বড়ভাই

বড়ভাই

আমি যাচ্ছি আজ দেশে। হ্যা কাউকে কিছু না জানিয়েই যাচ্ছি দেশে। খুব একটা সময় পাইনি কেনাকাটা করার। এক দিনের মধ্যেই ছুটি, টিকিট, কেনাকাটা সব সারতে হলো হ্যা আমি সৌদি আরব থেকে পাঁচ বছর পর বাড়ি যাচ্ছি। মা আমার জন্য আজ পর্যন্ত অনেক চোখের পানি ফেলেছে কিন্তু পারেনি আমাকে দেশে ফেরাতে। আমার পৃথিবী যে বাবা। বাবা জানে আমার কষ্টটা কতটুকু। তাই কোনোদিনও আমায় মুখফুটে বলেনি বাবা বাড়ি ফিরে আয়। কিন্তু আজ কাউকে কিছু না বলে ফিরতে হচ্ছে আমায়। আমাকে যে ফিরতেই হবে, আমি যে বড়ভাই ১৯ বছর বয়সে নিজের ভালোবাসাকে মাটিচাপা দিয়ে একবুক কষ্ট নিয়ে প্রিয় মাতৃভূমি ত্যাগ করেছিলাম। তার পর থেকে পাঁচটি বছর বুকে পাথর চাপা দিয়ে বেঁচে ছিলাম। প্রিয় মানুষটার অসংখ্য ছবি, ব্যবহার করা কিছু টিসু, একটা ভাঙা মোবাইল আর তার গন্ধমাখা একটা চুল সঙ্গী করে পাঁচ বছর পার করে ফিরছি আজ এয়ারপোর্টে এসে কেন জানিনা খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে। বুকের বা পাশটায় একটু চিনচিন ব্যথা করছে। অনেক অস্থিরতা কাজ করছে আমার মধ্যে। বিমানে পা রাখার সাথে সাথেই শরীরটা কাঁপতে শুরু করলো।

বিমানে বসে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতে লাগলাম আমাকে সাহোস দাও, আমি যেন সুস্থভাবে বাড়ি পৌছতে পারি। কেন এমন ভয় হচ্ছে আমার..?? আজ খুব বেশি মনে পড়ছে আমার বিসর্জন দিয়ে আসা সেই ভালোবাসাকে। তাকে যে দেখতে ইচ্ছে করছে। তাকে যেভাবে বুকে জড়িয়ে রাখতাম ঠিক সেইভাবেই আজ জরিয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে। এই ভেবেই কষ্ট হচ্ছে যে তাকে কখনো দেখা হবে না আর বুকেও জড়াতে পারবোনা বিমানের ছয় ঘন্টার ভ্রমণ, হয়েছে মাত্র এক ঘন্টা। মনে হলো এক দিনেরও বেশি সময় হয়ে গেছে। কখন শেষ হবে এই জার্নি..?? আমার যে আর ভালো লাগছে না। বাড়িতে একটা ফোন করতে ইচ্ছে করছে। তাও যে সম্ভব না, বিনান অনেকটা দূর পৌছে গেছে নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না। কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। মাথাটা অনেক ব্যথা করছিলো ঘুমইনি দুই দিন। আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছিলো। মাথা ব্যথার একটা ট্যাবলেট খেয়ে নিলাম। আর কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম বুঝতেই পারিনি। নামার সময় এক সহযাত্রী জাগিয়ে দিলেন আমাকে। যাক ভালো হলো ঘুমিয়ে পরেছিলাম, নয়তো এই লম্বা জার্নি সহ্য হত না এয়ারপোর্টের ভেতর থেকে একটা টেক্সি ভাড়া করে সোজা সাহাবাগের ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল এর নিচে নামলাম আর দৌড়ে নয় তলায় উঠলাম।

ICU এর সামনে দেখি মা, বাবা, বোন সহ আরো অনেক আত্মীয়স্বজন দাঁড়িয়ে আছে। সবাই কেমন কান্নায় ভেসে পড়েছে। হ্যা আমার কলিজার টুকরা ভাই আমার স্বপ্ন এখন হাসপাতালের বিছানায় পড়ে আছে গভীর পর্যবেক্ষণে। সবাই অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেছে আমার অপু আর বাচঁবে না। দুই দিন হলো অপু ICU-তে পরে আছে। ওকে একটা CNG খুব আলতো একটা ধাক্কা দিয়ে বাসের সামনে ফেলে দেয় আর তাতেই আমার অপুর রক্ত ঝরেছে অঝরে দুই দিন অনেক চেষ্টায়ও রক্ত যোগার হয়নি। রক্তের গ্রুপ যে O(-) আর যা খুবই দুর্লভ। আর তাই এখন নিষ্প্রাণ হতে চলেছে অতি চঞ্চল অপু। কিন্তু আমিতো বড়ভাই, কিভাবে মরতে দেই কলিজার টুকরা ছোটভাইকে সবাই যখন কান্নার বন্যায় ভাসছিলো তখন কেন জানিনা আমার মনে কোন ভয় কাজ করছিলো না।

ভয় কাজ করবে কেন আমিতো বড়ভাই। আর সমস্যাটা যখন রক্তের তখনতো ভয়ের প্রশ্নই উঠেনা। আমরাতো এক মার পেটেরই ভাই। একই রক্ত মাংস খেয়ে জন্ম নিয়েছি। রক্ততো এক হতেই হবে। এক দৌড়ে চলে গেলাম ডাক্তারের কাছে। ডাক্তারকে বললাম নিয়ে নিন সব রক্ত ফিরিয়ে দিন আমার ভাইকে। ডাক্তার কোন কথা ছাড়াই আমার রক্ত পরিক্ষা করলেন। হ্যা হ্যা মিলেছে রক্তের গ্রুপ। মিলতে যে হবেই, আমি যে বড়ভাই। হ্যা বাচবে আমার ভাই ভাইয়ের পাশের বেডে শুয়ে পড়লাম। আমার রক্ত আস্তে আস্তে প্রবেশ করছে ওর শরীরে। আজ অতীতের দিন গুলি খুব মনে পড়ছে। অপু খাবার বেলায় ওস্তাদ ছিলো। ওর সময় অসময় খিদে লাগতো। আমি স্কুলে যাওয়ার সময় গাড়ি ভাড়া আর টিফিনের জন্য যে টাকা পেতাম তা খরচ করতাম না। যদি অপুর খিদে লাগে। আমি থাকতে অপু খুদায় কষ্ট পাবে তা কি করে হয়…?? আমিতো বড়ভাই অপু খুব ভালো ফুটবল খেলতো। নিজেকে ভাবতো রোনালদিনহো।

এলাকায় বয়সে অনেক ছোট হলেও ফুটবল খেলায় সবার বস ছিলো আমার অপু। আমি ক্রিকেট খেলার প্রতি আসক্ত ছিলাম। বলা যায় ক্রিকেট আমার জন্য নেশার মত ছিলো। আমি অনেক ভালো ভালো জায়গায় ক্রিকেট খেলার জন্য ডাক পেতাম। কিন্তু অপুকে ছাড়া কখনো খেলতে যেতাম না। অপু ক্রিকেটও ভালো খেলতো। আর আস্তে আস্তে ক্রিকেটের সবার সাথে পরিচিত হতে থাকে। সপ্তাহে একদিন তাদের সাথে ফুটবলও খেলতো। আর আস্তে আস্তে আমার ক্রিকেট দুনিয়াকে ধ্বংস করে দেয় অপু। সব জায়গায় শুরু হয়ে যায় ফুটবল খেলা। বন্ধ হয়ে যায় আমার ক্রিকেট খেলা। আর কি করার অপু যেখানেই খেলতে যেত আমি দর্শক হিসেবে যেতাম। সব সময় পকেটে টাকা রাখতাম। যেন অপু রিক্সায় করে যাতায়াত করতে পারে, অপুর যা খেতে ইচ্ছে করে তা যেন খেতে পারে। আমি তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। দেখি যে না অপুর চাহিদা পূরণ করার মত টাকা আমার কাছে আর হয় না।

আমার বান্ধবি আমাকে প্রায়ই বলতো দোস্ত তুইতো অনেক ভালো বুঝাইতে পারিস প্লিয দোস্ত আমার ছোট বোনটাকে তুই বাসায় যেয়ে পড়া না। একদিন আবার সেই একই কথা বলতেই, বললাম পড়াবো তোর বোনকে। মাসে এক হাজার টাকা পেতাম সেখান থেকে। আস্তে আস্তে অপুর খরচও বাড়তে লাগলো আর আমার ছাত্র/ছাত্রী ও বাড়তে লাগলো। অপু কিছু দিন পর পরই নতুন টি-শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবী মোট কথা শুধু নতুন নতুন জামা কাপড় কিনতো। বাসা থেকে ওর কোনদিন কিছু চাওয়া লাগতো না। আমি অপুর সব সখ পূরণ করতাম। নইলে যে ওর মন খারাপ হতো। আর আমি থাকতে ওর মন খারাপ হতে দেই কি করে। আমি যে বড়ভাই ঈদ ছিলো সবার জন্য আনন্দময়। আমার জন্যও ঈদ ছিলো আনন্দের তবে কিছুটা অন্যদিক থেকে আর সেটা ছিলো বেশি আনন্দের। হ্যা প্রতিবছর ঈদেই আমাদের জামা কাপড় কেনার জন্য একটা বাজেট করা হত। কিন্তু আমি সেই বাজেটে গড়মিল করে দিতাম।

আমি আজ পর্যন্ত কোন ঈদে কেনাকাটা করিনি। আমার আর অপুর জন্য যে টাকাটা বরাদ্দ থাকত সেটা শুধুই অপুর জন্য খরচ করতাম। কারণ আমি কেনাকাটা না করলে অপু একটু মন খুলে কিনতে পারতো। আর অপু মনের মত কেনাকাটা করতে পারলে ওর মুখে হাসিটা যে খুব বড় করে ফুটে উঠতো। আর এই হাসিটা ফোটাতেই তো আমি বড়ভাই তবে একটা জিনিস আমি কোনোদিনও অপুকে দেই নি। সেটা হল ঈদ সালামির টাকা। আমার পুরো বংশে আমি সবার বড় ছেলে। সারা বছর আমার কথা কারো মনে না থাকলেও ঈদের দিন সবার মনে পরতো বড় ছেলে কিন্তু আছে। এর মানে হল ঈদ সালামি স্বরুপ আমার জন্য বেশ মোটা অংকের টাকা। এই টাকাটায় কেউ কোনোদিন হাত দেওয়ার সাহোস পায়নি। কারণ এতে নজর থাকতো বাংলার রিনা খানের। মানে আমার ছোট বোন জেনিয়া এই টাকাটা একাই নিয়ে নিত। আর মোটামুটি বংশের সবাই ওকে একটু ভয় পেয়েই চলত। হ্যা আমাকে যে বোনের খুশিটাও দেখতে হয়।

আমিতো বড়ভাই আমি বহুদূর পথ পাড়ি দিয়ে এলাম। ভীষণ ক্লান্ত আমি। ডাক্তার এক ব্যাগ রক্ত নেয়ার পর আমাকে বললেম আর রক্ত নেওয়া সম্ভব নয়। আপনার শরীর যথেষ্ট দূর্বল। আমার যে মনে ভয় যেগে উঠলো। ডাক্তার কে জিজ্ঞেস করলাম আর কত রক্ত লাগবে। ডাক্তার বললো আপাতত ১২ ঘন্টা রোগীর কোন সমস্যা হবে না। তবে ১২ ঘন্টা পর আরো এক ব্যাগ রক্ত লাগবে। তারপর অবস্থা বুঝে দেখা যাবে আরো রক্ত লাগবে কিনা। ডাক্তার আমাকে বিশ্রাম নিতে বলে চলে গেলেন। আমি সবার চোখের আড়াল হয়ে হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে পরলাম। মাথাটা অনেকটাই ঝিমঝিম করছিলো। শরীরে সামান্য শক্তি নেই। খুঁজতে শুরু করলাম আমার সব বন্ধুদের। একে একে প্রায় সব বন্ধুর কাছেই পৌঁছালাম। কিন্তু লাভ হলো না। কিন্তু আমি যে থেমে থাকতে পারবো না। প্রশ্নটা যে আমার অপুর জীবনের। এবার ছুটলাম ব্লাড ব্যাংকের দরজায়। সেখানেও একই কথা রক্ত নেই আর কিছু করার নেই ভাবার মত যথেষ্ট সময়ও নেই।

তাই বন্ধু শুভকে বললাম অপুর মেডিকেল পেপার গুলো নিয়ে নিচে আয়। অর বাইকে বসে আবারও সেই ব্লাড ব্যাংকে। এবার আমি অপেক্ষায় রলাম কখন শিফট পরিবর্তন হবে। কারণ আগেই ব্লাড ব্যাংকে একবার এসেছিলাম আর দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা আমাকে দেখলে চিনে ফেলবে। ৩ ঘন্টা পর হল শিফট পরিপর্তন আর সাথে সাথেই আমি গেলাম সেখানে রক্ত বিক্রি করার জন্য। আমার চেহারার অবস্থা দেখে তারা ভেবেছিলো নেশাখোর। নেশা করার জন্য রক্ত বেচতে এসেছি। খুব অল্প টাকা দিতে রাজি হল। আমিও বললাম আলহামদুলিল্লাহ। আমার রক্ত নেওয়া শেষ হতেই আমি বেড়িয়ে পাঠালাম শুভকে যা পেপার গুলো দেখিয়ে রক্ত নিয়ে আয়। টাকা যতই বলুক সাথে সাথে নিয়ে নিবি। মোটা অংকের টাকা দিতে রাজি হওয়ায় সাথে সাথেই রক্ত দিয়ে দিলো।

রক্ত নিয়ে এবার চললাম হাসপাতালের দিকে। কিন্তু এখন এতটাই খারাপ লাগছে যে মনে হচ্ছে যেকোনো সময় বাইকের পেছন থেকে পরে যাবো। শরীরের সব শক্তি দিয়ে শুভকে ধরে রাখলাম। এখন আল্লাহর কাছে শুধু প্রার্থনা করছি আল্লাহ শেষবারের মত মায়ের কোলে পৌছানোর শক্তিটুকু দিয়ো। মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। তার যে অনেক চোখের পানি ঝরিয়েছি। আল্লাহ আরেকটু সময় দাও। আমি যে দেশের মাটিতে পা রেখে এখনো বাবার পায়ে চুমু খাইনি। হে আল্লাহ আমার বোনের হাতে গত পাঁচ বছরের সালামির টাকা পৌছায় দিতে পারিনি। বোনের কাছে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বাচিয়ে রেখো আল্লাহ হ্যা আল্লাহ ডাক শুনেছে।

আমি এখন হাসপাতালের নিচে আছি। শুভ আমাকে নিয়ে লিফটে উঠলো। আমি আর পারছিনা, শুয়ে পড়লাম লিফটে। শুভকে বললাম একটু ক্লান্ত লাগছে ব্যাস। লিফটের দরজা খুলতেই শুভ দৌড়ালো ডাক্তারের কাছে। আমি দাঁড়াতে পারছি না। আল্লাহ আল্লাহ করছি শুধু। আল্লাহ মায়ের মুখটা দেখতে দিয়ো। অনেক কষ্ট করে অপুর রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এখন আর ঠিক মত দেখতে পাচ্ছি না। আল্লাহ আল্লাহ রে বাপের পায়ে মাথা রাইখা মরার সুযোগটা দে। আল্লাহ তোমার কাছে কোনদিন কিছু চাই নাই আমি। আমার শেষ ইচ্ছাটা পূরণ করো আল্লাহ। আমাকে আর একটু সময় দাও। নইলে বোন যে সালামি না পেয়ে রাগ করবে। সামনে আফছা আফছা দেখছি। আফসা হলেও ঠিক বুঝতে পারছি সামনে মা আছে। মা দৌড়ে এসে আমাকে বুকে জড়ায় নিলো। মায়ের বুকে কি শান্তি আল্লাহ। একটুও কষ্ট হচ্ছে না গো আল্লাহ। বাবা দৌড়ে এলো দৌড়ে এলো বোন এলো সবাই।

ওরে আয় তোরা সবাই ছুটে আয় আমার শেষ সময় যে চলে যায় ঝরাইছি মায়ের চোখের অনেক পানি আল্লাহ কবরে না এই পাপের ক্ষমা জানি আল্লাহ আমার ভালবাসার মানুষটারে দিও তুমি সুখ আল্লাহ আমার অপু যেন সুস্থ হয়ে ভরে দেয় মায়ের বুক দোয়া করি চোখের মনি ছোট বোন যেন রাখে বাবার মুখ আমার বাবা যেন সবার ছাতা মত বেঁচে থেকে লক্ষ কোটি যুগ ব্যর্থ জীবন আমার, আমি কিছুই করতে পারি নাই তাই আল্লায় পরের জন্মে আবার বানাইয়ো আমায় বড়ভাই বাবা আমাকে বুকে জড়ায় কাঁদতে শুরু করলো। আমি আমার হাতটা উঠানোর মত শক্তি পাইতেছি না। তবুও খুব কষ্ট করে মানি ব্যাগটা বেড় করে বোনের হাতে তুলে দিলাম। আর বাবাকে বললাম দোয়া করো যেন আবার তোমার ছেলে হয়ে জন্মাতে পারি। শেষ বারের মত বাবার পায়ে একটা চুমু দিয়েও দিলাম। হাহ খুব আনন্দ হইতেছে। আর কোনো কষ্ট নাই আমার। বাবা সাথে সাথেই আমাকে কোলে তুলে নিয়ে দৌড়াতে শুরু করলেন। তবে আর নিজেকে আটকাতে পারলাম না।

বন্ধহয়ে গেলো আমার দুইচোখ জানেন ভালবেসে কষ্ট পেয়েছিলাম। সেই কষ্টের চেয়েও লক্ষ কোটি গুণ আনন্দ হয়েছিলো যখন বাবার কোলে চোখ দুটো বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু নাহ চোখ দুটি যে আমাকে আবারও খুলতে হয়েছিলো। আমি কিন্তু মরিনি বেঁচেই আছি। মা-বাবার হাত যে সন্তানের মাথার উপর থাকে তাকে কি মৃত্যু স্পর্শ করতে পারে নাকি ৩৬ ঘন্টা শুয়ে ছিলাম হাসপাতালের বিছানায়। ৩৬ ঘন্টা পর চোখ খুলে দেখি অপু আমার সামনে বসে আছে। হ্যা অপুকে যে শেষবারের মত দেখা হয়নি। আর তাইতো আল্লাহ আমাকে বাচিয়ে রেখেছে। আমার বাচার সম্ভাবনা নাকি ছিলই না। আর এখনো আমাকে রক্ত দেওয়া হয়নি। বেচে উঠলাম নাকি ১৬ বোতল স্যালাইনে। এখন নাকি বিশ্রাম করতে হবে দুই মাস। যাক তবুয়ো আমার শেষ কথাটাও আল্লাহ শুনে নিলো। ঐ বাবার সন্তান হয়েই নতুন করে জন্ম নিলাম। আমাকে দেখতে পেয়ে অপু কত খুশি। মা পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে, বাবা চোখ মুছছে। বোন বললো ভাই অপুতো তোর জান। তাইলে তোর মানি বেগে আমার ছবি কেন?

বোনটারে কেমনে বুঝাই আমি যে বড়ভাই। তোরা দুইজনই যে আমার জীবন। বললাম আমার মনের মধ্যে একজনেরই ছবি আছে। আর তা কোনদিনও কেউ বুঝবে না। জানি এই কথা শোনার পর অপু আর জেনিয়া দুই জনই ভাববে আমি দুই জনেরই ছবি রাখছি। মা ভাবছে মনের মধ্যে আমার সেই কষ্ট দেওয়া ভালবাসার মানুষটার ছবি। বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো। কারণ একমাত্র বাবাই বোঝে বুকের খাচায় যে ছবিটি ধরে রেখেছি সেটা যে আমার জন্মদাত্রী মায়ের। নার্স এসে সবাইকে বললো রোগীককে বিশ্রাম নিতে দিন সবাই বাহিরে যান। সবাই চলে গেলো। কিন্তু আমি অপুর হাত ছাড়িনি। আমি নার্সকে বললাম শুধু পাঁচটা মিনিট। নার্সের চোখেও একটু পানি দেখলাম। বললো আচ্ছা ঠিক আছে। এর মানে সবাই যেনে গেছে রক্তের জোগাড় হয়েছিলো কোথা থেকে জানেন কেন আটকালাম অপুকে..?? আরে অপু আমার চোখকে ফাঁকি দিতে চেয়েছিলো। ও কি ভুলে গেলো নাকি, আমি বড়ভাই। আমি খুব ভাল করেই লক্ষ করেছিলাম অপু হাসলেও ওর মনে আনন্দ নেই

আমিঃ ভাই আমাকে বলবি না??

অপুঃ কি বলবো??

আমিঃ অপু তোর মন খারাপ কেন ভাই??

অপুঃ আরে তোর কি মাথা খারাপ হইলো নাকি?? দেখ আমিতো ঠিকই আছি।

আমিঃ তুই আমার চোখ ফাঁকি দিতে চাস..??

অপুঃ এই তর সমস্যা, সব জায়গায় এক লাইন বেশি বুঝস আমি কই কিছু হয় নাই। আর তুই কস আমার মন ভালো না। আর এমন একটা কাজ করসস তারপর কেমনে আমার মন ভাল থাকবো তুই ই বল

আমিঃ আচ্ছা অপু আমার মাথায় হাত দিয়া বল দেখি তর কিছু হয় নাই অপু দেখি আর কিছু বলে না। অপুর দুই চোখ থেকে শুধু পানি ঝরে।

আমিঃ হায়রে বলদ কান্দোস কেন..?? আমারে বল কি হইছে। আমি না তোর বড়ভাই। ভাই তোর কি লাগবো তুই খালি বল..?? দেখ তোর ভাই তর জন্য কতটুকু করতে পারে।

অপুঃ ভাই জীবনটাই তো দিলি তুই আর কি দিবি। যা হবার নয় সেটা আর বলে কোন লাভ নাই, বাদ দে।

আমিঃ ভাই ভালো কি হইছে বল আমারে।

অপুঃ আর কি হইবো তোর ভাই না আমি। তুই ছ্যাকা খাইছোস আমি ছ্যাকা খামু না এইডা কি হয়? দেখ পাগলায় কয় কি…??

আমিঃ কস কি এই কারণেই বাসের নিচে গেছিলি নাকি..??

অপুঃ দেখ ভাই মজা নিস না। ৩০ তারিখ ওর বিয়ে। আমি এই ব্যাপার কাউরে জানাই নাই তুইয়ো কাউরে জানাবি না।

আমিঃ আচ্ছা মেয়ে তোরে রাইখা অন্য কাউরে বিয়ে করবে কেন..??

অপুঃ ভাই সবই কপাল। অর্পার বড় বোনের আগে বিয়ে ঠিক হইছিলো। বর যাত্রী আসার সময় দুর্ঘটনায় বর মারা যায়। তারপর থেকে চার বছর হয়ে গেলো মেয়ের বিয়ে হয় না।

আমিঃ তো তোর সমস্যা কি..??

অপুঃ কিছু দিন আগে অর্পার বড় বোনরে দেখতে আসছিলো। তখন ছেলের চাচাতো ভাই অর্পারে পছন্দ করছে। এখন বলছে যদি ছোট মেয়ে দিতে রাজি থাকে তাহলে বড় মেয়েও নিয়ে যাবে একই দিনে। আর অর্পার পরিবার এতে রাজি হয়ে গেছে।

আমিঃ অর্পা কি কইলো??

অপুঃ ও চায় না ওর বোনের বিয়ে আটকাক তাই

আমিঃ থাক হইছে বুঝছি মেয়ে ছ্যাকা দিতে রাজি আছে। শোন ভাই এত চিন্তা করস কেন দেশে মেয়ের অভাব নাই একটা গেছে আরেকটা আইবো।

অপু দেখি কিছু না বলেই চোখের পানি পানি মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেলো ভাই আমার বুঝলোও না। আমি যে খুব ক্লান্ত। এখন তো চার দিন বাকি। দুই দিন আগে বিশ্রাম নেই তার পর না হয় ফুটবল নিয়া মাঠে নামলাম। যাক কিছু বললাম না। দুই দিন হেব্ববি খাইলাম যাতে শরীরে কিছুটা শক্তি পাই। আর চেহারাটাও যেন একটু সুন্দর হয়। কারণ চার দিন পরতো আমার বিয়ে এবার মিশন হইলো হাসপাতাল থেকে পালানো। দিলাম ফোন শুভকে। বাইক নিয়া হাজির। রাতে জানালা ভেঙে পলান দিলাম। আর সাথে চুরি করেছিলাম অপুর ফোন। অর্পার বাসার নিচে যেয়ে ফোন দিলাম। অনেক বার ফোন দিলাম ধরলো না। এইবার একটা ছোট্ট মেসেজ দিলাম “যাচ্ছি তোমার শ্বশুর বাড়ি।” দেখি দৌড়ে বেড়িয়ে এসেছে অর্পা। আবার ফোন দিলাম। বাইরে এসে এবার ধরলো ফোন। হ্যালো বলতেই নিশ্চিত হলাম এই হবে আমার অপুর বউ

আমিঃ আপা মনি একটু এদিকে আসবেন..??

অর্পাঃ (অবাক দৃষ্টিতে) কে আপনি..??

আমিঃ তোমার দুলাভাই

অর্পাঃ ওই ওই ওই মাইর খাওয়ার সখ হইছে নাকি আপনার

আমিঃ এতো কথা না বলে তোমার বোনকে ডাকো। দুই দিন পর বিয়ে। বিয়ের আগে বউটারে একবার অনন্তত দেখি।

অর্পাঃ এই আপনি কি পাগল নাকি..?? আর আপনার কাছে অপুর নাম্বার কিভাবে..??

আমিঃ বুঝতে পারছি, বাসায় ঢুকেই বউ দেখতে হবে।

অর্পাঃ আপনি কিন্তু অনেক বলে ফেলছেন থামেন এইবার

আমিঃ দেখো শালি, শালির মত থাকবা। এতো কথা বলো কেন??

অর্পাঃ প্লিজ বলেন না আপনি কে??

আমিঃ আচ্ছা অনকে হইছে, বুঝছি তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না। চল তোমার আব্বু আম্মুর সাথেই কথা বলি।

অর্পাঃ এই এই কি বলে। আপনি কি পাগল নাকি??

আমিঃ হ্যা তোমার বোনের প্রেমে পাগল যদিও এখনো দেখিনি তোমার বোনকে। পেছন থেকে একজন হাসতে হাসতে বেড়িয়ে এলো। আর এসেই ঘায়েল করে দিলো আমাকে

আমিঃ অই অই অই শুভ অপু কি নাম যেন বলছিলো আমার বউ-এর

শুভঃ অনন্যা

আমিঃ দোস্ত নামে চেহারায় তো মিলা গেছে। এইটাই তাইলে আমার বউ

অনন্যাঃ আচ্ছা আপনি মাটিতে শুয়ে কেন?? ভেতরে এসে বসেন

আমিঃ দেখো দেখো শালি কি ভালো গো আমার বউ। আসলে শরীরে অনেক বেশি শক্তিতো তাই মাটিতে পাচার করতেছি। সে দেখি আবারও হাসে। আসলেই মেয়ে ভারি চমৎকার। আমিতো বরযাত্রী নিয়া আমুই না। আমি মরতে চাই না আমি বিয়া করমুই

আমিঃ আচ্ছা আমি অনু বলে ডাকলে সমস্যা আছে গো তোমার

অনন্যাঃ হুম আছে, আমার বর শুধু আমায় অনু বলবে।

আমিঃ তাইলে তো আমি ছাড়া আর কেউ তোমাকে অনু বলবে না। আচ্ছা অনু আমার মত অধমকে বিয়ে করতে পারবা??

অর্পাঃ আমি কিন্তু এখন আপনাকে মেরে তারাবো

আমিঃ আরে চোপ শালি মুড খারাপ করলে কিন্তু তোমাকে রাইখা শুধু তোমার বোনকে নিয়া ভাগমু অই অনু কিছু বললা কেন??

অনন্যাঃ আমার কিন্তু একবার বিয়ে ভেঙে গেছে

আমিঃ ব্যাপার না আমিও একবার ছ্যাক খাইছি আবার দেখি হাসে

আমিঃ হাহ আমার শালিটার জ্বলে রে আরে শালি আমি তোমার শাওন ভাইয়া। অপুর বড় ভাই। অর্পা আর অনন্যা দুইজনই কেমন জানি একটু টাস্কি খাইয়া গেলো। কিছুই বলে না একজনও

আমিঃ আচ্ছা আমাকে কি বাড়ির ভেতরে একটু বসতে দিবে, আমি অনকে ক্লান্ত। শুভকে ধরে বাসায় ঢুকলাম। অনন্যাকে বললাম আমার শ্বশুর শাশুড়িকে ডাকো। অনন্যা ভিতরে তাদের ডাকার জন্য

আমিঃ অর্পা আমি যদি তোমার বোনকে বিয়ে করি। তুমি ছ্যাকা দিবা না তো আমার ভাইকে

অর্পাঃ আমি জানি না। যদি আপু রাজি থাকে। মা-বাবা যদি রাজি হয় তবে

আমিঃ ব্যাস অনেক হইছে। এইবার আমার কাম আমিই কইরা নিতাছি। বলতে বলতে অনন্যার মা-বাবা বেড়িয়ে এলেন। আমি ক্লান্ত শরির নিয়েই দুই জনকে সালাম করলাম। আমার মুখ দেখেই উনারা বুঝতে পারলেন আমি খুবই অসুস্থ

আমিঃ ছেলে হিসেবে আপনাদের কাছে আজ আমি এসেছি। হ্যা কিছু চাইতে এসেছি আমি।

মেয়ের বাবাঃ হ্যা বল বাবা কি চাও

আমিঃ অপু নামটা নিশ্চয়ই শুনেছেন আপনারা।

মেয়ের বাবাঃ হ্যা শুনেছি

আমিঃ আমি অপুর জন্য অর্পাকে চাই।

মেয়ের বাবাঃ বাবা যদি দিতে পারতাম তবে আমার চেয়ে বেশি খুশিতো কেউ হতো না। দেখো বাবা

আমিঃ ব্যাস ব্যাস আমি বলি আপনি শোনেন। হ্যা আজ আমি এসেছিলাম অপুর জন্য। কিন্তু বিশ্বাস করেন আপনার বড় মেয়েকে দেখে আমার সত্যি অনেক বেশিই ভালো লেগেছে। আমি আপনার বড় মেয়েকে বিয়ে করতে চাই। হ্যা, তবে অনন্যা যদি রাজি থাকে। আর আপনার কাছে এই ওয়াদা করেই আপনার মেয়েকে আমি বিয়ে করবো আপনার বড় মেয়ে ছোট মেয়ের চেয়ে বেশি সুখি হবে। মেয়ের বাবা দুই জনকেই জিজ্ঞেস করলেন কি বলিস তোরা। অনন্যা এতে খুশি। কিন্তু অর্পা একটু ব্রু কুচকে আমাকে জিজ্ঞেস করলো

অর্পাঃ বড় মেয়ে বেশি সুখি হবে কেন?? ছোট মেয়ে কি দোস করছে

আমিঃ যে বেশি সুন্দর সে তো বেশি সুখিই হবেই

অনন্যাঃ না বোন তুই এই পৃথিবীর সবার চেয়ে সুন্দর

অর্পাঃ থাক হইছে আর তেল মারা লাগবো না। তর জামাইর থেকে অপুই আমারে বেশি সুখে রাখবো

আমিঃ এই কারনেই কি অপুরে ছ্যাকা দিতে চাইছিলা?? সবাই দেখি চুপ হয়ে গেলো।

আমিঃ অপু আমার জান। আমি বেচে থাকতে অন্তত অপুর চোখে পানি আসতে দিবো না। মনে রেখো আমি কিন্তু বড়ভাই যে লগ্নে অর্পা আর অনন্যার বিয়ে ঠিক হয়ে ছিলো সেই লগ্নেই বিয়ের কথা দিলাম। এরপর সবার দোয়া আর ইশারায় অনন্যার একটু ভালবাসা নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম আবার যেয়ে সেই জানালা দিয়েই হাসপাতালে ঢুকে রোগী হয়ে রইলাম। সবাই ঘুমে ব্যস্ত। তাই ভাবলাম আমিও একটু ঘুমিয়েই নিই। তখনি বাবা এলেন আমার কাছে

বাবাঃ কিরে কাজ হল..?? আসলে আমার বাবাতো। সে আমার মনের খবর জানে।

আমিঃ আপনার ছেলে কি কোন দিনও হেরেছে বাবা…??

বাবাঃ তো কবে বিয়ে করছিস..??

আমিঃ পরশু

বাবাঃ আচ্ছা ঘুমা বাবা।

বাবা চলে গেলেন। আর আমিও একটু ঘুরতে চললাম ঘুমের দেশে আজ বাবা জোর করেই আমাকে আর অপুকে বাসায় নিয়ে যাচ্ছে। বাবা সবাইকে বললো আমি আমার ঘরেই রাখবো আমার ছেলেদের। তবে আমিতো জানি কেনো নিয়ে যাচ্ছে বাবা। বাসায় যেতেই বাবা বললো ছেলেদের উপর অনেক তুফান গেলো। ওদের সারা শরীরে হলুদ মাখিয়ে গোসল করি দেও। বাবার কথা শোনার পর নিজের আটকায় রাখতে পারলাম না। তাই বাথরুমে যেয়ে পেট ভরে হেসে নিলাম বাবা তারপর বাসা থেকে বেড়িয়ে পরলো সারাটা দিন আমি চেষ্টা করলাম অপুকে হাসাতে। কিন্তু বলদ ছ্যাকাখোরের মত বাকা হইয়া গেছে। রাতে সবাইকে বললাম কালকে আমার বান্ধবির বিয়ে। আর আমরা সবাই সেখানে যাচ্ছি।

অপুঃ আমি যামুনা

আমিঃ তুই যাবি তর বড়ডায় যাইবো তোর বাপেও যাইবো আব্বা একটা হাসি দিলো আর বললো অপু আমরা সবাই যাইতেছি আর কোন কথা নাই। আব্বা যখন বলে দিছে এখানে কেউ আর কিছু বলবে না এটাই স্বাভাবিক। কাল অর্পার বিয়ে এই কষ্টে বলদের চোখে ঘুম নাই। আর কালকে অনন্যার বিয়ে এই আনন্দে আমারও ঘুম হারাম। হাহ কালকে বিয়ে করেও কোনো ফায়দা নাই। আমি যে খুব ক্লান্ত সকাল হলো, হ্যা সেই অতি দীর্ঘ ভয়াল রাত শেষ হলো। সবাই প্রস্তুত বেড় হওয়ার জন্য। বলদটার দিকে তাকিয়ে দেখি চোখ মুছতেছে। যাক কিছু বললাম না। বাবা আমাকে ডাকলেন

বাবাঃ শাওন সত্যিই কি তুই বিয়ে করবি বাবা??

আমিঃ বাবা আমার জীবন থেকে যে হারিয়ে গেছে সেতো গেছেই। আর অপুর চেয়ে আমার কাছে বড় কিছু নাই বাবা আমাকে খুব শক্ত করে বুকে জরিয়ে ধরলেন। আসলে বাবাতো তাই সন্তানের জন্য প্রতিটা মুহুর্তই নিজের মত করে ভাবেন।

আজ তাকে অনেক বেশি মনে পরছে। তার জন্য যে আমার জীবনটা এক সময় অনেক বেশি রঙিন মনে হত। তাকে ভোলাতো অসম্ভব। আজ নতুন জীবনে পা দিতে চলেছি। আজ যে বড়ই ক্লান্ত আমি। কিছু করার নেই আমাকে আমার মত আগাতেই হবে। আমি যে বড়ভাই আমরা টেক্সি করে যাচ্ছি বিয়ে বাড়িতে। যখন অনন্যাদের বাড়ির সামনে এলাম বলদরে আর থামায় কে…. বলদতো গাড়ি থেকে নেমে দৌড় দিতে নিছিলো। কপালটা ভালো হাতটা ধইরা ফেলছিলাম। বললাম অর্পার বিয়ে তো কি হইছে। তুই আসছোস আমার বান্ধবি অনন্যার বিয়েতে। অনেক কষ্ট করে বলদটারে ভিতরে নিলাম। মা বাবাকে মেয়ের মা বাবার কাছে পাঠিয়ে দিয়ে আমি বলদটারে নিয়া একটা রুমে ঢুকলাম। বাবা গাড়িতে থাকা অবস্থায় আমার হাতে একটা ব্যাগ দিয়ে ছিলো তাতেই ছিলো শেরওয়ানী। আমার অপুকে নীল শেরওয়ানী আর নীল পাগড়ীতে বর সাজিয়ে দিলাম। বলদতো পুরাই আবাল হইয়া গেছে

অপুঃ ভাই এর মানে কি??

আমিঃ তোরে অনন্যার গলায় ঝুলায় দিয়া আমি অর্পারে নিয়া ভাগমু অপু পুরাই খেপছে পাগড়ীটা খুইলা ফালায় দিলো হায়রে বলদ রে পাগড়ীটা আবার পরায় দিলাম

আমিঃ সুন্দরটা দেই এই কারণে ভাল লাগে না নাকি?? নে যা তোর অর্পারে তুই ই রাখ। আমিই তাইলে সুন্দরটারে বিয়া করমু অপু এইবার সত্যি সত্যি বলদ হইয়া গেলো ওরে কিছুর বলার মত সময় আর দিলাম না। নিজে এবার বর সেজে নিলাম। আর অপুকে নিয়ে বিয়ের আসরে চলে এলাম। মা তো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। কেমনে কি??

জেনিয়াঃ ভাই তুত..তুই বিয়ে করবি??

আমিঃ কেরে ছেমড়ি করতে না করস??

জেনিয়াঃ চোপ হারামজাদা

মাঃ সত্যি বিয়ে করবি বাবা

আমিঃ কি করতাম মা মাইয়া অনেক সুন্দর এককালে চান্দের পরি। বিয়া না করলে মাইয়া হাত ছাড়া হইয়া যাইবো তো

বাবাঃ অপু বাবা জীবনে আমার মনে কষ্ট দিস কিন্তু তোর এই ভাইয়ের মনে কষ্ট দিস না। আল্লাহ্ও যে সইতে পারবো বাজান অপু চুপ করে দাঁড়িয়ে কাঁদছে আমি সুযোগে বাবা-মাকে সালাম করে নিলাম। আর ছাগলটায় আগে আমারে সালাম করলো

আমিঃ এইডা কি করলি ভাই। দুনিয়ায় বাপ-মার উপর কেউ নাইরে পাগলা। পাগলায় আব্বা-আম্মারে সালাম করার পর আমারে জড়ায় ধইরা কয় “ভাই আব্বা না থাকলে হয়তো তোরেই আমি আব্বা কইতাম।” দেখছো বলদের কথা।

এরপর যা দেখলাম তারপরতো আর কোন কিছুই দেখতে ইচ্ছে করে না। একসাথে নীল শাড়ী আর নীল টিপ পরে দুই নীল পরির আগমনে যেন বসন্ত ফিরে এলো। তিনবার কবুল পড়ে দুইভাই ই বিয়ে করে নিলাম। অর্পাকে পেয়ে মনে হল যেন এই মুহুর্তে পৃথিবীর সব চাইতে খুশি অপু। আমিও যদি এমন করে আমার ভালোবাসার মানুষটাকে পেতাম। আমার মত সুখি মানুষ যে আর কেউ হতনা এই পৃথিবীতে। কি করে পাবো বলেন আমার খেয়াল রাখার মত যে আমার একজন বড়ভাই নেই….

গল্পের বিষয়:
অনুপ্রেরণা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত