শ্রাবণ মাস। সন্ধ্যেবেলা।
ঝিরঝির করে একটানা বৃষ্টি পড়ে চলেছে। সেই কখন নেমেছে…..দুপুর গড়িয়ে বিকেল কেটে গিয়ে এখন সন্ধ্যে হয় হয়, তবুও বৃষ্টি থামার নাম নেই। চারদিকে জল থৈ থৈ করছে। রাস্তাঘাটে বাসটাসও নেই তেমন।
লোকজনও তেমন চোখে পড়ছে না। যারা বেরিয়েছিল দুর্যোগ দেখে তাদের অনেকেই ফিরে গেছে ইতিমধ্যে। তবু তারই ভেতর শহরতলীর এদিকে যে এক আধজন বাস থেকে নামছে না তা নয়। নেহাৎ-ই প্রয়োজনে যাদের দেরী করে ফিরতে হচ্ছে সেই তারাই এখন বাস থেকে নেমে ছাতা মাথায় ছপছপ করে এদিকওদিক দৌড়চ্ছে।
অমর্ত্যবাবুও দৌড়লেন। না দৌড়ে উপায় কি! সঙ্গে ছাতা নেই। সকালের দিকে আকাশটা ভালো থাকায় ছাতা নেবার দরকার মনে করেননি। কিন্তু দুপুরের দিকেই আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামল। সে কি বৃষ্টি! প্রথমে ভেবেছিলেন, কমে যাবে। আর কমলেই বেলা থাকতে থাকতে আজ একটু আগেই বেরিয়ে পড়বেন অফিস থেকে। অথচ তা আর হল কই! বৃষ্টি কমে আসতে আসতে সেই বেলা গড়িয়ে গেল। তাও কি পুরোপুরি কমল, ঝিরঝির করে একটানা পড়েই চলেছে।
হাতের ফাইলটা মাথার ওপর আড়াল করে প্যান্ট গুটিয়ে গলির ভেতর ঢুকলেন অমর্ত্যবাবু। গলিতে বেশ খানিকটা জল জমেছে। এই জলেও নামতে হত না যদি গাড়িটা তাঁর ঘরের দরজায় এসে দাঁড়াত। কিন্তু উপায় নেই। বাড়িতে ঢোকার মুখেই মস্ত একটা গলি। এ গলিতে গাড়ি ঢোকে না। অফিসের গাড়িটা তাই রোজই তাঁকে গলির মুখে ছেড়ে দিয়ে যায় ও এখান থেকেই তাঁকে গাড়িতে তোলে।
জল পার হয়ে অমর্ত্যবাবু বাড়ির দরজায় এসে কলিংবেল বাজালেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দরজাটা খুলে গেল। খুলল মেয়ে মিতুল।
অমর্ত্যবাবু জিজ্ঞেস করলেন, ” কিরে, কেউ আসেনি?”
মিতুল ঘাড় নাড়ল। মুখটা থমথমে। চোখ দুটো ছলছল করছে। অমর্ত্যবাবু বুঝলেন, অনেককে বলেও কেউ না আসায় মেয়েটার মন খারাপ হয়ে গেছে।
তা হওয়ারই কথা। অন্তত এই দিনটিতে, আজ মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষ্যে আত্মীয় স্বজনদের অনেককেই নেমন্তন্ন করেছিলেন অমর্ত্যবাবু। এটা তাঁর মেয়ের ক্ষেত্রে যেমন ছেলের ক্ষেত্রেও তেমনি…..এই চলে আসছে আজ ক’বছর ধরে। আসলে জন্মদিনটা উপলক্ষ্য মাত্র। এই সুযোগে সবার সঙ্গে দেখা হবে অমর্ত্যবাবু তাই অনেককেই আসতে বললেন। তবে এবারে আয়োজনটা একটু বেশীই ছিল। দিন পনেরো হল এই বাড়িটা কিনে এসে উঠেছেন তিনি।
পুরনো বাড়ি। জলের দরে বিক্রি হয়ে যাচ্ছিল। সুযোগ বুঝে বাড়িটা কিনে ফেললেন অমর্ত্যবাবু। তবে রঙটঙ করে গৃহপ্রবেশের সময় আর কাউকে বলতে পারেন নি। সামনেই মেয়ের জন্মদিন, তখন সবাইকে বলবেন।
বলেও ছিলেন। কিন্তু দুপুর থেকেই যা দুর্যোগ শুরু হয়েছে। এই ঝড়বৃষ্টি মাথায় করে কে আর এখানে আসবে। অমর্ত্যবাবু বললেন, ” তা আর মন খারাপ করে কি করবি বল। দুপুর থেকে যা শুরু হয়েছে। রাস্তাঘাট ভেসে গেছে। আমিই তো এলাম কত কষ্ট করে। যাক গে চল ভেতরে চল।….. কেক কেটেছিস? ”
মিতুল মাথা নাড়ল, ” না, এখনো ওসব কিছুই হয়নি। তুমি আসনি তাই মা দেরী করতে বলল।”
…..” ও তাই নাকি! ঠিক আছে, তোর মাকে বল, সব রেডি করতে। আমি চটপট হাতমুখ ধুয়ে আসছি।”
বলতে বলতে অমর্ত্যবাবু দরজাটা বন্ধ করে ভেতরের দিকে চলে গেলেন। তাঁর নিজের ঘরে।
প্রায় মিনিট কুড়ি পর যখন নিজের ঘর থেকে বেরোলেন, তখন তাঁর পরনে দুধসাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি। হাতের আঙুলের ফাঁকে জ্বলন্ত সিগারেট। মিতুলকে ডেকে বললেন, ” কই রে মিতুল? সব রেডি? ”
মিতুল নয়, এবার জবাব দিলেন মিতুলের মা। অমর্ত্যবাবুর স্ত্রী বিজয়াদেবী। তিনি বললেন, ” হ্যাঁ, সবই রেডি। এখন তুমি এলেই হল।”
পর্দা সরিয়ে অমর্ত্যবাবু পাশের ঘরে পা বাড়ালেন। এ ঘরটা বেশ বড়। কুড়ি-পঁচিশজন লোক অনায়াসে বসতে পারে। এখানেই ডাইনিং টেবিলের ওপর একটা সুন্দর ট্রে-তে একটা বড় কেক সাজানো।
কেকটার চারপাশে কতগুলো মোম জ্বলছে। অমর্ত্যবাবু গুনে গুনে দেখলেন, ঠিক তেরোটা মোম-ই সাজানো হয়েছে। তাঁর মেয়ে মিতুল এবারে তেরো বছরে পা দিল। এবার মিতুলকে এক ফুঁয়ে সবকটা মোম নেভাতে হবে।
ছেলেটা কাছেই ঘুরঘুর করছিল। সুযোগ পেয়ে বলল, ” কিরে দিদি, পারবি তো নেভাতে? না পারলে আমায় বলিস।”
” কেন তোকে বলবে?”, বিজয়াদেবী ছেলের দিকে তাকিয়ে হাসলেন, ” দিদি নিজেই সবগুলো নেভাতে পারবে। কই মিতুল…… আয় এদিকে আয়……”।
মিতুল এগিয়ে এল। মাথা নীচু করে খুব জোরে একটা ফুঁ দিল। সঙ্গে সঙ্গে মোমগুলো নিভে গেল। অমর্ত্যবাবু আর বিজয়াদেবী দুজনেই হাততালি দিয়ে উঠলেন। ছেলেটাও আনন্দে চেঁচিয়ে উঠল। কিন্তু এক মিনিটও গেল না, ছেলের উচ্ছ্বাসটা শেষ হতে না হতেই মোমগুলো আবার দপ করে জ্বলে উঠল।
অমর্ত্যবাবু বললেন, ” দাঁড়া, ঠিকমতো নেভেনি বোধহয়। নে আর একবার ফুঁ দে তো। ”
মিতুল আবার ফুঁ দিল। সঙ্গে সঙ্গে সবকটা মোমই এক ফুঁয়ে নিভে গেল। কিন্তু একটু পরেই আবার একই দৃশ্য। দপ করে সেগুলো জ্বলে উঠল।
” দাঁড়া তো”, অমর্ত্যবাবু এবার নিজে এগিয়ে এলেন। খানিকক্ষণ মোমগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলেন। নিজে পেশায় ইঞ্জিনীয়ার। কর্মক্ষেত্রে কত বড় বড় মেশিনের কলকব্জা নাড়াচাড়া করতে হয়, অথচ সামান্য কটা মোম কেন এমন করছে ঠিক বুঝতে পারলেন না। তাই বললেন, ” দাঁড়া, এবার আমি নিজেই দেখছি।”
বলে খুব জোরে একটা ফুঁ দিলেন তিনি। মোমগুলো নিভে গেল কিন্তু প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ফের জ্বলে উঠল। মাথাটা তুলে অমর্ত্যবাবু স্ত্রী’র দিকে তাকালেন, ” কি ব্যাপার বলো তো?”
” কি জানি, ঠিক বুঝতে পারছি না”, বিজয়াদেবী কেমন একরকম ভাবে বললেন।
অমর্ত্যবাবু বললেন, ” তুমি একবার চেষ্টা করে দেখো তো…….”
কিন্তু বিজয়াদেবী ততক্ষণে পিছিয়ে গেছেন। কেমন একটা ভয়ও ঢুকে গেছে তাঁর মধ্যে। ছেলেমেয়েদের কাছে টেনে এনে বললেন, ” না বাবা, আমার কেমন খারাপ লাগছে। তার চেয়ে তুমি জল ছিটিয়ে ওগুলোকে নিভিয়ে দাও।”
অমর্ত্যবাবু বললেন, ” জল ছেটালে কেকটা নষ্ট হয়ে যাবে তো। আচ্ছা, আর একবার চেষ্টা করে দেখি।”
অমর্ত্যবাবু আবার ফুঁ দিলেন। পরপর কয়েকবার। কিন্তু আশ্চর্য! যতবারই ফুঁ দেন মোমগুলো নিভে যায় ও সঙ্গে সঙ্গেই আবার জ্বলে ওঠে। এরকমই চলল কয়েকবার। শেষে বিরক্ত হয়ে একটা জলভর্তি সসপ্যান এনে চাপা দিতেই সব ক’টা মোম পুরোপুরি নিভে গেল।
সে রাতে আর কিছু হলো না। কিন্তু ঘটনাটা ঘটল পরের দিন রাত্রে।
রাত তখন ক’টা হবে! বোধহয় দুটো আড়াইটে। নিজের ঘরেই বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন অমর্ত্যবাবু। হঠাৎ একটা ভয়ার্ত চিৎকারে চমকে জেগে উঠলেন। চটপট উঠে বিছানায় বসতেই কানে এল এরপর ঝনঝন শব্দ। যেন একসঙ্গে অসংখ্য জিনিস এলোমেলোভাবে কেউ ছুঁড়ে মারছে। আর তারপরেই আবার সেই চিৎকার। চিৎকারটা ঠিক তাঁর ডানদিক থেকে ভেসে আসছে।
অমর্ত্যবাবু চকিতে উঠে ঘরের আলোটা জ্বাললেন। তারপর পর্দা সরিয়ে ডানদিকের ঘরে যেতেই চমকে উঠলেন। অন্ধকার থেকে একটা গোঙানির শব্দ কানে আসছে! গোঙানিটা অনেকটা কান্নার মতো। কে কাঁদছে এই রাত্তিরে!
অমর্ত্যবাবু স্ত্রী’র নাম ধরে ডেকে উঠলেন, ” বিজয়া….বিজয়া….কি হয়েছে? ” তারপরেই সুইচ টিপে এ ঘরের আলোটা জ্বালিয়ে দিলেন।
আলো জ্বালতেই চোখে পড়ল, ঘরের সমস্ত জিনিস লণ্ডভণ্ড। ভেঙেচুরে চারদিকে ছড়িয়ে আছে। আর তারই একদিকে শুয়ে আছে বিজয়া, অন্যপাশে কাত হয়ে পড়ে আছে মিতুল। ছেলেটা অবশ্য অঘোরে ঘুমোচ্ছে।
অমর্ত্যবাবু এগিয়ে গেলেন স্ত্রী ‘র দিকে। গোঙানিটা বেরোচ্ছে তার মুখ থেকেই। স্ত্রী ‘কে উদ্দেশ্য করে অমর্ত্যবাবু বললেন, ” বিজয়া! বিজয়া!……”
কিন্তু বিজয়ার দিক থেকে কোনও উত্তর নেই। অমর্ত্যবাবু এবার স্ত্রী ‘কে ধাক্কা দিতে লাগলেন, ” কি….কি হয়েছে কি বিজয়া?”
বিজয়াদেবীর এবার যেন সম্বিৎ ফিরল। ধড়মড় করে উঠে বসলেন বিছানায়। তারপর অমর্ত্যবাবুর দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে বলে উঠলেন, ” মিতুল…..মিতুল…কে যেন ওকে গলা টিপে ধরেছিল….এইমাত্র……!”
” কে! কে মারছিল? এ সব জিনিসপত্র ভাঙলই বা কে?”, বলতে বলতে অমর্ত্যবাবু এবারে মিতুলের দিকে এগিয়ে গেলেন।
মিতুলের দাঁতকপাটি লেগে গেছে। অমর্ত্যবাবু বললেন, ” শিগগীর একটু জল আনো বিজয়া। মিতুল অজ্ঞান হয়ে গেছে।”
” কিন্তু…. আমার ভয় করছে ভীষণ “, বিজয়াদেবী ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললেন।
অবস্থা বুঝে অমর্ত্যবাবুই উঠলেন। নিজের ঘরের জলের জগটা নিয়েই ছুটে এলেন। তারপর চোখেমুখে জলের ঝাপটা দিয়ে, দাঁতের ফাঁকে আঙুল ঢুকিয়ে দাঁতকপাটি খুলে দিতেই জ্ঞান ফিরল মিতুলের। সঙ্গে সঙ্গে সে জড়িয়ে ধরল বাবাকে। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল, ” আমি আর এখানে থাকবো না বাবা। আমার ভীষণ ভয় করছে।”
অমর্ত্যবাবু মেয়েকে নিয়ে স্ত্রী’র দিকে তাকালেন, ” চটপট টুটুলকে নিয়ে আমার সঙ্গে এসো। ”
বিজয়াদেবী টুটুলকে কোলে নিতেই অমর্ত্যবাবু ওদের নিয়ে নিজের ঘরে এলেন। মিতুল আর টুটুলকে নিজের খাটে শুইয়ে দিতেই মিতুল উঠে এল, ” না, আমি একা শোব না।”
” একা কোথায়? ভাই তো আছে…..”
” না….না, তুমি থাকো এখানে….”
অমর্ত্যবাবু দেখলেন, মেয়েটা ভয়ে নীল হয়ে গেছে। স্ত্রী ‘র দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ” কি হয়েছিল বলো তো?”
বিজয়াদেবী কাঁপতে কাঁপতে বললেন, ” প্রথমে তো বুঝতে পারিনি। মাঝরাতে হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে যেতেই মনে হলো আশেপাশে কেউ যেন ঘুরছে। ভাবলাম, তুমি বোধহয়। তাই তোমায় ডাকতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু তার আগেই ঝনঝন করে শব্দ কানে এল। বুঝতে পারলাম, কেউ জিনিসপত্র ভেঙে চুরমার করছে। বেডসুইচটা জ্বালিয়ে চিৎকার করতে গিয়েই যা দেখলাম তাতে আমার বুকের রক্ত এখনো হিম হয়ে আসছে। একটা তের চোদ্দ বছর বয়সের মেয়ে। কিন্তু তার দুচোখ দিয়ে যেন আগুনের হলকা বেরোচ্ছে। আর হাতগুলো কি লম্বা লম্বা! দাঁতগুলো বিকট। দাঁত মুখ খিঁচিয়ে সে মিতুলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ততক্ষণে ঘুম ভেঙে গেছে মিতুলের। মিতুল একটা চিৎকার দিয়ে উঠেছে। ওর চিৎকারে আমিও চেঁচালাম। কিন্তু মেয়েটা তখন আমায় হাত তুলে একটা চড় মারল। ঠিক চড় নয়, মনে হল যেন একটা দমকা হাওয়া আমার গাল ছুঁয়ে গেল। ব্যস, তারপর আর কিছু মনে নেই।”
অমর্ত্যবাবু বললেন, ” কিন্তু তোমরা ঠিক দেখেছো! নাকি কোনও চোর ঢুকেছিল!”
বিজয়াদেবী: কিন্তু চোর এলে সে জিনিসপত্র ভেঙে বাড়ির মালিকের ঘুম ভাঙাবে কেন !
অমর্ত্যবাবু: তা অবশ্য ঠিক। কিন্তু কি ব্যাপার বল তো……
বিজয়াদেবী: ব্যাপার খুবই খারাপ। আমার গতকালই সন্দেহ হয়েছিল। নাহলে ফুঁ দিয়ে মোমগুলো নেভাবার পরেও কেন আবার জ্বলে উঠবে! তুমি কালই অন্য বাড়ি দেখো। ভাড়াবাড়ি হলেও থাকব কিন্তু এ বাড়িতে থাকা অসম্ভব। উ: কি সাঙ্ঘাতিক!
মা’র কথায় মিতুলও এবার বলল, ” হ্যাঁ, বাবা, তুমি অন্য কোথাও চলো। এখানে আর থাকব না আমি। আর একটু হলেই আমার গলা টিপে ধরত।” বলতে বলতে কেঁদে ফেলল মিতুল। অমর্ত্যবাবু মিতুলকে কাছে টেনে নিলেন। কিন্তু তখনো যেন কিছু বুঝে উঠতে পারলেন না। পারলেন সকালে উঠে।
বাজার যাওয়ার সময় গলির মুখে যেতেই কে যেন ডাকল। পেছন ফিরে তাকাতেই অমর্ত্যবাবু দেখলেন, তাঁর পাশের বাড়ির বিজনবাবু। কাছে এসেই বললেন, ” কাল রাতে কি হয়েছিল আপনার বাড়িতে? চিৎকার আর শব্দ শুনলাম। ”
অমর্ত্যবাবু সব গুছিয়ে বললেন ব্যাপারটা। শুনে বিজনবাবু বললেন, ” আমি জানতাম এমন একটা কিছু ঘটবে। আপনি যখন বাড়িটা কেনেন আমরা তখন এখানে ছিলাম না। মাসখানেকের জন্য বেনারস গিয়েছিলাম। থাকলে আপনাকে বারণ করতাম ও বাড়ি কিনতে।”
” বাড়িটার কি ব্যাপার বলুন তো?”
” আসলে বাড়িটা যিনি তৈরি করিয়েছিলেন, বছর পঁচিশ আগে তাঁর একমাত্র মেয়ে জন্মদিনের দিন আগুনে পুড়ে মারা যায়। মেয়ে মারা যাবার পর মেয়ের শোকে ভদ্রলোকের স্ত্রী’ও একদিন আত্মহত্যা করে। এর বছর দুয়েক পর ভদ্রলোক বাড়িটা বেচে দেন। কিন্তু যে কেনে, সে-ই আর থাকতে পারে না ভয়ে। শোনা যায়, মা ও মেয়ে মৃত্যুর পর এখনো পালা করে বাড়িটাকে যক্ষের মতো পাহারা দিয়ে রেখেছে।
অমর্ত্যবাবু চমকে উঠলেন। বললেন, ” আমি তাহলে যার কাছ থেকে কিনেছি, সে-ও একই সমস্যায় পড়েছিল?”
” হ্যাঁ”, বিজনবাবু বললেন, ” তবে কেনার আগে আমি তাঁকে সাবধান করে দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি শোনেননি আমার কথা। পরে বিশ্বাস করেছিলেন।”
অমর্ত্যবাবু চুপ করে রইলেন। মনে মনে ঠিক করলেন, আজ ছুটির দিন। আজই একবার ভাড়াবাড়ির খোঁজে বেরোবেন তিনি। তারপর সুযোগ বুঝে বাড়িটা তিনিও বেচে দেবেন কাউকে।
গল্পের বিষয়:
ভৌতিক