলিশ দেখে পাথরের মতো জমে যায়। পুলিশ ওকে ওখান থেকে আটক করে নিয়ে আনে। নিহার বাবা নিহাকে দেখে দু গালে দুটো থাপ্পড় দেন। পুলিশকে অনুনয় বিনয় করেন তার মেয়েকে ছেড়ে দিতে। কিন্তু পুলিশ বলে এটা সম্ভব নয়। তখন ওখানে সালামও এসে হাজির হয়। সালামও পুলিশকে বলল নিহাকে ছেড়ে দিতে। সিদ্রাও বলল জ্বি স্যার ওকে একটা সুযোগ দিন। পুলিশ আর উপায় না পেয়ে নিহার হাতখড়া খুলে দিল। নিহা ওর চোখ ভেজা অবস্থায় এক দোড়ে বাসার ভেতরে ঢুকে গেল। পুলিশও চলে গেল। নিহার বাবা সালাম আর সিদ্রাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানান।

আর সিদ্রা রিপাকে জড়িয়ে ধরে থ্যংকস বলতে থাকে।
রিপাঃ বন্ধু ত্বের মাঝে ধন্যবাদ আর দুঃখিত এই শব্দ গুলোর কোনো স্থান নেই।
সিদ্রাঃ তুমি না থাকলে আজকে এই কাজ কিছুতেই সম্ভব হতো না।
রিপাঃ আর তোমরা না থাকলে আমি আমার আসল পরিচয় খুঁজে পেতাম না। আল্লাহকে চিনতাম না।
অনেক্ক্ষণ পর সালামের মুখ থেকে বেরিয়ে এল ‘ জাযাকাল্লাহু খায়রান সিদ্রাতুল মুনতাহা’। এবং আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর কাছে অসংখ্য শুক্রিয়া আদায় করছি।

পরের দিন ভার্সিটিতে এই খবর নিয়ে আলোচনা চলতেই থাকল। পুরো ভার্সিটিতে এই খবর ছড়িয়ে পড়ে। সবাই মনে করেছে নিহা নিশ্চয় ভার্সিটি আসবে না। কিন্তু সবার ধারণা মিথ্যে করে দিয়ে নিহা ভার্সিটি এল। নিহা সবাইকে আরো চমকে দেয়। কলেজের সবচেয়ে মডার্ণ আর আধুনিক মেয়েটি আজ এসেছে কালো পোশাকে মানে কালো বোরকা আর হিজাবে। ভার্সিটির সকলের চোখ কপালে। নিহা সিদ্রার কাছে গিয়ে বলল ‘ থ্যাংক ইউ সিদ্রাতুল মুনতাহা ফর চেঞ্জ মাই লাইফ এন্ড অলসো থ্যাংকস ইউর ফ্রেন্ড’।

সিদ্রাঃ ধন্যবাদ আমাদের নয়। শুক্রিয়া জ্ঞাপন করুন আল্লাহর কাছে। কারন হেদায়েতও সবার তৌফিকে থাকে না। আর আল্লাহ আপনাকে সেটা দান করেছেন। আজ ভার্সিটির পরিবেশ ছিল নিশ্চুপ। আগের মতো হৈ হুল্লোড় কিছুই ছিল না।

ছুটির পর সালাম, সিদ্রা আর বাকি সবাই যে যার মতো বাড়ি চলে গেল।
পরের দিন দেখা গেল পুরো ভার্সিটি জুড়ে অন্যরকম এক পরিবেশ। কালো রঙে ভরে গেল। একজন মেয়েও বেপর্দায় নেই। ছেলেরা সবাই যথেষ্ট সভ্য পোশাক পড়ে এসেছে। সালাম আর সিদ্রা এসব দেখে মনে মনে প্রচন্ড খুশি হল।

(সমাপ্ত)

গল্পের বিষয়:
ইসলামিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত