আমাদের ঐ বাথরুমে ভূত থাকে

আমাদের ঐ বাথরুমে ভূত থাকে
নিচতলার ঐ ছোট্ট বাথরুমটা ভীষন রকমের নির্জন থাকে সবসময়। সহসা কেউ যায় না সেখানে। ভয় পায় সবাই। মিতু আপুরা বলে,”ভূত আছে ঐ বাথরুমে।”
অনেকেই নাকি দেখেছে ছোট্ট এক মেয়ে নুপুর পায়ে হেঁটে বেড়ায় সেখানে। খলখল করে হাসে। আবার কখনওবা কেঁদে উঠে উচ্চশব্দে। আরও কত কাহিনী!
বড় আপুদের মুখে সেসব কাহিনী শুনতাম আর শিউরে উঠতাম ভীষনভাবে। ভাঙ্গাচোরা ঐ বাথরুমটাকে দূর থেকে দেখলেই কেমন যেনো ছমছমে একটা অনুভূতি হতো মনের ভেতরে।
সেদিন স্কুল ছুটির পর গুটিগুটি পায়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম বাড়ির ভেতরে। থেমে গেলাম মাঝপথে। গাছভর্তি কাঁচা
-পাঁকা আমগুলো দেখে হঠাৎ করেই একটা দুষ্টুবুদ্ধি চেপে বসলো মাথার ভেতরে। চুপিচুপি সুমাইয়াকে নিয়ে ঢুকে পড়লাম স্কুলের বাগানে। ব্যাগ ভর্তি করে নিয়ে নিলাম একগাদা আম। এবং…..ঠিক তখনি ঘটে গেলো দূর্ঘটনাটা।
আতঙ্কিত হয়ে দেখলাম অনেক দূর থেকে কেউ একজন চিৎকার করতে করতে ছুটে আসছে আমাদের দিকে। হাতে বিশাল এক লাঠি।
“ধরা পড়ে গেলে টিসি দিয়ে দিবে একদম।” কাঁদো কাঁদো কন্ঠে কথা বলে উঠলাম আমি।
“লুকাতে হবে আমাদের” কথাটা বলেই আমাকে নিয়ে দৌড়ে সামনের দিকে চলে এলো সুমাইয়া। টেনে নিয়ে গেলো ঐ ভূতুড়ে বাথরুমটাতে।
তারপর ফিসফিস করে বলল,” আমগুলো সব ফেলে দে এখানে। তারপর আগুন জ্বালিয়ে ধ্বংস করে দিবো আমরা বাথরুমটা। তাহলে আর কোন প্রমান থাকবে না।”
“আগুন কেনো জ্বালাতে হবে?”
“আরে গোয়েন্দা গল্পে দেখোস না, কেমন হাতের ছাপ দিয়ে অপরাধীকে বের করে ফেলে ওরা! এখন আগুন জ্বালিয়ে সব পুঁড়িয়ে ফেললে আর কোন প্রমান থাকবে না। এটাও বলে দিতে হবে তোকে? “
অ্যাডভেঞ্চারের উত্তেজনায় কেমন যেনো চকচক করে উঠলো আমার চোখদু’টো। তড়িৎ গতিতে বললাম, কিন্তু আগুন পাবো কোথায় আমরা?
আগুনের কথাটা বলার সাথে সাথেই কেমন যেনো গম্ভীর হয়ে গেলো সুমাইয়া। গভীর চিন্তায় ডুবে গেলো বেচারি। এবং ঠিক তখনি শুনতে পেলাম সেই ভয়ঙ্কর শব্দটা। কে যেনো হাসছে খিল খিল করে!
কে হাসে ওখানে? ভূত??
কথাটা মনে হতেই কেমন যেনো ভয়ের একটা শীতল স্রোত নেমে এলো শিড়দাঁড়া বেয়ে। চিৎকার করতে করতে বের হয়ে এলাম বাথরুম থেকে। এবং…সাথে সাথেই পরিষ্কার হয়ে এলো খিলখিলে ভয়ঙ্কর হাসির রহস্য।
অবাক হয়ে দেখলাম বাথরুমের সামনে দাঁড়িয়ে হেসে হেসে ফোনে কথা বলছে মিতু আপু। আর তার সেই হাসির শব্দকে ভূতের হাসি ভেবে কি বিচ্ছিরি রকমের ভয়টাই না পেয়েছিলাম আমরা!!
আমাদের এ ভয়ানক অবস্থা দেখে আবারও খিলখিল করে হেসে উঠলেন মিতু আপু। কিনে দিলেন একগাদা চকলেট। আর বার বার করে বলে দিলেন ফোনের ব্যাপারটা যাতে কারও কানে না যায়। কারও কানে গেলে ভয়ঙ্কর কেলেঙ্কারি ঘটে যাবে। কারন স্কুলে আবার ফোন আনা নিষিদ্ধ।।
মজার সে ঘটনা মনে পড়লে আজ এত বছর পরও হেসে হেসে মাটিতে গড়াগড়ি খাই আমি। আর খুব করে মিস করি আমার ভীষন রকমের সুন্দর সেই স্কুল জীবনটাকে।
গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত