লাশ চুরি

লাশ চুরি

চাদরটা ভাল মত মুড়ি দিয়ে জড়সড় হয়ে বসল সামাদ। আজ শীত একটু বেশি পড়েছে।
,
আক্কাস চা এর কাপ টা এগিয়ে দিয়ে বলল, “ কিরে সামাদ; আজ যে চুপচাপ। মতলব কি?” সামাদ কোনও কথা বলে না।
তার মাথাই এক চিন্তা কাজ করছে, লাশ চুরির চিন্তা। বিজলি(ঠাডা) পড়ে মারা যাওয়া লাশ। আজ সাকালে খুব বড় আকারে বিজলি পড়ে মারা যাই এলাকার সিদ্দিক্ক মাস্টার।
বিজলি পড়া লাশ নাকি সোনা হয়ে যাই, দোকানে বইসা গল্প শুনেছে সে। রফিক বেপারি বলতেছে কথাটা।
তাইতো সেটা কে পাহারা দিয়ে রাখসে এলাকার দুই চৌকিদার, যাতে কেও চুরি করতে না পারে। সামাদ এর চিন্তা অই লাশ চুরি করে শহরে বেঁচে বড়লোক হবার।
,
“ওই সামাইদ্দা কথা কস না কেরে, ভাব লস কেন? চুরি করবি নি আজ?”, বলে উঠে আক্কাস। এতখন পর জবাব দিল, সামাদ বলল “তোমরা গ্রামের লোক সগল হামারে চোর কও কিল্লাই? কবে দেখলা যে আমি চুরি করবার গেছি। আক্কাস কয়, “এহ বড় গলা হইছে তর তাইনা ধরবার না পারলেও বেবাক মানুষে জানে যে তুই চোর”। “হ যাও যাও আমি চোর”,রেগে বলল সামাদ।
,
রাত বাড়ছে, সামাদ আস্তে আস্তে উঠে গোরস্থানের দিকে হাঁটা ধরল। চৌকিদার পাহারাতে দাড়িয়ে আছে। এভাবে ঢুকা যাবে না। অপেক্ষাই থাকল সুযোগের। রাত আনুমানিক দুই টা বাজে তখন। দুইজন চৌকিদার বেহুঁশ ঘুমে। আস্তে আস্তে গোরস্থানের ভেতরে গেল সামাদ। উত্তরের একপাশে নতুন কবর। বুঝল ওইটাই সেটা। আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল সামাদ। কিসের শব্দে শুনে থেমে গেল সে। ভাল করে বুঝার চেষ্টা করল, কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। ভয় পেয়ে থামলো সে। চারিদিক তাকানোর পরও কোন কিছু চোখে পরল না তার। আবার পা বাড়ালও সে। এত শীতেও দরদরকরে ঘামছে।
,
হটাত কি যেন বাঁধল পায়ে। বসে সেটা তুলে দেখার চেষ্টা করল। দেখল একটা বল এর মত কি যেন। যখনই ওটা ফেলে দিতে যাবে তখন ই নড়ে উঠল, বের হতে লাগল লাল আলো। সামাদ একটু খেয়াল করতেই দেখলো এ যে এটা কোনো বল নয় সামাদের নিজের মাথার খুলি, হঠাৎ মাথাটা চোখ খুলে হাসা শুরু করলো। ভয়ে সেটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে হাফাতে লাগল সামাদ, বড়লোক হবার স্বপ্ন দেখে গিয়েছিল আজকে। এই প্রথম আজ এত ভয় পেল সে। এর আগে কত রাত বন-বাদরে ঘুরেছে। একদিন ও এরকম হই নি। কি করবে ভাবছে সে, মন চাইছে পালাতে। কিন্তু লোভ তাকে সামনে টানছে, তাই এগিয়ে গেল। পৌঁছে গেল সেই কবরের কাছে। একটা লাঠি নিয়ে খোঁড়া শুরু করল। এইবার যেন চারিদিকে ভূমিকম্প শুরু হল। একটু থামল সে। কে যেন তার কাছে আসছে। বুঝতে পেরে তাকাল সামনের দিকে। দেখল সাদা কাপর পরা লম্বা কে যেন মুহূর্তেই তার কাছে চলে এল। বুকের ধুকধুকানি বেড়ে চলছে সামাদের। সামাদের কাছে এসে কিচ্ছুক্ষন দাঁড়ালো, তারপর পাশের এক কবরের ভেতর নিজে নিজেই ঢুকে গেল। সামাদ তার সব শক্তি যেন হারিয়ে ফেলছে, কিন্তু তখনও তার লোভ যাইনি। আবারো খুঁড়তে লাগলো, অনেকটা শেষ পর্যায়ে। হটাত তার চোখ গেল গোরস্থানের দেয়াল এর দিকে, দেখল অনেক গুল ছায়া মানব বসে আছে। তার দিকে মুখ করে। এইবার তার আর সাহস হল না। লোভ টাও গায়েব। পালাতে যাবে কিন্ত কে যেন তার পা ধরে রেখেছে। মাটির দিকে তাকিয়ে দেখে সেই মাস্টার তার পা ধরে রেখেছে। ঝাটকা টানে পা ছুটে গেলো সামাদের। সাথে সাথে দৌড় শুরু করল। কিন্তু কিন্তু এক গর্তে পড়ে গেল সে। ভয়াল দৃষ্টিতে দেখল দেয়াল এর উপরে থাকা ছায়া মানবগুলো এক এক করে নেমে এসে তাকে ঘিরে ধরছে।
,
পরদিন সকালে সামাদের লাশ মাস্টারের কবরে গলা পর্যন্ত পোঁতা অবস্থাই দেখা গেল। জিব পুরাটা কে যেন টেনে ছিড়ে নিয়েছে।

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত