আবিরের আজ রিয়ার সাথে দেখা করার কথা। কিন্তু সে দেখা করার কথা ভুলে গেছে। চিন্তায় অনেককিছুই ভুলে যেতে হয়। এই কারনে অনেক কথা শুনতে হয় রিয়ার কাছে। আজ রিয়ার জন্মদিন। তাই রিয়ার জন্য আজ ফুল কিনতে হবে। আজ নাকি রিয়া আবিরকে সারপ্রাইজ দিবে।
কিন্তু যেতে তো হবে। পকেটে টাকা নাই। বেকার প্রেমিক।
অনেক কষ্টে বন্ধুর কাছ থেকে টাকা জোগার করলো। আজ যেতে দেরি হয়ে গেছে। রিয়া নিশ্চিত আবিরের উপরে রাগ করে বসে আছে।
রিয়ার যত রাগই হোক। গোলাপ ফুল দিলেই রাগ শেষ। গোলাপ ফুল কিনে রিক্সায় উঠলো। অনেক দেরি করেই পোঁছাল পার্কে। আবির পার্কে আসতেই দেখলো রিয়া রেগে বসে আছে। আবির কাছে এসে বসতেই রিয়া বলল
-এই তুমি আমার পাশে বসবে না।
-আরে সরি রাগ করো না। আর দেরি হবে না। আমি আজ দেখা করার কথা ভুলে গিয়েছিলাম।
-আমি দেরি হওয়ার জন্য রাগ করি নি।
-তাহলে কেন রাগ করেছ?
-এভাবে আর কতদিন?
-যতদিন চলে ততদিন।
-আবির তুমি সিরিয়াস হও।
-আমি সিরিয়াস।
-আমি আর তোমার সাথে আর সম্পর্ক রাখতে পারবো না।
-কেন।কি আমার অপরাধ?
-কারন তুমি বেকার।
-বেকাররা কি প্রেম করে না। কয়জন মেয়ের বয়ফ্রেন্ড চাকরিজিবি?
-তারা বেকার হলেও তাদের বাবার টাকা আছে। তারা ধনির ছেলে।
-এই কথা!! প্রেম করার আগে তো এই কথা বলো নি? তখন তো বলতে তুমি আমাকে ভালবাসো। আমার কি আছে না আছে সেটা বলো নি।
-তখন আবেগের বসে বলেছি। কিন্তু আবেগ দিয়ে জিবন চলে না। বাস্তবের কাছে আবেগ পরাজিত।আজ বাস্তবের কাছে আমার আবেগের ভালবাসা পরাজিত হয়েছে।
-তোমার ভালবাসা আবেগের?
-যদি বলি হ্যা।
-তাহলে কেন ভালবাসলে?
-সেটা ছিল ভুল।কিন্তু আমি আর ভুল করতে পারবো না। তোমার সাথে আমি আর সম্পর্ক রাখবো না।
-তুমি আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করো। আমার চাকরি হয়ে যাবে।
-তুমি একটা মিথ্যেবাদী। তোমার সাথে আমি সম্পর্ক রাখবো না।
-আমি তোমার সাথে কি মিথ্যা কথা বললাম?
-তোমার চাকরি হওয়ার কথা অনেকদিন ধরেই শুনছি। কিন্তু কোন খবর নেই। কবে হবে তোমার চাকরি?
-তুমি তো জানো আমার বাবা গরিব। আমার চাকরি পেতে হলে ঘুষ দিতে হবে। অথবা উপর পর্যায়ের লোক লাগবে। তার কোন কিছুই আমার নেই।
-মিথ্যে কথা বলবে না। আর আজ থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না। তুমি একটা মিথ্যেবাদী।
-প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা। আমার যোগ্যতা আছে চাকরি হয়ে যাবে।
-তোমাকে অতকিছু বলতে হবে না। গুড বায়।
-আমি তোমাকে ছাড়া বাচবো না। প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা না।
-হাত ছাড়ো বলছি।
-প্লিজ যেওনা না।
-হাত ছাড়োওও গালে একটা থাপ্পড় দিতেই রিয়ার হাতটা ছেড়ে দিল আবির। হাত ছাড়তেই রিয়া চলে গেল।
আবির একটা বেঞ্চে বসে থাকলো। থাপ্পড়ের রেশটা এখনও আছে। আজ সে খুব বড় একটা সারপ্রাইজ পেল রিয়ার কাছ থেকে। এটা তার জিবনের সেরা সারপ্রাইজ। যা ভুলতে গিয়েও ভোলা যাবে না। গোলাপ গুলো হাতেই থেকে গেল। দেওয়া হলো না। আবির বাড়িতে এসে আত্বহত্যা করার চেষ্টা করলো। হঠাৎ তার সামনে তার বাবা মায়ের মুখ ভেসে উঠলো। আবির ভাবলো
-আমি এ কি করতে যাচ্ছি? আবেগের
ভালবাসার কারনে আমার জিবনটা শেষ করতে যাচ্ছি?
রিয়া যদি আমাকে ছেড়ে থাকতে পারে। আমি পারবো না। আমি মরে গেলে আমার বাবা-মায়ের কি হবে?
এইসব ভেবে আবির আত্বহত্যা করতে পারলো না।
১০ বছর পরে ………
সেই পার্কে বসে আছে আবির। হাতে অনেকগুলো গোলাপ ফুল। এখন আর বন্ধুর কাছ থেকে টাকা ধার করতে হয় নি। নিজের টাকা দিয়েই ফুল
কিনেছে। হঠাৎ রিয়ার কথা মনে পরে গেল। সে বলেছিল
-তুমি একটা মিথ্যেবাদী। আসলেই আবির মিথ্যেবাদী। কারন একদিন আবির বলেছিল রিয়াকে ছাড়া বাচবে না।কিন্তু আজও রিয়াকে ছাড়া বেচে আছে।
অনেকগুলো ফুল হাতে বসে আছে আবির। আজ সে আগে আগে এসেছে। হয়তো আজ আগে আসার জন্য জম্মদিনে রিয়া তাকে সারপ্রাইজ দিবে।
কিন্তু ১০ বছর ধরে রিয়া আসে না।
তাকে সারপ্রাইজ দেয় না। পার্কে বসে থেকে সন্ধা হয়ে গেছে। তাই বাড়ি ফিরছিলো। আজ আবির কোন গাড়িতে বাড়ি ফিরছে না। আজ
সে রিক্সায় চড়ে যাচ্ছে। এক জায়গায় মানুষের ভিড় দেখে থামলো।দেখলো একজন মানুষ এক্সিডেন্ট করে রাস্তায় পরে আছে। সবাই তাকিয়ে দেখছে।কিন্তু কেউ তাকে সাহায্য করছে না।
আবির তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। জ্ঞ্যান ফিরতে নার্স এসে বলল
-আপনি রোগির সাথে দেখা করতে পারেন। রোগির কাছে গিয়ে বসতেই রোগি বলল
-আপনকে ধন্যবাদ।
-কিভাবে এক্সিডেন্ট করলেন?
-আসলে আমি চাকরি না পাওয়ায় আবেগের বসে আত্বহত্যা করতে যাচ্ছিলাম।
-আবেগ দিয়ে জিবন চলে না।আবেগ আর বাস্তবের মধ্যে অনেক তফাত।
বাস্তবের কাছে আবেগ পরাজিত। কথাগুলো বলে হাসপাতাল থেকে চলে আসলো আবির। যার কথাগুলো তাকেই আজ ফেরত দিল আবির। রিয়াকে আজও আবির চিনতে পেরেছে। রিয়া আবিরকে চিনতে পারে নি।
সত্যি বাস্তবের কাছে আবেগ পরাজিত।