আলোর পথ – প্রত্যাবর্তন

আলোর পথ – প্রত্যাবর্তন

ভার্সিটির পার্শে একটি আম গাছের নিচে ‘ক্রিজি এ্যাটাক’ গ্রুপের পরিচালক নাঈম ও তার কিছু সাঙ্গ-পাঙ্গ নিয়ে বসে আছে।
তাদের কাজই হচ্ছে, তরুণ মেয়েদের বিভিন্ন কায়দা-কৌশলে আয়ত্বে এনে উত্তাপ্ত/ডিস্টার্ব করা, কুরুচিকর কাজে জড়ানো।
তারা অব্যর্থ গল্প করছিল, এক পর্যায়ে তুহিন বলে উঠল…
··
— দোস্ত মালটা হেব্বী মালরে! দেখ শরীর ঢেকে বের হয়েছে। ‘নিশ্চিত নট ইউস’!
— একদম বাংলার খাটি মাল!! (নাঈম)
— কিন্তু ‘Boss’ এই মাইয়্যাটারে পটাইমু কেমনে? (রাকিব)
— ওস্তাদ এই দায়িত্বটা আমাকে দিন। আমি যে কোন করেই হোক তোমার কাছে মেয়েটিকে এনেই দিব। (তুহিন)
— সাব্বাশ বেটা! `Go ahead.!` (নাঈম)
·
কিছুক্ষণপর…
.
তারা উচ্চস্বরে হাসছে, আর ‘‘বোরকা পরা মেয়ে পাগল করেছ’’ গানটি তুহিন গাইতেছে।
মেয়েটি তাদের কথায় কর্ণপাত না করে মাথা নিচু করে রৈখিক গতিতে চলে গেল।
.
তুহিন নাঈমকে বললো, ‘‘দোস্ত মেয়েটাতো চলে গেলরে, কিছুইতো কইলি না। কিছুতো একটা করতে হবে।’’
‘‘আরে শালা এত অধৈর্য্য হচ্ছিস কেন?
.
‘‘পরেরদিন মেয়েটি ঐ একই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে।’’
— হ্যালো ম্যাডাম; একটু কথা বলতে পারি আপনার সাথে? (তুহিন)
— জ্বি ভাই বলেন। আমার ক্লাসের সময় দেরী হয়ে যাচ্ছে। (মেয়েটি)
— না মানে আমি বলবো না, নাঈম ভাই আপনার সাথে কথা বলবে। (তুহিন)
‘‘মেয়েটা একটু ভিতূস্বরে জবাব দিল আজকে আমার ক্লাসের সময় ঘনিয়ে এসেছে। পরে না হয় কথা বলব।’’
— আরে আপু বেশি সময় লাগবে না তো। শুধু যাইবেন আর আইবেন। (রাকিব)
.
‘‘চক্ষুদ্বয়ে নারীত্বের লোলুপ ছাপ/দর্শন দেখে এইবার মেয়েটি পরিষ্কার বুঝতে পারল যে, আসলেই এদের উদ্দেশ্যটা কি?’’
‘‘এখন সে ভাবতে লাগলো যে, শক্তি আর বাহনা দেখিয়ে এদের থেকে নিজেকে রক্ষা করা দুঃসাহসী ব্যাপার ছাড়া বৈকি।
সুতরাং এদেরকে কথা/ওয়াজ দিয়েই সাইজ করতে হবে।’’
‘‘মনের মধ্যে বুকভরা সাহস ও মহান সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা করে, মেয়েটি বজ্রকন্ঠে বলে উঠলেন, ‘চলেন’!
.
‘‘নাঈম মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— এই মেয়ে নাম কি তোমার? এত ভাব কিসের? জানিস না এই নাঈম কিংয়ের নজরে যেইটা পরবে, সেইটা এ্যাটাক হবেই।
— আমি ‘আতকিয়া’। বর্তমান ইসলামিক ইউনিভার্স্টিতে অধ্যায়নরত।
— স্টপ.! ‘‘ইউ সো সুইট সেক্সি গার্ল্স’’। যাহা প্রশ্ন করেছি তাহারই উত্তর হবে, অতিরিক্ত শোনার টাইম নাই।
— হোয়াট ননসেন্স!!
— Sorry.! জ্বি ননসেন্সই! একটু পরে বুঝতে পারবেন ননসেন্স?
— এই যে শুনুন ভাইয়া কিছু কথা বলি!
— ধৃৎ তোর কথা শোনার টাইম নাই। বল পার ঘণ্টা কত নিবি?

এই বলিয়া ভাদ্রের কুকুরের মত মেয়েটির দিকে হাত বাড়াতে লাগল।
‘‘মেয়েটা ভয়ে ভীতূচ্ছন্ন, নিস্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে মনে মনে আল্লাহকে করুণভাবে ডাকছে, আল্লাহ তুমি আমাকে রক্ষা কর।’’
.
‘‘কিন্তু কি অদ্ভূত! মেয়েটির শরীরে সে হাত দিতে না দিতেই, তড়িৎহত ব্যক্তির মত মাটিতে ছিটকে পরে গেল।
বস্তুত মেয়েটি তাকে হস্ত দ্বারা কিঞ্চিত বাধা দিয়েছিল।’’
‘‘বাদ বাকি রাকিব, তুহিন এই দৃশ্য দেখে ভয়ে ৪০গজ দূরে পালিয়ে গেল।’’
.
‘‘এই দিকে নাঈম অজ্ঞানের পথে প্রায়। সে পায়ের মধ্যে বেশ আঘাতও পেয়েছে। অপরদিকে মেয়েটি নির্বাক হয়ে দাড়িয়ে আছে।
নিশ্চয়ই এতে দয়াময় আল্লাহ তায়ালার ইঙ্গিত আছে।’’
.
এবার আতকিয়া আস্তে আস্তে মাটিতে পরে থাকা নাঈমের দিকে অগ্রসর হতে লাগল।
.
‘‘কিন্তু চমৎকার বিষয় হচ্ছে, যেই ছেলেটি এতক্ষণে কামুকতার তারনার মেয়েটির প্রতি মাতাল ছিল।

সেই ছেলেটি তুচ্ছ একটি অদ্ভুত কান্ডের জন্যে ভয়ে বেতাল হয়ে যাচ্ছে।’’
নাঈম বললো, ‘‘এইযে ম্যাডাম প্লিজ এইদিকে আসবেন না। আমি খুবেই ভয় পেয়েছি। আপনি মানুষ না ভূতনী!

আপনার শরীরেতো ভৌতিক ইলেক্ট্রিসিটি বিদ্যমান।

প্লিজ আমার কাছে আসিও না, আমি আপনার কাছে আমার কৃত ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।।’’
আতকিয়া বললো, ‘‘আরে ভাই আমাকে ভয় পাচ্ছেন কেন? আমিওতো আপনার মত একজন রক্ত মাংসের মানুষ।’’
‘‘জ্বি না, আমার বিশ্বাস হয় না। আপনি ভূতনী, দয়া করে তারাতারি এখান থেকে চলে যান।’’
.
[ব্যাচারা ছুটে পরে যেয়ে বেজায় আঘাত পেয়েছে। তাকে এই অবস্থায় ফেলে চলে যাওয়া কি আমার ঠিক হবে?

নাহ, ইসলামতো আমাকে এই শিক্ষা দেয়নি।]
‘‘দেখুন ভাই আপনি খুব আঘাত পেয়েছেন, আমি জল এনে দিচ্ছি। অতপর তাকে পানি পান করালাম।

এতে তার কিছুটা সস্থিভাব ফিরে আসল।’’
.
নাঈম অপরাধীর মত মাথা নিচু করে দাড়িয়ে বলছে…
— আপুরে আমাকে ক্ষমা করা যায় না।
— আরে নাহ, কোন সমস্যা নাই। ভুলটাতো তুমি বুঝে-শুনে কর নাই।

আর ক্ষমা চাইতে হলে আল্লাহর কাছে চান, ‘‘তিনি পরম ক্ষমাশীল।’’
— হ্যা গো আপনি সত্যিই খুব ভাল মেয়ে।
— আচ্ছা বলুনতো, আপনি কেন খারাপ হয়েছেন? এপথে আসারতো একটা নিশ্চিত রহস্য আছে।
— আসলে আপু আমি আগে এই রকম খারাপ ছিলাম না! একজন ভাল ছাত্র নামে খ্যাত ছিলাম।

বাবা-মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিল ডাক্তার বানানোর। ঐ সুবাধেই এখানে লেখাপড়া করতে এসেছি।

আমি বর্তমান একটা সরকারী মেডিকেল কলেজের ছাত্র।
— কিন্তু আপনি এই পথে আসলেন কেন?
— ‘‘আমি একদিন ক্লাসের বিরতির সময় ব্রিঞ্চিতে বসে আইনস্টাইনের উপপাদ্য পড়ছিলাম।

পিছুনে তাকিয়ে দেখি আমাদের কলেজের প্রিন্সিপাল স্যারের মেয়ে অদিতি। সে একটা চিঠি দিয়ে বের হয়ে গেল।

আমি কিছু না ভেবেই প্রেম নামক সম্পর্কে লিপ্ত হই। দীর্ঘদিন ভালই চলছিল সম্পর্ক।

কিন্তু পরে জানতে পেলুম সে অন্য এক ছেলের লগে ডেটিং মারে। তাকে অনেক বুঝানোর পরও কাজ হয়নি।

অবশেষে তার সাথে ব্রেক-আপ হয়ে গেল। আবেগকে বিবেকের পাল্লায় মাপতে না পেরেই এই পথে নেমেছি।’’
এই মহুর্তে তার নেত্রপল্লব অশ্রুতে সিক্ত হয়েছে।
.
এইবার আতকিয়া বলতেছে– আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘‘হে নবী, তুমি মোমেন পুরুষদের বলো, তারা যেন দৃষ্টিকে সংযত ও তাদের লজ্জাস্থানসমূকে হেফাযত করে; এটাই তাদের জন্য উত্তম পন্থা; কেননা তারা যা করে, সে সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পূর্ণাংগভাবে অবহিত রয়েছেন।’’ (সূরা নূর- ৩০)
.
তিন আরো বলেন, ‘‘তিনিই হচ্ছেন আল্লাহ তায়ালা- যিনি তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং তাদের গুনাহ খাতাও ক্ষমা করে দেন, তোমরা যা কিছু করো সে সম্পর্কেও তিনি জানেন।’’ (সূরা শূ-রা, ২৫)
.
ঐযে আমার মামা আইতাছে আমাকে বাসায় নিয়ে যেতে।
চলি…..
ভাল থেকো..!!
.
এইবার সত্যিই নাঈম আতকিয়ার দিকে অপল্লব নয়নে তাকিয়ে কাঁদছে!
যেন একটি বৃক্ষ থেকে পত্র বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।।

গল্পের বিষয়:
অনুপ্রেরণা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত