সেই ভয়ানক রাত

সেই ভয়ানক রাত

প্রথমেই বলে নেই ঘটনাটি বিশ্বাস অবিশ্বাস­ পুরোটাইআপনাদের হাতে।যেহেতু আমি এইঘটনার স্বীকার তাই আপনাদের সাথে শেয়ারকরলাম। আমার আব্বু সরকারী চাকুরী করত,প্রায়ই
বদলি হত এবং আমরা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতাম।
আমি যখন ক্লাস নাইনেপড়ি, তখন আমার সাথে একটা ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছিল। আমরা তখন নতুনএকটা বাড়িতে ভাড়া থাকতাম।
বাড়িটার যে মালিক তার
দুইটা বাড়ি থাকায় বাড়িওয়ালা এই বাড়ি ভাড়া দিত। আরেকটা বাড়িতে সেনিজেথাকত।
আমাদের সেই বাড়িটা অনেক বড় ছিল। কিন্তু
বাড়ি অনুযায়ী ভাড়া কম দিতে হত। বাড়িভাড়া কম হবার কারন আমরা জানতে পারলাম……… -­ ­ ­ ­­.
এক রাত্রিতে আমরা সবাই
ঘুমাচ্ছিলাম। রাত ২টায় হঠাত্‍ ভংকর শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় সবার।শুনি কে যেন দরজারবাইরে চিল্লাইতেছে দরজা। কেউ মারামারিকরলে যেরকমন তর্কাতর্কি হয় অনেকটা সেরকম চিল্লাতেছিল! তো আমরাপরিবারের সবাই উঠলাম কে চিল্লাইতেছে তাকেদেখার জন্য। দরজা খুলে যেয়ে দেখিকেউ নাই!!
আমরা সবাই অবাক। একিকরে সম্ভব? একটু আগের আওয়াজ কোথায় গেল? পরদিন আমরা পাশের বাসার প্রতিবেশীকে ডেকে বললাম যে এই ব্যাপার। গতরাতে কি আপনি কারো চিল্লানোর
শব্দ পাইছেন? প্রতিবেশী বলল, -কইনা তো কোন শব্দশুনতেপাইনিত -­ ­ো!
উনার কথা শুনে আমরা পুরাই অবাক যেএত জোরে চিত্কারের শব্দ
হলো আর আমাদের বাড়িরপাশের প্রতিবেশী কিছুই শুনতে পেল না!(?)
যাই হোক এবার আসি সেই ভয়ংকরঅভিজ্ঞতায়. -­…
আমার তখন পরীক্ষা চলতেছিল।
সেইসময় আমাদের গ্রামে আমার এক দূরসম্পর্কের দাদা মারা যান।
আমার দাদাবাড়ির লোকজনের সাথে সেইদাদার ভাল সম্পর্ক ছিল
বলেই আমার আব্বু আম্মু সকালহতেই রওনা দেয় সেই দাদাকেশেষবারের মত দেখার জন্য ।আমার পরীক্ষা চলছিল
তাই আমি যেতে পারিনি। তো আম্মু যাবার আগে আমার জন্যখাবার রান্না করে ফ্রীজে রেখে দিয়ে যায়। কেননা সেইদিন
রাতে আমাকে বাসায় একাই থাকতে হবে।
তো দুপুরে খাবার খেয়ে বিছানায় শুয়ে আছি। কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম
নিজেই জানিনা। হঠাত্
একটা দুঃস্বপ্নে ঘুমটা ভেঙ্গে যায়। ঘুম থেকে উঠেফ্রেশ হয়ে ফ্রীজের ঠান্ডা পানি খেতে গেলাম।ফ্রীজ
খুলে দেখি ফ্রীজের পানি গরমই আছে।একটুও ঠান্ডা হয়নি। আমিতো পুরাই অবাক এ কি করে সম্ভব?যেখানে ফ্রীজ ঠিক
ভাবেই চলছে কিন্তু পানি একটুও ঠান্ডা হলো না। তখনো আমার মাথায় প্যারানরমাল বিষয় কাজ
করেনি। তো আমি পানির
বোতলটা নরমালে না রেখে ডিফের ভিতর রেখে দেই। বিকেলে মাঠে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাসায়ফিরলাম।হাত -­ ­ ­ ­ মুখ
ধুয়ে হালকা নাস্তা করে পড়তেবসলাম।রাত তখন আনুমানিক সাড়ে আটটা হঠাত্ লোডশেডিং। তো মোম জ্বালিয়ে পড়ছিলাম।
অনেক্ষন হয়ে গেল ক্যারেন্ট আসছেনা দেখে বিরক্ত লাগল খুব।
ঘড়িতে দেখি রাত ১১টাপার হয়েগেছে। তাই ডিনার করার জন্য ডাইনিং টেবিলে গেলাম। ফ্রীজ খুলতে যাব দেখি ফ্রীজআর খুলছেনা।আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম
কেননা আমি সন্ধায় নাস্তা করার সময় ফ্রীজের পানি খাইছি। কিন্তুএখন খুলছেনা কেন? অনেক
টানাটানি করলাম ফ্রীজের হাতল ধরে। কিন্তু কিছুতেই খুলতে পারছিলাম না। এদিকে প্রচন্ড খিদালাগছে কিন্তু
খাবারগুলা তো সব ফ্রীজের ভিতরে।ভয়ে আমি বাড়ির বাইরে চলেআসতে চাইলাম। কিন্তু
দরজা বাইর থেকে লককরা। এবার
আমি আরো ভয় পেলাম।আমি চিত্কার করছিলাম কিন্তু হয়ত কেউ আমার
চিত্কার শুনতে পাচ্ছিলোনা।
এদিকে মোমবাতিটা শেষ
পর্যায়ে চলে আসতেছে। মোমবাতির আলোয় দেখলাম রাত তখনপ্রায়
১১টা বেজে ৫০মিনিট। বাসায় টিএনটিফোন ছিল দৌড়ে গেলাম আব্বুকে ফোন করতে। কিন্তু
যেয়ে দেখি ফোন ডেডহয়ে আছে।
আমি ভয়ে কাঁদতে শুরুকরলাম। তখন
আমার কোন পার্সনাল মোবাইল ছিলনা।আমি পানি খাবার জন্য জগ
খুললাম কিন্তু জগের ভিতর একফোটাপানিও ছিলনা! তাই বাধ্যহয়েবেসিনে গেলাম পানিখেতে।
কিন্তু পানি কেমন যেন
নোনতা নোনতা লাগছিল।
চেয়ে দেখি পানির কালার কালো। আমিবমিকরে দিলাম।
এদিকে মোমবাতি নিভু নিভু পর্যায়েচলে আসছে তাই বাধ্য হয়ে আমিআমার রুমে চলে আসতে লাগলাম।
যেমূহুর্তে আমি আমার রুমের দরজায়
পা রাখব ঠিক সেই মূহুর্তে ফ্রীজের ভিতর ঠকঠক আওয়াজ শুনতে পাই ।
মনে হচ্ছিল ফ্রীজের ভেতরে কেউ আটকা পড়েছে যেকিনা বাইরে বের হতেযাচ্ছে। কৌতুহলের বশে হয়ত
তখন দেখতে গিয়েছিলাম ফ্রীজের ভিতরে কি আছে। কিন্তু যেয়ে যা দেখলাম তাহলো…….
আমি ভয়ে তখনো কাপতেছিলাম।
একহাতে নিভু নিভু
মোমবাতি ধরেছিলাম।যেই
ফ্রীজের হাতলটা
ধরে টান দিলাম
অমনি একটা পলিথিনের
বস্তা দেখতে পাই ।তখন
হয়তো আমার হুঁশ ছিলনা! কেননা তখন
একবারো আমার
মনে হয়নি যে ফ্রীজেরভেতর পলিথিনের বস্তা আসবে কি করে? আর
আমার আম্মুর রান্না করা খাবারগুলা কই গেল?
আমি যখন বস্তা খুলছিলাম তখনহাত
ভেজা ভেজা লাগছিল। হঠাত্ আমি বস্তাটা উপরে তুলে জোরেঝাকিদিলাম। খুব কষ্টে বস্তাটা উপরে তুলেছিলাম! কেননা বস্তাটা ভারী ছিল।
সাথে সাথে গলগল করে মানুষেরকাঁটা,হা -­ত,পা, মাথা,নাড়িভুড়ি পলিথিনের ভিতর থেকে মেঝেতে ছিটকেপড়ল। আমার
পা রক্তে মেখে গেল।জ্ঞান
হারানোর পূর্বে শেষবারের মত দেখলাম কাটা মাথার একটা চোখগেলে গেছে আর এক চোখ খোলা।
সেই খোলা চোখ আমার
দিকে তাকিয়ে আছে।
যখন জ্ঞান ফিরল তখন
দেখি আমি বিছানায়। দেখি আম্মু পাশে বসেকাঁদছে আর আব্বু ডাক্তারের সাথে কথা বলছে।
পুরোপুরি সুস্থ হবার পর সেইরাতেরঘটনা আব্বু আম্মুকে বলি।
পরদিন আমরা বাড়িয়ালার বাসায় যাই।আমার ঘটনায় বাড়িয়ালা লজ্জিতহয়ে বলল”আজ
থেকে ৭ বছর আগে ৪ জন ব্যাচেলর
বাড়িটা ভাড়া নিয়েছিল। তাদের মধ্যে কি নিয়ে যেনগন্ডগোল লাগে।গন্ডগোলের একপর্যায়ে নাকি ৩জন মিলে একজনকে খুন করে। পরদিন যেয়ে দেখি যে তাদের কেনা যে ফ্রীজটা ছিল সেই ফ্রীজের ভিতর টুকরা টুকরা লাশ
পলিথিনের ব্যাগে ভড়া।

এই ঘটনাটিস্থানীয় পত্রিকায়ও আসছিল”।
এবার আসি সেই রাতের ঘটনার পর যাহয়েছিল…..
আব্বু আম্মু এসে দেখে আমি ফ্রীজের সামনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছি ।।
আমার জ্ঞান ফিরে ৩দিন পর।।
পরে জানতে পারি ঐরাতে এলাকায় কোনলোডশেডিং হয়নি ।।
বর্তমানে সেই হন্টেড বাড়িটা আর নাই।আমার ঘটনার পরপরই সেই
বাড়িটা ভেঙ্গে ফেলা হয়।।

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত