ফয়সাল ও কামরুল দুই বন্ধু। কমরুল অলস, কুড়ে, বেকার। কোন কাজ করতে পছন্দ করে না।
কিন্তু ফয়সাল এর বিপরীত। সে ধৈর্যশীল ও পরিশ্রমী ছেলে। সে কাজ করতে পছন্দ করে।
ফয়সাল ফজরের নামাযের পর কুরআন তিলাওয়াত করে। তারপর গোসল করে কাজে চলে যায়।
সে কাজ করে যে টাকা পায়, তা দিয়ে বাড়ীর খরচ চালায়।
আর কিছু টাকা দিয়ে দ্বীনের দাওয়াতের জন্য মাঝে মাঝে তাবলীগে যায়। সে দ্বীনের কাজের খুব আগ্রহী।
.
একদিন ফয়সাল ও কামরুল এক সাথে ছিল। ফয়সাল কামরুলকে বলল,”দোস্ত, একটা কথা শোন।
তুই কোন কাজে লেগে যা, আর নামাজ পড়, এত সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দে। সবসময় সিগারেট না খেয়ে, দিনে দু’একবার খায়।
দেখবি তোর জীবনে শান্তি ফিরে আসবে। তুই সুন্দর জীবন ফিরে পাবি।” কিন্তু এ কথা কাজ হল না।
কামরুল বলল, এসব কাজ টাজ আমার ভালো লাগে না। নামায পড়তে ভালো লাগে না।
ফয়সাল বিরক্ত হয়ে বলল, কামরুল এ কথার জন্য একদিন তুই পস্তাবি।
ভালো লাগে না তাই তুই, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সারা জাহানের মালিকের রাষ্ট্রে বেঁচে থেকে তাঁর আইন অমান্য করোস কোন স্পর্ধায়?
এই বলে ফয়সাল চলে গেল।
.
কয়েকদিন পর কামরুলের কাছে সিগারেট খাওয়ার মত কোন টাকা নেই। সে সারাদিন কষ্ট করে কাটালো।
কিন্তু রাতে আর সইতে পারলো না। সে বাড়ী থেকে বের হয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে লাগল। হঠাৎ চোখে পড়ল.. রাস্তার পাশে একটি দোকান বন্ধ।
সে ভাবলো — দোকানদার হয়তো বন্ধ করে বাড়ীতে চলে গেছেন। দোকান টি ছিল টিনের তৈরি।
কামরুল ভাবল, ঐ দোকানের একটি টিন খুলে কয়েকটি সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে আসি। কিন্তু তার ধারণা ছিল ভুল।
দোকানদার দোকান বন্ধ করে দোকানেই শুয়ে ছিল। বাড়ীতে যায় নি।
….কামরুল যখন সিগারেট আনার জন্য দোকানের একটি টিন খুলতে লাগল।
তখন টিনের শব্দ শুনে দোকানদার বুঝতে পারলেন, এটা চোরের কাজ।
তিনি চালাকি করে দোকানের এক কোণে চুপ করে বসে থাকলেন।
কামরুল দোকানের ভিতরে ঢুকতেই দোকানদার তাকে ধরে ফেললেন।
.
সকালে এ ঘটনা ফয়সাল জানতে পারলো। তখন সে ছুটে গেল দোকানদারের কাছে।
দোকানদারের কাছে বিনীত অনুরোধ করলো কামরুলকে ছেড়ে দেয়ার জন্য। দোকানদার কামরুলকে ছেড়ে দিল।
আর বলল, আর কোনদিন যদি এমন হয়, তবে ক্ষমা পাবে না। ফয়সাল বলল, ঠিক আছে।
ও আর এমন কাজ করবে না, আপনি ওকে মাফ করে দেন। এই বলে কামরুলকে নিয়ে এলো দোকানদারের কাছ থেকে।
.
রাস্তার পাশে একটি গাছের নীচে দু’জনে বসলো।
তখন ফয়সাল কামরুলকে জিজ্ঞেস করল, কামরুল, তুই চুরি করতে গেলি কেন? টাকার সমস্যা তুই আমাকে বলি না কেন?
কামরুল লজ্জায় কিছু বলল না। তখন আবার ফয়সাল বলল, কি হল, কিছু বলছিস না যে?
কামরুল বলল, সিগারেট কেনার কোন টাকা ছিল না, তাই।
ফয়সাল বলল, তুই যদি আমার কথা শুনতি, কোন কাজ করতি, বিজনেস, চাকরীটা করতি।
তাহলে আজ তোকে এত লজ্জার সম্মুখীন হতে হতো। চাচাও টাকা দিতে অস্বীকার করত হলে না।
নামায রোযাসহ আল্লাহর সব বিধান মানলে… সবাই তোকে অনেক ভালোবাসত, সম্মান করত।
তোকে এত বুঝালাম, তারপরও তুই কথাগুলো কানে নিলি না।
.
কামরুল আনত নয়নে ফয়সালের কাঁধে হাত দিয়ে লজ্জিত স্বরে বলল, ফয়সাল, তুই কাল থেকে আমাকে কাজে নিবি?
আমি কাজ করবো, আর পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ব। আমার তো এসব কর্ম সম্বন্ধে কোনই জ্ঞান নেই।
তুই কি এ বিষয়ে আমার হেল্প করবি?
….ফয়সাল খুশী হয়ে কামরুলকে বলল, আলহামদুলিল্লাহ, এই তো বন্ধুর মত কথা।
অফকোর্স, এ বিষয়ে তুই আমার পূর্ণ সহযোগিতা পাবি।
কাল কাজে যাবার জন্য তৈরী থাকিস… পার্টনার।