শ্রাবণীর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে অল্প কয়েকদিন হলো। বাবা মার পছন্দেই শ্রাবণীকে বিয়ে করেছি। এখন দেখছি আমার মা শ্রাবণীর প্রতি তেমন সন্তুষ্ট না। মাঝে মাঝে শ্রাবণীকে অনেক শক্ত শক্ত কথা বলে ফেলে আর শ্রাবণী মুচকি হেসে এই শক্ত কথাগুলো খুব সহজেই হজম করে নেয়। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় আমি শ্রাবণীর হয়ে কথার উত্তর দেই কিন্তু পারি না কারণ গর্ভধারিণী মা বলে কথা।
আমার চাকরির প্রমোশন হলো। বাসায় মিষ্টি নিয়ে আসলাম সবার জন্য। শ্রাবণী মিষ্টি পছন্দ করে না। আইসক্রিম খুব পছন্দ করে। তাই ওর জন্য আলাদা করে আইসক্রিম আনলাম। মিষ্টির প্যাকেট গুলো ছোট বোনের হাতে দিয়ে আমি আইসক্রিমের প্যাকেট-টা নিয়ে আমার রুমে গেলাম। পর দিন সকালে দেখি মা শ্রাবণীকে বলছে,
~তোমার জামাইয়ের তো প্রমোশন হয়ছে। এখন থেকে তোমরা জামাই বউ মিলে দরজা বন্ধ করে রসগোল্লা সন্দেশ খাবে আমরা তো এইগুলো চোখেও দেখতে পাবো না।
শ্রাবণী কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলো। ও ভেবেছিলো আমি ওর হয়ে কিছু একটা বললো কিন্তু আমি কিছু বলতে পারিনি, কারণ গর্ভধারিণী মা বলে কথা…
~ প্রচন্ড মাথা ব্যথার জন্য শ্রাবণী সারারাত ঘুমাতে পারেনি। শেষ রাতের দিকে একটু ঘুমিয়ে ছিলো। কিন্তু সকাল ৭ টার সময় মা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শ্রাবণীকে ডাকতে লাগলো। শ্রাবণী ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে মাকে বললো,
– কি হয়েছে মা?
মা চিৎকার করে বলতে লাগলো,
~ বাপের বাড়ি থেকে কি ৮ -১০ টা কাজের মেয়ে নিয়ে এসেছো যে ওরা কাজ করবে আর তুমি নাক ডেকে বেলা পর্যন্ত ঘুমাবে। একটু পর আমার ছেলে অফিসে যাবে আমার মেয়ে ভার্সিটি যাবে আর তুমি এখন পর্যন্ত রান্না ঘরেই যাও নি।
শ্রাবণী কিছু না বলে মাথা নিচু করে চুপ করে রইলো। আর আমি মার সব কথা শুনার পরেও না শোনার অভিনয় করে চুপ করে শুয়ে রইলাম কারণ গর্ভধারিণী মা বলে কথা। মাকে কিছুই বলা যাবে না…
পারিবারিক একটা অনুষ্ঠান উপলক্ষে আমি সবাইকে শপিং করার জন্য টাকা দিলাম শুধু শ্রাবণী বাদে। সবাই শপিং করলো আর আমি শ্রাবণীর জন্য নিজে পছন্দ করে একটা শাড়ি কিনে আনলাম। যখন শ্রাবণীকে শাড়িটা দিবো তখন আমার বোন শাড়িটা দেখে পছন্দ করে ফেলে আর শাড়িটা নিয়ে নেয়। শ্রাবণী আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো কিন্তু আমি কিছু বলি নি কারণ আমার নিজের বোন বলে কথা…
সেদিন দেখি আমার বোন শ্রাবণীকে বলছে,
~ ভাইয়ার যদি আগে প্রমোশনটা হতো তাহলে কখনোই তোমাদের মত নিম্নমানের পরিবারে আমার ভাইয়াকে বিয়ে করাতাম না।
কথাটা শুনে শ্রাবণী চুপচাপ চলে গেলো আর আমি বোনের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটু হাসলাম। নিজের আপন বোন বলে কথা..
খাবার টেবিলে বসে বাবা চিৎকার করে বলতে লাগলো,
~ এই তরকারী কে রান্না করছে?
শ্রাবণী কিছুটা ভয় ভয় চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
– বাবা, আমি রান্না করেছি।
বাবা তখন বললো,
~ এইসব কি তরকারী রান্না করেছো খাবার মুখে দেওয়া যায় না। তোমার মা কি তোমায় রান্না বান্না কিছুই শিখাই নি?
শ্রাবণী চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো আর আমি একমনে খাবার খেতে লাগলাম। জন্মদাতা পিতা বলে কথা….
~~ বাথরুম থেকে এসে শ্রাবণী অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– তুমি জামা কাপড় সব ব্যাগের ভিতর রাখছো কেন?
আমি সেই কথার উত্তর না দিয়ে শুধু বললাম,
— তুমি তৈরি হয়ে আসো আমি নিচে যাচ্ছি..
আমি বাবা মাকে সালাম করে বললাম,
— তোমরা আমার জন্য দোয়া করো..
মা হাসতে হাসতে বললো,
– তোর কি আবার প্রমোশন হয়েছে?
আমি মার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম,
— না মা প্রমোশন হয় নি তবে তোমাদের ছেলে কিছুটা বুঝতে শিখেছে। আমি ছোট একটা বাসা ভাড়া নিয়েছি আজ থেকে আমি শ্রাবণীকে নিয়ে ঐ ভাড়া বাসাতেই থাকবো।
মা রেগে গিয়ে বললো,
– শেষ পর্যন্ত তুইও অন্য ছেলেদের মত বউয়ের গোলাম হয়ে গেলি?
আমি মাকে বললাম,
— না মা বউয়ের গোলাম হই নি। শুধু বউকে তার প্রাপ্য সম্মানটা দিচ্ছি। একটা বার চিন্তা করে দেখো তুমি শ্রাবণীর সাথে যা যা করেছো তোমার মেয়ের সাথে যদি সেই একই কাজ গুলো তার শ্বাশুড়ি করে তাহলে তোমার কেমন লাগবে?
বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম,
— আচ্ছা বাবা, আজ আমার ছোট বোন যদি রান্না করতো আর সেই রান্না যদি খারাপ হতো তাহলে কি তুমি আমার ছোট বোনকে এইভাবে বকাঝকা করতে পারতে যেভাবে শ্রাবণীকে বকেছো? বাবা সব রান্না সবদিন সমান হয় না। একটু ভুল হতেই পারে তাই বলে ওকে বকাঝকা না করে একটু ভালো করে বুঝিয়েও তো বলতে পারতে…..
ছোট বোনকে বললাম,
— দেখ বোন, তুইও কোন একদিন অন্য বাড়ির বউ হবি। তখন যদি তোর স্বামীর দেওয়া উপহারটা কেউ কেড়ে নেয় তখন বুঝবি কতটা কষ্ট হয়। তুই এখন ভার্সিটিতে পড়িস তোর বুঝা উচিৎ কাউকে ছোট করে কেউ কখনো বড় হয় না…
~ ছেলে বিয়ের পর মা বাবা থেকে আলাদা হয়ে পরে শুধু বউয়ের দোষে না মাঝে মাঝে বাবা মারও দোষ থাকে। কিছু বাবা মা কখনো মানতেই চাই না ছেলের বউও মেয়ের মত। তোমরা আমার বাবা মা তোমাদের উপর অবিচার করতে পারি না কিন্তু আমার স্ত্রী তো আমার অর্ধাঙ্গিনী আমার শরীরের অর্ধেক অংশ তার প্রতি কি করে অবিচার করি? একটা মেয়ে তখনি সবচেয়ে বেশি অসহায় হয়ে পড়ে যখন দেখে তার প্রতি অবিচার হচ্ছে অথচ তার স্বামী চুপ করে আছে।
যে মেয়েটা সবাইকে ছেড়ে একটা অচেনা অজানা মানুষকে বিশ্বাস করে এসেছে তাকে কি করে অসম্মান করি…
আমি চেষ্টা করবো সন্তান হয়ে তোমাদের প্রতি আমার কর্তব্য পালন করতে সেই সাথে চেষ্টা করবো আমার স্ত্রীকে তার প্রাপ্য সম্মানটা দিতে…
পিছনে ফিরে দেখি শ্রাবণী দরজায় দাঁড়িয়ে অনবরত কান্না করছে। আমি শ্রাবণীর চোখের জলটা মুছে ওর কানে কানে বললাম,
— আরে পাগলি কাঁদে না। মাঝে মাঝে কাছে আসার জন্য হলেও একটু দূরে যেতে হয়। আমি কোথাও বাসা ভাড়া নেই নি। অনেকদিন ধরে শ্বশুরবাড়ি যাওয়া হয় না এই সুযোগে শ্বশুরবাড়িও যাওয়া হলো আর বাবা মার শিক্ষাটাও হলো….