আমি একটি বাবাকে চিনি যে অন্য সকল বাবার থেকে আলাদা। সে ষাটোর্ধ বয়সেও দৈনিক ১৬-১৭ ঘন্টা অক্লান্ত পরিশ্রম করছে শুধু তার সন্তানদের মুখে তিনবেলা রুটি-ভাত জুটানোর জন্যে। সে ভোর হতে দুপুর পযন্ত রোদে পুড়ে,বৃষ্টিতে ভিজে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যখন ঘরে আসে তখন নাকি শ্রমের কষ্টে তার শরির থরথর কাপতে থাকে।
তার ছেলেকে আমি প্রায় বলতে শুনেছি যে এত কষ্টের পরেও রাতে যখন বাবাটি ঘুমাতে আসে তখন কারেন্ট না থাকলে সে সারা রাত না ঘুমিয়ে সন্তানদের হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে থাকে। আবার ভোরবেলায় উঠে কর্মস্থলে চলে যাই জীবিকার তাগিদে। তার সন্তানদের শরিরের বস্ত্র গুলো পুরানো হলেই বাবাটি যে করেই হোক টাকা জোগাড় করে সন্তানদের বস্ত্র কিনে দেয়।কিন্তু আমি দেখেছি বাবাটির প্রায়ই প্রতিটা পাঞ্জাবীর কোথাও না কোথাও ফেঁসে গেছে।
কাপড় বেশি পুরানো হলে ফেঁসে যাই।
আমি বাবাটির চোখে একদিন জল দেখেছিলাম কিন্তু এটা ১৬-১৭ ঘন্টা অক্লান্ত পরিশ্রমের বা সারারাত জেগে হাতপাখা ঘুরানোর বা নিজের ফেঁসে যাওয়া কাপড়ের জন্যে না। তার চোখে জল এসেছিল তার এক সন্তানের সফলতার খবর শুনে।
মনোযোগ দিয়ে দেখেন বাবাটির কাছে সন্তান গুলিই সব কিন্তু সন্তানের কাছে বাবা সব না। তবে এখনকার বাবারা সন্তানের জন্যে এমন সুখের জলের তুলনায় দুঃখের জলই বেশি ঝরাচ্ছেন।
জানেন পৃথিবীর সব থেকে অসহায় প্রাণীরা কোথায় থাকে?
বৃদ্ধাশ্রমে।
বৃদ্ধাশ্রমে সব সন্তানহারা বাবা-মার বসবাস।আমার একটা ইচ্ছা আছে। বিশ্ব মা ও বাবা দিবসে বন্ধুরা সকলে মিলে বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে সারাদিন তাদের সাথে অতিবাহিত করা।তাদের সন্তান হয়ে তাদের সাথে মেশা।
অসহায় প্রাণী গুলোর অসহায়ত্ব দুদিনের জন্যে হলেও দূর করা। বাবা বাবা ও মা মা ডাকে দুদিনের জন্যে হলেও তাদের অতিষ্ঠ করে তোলা।
আমার মাঝেমাঝে মনে হয় সুর্য ও পৃথিবীর ভিতরে সম্পর্কটা অনেকটা বাবা-সন্তানের মতই।
সূর্য সকালে উঠে আলো দিয়ে পৃথিবীকে সারাদিন আলোকিত করে রাখে। তারপর সন্ধা হলেই আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়ে।
ঠিক তেমনি একটি সন্তানের জীবনে বাবাও সূর্যের মতই আসে। যতদিন পারে আলোকিত করে রাখে। তারপর একসময় বয়সের বা বার্ধক্যের ভারে ঘুমিয়ে পড়ে।
তবে সূর্য যখন ডুবে যেতে থাকে তখন আমরা কিন্তু কেউ সেদিকে ভ্রুক্ষেপও করিনা।
যে সূর্য সারাটি দিন পৃথিবীকে অন্ধকার কি বুঝতে না দিয়ে আলোকিত করে রাখলো সেই সূর্যকেই শেষ বেলায় ভুলে গিয়ে আমরা কৃত্রিম আলোর বন্দবস্ত করতে উঠে পড়ে লেগে যাই।
তবে অদ্ভুত ব্যাপারটা হল এত স্বার্থপর হয়ার পরেও কিন্তু পরদিন সূর্য পৃথিবীকে আলো দিতে ভুলে না 🙂
.
এভাবেই প্রতিটা পিতা তার সন্তানদের আলোকিত করে রাখুক এই প্রার্থনাই থাকলো আজকের বাবা দিবসে সৃষ্টিকর্তার কাছে।
গল্পের বিষয়:
অনুপ্রেরণা