তমাল সাহেব কেবল রাস্তায় একটু হাটাহাটি করে বাসায় ফিরলেন। তিনি হার্টের রোগী, ওনার হার্টে একটু সমস্যা আছে। তবুও তিনি সবকিছুকে উপেক্ষা করে প্রতিদিন ওনার অভ্যাস মতো বিকেল বেলা রাস্তায় একটু হাটতে বের হয়। হাটতে ওনার খুব ভালো লাগে। ওনি মনে করে প্রতিদিন হাটাহাটি করলে ওনি নিজে এবং ওনার মন সুস্থ থাকবে। এটা ভেবে তিনি আরও হাটাহাটি করতে মনোযোগী হয়।
আজকে হাটাহাটি করে তিনি বাসায় এসে শরীর থেকে নিজের শার্টটা খুলে বিছানার উপর রেখে একটু ছাদে যায়, সেখানে ঠান্ডা বাতাসে বসে থাকলে ওনার একটু ভালো বিশ্রাম হয় তাই ছাদে যায়।
ওনার শার্টের পকেটে তিনশো টাকা আছে, যে শার্টটা বিছানায় রেখে আসছে সেটার পকেটে।ওনার কিছু ওষুধ শেষ হয়ে গেছে তাই এই টাকাটা নিয়ে তিনি আগামীকাল ওষুধ কিনতে যাবে, এটা ভেবে তিনি ওই টাকাটা শার্টেই রেখে দিয়েছে, যাতে সময়মতো ওষুধ কেনার টাকা পেয়ে যায়।
আর তখনই তার একমাত্র মেয়ে ঝুমা চুপিচুপি বাবার ঘরে ঢুকে। ঝুমা এবার ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী। ঝুমার লক্ষ্য হলো বাবার পকেটে থেকে টাকা নিয়ে চুড়ি কিনবে তারপর নিজের হাতে পরিধান করবে।
ঝুমা ঘরে গিয়ে দেখে বাবার শার্ট বিছানায় রাখা আছে তখনই ওটার কাছে গিয়ে পকেটে হাত দিয়ে তিনশো টাকা পায় আর কথামতো ওই টাকা নিয়ে ঝুমা চম্পট দেয়।
তারপর ঝুমা বিকেল বেলায় এক দোকানে গিয়ে কতগুলো চুড়ি কিনে আর বাকি যা টাকা ছিলো সেই টাকা দিয়ে ঝুমা বান্ধবীদের সাথে আইসক্রিম খায়।
পরের দিন
সকাল বেলা তমাল সাহেব হাটতে বের হয়, হাটতে হাটতে ওষুধের দোকানের কাছে চলে আসে। আর ওষুধটা তার আজকেই দরকার তা না হলে শরীরের একটু সমস্যা হতে পারে।তমাল সাহেব ভাবে ওষুধটা কিনে এই দোকানে বসেই খেয়ে যাবে।
দোকানের ভেতর গিয়ে ওষুধ কিনে টাকা দিতে যায় কিন্তু পকেটে হাত দিয়ে দেখে টাকা নেই। তিনি বুঝতে পারে তার মেয়ে এই কাজ করেছে।
তখন তিনি ওষুধ গুলো দোকানিকে ফিরিয়ে দিয়ে টাকার জন্য লজ্জিত হয়ে মাথা নিচু করে ওষুধ ছাড়া খালি হাতে বাড়ি ফিরে আসে।
এবার আসি মূল কথায়, এখানে টাকার জন্য তমাল সাহেব লজ্জিত হলো কারণ তার কাছে কোনো টাকা ছিলো না,( টাকা নেই তবুও টাকা ছাড়া ওষুধ কিনতে আসছে, ছোটলোক কোথাকার)
উপরের এই কথাটা বলে দোকানি তমাল সাহেব কে অপমান করতে পারতো কিন্তু তিনি যথেষ্ট ভালো মানুষ বলে কোনো কথা না বলেই তমাল সাহেব কে আসতে দেন।
ভাবুন তো, তমাল সাহেবের ওষুধটা এখনই দরকার কিন্তু তিনি ওষুধ না খাওয়ার জন্য অর্ধেক রাস্তায় এসে মাথা ঘুরে সেই রাস্তার মাঝখানে পরে গেল আর ওমনি একটা বাস এসে ওনাকে চাপা দিয়ে চলে গেল।
যদি এমন হতো তাহলে কি হতো?
নিশ্চয় তার মেয়ে আর স্ত্রী একা হয়ে যেতো। শুধু টাকার জন্য ওষুধ কিনতে পারেনি বলে ওনার এই অবস্থা।
ঝুমা টাকাটা চুরি করেনি, শখের বশে বাবার পকেটে থেকে লুকিয়ে নিয়েছে, সন্তান আদরের হলে যা হয় আর কি!!
আমরাও হয়তো একসময় বাবার পকেট বা মা বালিশের নিচে টাকা রেখেছে আমরা তাদের না বলে টাকাটা রেখে কোনো এক আড্ডায় খরচ করেছি।
কিন্তু যখন থেকে এর গুরুত্বটা বুঝতে শিখেছি তখন থেকে আর নেই না, কিন্তু অনেকেই আছে এখনো নেয়। তো তাদের কে বলি –
মা বাবা যে টাকাটা রেখে দেয় তারা হয়তো তাদের কোনো বিশেষ প্রয়োজনের জন্য চোখের সামনে রেখে দেয় যাতে প্রয়োজনের সময় তাড়াতাড়ি পেয়ে যায়।
আর আমরা কি করি? সেই টাকা নিয়ে চুড়ি কিনি বা ছেলেরা, বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা মেরে খরচ করি।
কিন্তু একবারও এই কথাটা ভাবি না, যে এই টাকার মা বাবাদের কোনো প্রয়োজন আছে কিনা!! আমরা সেটা নিয়ে ভেঙে খেয়ে ফেলি আর ওনারা কাজের সময় পুরো ঘর তন্নতন্ন করে খোঁজেও পায় না।
তখন ওনারা হয়তো অন্য জনের কাছে ছোট হয় বা মাথা তুলে দাড়াতে পারে না আর না হয় তাদের শারীরিক ভাবে ক্ষতি হয় যেমনটা ধরুন তমাল সাহেব।
আচ্ছা এটা কি ঠিক ,মা বাবাকে না বলে টাকা নেওয়া? ঠিক না তাই না? কিন্তু অনেকেই শখের বশে বেশীর ভাগ এই কাজটাই করে, বাড়ি থেকে মা বাবাকে না বলে লুকিয়ে টাকা নিয়ে আবার বন্ধুদের কাছে গিয়ে বলে, ( হুরররে দোস্ত, আমি আজ বাসা থেকে লুকিয়ে টাকা নিয়েছি। বাসা থেকে লুকিয়ে টাকা নেওয়া অনেক মজা, তরা নিয়েছিস কখনো)
কি সহজে বলে দিল উপরের কথাটা কিন্তু ওরা একটুও ভাবলো না সেই টাকাটার মা বাবার কোনো দরকার ছিলো কিনা না,
সেই টাকার জন্য হয়তো ওর বাবা কারও কাছে ছোট হবে বা তার একটা ইচ্ছে পূরণ হবে না। কিন্তু ওনার সন্তান তো সেটা নিয়ে দিব্যি উড়াউড়ি করতেছে।
আমাদের কারো উচিত না মা বাবাকে না বলে কিছু নেওয়া। আর ওনারা আমাদের মা বাবা, তাদের কাছে চাইলে তারা নিজে থেকেই দিবে। সন্তান একটা ছোটখাটো জিনিস চেয়েছে আর মা বাবা সেটা দিবে না, এটা কি করে হয়? ওনারা দিবেনই, তাই বলে শখের বশে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস না বলে নেওয়াটা উচিত না।
অনেক সময় এটাকে শখ বলে না, বলে চুরি। যখন কোনো বেশী দামী জিনিস নিয়ে উধাও হয়ে যায় তখন এটাকে বলে চুরি।
আশা করি এরপর মা বাবাকে না বলে কিছু নিবেন না হয়তো সেটাতে ওনাদের সম্মান বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রয়োজন জড়িয়ে থাকে।
কোনো কিছুর দরকার হলে তাদের কাছে বলে নেওয়া উচিত। সবসময় শুধু নিজের কথা ভাবলে চলবে না, ওনাদের কথাও একটু ভাবতে হবে।