আমার নাম বিপুল সাহা। বাবা মা আমায় ডাকে বিপু বলে। আমরা কলকাতাতে থাকি। গত বছর আমার বাবাপশ্চিমবঙ্গে -একটা বাড়ি কিনেছিলেন। বিশাল
এক দুতলা বাড়ি।সামনের দিকটা পুব থেকে পশ্চিমে প্রসারিত। পেছনে একটা বারান্দা। বারান্দার ওপাশটা ছিলখুবই ভয়ঙ্কর। ঘন জঙ্গল আর বড় বড়
গাছপালায় ভরা। বাবা আমাদের বলেছিলেন বাড়িটি কেনার সময় অনেকেই নাকি বাবাকে বারন করেছিলেন। কিন্তু কারন জিজ্ঞেস করাতে কেউই এর
সঠিক কোন উত্তর দিতে পারেনি। কেউ বলেছে ঐ বাড়িটাভালনা, আবার কেউ বলেছে ঐ বাড়িতে নাকি ভুত আছে। কিন্তু বাবা শুনেনি। সে বছরই আমরা ঐ
বাড়িতে উঠি। আমরা ছিলাম মোট পাঁচজন। বাবা, মা, আমি, আমার ছোট বোন আর আমাদের কাজের লোক রঘু দা। আমি সময়পেলে প্রায়ই পেছনের
বারান্দায় গিয়ে একা একা বসে থাকতাম, বই পড়তাম। আর চারপাশটা ভালকরে তাকাতাম। একটু একটু ভয়ও করত আমার। রাতের বেলায় কখনও আমি
আমার ঘর থেকে বের হতাম না। তবে মাঝে মাঝে ছাদের উপর গিয়ে বসে থাকতাম। বাবার বারন ছিল রাতে ছাদের উপর উঠার। কিন্তু আমার রাতের
বেলাতেইছাদের উপর বসে থাকতে বেশি ভাল লাগতো। তাই সময় পেলেই লুকিয়ে ছাদের উপর চলে যেতাম। একদিন আমি রাতে ছাদের উপরবসে আছি,
ঠিক এমন সময় আমার মনে হলকেউ একজন সিড়ি বেয়ে উপরে চলে আসছে। আমি ভাবলাম নিশ্চয়ই বাবা আর নয়তো মা। ধরা পরলে আর রক্ষে নেই।
আমি দৌড়ে চলে গেলাম। কিন্তুসিঁড়ির মধ্যে কাউকেই দেখতে পেলাম না। নিচে নামতেই লক্ষ করলাম বাথরোমে লাইট জ্বলছে, আর সেই সাথে পানি পড়ার
শব্দ হচ্ছে। ভাবলাম নিশ্চয়ই বাবাধুকেছে। এই সুযোগে আমি আমার ঘরে গিয়ে শুয়ে পরলাম। সকাল বেলা মা আমায় ভীষণ বকাবকি করল। তার অভিযোগ
আমি নাকিরাতে বাথরোমের পানি ছেরে রেখেছিলাম। কিন্তু কিছুতেই মাকেবিশ্বাস করাতে পারলাম না, যে আসলে আমি কাল রাতে বাথরোমেও যাইনি আর
পানিও ছারিনি।মা বলল, আমি তোকে নিজের চোখে বাথরোমে ঢুকতে দেখেছি।
সেদিনের বকাবকিতে সারাদিন মনটা ভীষণ খারাপ ছিল। সন্ধ্যা হওয়া মাত্রই চলে গেলাম ছাদের উপরে। ছাদের উপরে যাওয়া মাত্রই কিছু একটা উপলব্ধি
করলাম। আমি ঠিক যেখানটাতে বসে ছিলাম, ঠিক সেখানেই এইমাত্র কেউ একজন বসে ছিল। মনে হল আমার উপস্থিতি টের পেয়ে জিনিসটা কোথায় যেন
উধাও হয়েগেল। অনেক্ষন বসে থাকার পর ঘরে গিয়ে শুয়ে পরলাম। কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলাম ঠিক মনে নেই। হঠাৎ করেইপ্রচণ্ড চিৎকার চেঁচামেচিতে
আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। কে যেন আমারনাম ধরে ডাকছে।
বিপু যাসনে! দাঁরা বিপু! বিপু চলে গেল!
বিছানা থেকে এক লাফে উঠে গেলাম। গিয়ে দেখি মা বারান্দায় গিয়ে জঙ্গলের দিকে ইশারা করে কাকে যেনডাকছে। কিন্তু কাকে ডাকছে? কেউইতো
সেখানে নেই। এর মধ্যে বাবা আর রঘুদা ও চলে এসেছে। বাবামাকে বার বার বোঝানোর চেষ্টা করছে যে, বিপু কোথাও যায়নি। এখানেই আছে, দেখ। মা
আমার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল। মা বলল, তাহলে ঐখান দিয়ে কে চলে গেল? বাবামাকে বলে ঐখান দিয়ে কেউই যায়নি, তুমি ভুল দেখেছ।
ইতোমধ্যেআমার ছোট বোনটার ঘুম ভেঙ্গে গেছে। ও মার এই অবস্থা দেখে ভয়ে কান্না শুরু করে দিয়েছে। এরপর মাকে ঘরে নিয়ে গেলাম।
আমার মনে বার বার চিন্তা হতে লাগল। মা গত রাতেও আমার মত কাকে যেন দেখেছে, আবার আজ রাতেও আমার মত কাকে যেন জঙ্গলের ধারে চলে
যেতে দেখেছে। ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা। এখন আমার ছাদের উপর যেতেও ভয় করে। মার এই ঘটনাটা পরপরআরও কয়েকদিন ঘটল। বাবা এবার
একজন ঠাকুর মশাইকে বাড়িতে ডাকল। তিনি মন্ত্রতন্ত্র পাঠ করে দিয়ে গেলেনআর বললেন, এরপর থেকে আর কোন সমস্যা হবেনা। কিন্তু কোন ফল
হলনা। এরপর থেকে সমস্যা আরও বাড়তে লাগল। আমার ছোট বোনটা প্রায়ই ঘুমের ঘোরে চিৎকার করে উঠে। কিন্তু কোন কিছুতেই তার কান্না থামেনা।
মাঝে মাঝে রান্নাঘরের আসবাব পত্র পরে যাওয়ার শব্দে সবার ঘুম ভেঙ্গে যেত। প্রথমে ভাবতাম হয়তো বিড়ালের কাজ।কিন্তু আমাদের বাসায় বিড়াল
ঢুকারমত কোন জায়গা ছিলনা। এরপর দিন দিনসমস্যা আরও বাড়তে লাগল। মাঝে মাঝে মনে হত বাসার ছাদের উপর দিয়েকেউ দৌড়াদৌড়ি করছে।
আবার কোন ঝর তুফান ছাড়াই বারান্দার উপর বড় বড়গাছ ভেঙ্গে পরত। তারপর কোন উপায়ুন্তু না দেখে কোন বড় ধরনের সমস্যা ফেস করার আগেই
আমরা সেই বাড়ি থেকে অন্যত্র চলে যাই।