বগুড়ায় আমাদের বেসরকারি পলিটেকনিক কলেজের হস্টেলটা কলেজ থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে তেঁতুলতলা এলাকায়
অবস্থিত। ‘৭০ এর দশকে তৈরি একটি ৫ তলা বিল্ডিংকে হোস্টেল হিসেবে ভাড়া নিয়ে ছাত্রদের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে কলেজ
কর্তৃপক্ষ। তেঁতুলতলা জায়গাটা মূল শহরে নয়। শহরের গ্যাঞ্জাম ছাড়িয়ে একটু নিরিবিলি জায়গায়।
সেই হোস্টেলের ৪ র্থ তলায় থাকতাম আমি। কম্পিউটার বিভাগের ৩ য় পর্বের ছাত্র ছিলাম। আমার রুমে আরও দুজন রুমমেট ছিল।
একজন হল মিজানুর রহমান, সে ছিল আমার ক্লাসমেট। অন্যজন ৭ ম পর্বের ছাত্র ইমন ভাই। আমাদের তিনজনের মধ্যে বেশ ভাব
ছিল। দুই বছরের বড় হলেও ইমন ভাই আমাদের সঙ্গে বন্ধুর মতোই মিশতেন। হোস্টেলে ৭ ম পর্বের ছাত্র একমাত্র তিনিই ছিলেন।
বাকি সবাই ১ম, ৩য় এবং ৫ম পর্বের। তাই সঙ্গত কারণেই তিনি সবার সাথে বড় ভাইসুলভ দূরত্ব রেখেই চলতেন। কারও রুমে বেশি
যেতেন না, অকারণে বেশি কথাও বলতেন না। তবে হোস্টেলের প্রায় সবাই একবার না একবার রুমে আসতই তাঁর সঙ্গে দেখা করার
জন্য।
ইমন ভাই বেশিরভাগ সময় রুমেই থাকতেন। শুধু সন্ধের পর মাঝেমধ্যে তাঁর এক বন্ধুর মেসে যেতেন। সেখানেও বেশি দেরি করতেন
না। ইমন ভাই যখন রুমে থাকতেন তখন তাঁকে কমন তিনটি সিস্টেমে দেখা যেত। হয় শুয়ে, নয়তো বিছানায় বসে মোবাইলে চ্যাটিং
করতে নয়তো বা বাবু হয়ে বসে পড়তে। তিনি বিছানায় বসেই পড়তেন, কারণ টেবিল থাকলেও তাঁর চেয়ার ছিল না।
শীতের দিনে তিনি যখন রুমে থাকতেন সব সময়েই তাঁর গায়ে কালো একটি কম্বল জড়ানো থাকত। কখনও তিনি আগাগোড়া কালো
কম্বলে ঢেকে শুয়ে থাকতেন।
তিনি একদিন আমায় বলেছিলেন, ” সুফল, আমার এ কম্বলটাতে আমার নানা সাহেবের স্মৃতি জড়িয়ে আছে”।
” কিভাবে? ” জানতে চাইলাম আমি, ” উনি কি এটা আপনাকে কিনে দিয়েছিলেন? ”
ইমন ভাই মৃদু হেসে বললেন, ” না, ওনার লাশ এ কম্বলে মুড়িয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় নেওয়া হয়েছিল”।
ইমন ভাইয়ের কথায় আমি শিহরিত হলাম। এসব ব্যাপারে আমার বাড়াবাড়ি রকমের অ্যালার্জি মানে ভীতি আছে। তাই ইমন ভাইয়ের
এ কথায় আমার অ্যালার্জি একটু বাড়ল। কাঁপা গলায় প্রশ্ন করলাম, ” স…সত্যি? আপনার ভয় লাগে না?”
আমার কথায় জোরে হেসে উঠলেন ইমন ভাই। বললেন, ” ভয় লাগবে কেন? আমার তো আরও সাহস হয়। মনে হয় নানা সাহেব
আমার সঙ্গেই আছেন “।
সর্বনাশ! এ লোক বলে কি? তিনি সাহস পান! আর আমি তো মনে হয় ওটার ভয়ে রাতে ঘুমোতেই পারব না। কথাটা ভাবলাম কিন্তু
ইমন ভাইকে সেকথা বললাম না। শুধু বললাম, ” আপনার সাহস আছে, ভাই। আমি হলে ওই স্মৃতি ছুঁয়েও দেখতাম না”।
এরপর থেকে রাতের বেলা আমার একটু ভয় লাগত। পারতপক্ষে ওই কম্বলের দিকে তাকাতাম না। এমনকি ইমন ভাই যখন ওটা গায়ে
জড়িয়ে থাকতেন তখন তাঁর কাছ থেকেও যথাসম্ভব দূরত্ব রেখে চলতাম।
একসময় এ ভয়টা কেটে যায়। মূল ভয়টা এর কয়েকদিন পর পাই। ওই ঘটনা আমি কখনওই ভুলতে পারব না। যতবারই ওই ভয়ঙ্কর
দৃশ্যগুলো মনে পড়ে ততবারই গা শিউরে ওঠে।
ঘটনাটির জন্য অবশ্য ইমন ভাই বা তাঁর কম্বল কোনওটিই দায়ী নয়। যদিও ইমন ভাইয়ের রূপ ধরেই এসেছিল সেই প্রেতটা আর ওটার
হাত থেকে ইমন ভাইয়ের নানা সাহেবের স্মৃতি বিজড়িত কম্বলই আমায় বাঁচিয়েছিল। সেই ঘটনাই বলছি।
সেদিন ছিল শনিবার। মিজানুর রহমান বাড়ি চলে গিয়েছিল। রুমে ছিলাম আমি আর ইমন ভাই। বিকেলেই আমি একটি নতুন সিম
কিনে নিয়ে এসে রুমে ঢুকে দেখি ইমন ভাই কাপড় পাল্টাচ্ছেন। কোথায় যাচ্ছেন জিজ্ঞাসা করায় বললেন, ” আরেফিনের মেসে, তুমি
রুমে থেকো, আমি সন্ধের পরই ফিরব”।
নতুন সিম কেনার কথা বললাম ওঁকে। উনি বললেন, ” তাই নাকি? তা হলে এসে নতুন নাম্বারটা নেওয়া যাবে”। এই বলে দরজার দিকে
এগোলেন ইমন ভাই, ” ওকে! আসছি “।
তিনি চলে গেলেন। আমি নতুন সিমটা মোবাইলে ভরলাম। নতুন সিম তাই কিছুক্ষণ ঘাঁটাঘাঁটি করলাম। তারপর সাঁঝের আঁধার
ঘনাতেই পড়তে বসলাম।
পড়ছিলাম। পড়তে পড়তে কানে এল এশার আযানের ধ্বনি। খেয়াল হলো ইমন ভাই এখনও ফেরেন নি। কখনওই এত দেরী করেন না
ইমন ভাই। মাগরিবের পরপরই রুমে চলে আসেন। চিন্তায় পড়ে গেলাম।
একটু পর রান্নাঘর থেকে আমাদের রাতের খাবার নিয়ে এলাম। আমরা সব সময় একসঙ্গে খাই তাই খাবারের বাটি দুটো প্লেট দিয়ে
ঢেকে রেখে দিলাম। এর মধ্যে কয়েকজন ইমন ভাইয়ের খোঁজে এসে ঘুরে গেছে।
ভাবলাম ফোন করব। নতুন সিমে বোনাসের টাকা আছে।
রাত দশটায় ইমন ভাইয়ের নম্বরে ডায়াল করলাম। দেখলাম বন্ধ। বুঝলাম অন্য সিম লাগিয়েছেন। তাঁর অনেকগুলো সিম। সবগুলোর
নম্বর আমি জানি না। যেগুলো জানি সেগুলো আমার পুরনো সিমে সেভ করা ছিল। পুরনো সিম ওঠাব, তখনই দরজায় নক করল
কেউ। উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখি ইমন ভাই। চিন্তামুক্ত হলাম বটে, তবে ইমন ভাই ঘরে ঢোকার পর থেকেই এক ধরনের অস্বস্তি
আমায় ঘিরে ধরল। কেমন যেন দেখাচ্ছে ইমন ভাইকে। মুখ গম্ভীর। সোজা গিয়ে বিছানায় বসলেন। কোনও কথা বললেন না।
ভাবলাম কোনও কারণে হয়তো মন খারাপ। তাই কোনও প্রশ্ন করলাম না। দরজা লাগিয়ে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসে আড়চোখে তাঁকে
দেখতে লাগলাম। একইভাবে পা ঝুলিয়ে বসে আছেন। নট নড়ন চড়ন। সরাসরি তাকাইনি বলে বুঝতে পারলাম না তাঁর দৃষ্টি
কোনদিকে।
এভাবে প্রায় আধঘণ্টা পার হয়ে গেল। ইমন ভাই সেই একভাবে বসে আছেন। আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না। ঝট করে তাকিয়েই
জিজ্ঞেস করতে যাব কি হয়েছে; তা আর করা হল না। কারণ তাকিয়েই দেখি ইমন ভাই আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন। কিন্তু আমার
বিশ্বাসই হচ্ছিল না যে, ওই বরফ শীতল অশুভ দৃষ্টি ইমন ভাইয়ের হতে পারে। আর চাহনি দেখে মনে হলো সেখানে রাজ্যের হিংস্রতা
ভর করেছে।
কিন্তু এই চাহনি আর শীতল দৃষ্টি বেশিক্ষণ থাকল না। আমি তাকানোর পরপরই তিনি তাঁর চেহারার ভাব ভঙ্গি পালটে ফেললে
ন। হাসলেন। হাসলেন বললে ভুল হবে, তিনি যেন ভয়ঙ্কর ভাবে ভেংচি কাটলেন।
না, তা হবে কেন? এটা আমার মনের ভুলও হতে পারে। হয়তো এমন কিছু ঘটেছে যা তাঁকে শোকে পাথর করে দিয়েছে। হয়তো
আমার দিকে তাকিয়ে তিনি কোনও দুশ্চিন্তা করছিলেন।
ভাবলাম বটে। কিন্তু অস্বস্তি কমল না। আর অস্বস্তি নয়, বুঝলাম আসলে ভয় পাচ্ছি।
” কি ভাবছ, সুফল?” হঠাৎ ইমন ভাইয়ের কথায় চমকে উঠলাম। এবং আরেকবার ধাক্কা খেলাম। এ কেমন কণ্ঠস্বর ইমন ভাইয়ের!
যেন মানুষ নয়, কোনও রোবট কথা বলছে! নির্লিপ্ত শীতল কন্ঠ, সেই শীতল দৃষ্টির মতো!
” না, আসলে আপনাকে কেমন যেন দেখাচ্ছে”, কোনওরকমে বললাম আমি, ” খারাপ কিছু হয়নি তো?”
” কিছু হয়নি”, আবার সেই শীতল কন্ঠ, ” তুমি ঘুমোবে কখন? ”
” এই তো, আর একটু পরেই”, কথাটা বললেও গলায় তেমন জোর পাচ্ছি না, ” ভাত খাবেন না, ইমন ভাই?”
” অ্যাঁ? ভাত!” ভাতের কথা শুনে যেন চমকে উঠলেন ইমন ভাই, ” আমি তো মাত্র খেয়ে এলাম। এখন আর পারব না, ভাই। তুমিই বরং
খেয়ে নাও”
ভাবলাম, আরেফিন ভাইয়ের মেস থেকে হয়তো খেয়ে এসেছেন, তাই আর কথা বাড়ালাম না। ভাত নিয়ে খেতে বসলাম। কিন্তু বেশি
খেতে পারলাম না। অল্প কিছু খেয়ে হাত ধুয়ে ফেললাম।
ততক্ষণে ইমন ভাই বিছানায় শুয়ে পড়েছেন। আমাকে বললেন, ” যখন শোবে তখন আলো নিভিয়ে শোবে”।
কিছুক্ষণ পর বাতি নিভিয়ে আমিও শুয়ে পড়লাম। ও হ্যাঁ, আরেকটি কথা। ইমন ভাইয়ের হাতে একবারের জন্যও মোবাইলটা দেখিনি।
শুয়ে শুয়ে অনেক কিছু ভাবলাম। ঘুম আসছিল না কিছুতেই। শুধু নানারকম দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। সবই অবশ্য ইমন ভাইকে ঘিরেই।
একসময় কখন যেন ঘুমিয়েও পড়লাম।
হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। ক’টা বাজে দেখার জন্য মোবাইলটা হাতে নিলাম। দেখি, সাড়ে তিনটা বাজে। সাধারণত এরকম সময়ে আমার
ঘুম ভাঙে না। ভাবছিলাম, কেন ঘুমটা ভাঙল। তখনই হাঁপানোর মতো শব্দ কানে এল। যেন কেউ অনেকখানি রাস্তা দৌড়ে এসে
হাঁপাচ্ছে। একটু ভাল করে খেয়াল করতেই বুঝলাম শব্দটা ইমন ভাইয়ের বেডের দিক থেকেই আসছে। ইমন ভাইয়ের কথা মনে হতেই
রাতের ভয়টা এসে ভর করল। আর হাঁপানোর শব্দ ভয়টা আরও বাড়িয়ে দিল।
ঘর অন্ধকার, কিছু দেখা যাচ্ছিল না।
মোবাইলের টর্চ জ্বাললাম। টর্চের আলো ইমন ভাইয়ের বিছানায় ফেলা মাত্র আমার অন্তরাত্মা খাঁচাছাড়া হবার যোগাড় হলো।
এ আমি কি দেখছি? হায় আল্লাহ! ওটা কোনও মানুষের রূপ হতে পারে না। ওরকম ভাঁটার আগুনের মতো লাল চোখ, ভ্যাম্পায়ারের
মতো তীক্ষ্ণ শ্বদন্ত আর সাপের মতো লিকলিকে সরু জিহ্বা একমাত্র কোনও শয়তানের হতে পারে। সেই চেহারা আমার দিকে
তাকিয়ে আছে। কি বীভৎস দৃশ্য!
আমি গলা ছেড়ে চিৎকার দিলাম। আওয়াজ বেরোল না গলা দিয়ে, শুধু গোঙানির মতো শব্দ হলো।
বিছানা থেকে নামল ওটা। গা থেকে বিচ্ছিরি মাংস পচা গন্ধ ছড়াচ্ছে।
কালো রোমশ শরীর নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে ওটা। মনে মনে দোয়াদরুদ পড়তে লাগলাম আর ওটার দিকে প্রবল আতঙ্ক
নিয়ে চেয়ে রইলাম। ওটা আরও কাছে আসছে, আরও!
হঠাৎ যেন একটুর জন্য শক্তি ফিরে পেলাম। টেবিলের ওপর রাখা কাঁচের গ্লাসটা ওটাকে লক্ষ্য করে ছুঁড়ে মারলাম। কি আশ্চর্য! গ্লাসটা
ওর শরীর ভেদ করে পেছনের দেওয়ালে সজোরে বাড়ি খেয়ে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেল। পিশাচটা একেবারে আমার সামনে এসে
দাঁড়িয়েছে। বিচ্ছিরি কটু গন্ধে আমার দম বন্ধ হবার যোগাড় হলো। একবার মনে হল বমি করে ফেলব।
ওর হাত দুটো আমার গলা লক্ষ্য করে এগিয়ে আসছে। হাতে ইয়া বড় বড় নখ। বুঝলাম ও আমার গলা টিপে ধরতে চাইছে। তীব্র
আতঙ্ক নিয়ে পরিণতির অপেক্ষা করতে লাগলাম।
হঠাৎ ইমন ভাইয়ের বেডে কিছু একটার নড়াচড়া লক্ষ্য করলাম। এবার ভয়ের সাথে যোগ হল বিস্ময়। দেখলাম ইমন ভাইয়ের কালো
কম্বলটি নিজে নিজেই নড়ছে। ওই তো ওটা যেন হাওয়ায় উড়ে আসছে! পরের দৃশ্য দেখে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। কম্বলটি সেই
পিশাচটাকে আষ্টেপৃষ্ঠে পেঁচিয়ে ধরল! কম্বলটা ওটাকে এমনভাবে পেঁচিয়ে ধরল যে, ওটা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না। মেঝেতে
পড়ে গেল।
এই সুযোগে আমি এক দৌড়ে দরজার কাছে চলে গেলাম। কোনও রকমে দরজাটা খুলেই পাশের রুমের দরজায় গিয়ে পাগলের মতো
ধাক্কাতে লাগলাম। একটু পর দরজা খুলে দিল নাজমুল। ইতিমধ্যেই দরজা ধাক্কানোর প্রবল শব্দে অনেকেই বাইরে বেরিয়ে এসেছে।
সবার একই প্রশ্ন, কি হয়েছে?
আমার হৃদপিন্ড দমাদম লাফাচ্ছিল। মুখ দিয়ে কোনও কথা সরল না। হাত দিয়ে ঈশারা করে আমার রুম দেখিয়ে দিলাম। সবাই
কৌতূহলী হয়ে আমার রুমে ঢুকল। পিছন পিছন আমিও ঢুকলাম। একজন বাতি জ্বালল। দেখলাম ওটার আর কোনও অস্তিত্ব নেই।
শুধু গ্লাসের ভাঙা টুকরো আর কম্বলটা মেঝেতে পড়ে আছে। কম্বলটির দোমড়ানো মোচড়ানো অবস্থা দেখে বুঝলাম, ওটা ধস্তাধস্তির
ফল।
সবাই কাঁচের টুকরো আর কম্বলটি দেখে আমায় জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছিল, আর ইমন ভাই-ই বা কোথায়? আমি পানি চাইলাম।
আরাফাত বোতল এনে দিল। ঢকঢক করে অর্ধেক বোতল পানি শেষ করলাম। তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় সবকিছু বললাম ওদের।
নাজমুল ইমন ভাইয়ের নম্বরে ফোন করল। নম্বর খোলা। ইমন ভাই জানালেন, তিনি আরেফিন সাহেবের মেসে আছেন। নাজমুল
সংক্ষেপে তখন তাঁকে গোটা ব্যাপারটা জানাল।
ভোর হবার সাথে সাথেই ইমন ভাই চলে এলেন। তিনি বললেন, রাতে তাস খেলবার জন্য ওখানে থেকে যান তিনি। আমার নম্বরে ফোন
করেছিলেন। বন্ধ ছিল।
ইয়াল্লা! আমার তো নতুন সিম খোলা ছিল। ইমন ভাই তো ওটার নাম্বার এখনও জানেন না। ইশ! পুরনো সিমটা খোলা থাকলে এরকম
আতঙ্কের মধ্যে পড়তে হত না। মনে মনে আফসোস করলাম।
আমার কথা ক’জন বিশ্বাস করল কে জানে! শুনলাম কেউ বলল, ” শালার ভিমরতি ধরেছে”! কেউ বা বলল, ” ভন্ডামির জায়গা পায়
না!”
কেউ বিশ্বাস করুক বা না করুক আমি তো জানি, প্রাণটা যাচ্ছিলই; শুধু ইমন ভাইয়ের নানার কম্বলটার জন্যই বাঁচলাম।
রুমে ঢুকে ইমন ভাই বললেন, ” প্রেতটা দেখতে আমার মতো ছিল?”
” হ্যাঁ”, বললাম আমি, ” হুবহু আপনার মতো। তবে আমার আগেই খটকা লেগেছিল। আর একটু হলে আমায় মেরে হাড় মাংস আরাম
করে চিবিয়ে খেয়ে যেত শালা। শুধু কম্বলটা……”
” যদি স্বপ্নটা না দেখতাম তোমার কথা বিশ্বাসই করতাম না”, আমায় থামিয়ে দিয়ে বললেন ইমন ভাই। বলতে লাগলেন, ” আমি
দেখলাম, নানা সাহেব এক ভয়ঙ্কর দর্শন লোকের সাথে যুদ্ধ করছেন। তারপরই নাজমুলের ফোনে ঘুম ভেঙে যায়। জীবিতকালেও
আমার নানা খুব ধার্মিক মানুষ ছিলেন। কত মানুষের যে উপকার করেছেন তার ঠিক নেই। তোমার বিপদেও তাই তিনি না এগিয়ে এসে
থাকতে পারেননি”।
আমি আর কথা খুঁজে পেলাম না। যে কম্বলে আমার অ্যালার্জি ছিল, ভয়ে তাকাইনি পর্যন্ত, সেই কম্বলই আমার প্রাণ বাঁচিয়েছে। তাও
আবার ইমন ভাইয়ের নানা সাহেবের যোগসূত্রে!
ইমন ভাইয়ের কথার জবাবে অস্ফুটভাবে শুধু বললাম, ” হ্যাঁ”।
…………………………………………….( সমাপ্ত)……………………………………….