আমি জিহান একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছি।ভার্সিটি তে আমি রেগুলার আসতাম না।তবে এখন আসি শুধু একটা মেয়ের জন্য ।মেয়েটির নাম লামিয়া।আহামরি সুন্দরী না লামিয়া তবে চেহারাই আর্ট আছে তাই দেখতে সুন্দর লাগে। তবে বড়লোক বাপের একমাত্র মেয়ে তো তাই একটু বেশিই বদরাগী।বেশি বললেও ভুল হবে অতিরিক্ত রাগি। সামান্য কারণে এক ছেলেকে কিছুদিন আগে স্যান্ডেল দিয়ে মেরেছিলো।
অবশ্য আমার ওকে ভালো লাগার আরেকটি কারণ আছে। ওর বাবা আর আমার বাবা বিজনেস পার্টনার আর ওনারা আমাদের দুজনের বিয়ে ঠিক করে রেখেছেন ।এই ব্যাপার লামিয়া না জানলেও আমি জানি।আমি কখনোই এগুলো বিষয় ওকে বলিনি।আমি চেয়েছিলাম সম্পুর্ন অচেনা একজন হয়ে ওর জীবনে আসতে।তাই তো ওর পিছু নিতাম সব সময়। ওর আশেপাশেই থাকতাম সবসময়।লামিয়া বিষয়টি বুঝতে পেরেছিল তবে ও আমাকে কিছুই বলেনি দেখে আমি ভেবেছিলাম যে লামিয়াও আমাকে পছন্দ করে।
একদিন ক্যাম্পাসে এসে বসে আছি লামিয়ার এক বান্ধবী এসে আমাকে বলল যে লামিয়া আমাকে বলতে বলেছে যে আমি যদি সাহস করে পুরো ক্যাম্পাসের সামনে ওকে ভালোবাসার কথা জানাতে পারি তাহলে ও আমার সাথে প্রেম করবে। আমি তো এই কথা শুনে খুব খুশি হয়েছিলাম।আমি লামিয়ার বান্ধবীকে বললাম এটা কোন বিষয় নাকি চলো আমি এক্ষুনি গিয়ে ওকে প্রপোজ করব।
গিয়ে দেখি লামিয়া বসে আছে।বুকটা কাঁপছিল ,পুরো ক্যাম্পাসের সামনে প্রপোজ করতে হবে একটা সাহসের বিষয় আছে এতে তাই।আমি খুব সাহস করে লামিয়ার কাছে গিয়ে ওকে ডাক দিলাম। লামিয়া উঠে দাঁড়াতেই আমি হাটু গেড়ে হাতে থাকা ফুল নিয়ে ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম লামিয়া আমি তোমাকে ভালোবাসি। লামিয়া ওর ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে আমার হাত থেকে ফুল নিয়ে আমাকে উঠে দাঁড়াতে বলল।উঠে দাঁড়ানোর সাথে সাথেই লামিয়া আমাকে কোষে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলল,লজ্জা করে না তোর আমার পেছনে ঘুরতে? আর কখনো যদি তোকে দেখেছি আমার পেছনে ঘুরতে তাহলে তোকে স্যান্ডেল দিয়ে মারবো। বলেই লামিয়া চলে গেল ।পুরো ক্যাম্পাস এখন আমাকে দেখছে।অনেকেই মিটিমিটি হাসছে।কখনো ভাবিনি এভাবে অপমানিত হব।তাই সাথে সাথে সেখান থেকে চলে আসি। রাতে বাবা অফিস থেকে ফিরতেই বাবাকে বললাম “বাবা আমি লামিয়াকে বিয়ে করব না।” বাবা আমার কথা শুনেই বললেন “কেন বাবা কি হয়েছে যে হঠাৎ করেই এই কথা বলছিস? তুই কি অন্য কোন মেয়েকে পছন্দ করিস ?”
:-না বাবা তেমন কোন বিষয় না।আমি বিয়ে করব না ব্যস!আমি অস্ট্রেলিয়া চলে যাবো ভাইয়ার কাছে।
:-আচ্ছা বাবা তুই যা ভালো মনে করিস ।আমি লামিয়ার বাবার সাথে এই বিষয়ে কথা বলব।
বাবা আমাকে খুব ভালো করেই চিনেন।তিনি জানেন যে যে কাজে আমি একবার না বলব সেই কাজ আমি কখনোই করব না।তাই তিনিও খুব বেশি একটা কথা বলেননি। আমি আর ভার্সিটি যাই না। আমার পাসপোর্ট ভিসা সব রেডি করে দিয়েছেন বাবা।আর এক মাস পরেই আমি দেশ ছেড়ে চলে যাবো।কিন্তু এর মাঝেই আমার সাথে গুরুতর এক ঘটনা ঘটে গেল।আমি গাড়ি নিয়ে লং ড্রাইভে বেরিয়েছিলাম কিন্তু অন্যমনস্ক হয়ে গাড়ি চালানোর জন্য আমি এক্সিডেন্ট করি।
এক্সিডেন্টে আমার পায়ের হাড় ভেঙে যায় আর হাতের হারে চির ধরে।প্রায় দুই সপ্তাহ বেহুশ ছিলাম। জ্ঞান ফিয়ে আরো খানিকটা সুস্থ হতে আমার আর এক সপ্তাহ লেগেছিলো। আমার অস্ট্রেলিয়া যাওয়া ক্যান্সেল হয়ে যায়। কিন্তু এর মাঝেই আমার বন্ধু রাকেশ আমাকে একটা খবর দেয় যে শুনে আমার অবস্থা আবার বেহুশ হওয়ার মত হয়ে গিয়েছিলো। পুরো ক্যাম্পাসে নাকি এই খবর ছড়িয়েছে যে আমি নাকি লামিয়ার জন্য আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম। আমি এটা শুনে রাকেশ কে বললাম যে “লামিয়া এই বিষয়ে কিছু জানে”? রাকেশ বলল ও জেনেছে আর তোর সাথে দেখাও করতে এসেছে ।আমি বললাম ওকে আসতে বল ভেতরে। লামিয়ালে ডাক দিয়েই রাকেশ চলে গেল।লামিয়া আমার বেডের পাশে এসে চুপচাপ বসে আছে।কিছু বলছে না।তাই আমিই বলা শুরু করলাম।
আমি:- কিছু বলবে?
লামিয়া:-(কেঁদে দিয়ে) আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ আমায় জানতাম না তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো যে আমার জন্য প্রাণ দিয়ে গিয়েছিলে।আমি তোমার ভালোবাসা বুঝতে পারিনি।তোমার এক্সিডেন্ট এর কথা শোনার পর আমার খুব কষ্ট হয়েছিলো।তখন বুঝেছিলাম কতটা ভালোবাসো আমাকে।তোমাকে এই কয়েকদিনে আমি খুব ভালোবাসে ফেলেছি।(লামিয়া আমার হাত ধরে কথা গুলো বলছে আর কাঁদছে)
আমি:- যদি বলি আমি তোমার জন্য আত্মহত্যা করতে যায়নি।নিজের ভুলে এক্সিডেন্ট করেছিলাম,তাহলেও কি আমাকে ভালোবাসবে?
লামিয়া:-তবুও ভালোবাসবো।
আমি আর কিছু বললাম না।মেয়েটি আমার হাত ধরে আছে।আর আমার দিকে তাকিয়ে সেই ভুবন ভোলানো হাসি দিচ্ছে।এক্সিডেন্ট করে দুইটা জিনিস পেলাম একটা নিজের জীবন আর আরেকটা আমার ভালোবাসা লামিয়া। যাকে নিয়ে আমি হাজারো স্বপ্ন বুনেছি।