হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা থানবী (রহ.) হযরত মুআবিয়া (রা.)এর একটি ঘটনা লিখেছেন।
হযরত মুআবিয়া (রা.)-এর অভ্যাস ছিল, তিনি দৈনন্দিন নিয়মিত ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদ নামায আদায় করতেন। এক রাতে গভীর ঘুমে চোখ খােলেনি এমন কি তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেল। ইতিপূর্বে কখনও তাহাজ্জুদ ছুটেনি। প্রথমবারের মত তাহাজ্জুদ নামায ছুটে যাওয়ায় সাংঘাতিক ব্যথিত ও লজ্জিত হলেন।
দুশ্চিন্তা ও পেরেশানীতে সারাদিন কাঁদলেন। শুধু আফসােস করে বলতে লাগলেন হে আল্লাহ! আজ আমার তাহাজ্জুদ ছুটে গেছে।
পরের রাত তাহাজ্জুদের ওয়াক্তে এক ব্যক্তি এসে তাঁকে তাহাজ্জুদের জন্য জাগাতে আরম্ভ করল। হযরত মুআবিয়া (রা.) ঝটপট উঠে আগন্তুক ব্যক্তিটিকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কে? এখানে কিভাবে এসেছেন?
উত্তরে সে বলল আমি ইবলিস শয়তান। হযরত মুআবিয়া বলেন, তােমার কাজ মানুষকে গাফেল রাখা, নামাযের জন্য উঠিয়ে তােমার লাভ কি? শয়তান বলল প্রসঙ্গ বাদ দিন জলদি গিয়ে তাহাজ্জুদ আদায় করে আপনার কাজে লেগে যান।
মুআবিয়া | (রা.) বললেন, আগে তােমাকে বলতে হবে কারণটা কি? কেন আমাকে জাগিয়ে তুললে? যতক্ষণ পর্যন্ত বলবে না ততক্ষণ আমি তােমাকে ছাড়বাে। না। বারবার পীড়াপীড়ি করার পর শয়তান বললাে,
আমার কাজ তাে মূলত আপনি যা বলেছন তাই। গত রাতে আমি আপনাকে এমন অলসতা দিয়েছি যে আপনার তাহাজ্জুদ ছুটে গেছে। আপনি তাহাজ্জুদ পড়তে পারেন নি। কিন্তু তাহাজ্জদ ছুটে যাওয়ার পরিণতিতে আপনি সারাদিন আফসােস আর কান্নাকাটি করছেন।
এই রােনাজারিতে আপনার মর্তবা এমন বৃদ্ধি পেয়েছে যদি আপনি তাহাজ্জুদ পড়তেন তবে সে স্তরে উন্নীত হতে পারতেন না। এটা তাে আমার জন্য বড়ই লােকসানের কাজ। এজন্য আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আপনাকে তাহাজ্জুদের জন্য জাগিয়ে দেব যাতে মর্তবা বুলন্দির রাস্তা পয়দা না হয়।
ইসলামিক ঘটনা ০২
প্রিয়নবীজী (সাঃ) এর বদান্যতা।
নবীজী (সা.)-এর প্রিয় সাহাবী হযরত জাবের রাযি. এর ঘটনা। তাঁর সাথে নবীজীর বিশেষ সম্পর্ক ছিল। গাযওয়ায়ে বনীল মুসতালেক থেকে ফিরে আসার সময় তাঁর রুগ্ন উট চলতে চলতে থেমে পড়ছিল । খুব ধীরপদে পথ চলছে।
তাকে দ্রুত হাঁকানাের চেষ্টায় কমতি ছিল না। কিন্তু ক্লান্ত শ্রান্ত উটটি আর পারছে না। কাফেলার সবাই আগে চলে যাচ্ছে আর তিনি পিছনে থেকে যাচ্ছেন। বারবার তাকে পেছনে পড়তে দেখে হুযুর পাক (সা.)-তার কাছে গিয়ে বললেন, তুমি কাফেলার সাথে না চলে পেছনে কেন? উত্তরে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা.) আমার এ উট চলতে পারছে না । আমি তাকে দ্রুত চালানাের খুব চেষ্টা করছি; কিন্তু সে পিছে থেকে যাচ্ছে।
হুযুর আকরাম (সা.) নিকটের এক ঝাড় থেকে একটি ডাল ভাঙলেন এবং তা দিয়ে মৃদু আঘাত করলেন। হুযুর পাক (সা.) ছড়ি মারতেই বাহন উটটি বাতাসে গতি ফিরে পেল। এমন কি সবাইকে ছেড়ে কাফেলার অগ্রভাগে অতিদ্রুত চলতে থাকে।
প্রিয় নবীজী আবার তার কাছে গিয়ে বললেন, তােমার উট দেখছি খুব দ্রুতগামী। হযরত জাবের (রা.) বললেন, ইয়া হাবীবাল্লাহ এটা আপনার বরকত। হুজুর (সা.) পুনরায় বললেন, তােমার এমন সুন্দর উটটি আমার কাছে বিক্রি করবে? জাবের (রা.) বললেন, বেচার কি দরকার আপনার পছন্দ হলে আমার পক্ষ থেকে হাদিয়া গ্রহণ করুন।
নবীজী বললেন, হাদিয়া হিসেবে নয় আমি মূল্য দিয়ে কিনতে চাই। বেচতে চাইলে বেচতে পার। হযরত জাবের (রা.) বললন, কিনতে চাইলে আপনার যা কিছু মনে চায় দাম ধরে নিয়ে নিন। নবীজী বললেন, তা হয় না তুমিই দাম বলে দাও কত দামে বিক্রি করবে। জাবের (রা.) বললেন এক আউকিয়া রূপার বিনিময়ে বিক্রি করতে চাই “আনুমানিক চল্লিশ দিরহাম সমপরিমাণ হবে।
নবীজী বললেন, তুমি বেশ দাম হেকেছাে তা দিয়ে হৃষ্ট পুষ্ট বড় উট কেনা যায়। হযরত জাবের (রা.) বললেন, ইয়া রসূলুল্লাহ আপনি যে দামে মন চায় নিয়ে নিন। প্রিয় বাসল (সা.) বললেন, ঠিক আছে আমি এক আউকিয়া দিয়ে বাকিতে ক্রয় করলাম, মদীনায় গিয়ে তােমার মূল্য পরিশােধ করবাে।
এরপর উট থেকে নেমে পড়লেন হযরত জাবের (রা.)। নবীজী (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, নামলে কেন? জাবের (রা.) বললেন এটা তাে আপনি কিনে নিয়েছেন এখন আপনার উট । প্রিয় নবীজী বললেন, তুমি কি মদীনা পর্যন্ত হেঁটে যাবে? আচ্ছা ঠিক আছে মদীনা পর্যন্ত তুমি উটের পিঠে চড়ে যাও; মদীনায় গিয়ে তােমার উটের মূল্য পরিশােধ করে তােমার থেকে উট বুঝে নেব।
মদীনায় পৌছে হযরত জাবের (রাযি.) নবীজী (সা.)-এর নিকট উটটি পাঠিয়ে দিলেন। কিন্তু প্রিয় হাবীব (সা.) উটটিও তাকে ফেরত দিলেন এবং উটের মূল্যও পরিশােধ করে দিলেন। অর্থাৎ এক আউকিয়া রূপা তাঁকে দিয়ে দেন। মূলত এটা ছিল এক বাহানা মাত্র।
* প্রিয় নবীজী সখ্যতাভাব বজায় রাখার তা’লীম উম্মতের জন্য উপস্থাপন করলেন।
জাস্টিজ মাওলানা তাকি উসমানী সাহেব (দাঃ) এর হৃদয় ছোঁয়া গল্প বই থেকে গল্প দুটি সংগৃহীত।