আবিদ, এই আবিদ…..
তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠো বাবা, ফজরের আজান হয়েছে তো
আবিদ, আবিদ , এই আবিদ…
ঘুম থেকে উঠে নামাজ টা পড়ে আয় বাবা।ছেলেকে ডাক দিয়ে ওজু করতে গেলেন আমিন সাহেব।
ওজু করে এসে আমিন সাহেব দেখলেন আবিদ তখনো ঘুম থেকে উঠেনি।বাধ্য হয়ে আবারো ডাক শুরু করলেন আমিন সাহেব ।
আবিদ, উঠোনা বাবা।
বেশি বেলা হয়ে গেলেতো নামাজটা কাজা হয়ে যাবে বাবা।
বাবার ডাক শুনে আবিদ এবার তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠলেন। দরজা খুলেই আবিদ বলতে শুরু করলো,
বাবা সত্যি বলছি তোমার ডাক শুনতে পাই নি।
আচ্ছা তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে ওজু করে মসজিদে আসো। তাড়াতাড়ি এসে জামাত ধরবা,
এই বলে আমিন সাহেব সোজা মসজিদের দিকে রওনা হলেন।
আবিদ তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে ওজু করে মসজিদেরর দিকে রওনা হলো।নামাজ শেষে বাবা ছেলে মিলে একটু হাটতে লাগলো।
হাটা শেষ করে বাবা ছেলে বাসায় ফিরে আসলো।
একটা কথা বলতে ভুলেই গেছি, আমিন সাহেবের স্ত্রী অনেক বছর আগে মারা গেছে।আবিদের যখন তিন বছর বয়স তখন আমিন সাহেবের স্ত্রী মারা যায়।
তিন বছরের ছেলে আবিদ কে নিয়ে তিনি সংসার জীবন পার করছেন। বিয়ে করার জন্য অনেকে অনেক বার আমিন সাহেব
কে বলছে কিন্তু আমিন সাহেব ছোট্ট আবিদের মুখের দিকে তাকিয়ে বিয়ে করেন নি। কারণ সমাজের চারদিকের বিভিন্ন অবস্থা,
সৎ মায়ের দ্বারা সন্তানের বিভিন্ন নির্যাতন সমাজে , দেশে অহরহ ঘটছে।ছোট্ট আবিদের কথা চিন্তা করেই তিনি এমন এক সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।
আমিন সাহেব তাড়াতাড়ি করে সকালের খাবার তৈরি করেন।তারপর ফ্রেশ হয়ে অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন।
আবিদ কে নিয়ে আমিন সাহেব সকালের খাবার খান। তারপর আবিদের হাতে একশো টাকার একটা নোট দিয়ে আবিদকে কলেজে যেতে বলেন।
দুপুরবেলা যেন আবিদ ঠিকমতো বাসায় ফিরে খাওয়া দাওয়া করে সেই কথা বলে নিজের কাজের উদ্দেশ্য রওনা হন।
আবিদ বাবার কথামতো খাওয়া দাওয়া করে কলেজের উদ্দেশ্য রওনা হয়।কলেজ শেষ করে সোজা বাসায় ফিরে আসে।
কোন আড্ডা কিংবা বন্ধুদের সাথে সময় না দিয়ে বাসায় এসে ঘরের এলোমেলো কাজ গুলো গুছিয়ে নেয়।
বাবার মতো আবিদও সংসারের সব কাজ নিজে করতে পারে। রাতে বাবার ফিরতে দেরি হলে আবিদ নিজে রান্না বসিয়ে রান্না করে নেয়।
ঘর দুয়ার সুন্দর করে ঝাড়ু দিয়ে বিছানা বালিশ গুছিয়ে পড়তে বসে যায়। বাবা না ফিরে আসা পর্যন্ত খাওয়া দাওয়া করে না।
কারণ বাবা কখনোই আবিদকে ছাড়া খেতে পারে না। আবিদও বোঝার পর থেকে দেখে আসছে বাবা তাকে ছেড়ে কখনো খাওয়া করেন নি।
সুতরাং আবিদ বাবাকে রেখে কেমন করে খায়।
বাসায় ফিরে আমিন সাহেব আবিদ কে মধুর কণ্ঠে ডাকতে থাকে।
বাবা,বাবা আবিদ..
দরজা টা খুলে দাও।
বাবার এমন ডাকে আবিদ দৌড়ে এসে দরজা খুলে দেয়। বাবার চোখেমুখে ক্লান্তি দেখে আবিদ বাবার হাত থেকে ব্যাগটা নিজের হাতে
নিয়ে বাবাকে বসতে বলে।তারপর একটা লুঙ্গী ও গামছা হাতে দিয়ে বাবাকে ফ্রেশ হতে বলে।আমিন সাহেব ফ্রেশ হতে গেলে আবিদ
খাবার টেবিলে সুন্দর করে খাবার সাজিয়ে বসে থাকে। আমিন সাহেব ছেলের এমন কান্ড দেখে প্রতিদিন অবাক না হয়ে পারে না।
কারণ এই বয়সে সবার ছেলেকে যেখানে মুখে খাবার তুলে দিতে হয় সেখানে আবিদ বাবার জন্য নিজ হাতে খাবার রান্না করে টেবিলে সাজিয়ে রাখে।
আবিদ কে নিষেধ করা সত্ত্বেও আবিদ প্রতিদিন একাজ টা করে। কারণ আবিদ বাবার কষ্টটা ভালো করে বুঝতে পারে।
সেই তিন বছর বয়স থেকেই দেখে আসছে সে। বাবা রোজ সকালে উঠে নামাজ পড়ে ঘরের সব কাজ গুছিয়ে রান্না করে।
আবার অফিস থেকে ফিরে ঘরের সব কাজ গুছিয়ে রান্না করে। বাবার এমন কাজগুলো আবিদের চোখ খুলে দেয়।
তাইতো আবিদও বাবাকে যথেষ্ট সাহায্য করে।সেও তার বাবার মতো সব কাজ গুছিয়ে করতে ভালো বাসে।
বাবা ছেলের এমন সংসার খুব ভালোই চলে।
আমিন সাহেব যেমন আবিদকে বুঝতে দেয় না মা হারানোর কষ্ট তেমনি আবিদও বুঝতে দেয়না স্ত্রী হারানোর কষ্ট।
যদিও মাঝেমাঝে তারা কষ্ট অনুভব করে পরক্ষণে আবার দুজন দুজনার কথা ভেবে কষ্ট ভুলে যায়।
আমিন সাহেব আবিদের যেমন বাবা মায়ের দায়িত্ব পালন করে তেমনি ছেলে হয়ে আবিদও বাবাকে যথেষ্ট দায়িত্ব পালন করতে থাকে।
এভাবে প্রতিদিন বাবা ছেলের সংসার জীবন পার হতে থাকে।