স্মৃতিজড়িত এক রাতের ঘটনা

স্মৃতিজড়িত এক রাতের ঘটনা

ঘটনাটি নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার। যেখানে আমার বন্ধু আতিকের বাড়ি। বলতে পারেন স্থানীয় বাড়ি। আর ঘটনাটি গত বছর জানুয়ারি মাসের আতিকের বড় ভাইয়ের বিয়ের সময়ের। সেদিন বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে অনেক রাত হয়ে যায়। তাই আতিক আমাকে তার বাড়িতে থাকতে বলে। কিন্তু আমি থাকতে চাচ্ছিলাম না কারণ আগামীকাল আমার ইউনিভার্সিটিতে পরীক্ষা ছিল। এদিকে ততক্ষণে আনুমানিক রাত এগারটাও বেঁজে গেছে। তখন আতিক আমাকে কিছুটা পথ এগিয়ে দিতে চাইলো।
আমি অবশ্য, তাকে বলে ছিলাম…” থাক তোকে আর এত রাতে বাহির হতে হবে না”।
কিন্তু সে নাছোড়বান্দা আমাকে একা ছাড়তে চাচ্ছিলো না।
যাইহোক, পরে আতিকসহ বাসস্টপ পর্যন্ত এগোতে লাগলাম। কিন্তু আনুমানিক দশ মিনিট হাটার পর দেখি রাস্তার পাশে অবস্থিত একটি শিমুল গাছের নিচে এক বৃদ্ধ ব্যক্তি বসে আছে.! আর এটা দেখে আমরা দুজনে কিছুটা অবাক হয়ে যাই কারণ সে একটি ল্যাম্পবাতি জ্বালিয়ে বসে ছিল আর একাই কি জানি বিড়বিড় করে বলতে ছিল.! জামা কাপড়ও ছিল ছিন্ন ভিন্ন.!
কিন্তু যখন তার পাশ অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি এমন সময় সে বললো…”বাবা বিশটা টাকা দেও কিছু কিনে খাব”।
তখন, আমি ও আতিক থমকে দাঁড়ালাম। আর আমি তার দিকে এগিয়ে গেলাম। কিন্তু পকেট থেকে টাকা বাহির করে দিতে যেয়ে দেখি, পকেটে আছেই মাত্র ত্রিশ টাকা.! আর বাস ভাড়ায় তো লাগবে পঁয়ত্রিশ টাকা.!
তখন আতিক বললো…”রাফসান দশ টাকা দিয়ে চলে আয”।
তারপর ঐ অদ্ভুত বৃদ্ধ ব্যক্তিটিকে দশ টাকা দিলাম কিন্তু সে বিশ টাকার কম নিবে না.!
তখন একটু রাগও উঠে ছিল কিন্তু পরক্ষণেই মায়া হলো আর ভাবলাম আজকালকার দিনে দশ টাকা দিয়ে কিই বা খাবার পাওয়া যায়। পরে বিশ টাকাই দিয়ে হাটা শুরু করলাম।
কিন্তু পরক্ষণেই ঐ বৃদ্ধ ব্যক্তিটি বলে উঠলো…”বাবা আজ বড় বাঁচা বেঁচে গেলি, আল্লাহ তোর ভালো করবে”.!
এ কথা শুনার পর আমি কৌতূহল বশত তার দিকে ঘুরে তাকালাম আর মৃদু হাসি দিয়ে পথ চলতে শুরু করলাম।
তারপর বাসস্টপের কাছে এসে একটি চায়ের দোকানে বসলাম।
আতিক বললো…”চা খাবি”.?
আমি বললাম…”হ্যাঁ, এককাপ খাওয়া যায়”।
তারপর চা খেতে খেতে বললাম…”আতিক আমাকে পঞ্চাশটা টাকা দে তো, কাল নিস”।
তখন, সে একশো টাকা বাহির করে দিল আর বললো…”তোর কাছে টাকা নেই আগে বলবি না”.!
এর কিছুক্ষণ পর, একটি বাস এলো আর আমি বাসে উঠতে গেলাম কিন্তু…আতিক বললো…”রাফসান এত রাতে এরকম খালি বাসে যাওয়াটা ঠিক হবে না একটু পর যা”.! আমিও সমস্যাটা বুঝতে পেরে আর উঠলাম না।
তারপর ক্ষাণিকবাদে, আরেকটি বাস এলো আর এই বাসটিতে অনেক যাত্রীও ছিল। তাই আমি তড়িঘড়ি করে বাসে উঠে পরলাম আর আতিককে বিদায় জানালাম। তারপর বাসটি চলতে শুরু করলো।
কিন্তু আনুমানিক দশ থেকে পনেরো মিনিট পর দেখলাম…সামনে রাস্তায় অনেক মানুষ জড় হয়ে আছে.! তখন আমি বাসের জানালা দিয়ে বাহিরে উঁকি দিলাম, আর কি হয়েছে তা দেখতে লাগলাম.?
দেখি… দশ থেকে পনেরো মিনিট আগে যে খালি বাসটিতে আমি উঠতে চেয়ে ছিলাম, সেটি accident করেছে.! আর রাস্তার পাশে এক খাঁদে পরে আছে.! চারদিকে অনেক কাঁচের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। আর রক্তে জায়গাটা ভিজে গেছে। এটা দেখার পর, আতঙ্কে আমার বুকের হার্টবিটটা বেড়ে গিয়ে ছিল। আর অনেক ভয় পেয়ে ছিলাম।
যাইহোক, পরে সুস্থ অবস্থায় বাসায় আসি। আর আতিককে ফোন দিয়ে সব কথা খুলে বলি। সব কথা শুনে সেও অনেক ভয় পেয়ে যায়।
পরিশেষে শুধু এতটুকুই বললো যে, সে দিন কি বাঁচাই না বেঁচে গেছি।

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত