স্বপ্নের হাতছানি

স্বপ্নের হাতছানি

সালমান তার বাবা মায়ের ২য় সন্তান।তার বড় এক বোন এবং ছোট এক ভাই আছে। সালমানের বাবার সাথে তার মিল না থাকলেও তার মায়ের কলিজার টুকরা সে।
তার মা তাকে অনেক আদর করে।পরিবারের মধ্যে সালমান তুলনামূলক মেধাবী হওয়ায় তার প্রতি তার বাবার চাহিদা টাও বেশি। তার বাবা তার কাছে যা আশা করে সে তা কখনই পূরন করতে পারে না। কেমন যানি তার ভাগ্যটাই তার উপর থাকে না।স্কুল পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করলেও বোর্ড পরীক্ষায় কখনই সে তার কাঙ্খিত ফলাফল করতে পারে না। সবসময় একটুর জন্য আটকে যায়।  আর বার বারই থমকে যায় তার স্বপ্ন। ৫ম শ্রেনীতে সমাপনি পরীক্ষায় ১ষ্ট ডিবিশন পেয়ে পাস করে কিন্ত ওইবার কোটা হিসেবের কারনে বৃত্তি টা আর সে পায় না।৮ম শ্রেনীতে ৪.৭৮ পায় সেই বার ফোর সাবজেক্ট ছাড়া রেজাল্ট ঘোষনা করে সরকার। এ+ আর তার পাওয়া হল না। এর পর তার বাবা তাকে অনেক গার্ড দেয়। সারক্ষন পরার টেবিলে বসিয়ে রাখে তাকে।সারাদিন তাকে কোথাও যেতে দেয় না। কারো সাথে মিশতে দেয় না। খেলতেও দেয় না। বাধ্য হয়ে ঘরে বন্দি সে। তার বড় যে বোন আছে এককথায় সেই তার বন্ধু। তার সাথেই সে গল্প করে। আর সারাদিন দুষ্টুমি করে। বিশেষ করে টিভি দেখার সময় তাদের মহা যুদ্ধ চলে। দেখতে দেখতেই তার এসএসসি পরীক্ষা চলে এল। অনেক মেয়েই তাকে পছন্দ করত। তাকে যদি কোন মেয়ে বলত আমি তোমাকে পছন্দ করি। সে উত্তরে বলত ধন্যবাদ আমি পরীক্ষার সময় আপনাকে দেখাতে পারব না মাফ করবেন। অর্থাৎ প্রেম ভালোবাসা সে বুঝত না।দেখতে দেখতে তার এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল।কিছুদিন পরেই রেজাল্ট বের হল। ৪.৯৪ এইবারও একটুর জন্য তার এ+ পাওয়াটা আর হল না। না পাওয়ার কারনটা হয়তোবা পরীক্ষার ৫ মাস আগে গনিত পরীক্ষা সৃজনশীল করাটা। তখন থেকেই তার বাবা তার সাথে কিছুটা অস্বাভাবিক আচরন করতে শুরু করে। সব কিছু ভুলে সালমান ভর্তি হয় কলেজে। কলেজে সে নিয়মিত ছাত্র হয়ে উঠে। কলেজের প্রত্যেকটি পরীক্ষায় সে ভাল রেজাল্ট করতে থাকে।

কিছু দিনের মধ্যেই সালমান প্রেমে পরে যায় সাবিহার। সাবিহার সাথে তার পরিচয় একটু ভিন্ন ওয়েতে। না চিঠি না ফেইসবুক।সাবিহা কোনদিন সালমানের মুখ দেখেনি। চলতে থাকে তাদের প্রেম। সাবিহা খুব ধার্মিক মেয়ে। সালমান যদি কোনদিন এক ওয়াক্ত নামাজ না পরে ওই দিন সাবিহা সালমানের সাথে কথা বলে না।
এই জন্যই সালমান সাবিহাকে এত ভালোবাসত। সাবিহা সালমান এর নয়ন মনি ছিল। একটু কথা না বললেই অস্থির হয়ে যেত।তার পারিবারের সবাই তাকে অনেক বকতো এবং মারত এই সালমানের সাথে কথা বলার জন্য।এর পরেও সে চুরি করে করে সালমানের সাথে কথা বলত। সালমান সাবিহাকে বলত যে আমি তোমাকে বিয়ে করলে আমাদের বিছানায় কিন্তু দুটি বালিশ থাকবে না । একটি মাত্র বালিশ থাকবে। আর ওই একটিতেই আমি শুইব। তুমি শুইবা আমার বুকে।সামনে সালমানের এইচএসসি পরীক্ষা । এখন থেকেই সাবিহা সালমানের সাথে কথা বলা কমিয়ে দিয়েছে যাতে তার পরীক্ষায় কোন অসুবিধা না হয়। আর সাবিহা দিনরাত সালমান জন্য দোয়া করত যাতে সে ভাল রেজাল্ট করতে পারে । সালমানও পড়াশুনার প্রতি অনেক মনযোগী হয়। খুব ভালো ভাবেই সে তার এইচএচসি পরীক্ষা শেষ করে।
সালমান মাঝে মাঝেই সাবিহাকে বলত তার বুকে ব্যাথা করে। সাবিহা সালমান কে ডাক্তার দেখাতে বললে অনেক জোর করে ডাক্তার দেখায় সে। ডাক্তার দেখাতে সে তার বন্ধু ইমরানকে সাথে নিয়ে যায়। তার রিপোর্টটা ডাক্তার তার বন্ধু ইমরানের হাতে তুলে দেয় এবং তাকে বলে সালমান যেন কোনভাবেই বুঝতে না পারে তার এই অসুখ হয়েছে। ইমরান শুধু সালমানকে বলছে তোর গ্যাষ্টিকের সমস্যা তুই আর বাহিরের খাবার খাবি না। ইতি মধ্যেই সালমান ইউনিভার্সিটি ভর্তি কোচিং শুরু করে দিয়েছে। কিছুদিন পর তার রেজাল্ট দিবে। তার বাবা তার কাছ থেকে তার রোল এবং রেজি নং রাতে এসএমএস দিয়ে নিয়ে নেয়। রেজাল্টের দিন দুপুরে তার বাবা তাকে কল দিয় বলল রেজাল্ট জেনে তাকে যেন আগে কল দেয়। রেজাল্ট দিয়ে দিল। সালমান এই বারও ব্যর্থ এ+ অর্জন করতে সে এইবার পেল ৪.৯২ আর এই বারের ব্যর্থতার কারন বোর্ডের এস্টান্ডারডাইজেসন পদ্ধতি। তার বাবা তার এই রেজাল্ট শুনে তার সাথে সমস্ত প্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। তার খরচ বন্ধ করে দেয় এমনকি তার বাড়ি যাওয়াও বন্ধ করে দেয়। তাকে সান্তনা দেয়ার মত আর কেউ থাকল না । সারাদিন সে চোখের পানি দিয়ে সমস্ত শরীর ভাষিয়ে দেয়।

কিছুদিন পর সে নিজেকে সান্তনা দিয়ে পড়ায় মনযোগ দেয়। ভর্তি পরীক্ষাও দেয়। ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়ার আগের দিন সাবিহা জানায় তার বাবা মা তাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। সালমান কি করবে কিছুই বুঝতে পারতেছিলনা। সারারাত টেনশন করতে করতে পাগল হয়ে যায়। আর সে ছিল হার্টের রুগী। সে বুঝতে পেরেছিল সে আর বাঁচবে না। তাই সে মারা যাবার আগে তার ডায়রির একটি পাতা চিরে তার বাবার উদ্দেশ্যে লিখল। বাবা আমি তো তোমার এক অপদার্থ ছেলে।
তোমার কোন স্বপ্নই আমি পূরন করতে পারিনি। কালকে তো আমার ভর্তি পরিক্ষার রেজাল্ট দিবে। আর তোমার তো অনেক বড় স্বপ্ন ছিল আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটি পরব। কিন্তু আল্লাহ আমাকে সেই সুযোগ টা দিবেন না কেননা আজই আমার হায়াৎ শেষ। ইমরানের থেকে তুমি আমর রিপোর্টটা জেনে নিও। আর কালকের রেজাল্টে যদি আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চান্স পাই তাহলে আমার লাশটা একবার বুঁকে টেনে নিও। নোটটা লেখা শেষ হতেই ভোর রাতের দিকে সালমানের মৃত্যু হয়।
মৃত্যুর সংবাদ শুনে সালমানের মা এবং বোন পাগল হয়ে যায়।আর তার বাবা একেবারে নিস্ব হয়ে যায়। সে একেবারেই ভেঙ্গে পরে। কিছুক্ষন পরই খবর আসে সালমান ঢাবিতে চান্স পেয়েছে। সালমানের বাবা তখন সালমান কে বুকে টেনে হাউমাউ করে কাদতে থাকে আর বলে তুই চলে যাবি বলেই কি আমার স্বপ্ন পূরন করে গেলি।
এইদিকে সাবিহা ও তার মনকে সামলাতে না পেরে চলে যায় সালমানের বাড়িতে । ওর বাড়িতে ডুকেই সে শুনতে পায় সবার কান্নার শব্দ। আর যখন সে সালমান এর লাশ দেখল দেখার সাথে সাথেই সে ব্রেন্ড স্টোক করে পরে যায় সালমানের বুকে। এখন সালমানের দুটি স্বপ্নই পূরন হল।একটি হল তার বাবার স্বপ্ন ঢাবি তে চান্স পাওয়া আরেকটি তার স্বপ্ন। তার বুকে সাবিহার শুয়ে থাকা আজ তাই হলো সাবিহা তার বুকের মাঝেই শুয়ে রইল।

গল্পের বিষয়:
অনুপ্রেরণা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত