মৃত্যুশয্যায় সাহাবী খালিদ বিন ওয়ালিদ তার
স্ত্রীকে পাশে বসতে বললেন। খুব
প্রয়োজনীয় কিছু প্রশ্নের উত্তর জানা যে
বাকি রয়ে গেছে। এই সেই মহাবীর খালিদ
যিনি সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সেনাপ্রধান।
যার নেতৃত্বে মুসলিম বাহীনি ১০০ টিরও বেশি
যুদ্ধে অংশ নিয়ে কোনোটাতেই পরাজয় বরণ
করেনি। তার রনকৌশল আজও বিভিন্ন দেশের
সেনাবাহীনির প্রশিক্ষণের সময় কাজে
লাগানো হয়! এই সেই খালিদ বিন ওয়ালিদ
যাকে স্বয়ং রাসূল মুহাম্মদ (সা.) ‘সাইফুল্লাহ’
উপাধি দিয়েছিলেন, যার মানে আল্লাহর
তরবারি। এই সেই খালিদ যিনি মুসলিম
বাহীনির সেনাপ্রধান হিসেবে তুখোড়
বিজয়ি থাকা অবস্থায় খলিফা উমর ইবনুল
খাত্তাবের নির্দেশে বিনা বাক্য ব্যয়ে
সেনাপ্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে
সাধারণ সৈনিক হিসেবে লড়াই করা শুরু
করেন। নেতার নেতৃত্ব মানতে হবে, এতো
ইসলামে ভীষণ জোড় দিয়ে বলা।
স্ত্রীকে তিনি বললেন, ‘প্রিয়তমা স্ত্রী,
আমি বেশিক্ষণ বাঁচবো বলে মনে হচ্ছেনা।
একটা আফসোসের প্রশ্ন এই বিদায় বেলায়
ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে, তুমি কি উত্তর দিতে
পারো’? খালিদের স্ত্রী বিনয়ের সাথে
জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে মহাবীর, কি প্রশ্ন
আপনার মনে’? ৫৭ বছরের খালিদ বললেন, ‘তুমি
আমার সারাটা শরীর পরীক্ষা করে দেখো,
এমন কোনো স্থান কি আমার শরীরে আছে
যেখানে শত্রুর তরবারীর আঘাত নেই’?
পরীক্ষা করে স্ত্রী উত্তর দিলেন, ‘না, আপনি
এতো বেশি যুদ্ধ করেছেন আল্লাহর রাস্তায়
যে শত্রুর আঘাত আপনার সারাটা শরীরেই
আছে’। খালিদ বিন ওয়ালিদ তখন দু:খ নিয়ে
বললেন, ‘প্রতিটা যুদ্ধে আমার নিয়ত থাকতো
যেনো আমি ময়দানে শত্রুর আঘাতে মারা
যাই, তাতে যেনো শহীদের মর্যাদা পাই।
কিন্তু আফসোস, দেখো আজ যুদ্ধের মাঠে মৃত্যু
না হয়ে আমার মৃত্যু হচ্ছে আমারই বিছানায়’!
স্বামীর আফসোস দেখে স্ত্রী তাকে বললেন
সেই বিখ্যাত উক্তি, ‘আপনার নাম স্বয়ং রাসূল
(সা.) রেখেছিলেন সাইফুল্লাহ, এমন কোনো
তরবারী কি দুনিয়ায় আছে যেটা আল্লাহর
তরবারীর মোকাবেলা করতে পারে? তাইতো
ময়দানে আপনার মৃত্যু হয়নি কারন আল্লাহ
তাঁর তরবারী মাটিতে লুটিয়ে যেতে দেননি’।
ভীষণ খুশি হলেন খালিদ বিন ওয়ালিদ, বুঝতে
পারলেন আল্লাহর ইচ্ছা এবং কিছুক্ষণ পরে
শান্তিতে বেহেস্তের রাস্তায় চলে গেলেন।
আমরা অনেকেই সম্রাট জুলিয়াস সিজারের
গুনগান করি, আলেকজান্ডারের ঘটনা মন
দিয়ে শুনি, নেপোলিয়ানকে শ্রেষ্ঠ বলি
কিন্তু ভালো করে জীবনি পড়ে দেখলে
জেনারেল খালিদ বিন ওয়ালিদকেই আমার
সর্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধা মনে হয়। আর এসব কোনো
কল্পকাহীনি নয়, ইতিহাস ঘাটলেই তাঁর
শ্রেষ্ঠত্ব প্রমানিত হয়..
