হরিবাবুর একরাত্রি

হরিবাবুর একরাত্রি

আমার জন্ম চট্টগ্রামে। সে সময় আমাদের বাসা ছিল চট্টগ্রামের একটা প্রসিদ্ধ কলোনিতে। ওখানে আমার জীবনের প্রথম৮ বছর ছিলাম। ওখানকার একজন দারোয়ান ছিলেন হরিবাবু। তাঁর মুখ থেকে শোনা এই গল্প।

প্রথমেই কলোনি টার ইতিহাস জানা আবশ্যক। এককালে ব্যবহৃত হত কবরস্তান রূপে, পরে পরিত্যক্ত হয়।,’৪৭ এর দেশ ভাগের পর ওখানে তৈরী হয় হাসপাতাল। কিন্তু নানা অভিযোগে সেটা ও ১০ বছরের বেশী টিকলো না। প্রায়ই বাচ্চা নিখোঁজ হয়ে যেত ওখানে, পরে পাওয়া যেত ওগুলোর আঁধখাওয়া লাশ। তাছাড়া ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কিডনি পাচারের অভিযোগ ও ছিল। সময় চলে যায়, ৮০ এর দশকে ৩ তলার পরিত্যক্ত ভবন টি পরিণত হয় ৭ তলার রেসিডেন্সিয়াল কলোনীতে। হরিবাবু

তখন কাজের আশায় এসেছিলেন চট্টগ্রামে। ঐকলোনিতেই দারোয়ানের চাকরি পান। ঘটনার দিন ছিল প্রচন্ড গরমের দিন। নিজের কাজ শেষ করে পরবর্তী দায়িত্ব আরেক দারোয়ান রাজ্জাক কে বুঝিয়ে দিয়ে হরিবাবু উঠে গেলেন সাত তলার ছাদে, উদ্দেশ্য রসতেন খোলা ছাদে ঘুমাবেন। রাজ্জাক নাকি অমন খোলা ছাদে একা থাকতে নিষেধ করেছিলেন, কিন্তু হরি শুনলেন না। রাত প্রায় ৩ টা হবে, একটা অবস্ফুট শব্দে হরিবাবুর ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ঘুম জড়ানো চোখে একজন মেয়েকে দাঁড়য়ে থাকতে দেখলেন। প্রথমে ভাবলেন কলোনীর কোন মহিলা। পরক্ষনে ভাবলেন, এতে রাতে কোন মহিলা ছাদে আসবে?

এবার ভালো করে দেখলেন একটা মহিলা সত্যিই দাঁড়ানো, একহাতে একটা খুন্তির মত জিনিস, যেটি দিয়ে সে ক্রমশ নিজ কপালে আঘাত করে যাচ্ছিলে, আরেক হাতে ছিল একটা আঁধখাওয়া বাচ্চা। হরিবাবুর মতে ওর গন্ধ টা ছিল নর্দমার মত, যেন নর্দমা থেকে উঠে এসেছে। হরিবাবু এক মুহূর্তের জন্য জমে গেলেন। পরক্ষনেই লাগালেন দৌঁড়, ঐ মূর্তি টাও তার পিছু ছাড়লো না, যেন হাওয়ায় ভেসে আসতে লাগলো। এক পর্যায়ে তিনি সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যান। পরে সকালে তার জ্ঞান ফিরে আসে

এঘটনায় তার পায়ে মারাত্মকভাবে চোট লাগে। পরে তিনি আর কখনো ছাদে ঘুমাননি। এখন ছাদেও কিছু ঘর তৈরী হয়েছে,।ওখানকার বাসিন্দারা ও নাকি রাতে অনেক রকম ভয়ানক শব্দ শুনতে পান।

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত