নামহীন গল্প

নামহীন গল্প

=>শপিং করা তোমার শেষ হবে না..??
সেই সকালে ঢুকেছো..!!
=>তুমি আসবানা..?? তোমার জন্য কি নেবো..??
=>আমার জন্য কিছু নিতে হবে না।শুধু আমি যে তোমাকে টিউশনি করিয়েছি সেই টাকা টাই দিয়ে যেয়ো।
=>আমি তোমাকে ভালবাসি।আর কিছু তো দিবোই।
=>বাজে কথা রাখো..!!বলেই কেটে দিলাম।

হাটছি ফার্মগেইটের রাস্তায়..তপ্ত রোদ্দুর, বাতাস মিলিয়ে গেছে।গা দিয়ে ঘাম ঝরছে।আল্লাহ এত কেন ভাগ্য খারাপ করে এই শস্যক্ষেত্রে পাঠিয়েছে..!!!

যেখানে আজ ওই বড় বড় দালান কোঠার বসবাস করা মানুষ জন মনের সুখে হাজার হাজার টাকা ব্যয় করে দামি দামি পোশাক,

বডি স্প্রে কিনতে ব্যস্ত সেখানে আমাদের মত গরীব পরিবারের শিক্ষিত বেকার ছেলেরা মাথায় আকাশ সমান টান পোড়ন নিয়ে চলতে ব্যস্ত।

রাস্তায় রাস্তায় মনে হাজার ও স্বপ্ন নিয়ে ঘোরা আর ঘাম ঝরানো ,আর সেখানে উপর মহলের মানুষ গুলি এসির মধ্য আরাম আয়েশ করতে ব্যস্ত।
.
আমি আমাকে নিয়ে ভাবি না।আমার শিশু সংঘটন আর ঘরে পড়ে থাকা বৃদ্ধ মায়ের কথা ভাবছি।

জীবনে এই সম্বল দুইটার জন্য এখনো এই মায়াবিহীন দুনিয়ায় বেঁচে আছি।
.
ওহ পরিচয় করিয়ে দেই..যার সাথে কথা বললাম সে হল আমার গফ সুইটি।ধনীর বকে যাওয়া সুন্দরী মেয়ে।

সারাদিন স্টাইল,শপিং আর বন্ধুদের সাথে আড্ডাই যার মুখ্য কাজ।
.
ওর সাথে পরিচয় হয়েছে ওকে আমি টিউশনি করাতে গিয়ে।এক বন্ধুকে বলেছিলাম “আমাকে একটা টিউশনি নিয়ে দিস দোস্ত, পেট তো আর চলে না।.
.
প্রায় এক মাস টিউশনি করানোর পর…
একদিন…
=>পারভেজ একটা কথা বলি..??
=>এই মেয়ে কি বললে।আমার নাম ধরে বললে.??তুমি জানো আমি তোমার কত বড়..??
=>জানি।আর জানি বলেই নাম ধরে বলেছি।
=এক থাপ্পর দিবো..!! বেয়াদব মেয়ে।
তোমাকে আর টিউশনি করাবো না বলে সেদিন চলে এসেছিলাম।
.
আসলে কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পেরেছিলাম সুইটি কি চায়।কিন্তু ওর বাবা তো আমার মত একটা বস্তির ছেলে কে মেনে নিবে না।

অযথায় আকাশ কুসুম কল্পনা করে নিজের স্বপ্ন গুলিকে মাটি করতে চাই নি।
সেদিনের পর আর ওই রাস্তা দিয়েই হাঁটি নি।
.
বসে আছি পুকুর পাড়ে…
ঠিক তিন দিন পার হতে না হতেই সুইটি আমার সামনে গিয়ে হাজির।
ওকে দেখে বুকের মধ্য নড়ে উঠল।এই পাগলি এখানেই চলে আসছে।
=>আমাকে পড়াতে যাও না কেন..??আর আমি তোমাকে ভালবাসি।আমাকে ভালবাসতে হবে।
=>যাও এখান থেকে।আর এসব বাজে কথা যেন মুখে আর একবার ও না আসে।
বলেই চলে যাচ্ছিলাম।সুইটি আমার হাত ধরে কেঁদে দিলো।
=>পারভেজ তুমি যদি আমাকে ভাল না বাসো আমি নিজেকে শেষ করে দেবো।হাত ছেড়ে চলে যাচ্ছিলাম।
কিন্তু পিছন থেকে ওর ডুকরে কান্না বুকে কাঁটার মত বিঁধছিল। যখন বলতে ছিল পারভেজ তুমি এত নিষ্ঠুর..!! থাকতে না পেরে ওর হাত ধরেছি।
.
শুধু বলেছিলাম …
=>থাকতে পারবে আমার সাথে আমার এই বস্তিতে.???
সেদিন শুধু মাথা নেড়ে আমাকে স্বিকার করে নিয়েছিল…!!!
.
বলতে গেলে সুইটি আমাকে পাগলের মত ভালবাসে।কিন্তু আমার ই অন্তরে ভয় থাকতো যে আমি সুইটিকে পাবো না।তাই এড়িয়ে চলি…
অনেক অনুনয়,,বিনয় করে আমার কাছে সময় চায়…
আমি ও ভালবাসি ..কিন্তু সেই সুখের কপাল করে আসিনি এই দুনিয়ায়…
.
ভাল বাসলেও ওকে সময় দেওয়ার মত সময় আমার নেই।
=>পারভেজ আমি মার্কেটের বাইরে টাকা নিয়ে যাও..!!
আচ্ছা আমি আসতেছি…প্রায় দুই ঘন্টা পর গিয়ে হাজির হলাম…
=>আমার টাকা চাই..!!আমাকে যদি কিছু দেওয়ার ইচ্ছে থাকে তবে টাকা দাও।
=>কেন টাকা দিয়ে কি করবে..??
=>তুমি কি ভুলে গেছো আমার বৃদ্ধ মা আছে..??ওনাকে রেখে আমি নতুন জামা পরবো…??
=>আমার জন্য পরবা..!!
=>তোমার থেকে আমার মা বড়।গফ গেলে গফ পাবো কিন্তু জনম দুখি মা গেলে আর পাবো না।
পারভেজ বলেই ঘামে ঝরা ক্লান্ত দেহ নিয়ে হেলে দুলে হন হন করে চলে যাচ্ছে..
=>পারভেজ টাকা টা নিয়া যাও।
পারভেজ বেহায়ার মত ঘুরে এসে টাকা নিয়ে বাড়ির দিকে গেল…
.
রাত্রিতে..
=>পারভেজ কাল ঈদ। আমি যেন সারাদিন তোমাকে যেন আমার সাথে পাই।
=>আমি যেতে পারবো না।আমার কাজ আছে।
=>অন্য কোথাও কাজ আছে মানে কি..??তোমার কি আরেকটা গফ আছে..??বলেই ন্যাকা কান্না জুড়ে দিল।
=>প্রচণ্ড রেগে..মরা কান্না থামাও.!!
=>তোমাকে তো বলেই দিয়েছিলাম তোমার মত মেয়ের সাথে আমার মত পথে পড়ে থাকা হত দরিদ্র পারভেজের মিলবে না।
.
ঈদের দিন সকালে..পারভেজ স্টেশনের বাচ্চাদের নিয়ে ইচ্ছেমত হৈ-হুল্লোড় করে রান্না করছে মজা করছে।
.
পথশিশুদের সাথে ওর কি আন্তরিকতা। মনে হয় ওরাই ওর জীবন।ওরাই ওর ভবিষ্যৎ। সব পথ শিশুদের শরীরে যেমন কাপড় ওর শরীরেও তেমন।
ও যা পরে ওদের ও তাই পরতে দেয়…ও যা খায় ওদের ও তাই খেতে দেয়…
.
অমাবস্যার চাদের মত সুইটি..
=>পারভেজ এইটাই তোমার জীবন তাই না..??এই পথে পড়ে থাকা নোংরা শিশুদের সাথে..??
ততক্ষণে পারভেজের রান্না হয়ে গেছে..
=>তোমাকে নিয়ে ঘোরার সময় আমার হাতে নেই।
=>আমাকে নিয়ে তোমার কোন ভাবনা নেই তাই না..??তোমাকে টাকা দিয়ে বলেছি নীল পাঞ্জাবী কিনবা..?এইটা কি পরে আছো তুমি..??
=>তুমি কি করে এখানে এলে..??পারভেজের যেন কোন ভ্রুক্ষেপ ই নেই।সুইটি কি বলছে।ও শিশুদের সাথে আনন্দে মশগুল।
=>তোমার বাসায় গিয়ে তোমার মায়ের কাছে জেনেছি তুমি জয়দেবপুর স্টেশনে আছো।
হঠাৎ পথ শিশুদের মধ্য থেকে…
=>ভাইয়া এইডা ক্যাডা..??
আরেকজন ভাবি বুঝি..
=>আহেন ভাবি আমাগো লগে খিচুড়ি খান..??আহেন..!!
পিচ্চিটা কাছে যেতেই ঠাস করে একটা থাপ্পর বসে দিলো সুইটি..
.
মুহুর্তের মধ্য সব কিছু যেন থমকে গেল।মনে হচ্ছে আকাশ বাতাস থমকে গেল।সব শিশুরা চুপ করে আছে।

পারভেজ রক্তবর্ণ চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে সুইটির মুখের দিকে..!!
শুধু ওই থাপ্পর খাওয়া পিচ্চির কান্না ভাসছিল…
.
নিরবতা ভেঙে পারভেজ গিয়ে সুইটির গালে থাপ্পর বসিয়ে দিল…
আবার যেন পরিবেশ আগের মত হয়ে গেল..
=>কোন সাহসে কোন অধিকারে পিচ্চিটাকে থাপ্পর দিলে..??দেখো তোমার সম্মান আর ওদের সম্মান।
.
তোমার থেকে বেশি ভালবাসি আমি ওদের।ওদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন আমার।যতটা না তোমাকে নিয়ে আছে।

তুমি আমার থেকে ভাল কোন পারভেজকে পেলে চলে যাবে আমাকে ছেড়ে আর ওরা আমাকে ছাড়বে না।ওরা এক সময় অনেক বড় হবে।

দেশের কর্ণধার হবে।আর তুমি কি হবে..??এত বড় ঢঙ্গি মেয়ে হয়েছে ফ্যাশন, স্টাইল ছাড়া কাউকে সম্মান করার মানে জানো।

জিবন মানে কি জানো..??
এই যে সুন্দর পোশাক পড়ে আছো একবার ও কি ভেবে দেখছো যে কি এদের অবস্থা ..??এরা কত অসহায়..!!

আজ ঈদ ..!কি পরে আছে দেখো..!!কি খাচ্ছে দেখেছ..??খিচুড়ি।প্রতিদিন যা খায়।আর তোমরা পোলাও কোরমা খেয়ে বেড়াচ্ছো।

তোমাদের বাড়িতে বা আসে পাশে পাজরের হাড় বের করা বিড়াল কুকুর আছে একবার ও কি মনে করেছ..??ভেবেছো..??
.
আমি তোমার থেকে যে টাকা নিয়েছি তা দিয়ে, টিউশনির টাকা দিয়ে জনমদুখি মায়ের জন্য আর এই অসহায়ের পথ শিশুদের জন্য কাপড় কিনেছি।
.
ধনী বাবার অট্রালিকায় থাকা তোমাদের মত ছেলেমেয়েরা বোঝেনা যে জীবন কত কষ্টের ..!!

কত সংগ্রাম ময়..!! যুদ্ধ করে বাঁচা কত কষ্টের…!!!
.
অত্যন্ত কষ্ট করে এদের মুখে এক মুঠো ভাত তুলে দিতে পারলে কত সুখ,কত প্রশান্তি লাগে তুমি বুঝবেনা।
..
“মনে রেখো ঃ মানুষ মানুষের তরে ….
মানব সেবায় পরম ধর্ম ..”
.
নিজেকে পূজো না করে চার পাশের অসহায় দুস্তদের ও একটু পূজো কর দেখো কত সুখ পাও।
.
=>যাও এখান থেকে..!!আমার সাথে থাকতে হলে আমার মত থাকতে হবে..!!বলেই পারভেজ আবার ও পথ শিশুদের সাথে আনন্দে মেতে উঠল…
.
আসলে পারভেজ তো ঠিকই বলেছে।আমাদের মত তো ওইসব অসহায় পথে পরে থাকা মানুষ দের জীবন আছে।

ইচ্ছা আছে।আশা আছে।বেঁচে থাকার তাগিদ আছে।
.
আমরা সব সময় নিজেদের ঘরে আলো জালাতে জানি..
আর অন্যর ঘর অন্ধকার করতে আরো বেশি জানি…
.
=>পারভেজ আমি যে কোন মুল্যে তোমার সাথে থাকতে রাজি আছি।তোমার মত আমিও আজ থেকে পথ শিশুদের সাথে থাকব..??

নেবে না আমাকে ..?? কথাটা শুনে পারভেজ একটু হচকিয়ে গেল…
.
কিন্তু পরক্ষণে একগাল হেসে দু’ফোটা চোখের পানি ছেড়ে আলতো করে সুইটির কপালে একটা চুমো দিয়ে দিল।
=>আমি আমার সুইটিকে এমনই দেখতে চেয়েছিলাম।
.
সব শিশুরা উল্লাসে চেঁচিয়ে উঠলো…
তারপর দুজনে মিলে কাপড় আর খিচুড়ি বিলিয়ে দিতে লাগলো পথ শিশুদের মধ্য….

গল্পের বিষয়:
অনুপ্রেরণা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত