ভয়ংকর ভুতের গল্প দিচ্ছি একটা ভয়ংকর ভুতের গল্প।
কেউ আপনারা টোকিওর আসাকাসাতে এলেই দেখতে পাবেন, আসাকাসা রোডের ধারে “কি-নো- কুনি- যাকা’ নামে একটা ঢাল আছে। এটার মানে হল ‘কি’ প্রদেশের ঢাল।
আমি জানি না, এটার নাম কেন ‘কি’ প্রদেশের ঢাল হল। সেই ঢালের এক ধারে দেখতে পাবেন একটি পুরোনো মোটেল।
অনেক বড় আর প্রশস্ত। মোটেলের চারপাশের খালি জায়গাটুকুর কোথাও কোথাও ঘন এবং লম্বা সবুজ ঝোপঝাড়ে ঢাকা।
রাস্তার আরেক পাশে সম্রাটদের প্রাসাদের সুউচ্চ দেয়াল লম্বা হয়ে রাস্তার সাথে সাথে চলে গেছে।
অনেক অনেক আগে, টোকিওতে যখন রাস্তায় বিজলী বাতি আসেনি অথবা মানুষে টানা রিক্সা গাড়ি চলা শুরু করেনি, তখন আসাকাসার এই ঢালটা ছিল ভীষন ভয়ঙ্কর আর নির্জন।
মানুষ পারতঃপক্ষে সূর্য ডোবার পরে এ রাস্তা দিয়ে কখনই যেত না । কখনও কোন পথচারীর সূর্যডোবার পরে বাড়ি ফিরতে হলে “কি- নো-কুনি-যাকা ‘ অনেক লম্বা পাহাড়ি পথ ঘুরে বাড়ি ফিরত, তবুও এ পথ দিয়ে যেত না।
কারণ তখন রাত হলেই “মুজিনারা” পথে নেমে আসত।
সব শেষ যে মানুষটি এক মুজিনাকে দেখেছিলেন, তিনি ছিলেন একজন ব্যবসায়ী।
তিনি কাছেই কোবায়েশী কোয়ার্টারএ থাকতেন। বছর তিরিশেক আগেই তিনি মারা যান।
একদিন রাতে তিনি কি ভাবে মুজিনা দেখেছিলেন, তার গল্পই আজ বলবো।
একদিন রাতে সেই ব্যবসায়ী তাড়াহুড়ো করে “কি- নো-কুনি- যাকা’র ঢাল পার হচ্ছিলেন। তখন বেশ রাত হয়ে গেছে। হঠাৎ তিনি দেখতে পেলেন, মোটেলের ধারে, গুটিসুটি মেরে হাঁটুতে মুখ গুঁজে এক মেয়ে ভয়ঙ্কর ভাবে কাঁদছে। তিনি ভয় পেলেন এই ভেবে যে, এই অন্ধকারে , এই নির্জন রাস্তায় মেয়েটা কি ভাবে এল? আর কেনই
বা কাঁদছে?
ডুবে টুবে মরবে না তো! তিনি কোন শব্দ না করে, মনে মনে সাহস সঞ্চয় করে, মেয়েটার পাশে এসে দাঁড়ালেন।
“মেয়েটাকে দেখে ভদ্রঘরের মেয়ে বলেই মনে হচ্ছে। পরনে দামী পোশাক।
চুল বাঁধার ধরণ দেখে মনে হচ্ছে, কুমারী মেয়ে।”
তিনি ভাবলেন। কিছুটা বিষ্ময় নিয়ে তিনি মেয়েটার আরও কাছে এগিয়ে এলেন, তারপর বললেন, “ও- জোচু” তুমি কাঁদছ কেন? কেঁদ না। তোমার কি হয়েছে আমাকে খুলে বল, দেখি তোমাকে কোন সাহায্য করতে পারি কিনা?
তোমাকে সাহায্য করতে পারলে আমার খুব ভালো লাগবে। ভদ্র লোক প্রকৃতই বেশ দয়ালু ছিলেন। তাই তিনি কথা গুলো মন থেকেই বলছিলেন।
কিন্তু মেয়েটা তার লম্বা হাতায় মুখ ঢেকে কেঁদে যাচ্ছে তো কেঁদেই যাচ্ছে। একবারও মুখ তুলে তাকাচ্ছে না। ভদ্রলোক আবার বললেন, “ও-জোচু” তুমি কেঁদ না।
লক্ষী মেয়ে আমার, কথা শোন প্লীজ! জায়গাটা মোটেও ভালো নয়। আর তোমার মত একটা যুবতী মেয়ের এখানে থাকা একেবারেই নিরাপদ নয়। আমি তোমাকে অনুরোধ করছি, কি হয়েছে আমাকে খুলে বল?
দেখি তোমার জন্য আমি কিছু করতে পারি কিনা? ভদ্রলোকের অনুরোধে তাকে পেছনে রেখে, মেয়েটা আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো । তখনও সে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল।
হাত দিয়ে মুখ ঢাকা। ভদ্রলোক চেষ্টা করে যেতেই লাগলেন, তিনি বললেন, “ও- জোচু, আর কেঁদ না প্লীজ। আমর কথা শোন, লক্ষী বোন আমার!
বলে, তিনি মেয়েটার কাঁধে আলতো করে হাত রাখলেন। মেয়েটা এবার তার দিকে মুখ করে ঘুরে দাঁড়ালো।
তার মুখ থেকে যেন খসে পড়ল, লম্ব হাতাটা। মেয়েটা তার অব্য়বে হাত বুলিয়ে, সেই ব্যবসায়ীর দিকে এগিয়ে এল।
আবছা অন্ধকারে তিনি দেখলেন। একটা ভয়ঙ্কর অবয়ব- যেখানে চোখ, নাক,কান, মুখ কিছু নেই। আর তখুনি চারিদিকটা কেমন অন্ধকার আর শূণ্য হয়ে গেল।
তিনি দিগ্বিদিকশূণ্য হয়ে ভয়ে দৌঁড়াতে শুরু করলেন। একবারও পেছন ফিরে তাকালেন না।
দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে কতক্ষণ মনে নেই, তিনি দূরে একট বাতির আলো দেখতে পেলেন।
দূর থেকে টিমটিমে আলোটুকুকে জ্বোনকির আলোর মত লাগছিল।
তিনি ভাবছিলেন, এ আলো নিশ্চই “সোবা” দোকানীর কাছে থেকে আসছে কারণ যেখানে তিনি আলোটা দেখলেন, সেখানে রাস্তার ধারে তার এক চেনা দোকনী “সোবা” বিক্রী করেন। যেই থাক না কেন? তিনি ঐ আলো লক্ষ্য করে দৌঁড়াতে শুরু করলেন। তারপর হুড়মুড় করে এসে তিনি সোবার দোকানে ঢুকে ধপাস করে বসে, শব্দ
করে কেঁদে উঠলেন।
এখানে, এখানে, সোবার দোকনী রুক্ষ স্বরে লোকটিকে কাছে ডাকল। “কেউ মেরেছে নাকি আপনাকে? ব্যাথা পেয়েছেন? না না, ব্যাথা পাইনি- শুধু——— শুধু কি? ভয়
দেখিয়েছে?
লোকটার গলা খসখসে, কোন সহানুভূতি নেই।
ডাকাত নাকি?
না না! ডাকাত নয়। ভীত সন্ত্রস্ত লোকটা একটা ঢোক গিলে, কাঁপতে কাঁপতে বললেন,
আমি —-
আমি এক মেয়েকে দেখলাম মোটেলের পাশে——
তার মুখটা দেখে——
ওহ!
আমি বলতে পারবো না, কি দেখলাম। সোব দোকানী চেঁচিয়ে বলল, সে কি তোমাকে খুব ভ্য় দেখিয়েছে?
ঠিক এরকম একটা মুখ দেখিয়েছে? ঠিক আমার মত—- মুখের ওপরেরটা ডিমের মত সমান?
লোকটা সোবার দোকানীর দিকে তাকিয়ে দেখলেন, একটা অবয়ব তাতে কোন নাক, মুখ আর চোখ নেই।