বাসে আমার সামনের সিটে যে মেয়েটা বসে আছে, হাত বাড়িয়ে তার পিঠ ছুঁয়ে দিতে খুব ইচ্ছে করছে। বেগুনি রঙের কামিজের উপর দিয়ে উঁকি দিচ্ছে ফর্সা মসৃণ ত্বক! স্পষ্ট হয়ে উঠেছে শারীরিক অবয়ব। এই দৃশ্য দেখে নিজেকে সামলে রাখা খুব মুশকিল।
কিন্তু এই মুহুর্তে সামলে রাখা ছাড়া কোন উপায় নেই। বাসে বেশ লোকজন আছে, কোন দিক থেকে কেউ একজন দেখে ফেলবে- শেষে গণপিটুনি জুটবে আমার কপালে। এত কাঁচা কাজ আমি করি না! অপেক্ষায় থাকি, সুযোগ নিশ্চয়ই আসবে…
বাসে দুই সময়ে মেয়েদের মলেস্ট করা যায়। এক- খুব ভিড় হলে। পেছন থেকে ছুঁয়ে দিলে মেয়েটা ঘুরে দেখার সুযোগটুকুও পাবে না। দুই- বাসে লোক কম থাকলে। পেছন থেকে আস্তে করে ছুঁয়ে দিয়ে ঝট করে সটকে পড়বেন, মেয়ে ঘুরে তাকিয়ে আপনাকে না দেখে অন্য কাউকে দোষারোপ শুরু করবে। কিন্তু মাঝারি ভিড় হলে সমস্যা আছে। এই সময় বেশিরভাগ পুরুষের দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকে মেয়েটির দিকে। আপনি কিছু করতে গেলে কেউ না কেউ দেখে ফেলবে। আপনাকে পিটিয়ে সে বীরপুরুষ সাজতে চেষ্টা করবে।
আমি জানি মেয়েদের সাথে এই ধরণের আচরণ করাটা বিকৃত রুচির পরিচয়। সমাজের চোখে ঘৃণ্য কাজ। কিন্তু তাতে কি? কাজটা করতে আমার খুব মজা লাগে! যেখানে মজা আছে সেখানে রুচি-বিবেক ইত্যাদি বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না! বিশেষ করে আপনি যদি কাজটাতে এক্সপার্ট হন, তাহলে মজা অনেকগুনে বেড়ে যাবে!
সব সময় যে ছুঁয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হই, তা কিন্তু নয়! মাঝে মধ্যে আরো বেশি সাহসী হয়ে উঠি আমি। এইতো কিছুদিন আগেই সাহস করে একটা কাজ করে বসলাম। বাসের পেছন দিকের সিটে বসে, দুই সিটের মাঝখান দিয়ে হাত গলিয়ে দিয়ে, সামনের সিটের এক মেয়ের কামিজ-সালোয়ার ব্লেড দিয়ে কেটে নিতম্ব উন্মুক্ত করে দিলাম! মেয়েটা খেয়ালই করল না ব্যাপারটা! সে একমনে কানে ইয়ারফোন গুঁজে গান শুনছিল। আর আমি মনের সুখে তার ফর্সা নিতম্ব দেখে চরম পুলক অনুভব করছিলাম!
পরে অবশ্য মেয়েটি তার ছেড়া জামার ছবি ফেসবুকে পোষ্ট করে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছিলো কি ঘটেছে বাসে। রাতারাতি ভাইরাল হয়ে গেলো পোষ্টটা। সবাই আমাকে বিকৃত রুচির লোক, সাইকোপ্যাথ, জারজ, বেজন্মা ইত্যাদি বলে গালি দিচ্ছিলো। আমি নাকি বিবেকহীন, আমি নাকি অসুস্থ, আমার নাকি ভালো মন্দের পার্থক্য বোঝার ক্ষমতা নেই! আরো কত কথা! আরে বাবা- চলন্ত বাসে একটা মেয়ের সাথে এমন আচরণ করা ঠিক না, তা তো আমিও জানি! কিন্তু জানলে কি হবে? ঐ যে মজা! মজার লোভের কাছে বিবেক তুচ্ছ বস্তু! মজা তো আমি ভালোই লুটেছি। ফেসবুকে লোকের গালাগালিতে এখন আর কি আসে যায়? এমনকি, সবার সাথে তাল মিলিয়ে আমিও সেই পোষ্টটা ফেসবুকে শেয়ার দিয়ে গালাগালি করলাম নিজেকে!
হা হা হা! মজার উপর ডাবল মজা!
আমি যাচ্ছি ঝিনাইদহে আমার এক মামার বাড়িতে বেড়াতে। বাসে লোকজন খুব কম। যারা ছিল সব নেমে গেছে বিভিন্ন বাস স্ট্যান্ডে। টিকিটের বাস, ভাড়া তোলার জন্য হেল্পার টাইপের কেউ নাই। এই মুহুর্তে বাসে যাত্রী কেবল আমি, বাসের ড্রাইভার, দুই তিন জন বয়স্ক ব্যাক্তি আর আমার সামনের সিটে বসা মেয়েটি। আমি নামবো ধর্মতলা, এই রুটের একদম শেষ বাসস্ট্যান্ডে। মেয়েটা কই নামবে? আমি ঘড়ি দেখলাম- ৬টা বাজে, বিকেল ফুরিয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। চকিতে একটা সম্ভাবনা খেলে গেলো আমার মাথায়। মেয়েটিও যদি শেষ বাসস্ট্যান্ডে যায়, বুড়া লোকগুলাও যদি নেমে যায় আগেই, অন্ধকারও হয়ে যাবে এরই মধ্যে… হয়তো মলেস্টের চাইতেও অনেক বড় কিছু করার সুযোগ পেয়ে যাব!
মেয়েটির সাথে কথা বলার চেষ্টা করা যেতে পারে। আমি উঠে দাঁড়িয়ে পেছন থেকে বললাম, “এক্সকিউজ মি আপু। ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ড আর কত দূর বলতে পারেন?”
মেয়েটি ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে বললো, “এখনো অনেক দূর ভাইয়া। এই বাস শেষ যেখানে থামবে, সেখানে”।
মেয়েটা রাস্তা ঘাট চেনে। মনে হচ্ছে নিয়মিত যাতায়াত করে। মনে মনে খুশি হয়ে উঠলাম আমি। এই ধরনের মেয়ে ঘায়েল করা খুব সহজ হয়, চেনা যায়গায় এরা সতর্ক থাকে কম। কিন্তু অচেনা জায়গা হলে মেয়েরা অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করে থাকে। আমি মিষ্টি করে হেসে বললাম, “থ্যাঙ্ক ইউ আপু। আপনি কই নামবেন?”
“আমিও ধর্মতলাতেই নামবো”। মেয়েটিও হাসলো। “ওখানেই আমার বাড়ি”।
“তাহলে তো আপনি আমার দেশি মানুষ”। আমি মুখে হাসিটা ধরে রেখেছি। “আমার মামার বাড়িও ওখানে। যদিও খুব একটা যাওয়া হয়না। আমি ঢাকাতেই থাকি… বাই দা ওয়ে, আমার নাম মামুন। একটা এনজিওতে জব করছি”।
“আমি মাদিহা জাহান। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ফিজিক্সে মাস্টার্স করছি”।
“পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো”।
মেয়েটি একটু হেসে ঘাড় ঘুরিয়ে জানালার বাইরে তাকাল। যার অর্থ- আর কথা বাড়াতে আগ্রহ বোধ করছে না। সে হয়তো ভেবেছে এইবার তার ফোন নম্বর চাইবো আমি! হারামজাদি! ফোন নম্বর না, আরও বড় জিনিস আদায় করবো তর কাছ থেকে। সবুর কর!
দারুন একটা সম্ভাবনা খেলা করছে আমার মাথায়। আজ মনে হচ্ছে চরম সাহসী একটা কাজ করে ফেলতে পারবো। কিন্তু এই বুড়ো লোকগুলো বাস থেকে না নামলে তো প্রবলেম। আর বাসের ড্রাইভারকেও পটানো লাগবে। তাকে দুইটা অফার দেওয়া যেতে পারে- হয় মজার ভাগ নে, অথবা হাজার খানেক টাকা নিয়ে কান বন্ধ রাখ। আমি এগিয়ে গেলাম বাসের সামনের দিকে, ড্রাইভারের কাছাকাছি বসে কথা বলতে হবে।
শেষ একবার মাথা ঘুরিয়ে মেয়েটাকে দেখলাম। ফর্সা, সুন্দরী, স্লিম! ভালোই মজা হবে আজ! কিন্তু আফসোস হচ্ছে এই ভেবে যে- কাজ শেষে মেয়েটাকে মেরে ফেলা ছাড়া গতি থাকবে না! আমার নাম পরিচয় জানিয়ে ফেলেছি। সে তো ঠিকই আমাকে চিনে রাখবে। বেঁচে থাকলে থানায় মামলা করে পুলিশ দিয়ে আমাকে ধরে ফেলবে। এই রিস্ক নেওয়া যাবে না। মারার পর লাশটা টুকরো টুকরো করে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে, যেন কেউ খুঁজে না পায়। এই কিছুদিন আগে বাস থামিয়ে একটা মেয়েকে ধর্ষন করে মেরে ফেলার দায়ে ছয়-সাত জনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আহাম্মকগুলা লাশ লুকাতে না পেরে ধরা খাইছে। কিন্তু আমি অত কাঁচা কাজ করবো না!
জানি আমার এই দুরভিসন্ধির কথা শুনলে সমাজের বিবেকবান মানুষ আতংকিত বোধ করবে। কিন্তু আমারই বা দোষ কি বলুন? বাসে এই ধরনের ঘটনা কি আমাদের দেশে নতুন কিছু? সব সময়ই তো এমন হয়ে আসছে। অনেক পুরুষই এইসব আকাম করে বেড়ায়। তবে আগে এসব ঘটনা থেকে যেত লোক চক্ষুর অগোচরে। মেয়েরা চেপে যেত মান সম্মান হারানোর ভয়ে। কিন্তু এই ফেসবুক জেনারেশনে এসে পাল্টে গেছে চিত্র। মেয়েগুলা সাহসী হয়ে উঠছে। সব সময় সতর্ক থাকছে, কোন ঝামেলা হলে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করছে, পরে আবার তা ফেসবুকে ফাঁস করে দিচ্ছে। তাদের এই সতর্কতার কারনে আমাদের হয়েছে যত জ্বালা! শান্তিতে মজাও করার উপায় নাই! তাই তো মজা শেষে মেরে ফেলা ছাড়াও কোন গতি নেই!
“ড্রাইভার ভাই, নাম কি তোমার?” ড্রাইভারের কাছে বসে জিজ্ঞেস করলাম।
“জাকির”। ড্রাইভার হাসিমুখে জবাব দিলো।
“বাড়ি কই?”
“ধর্মতলা”।
“বিয়ে শাদি করছ নাকি?”
“না ভাই”। ড্রাইভারের মুখে লাজুক হাসি।
“কি বল বিয়ে শাদি কর নাই? জোয়ান বয়স, এই বয়সে একা থাকা যায় নাকি? মেয়ে দেখা হচ্ছে বিয়ের জন্য?”
“না ভাই। আমারে আর কে বিয়া করবো?” ড্রাইভারের গলায় দুঃখ দুঃখ ভাব। “টাকা পয়সা নাই আমার। গায়ের রঙ কালা। দেখতেও ভালো না”।
আমি মনে মনে হাসলাম, এই তো লাইনে এসেছে। এখন আসল কথা বলা যায়। “তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে মনে খুব দুঃখ? ছ্যাকা খাইছ নাকি?”
“না, ছ্যাকা না…” ড্রাইভার এক মুহুর্ত থেমে থেকে বললো, “এক মাইয়ারে ভালো লাগতো। দেখতে অনেক সুন্দর। ফিল্মের হিরোইনগো মতো। মাইয়ারে বিয়া করতে চাইছিলাম। সে আমারে বলে- ‘আগে নিজের চেহারা দেখ, তারপর বিয়ার কথা ভাইব’। তারপর থেইকা মাইয়া মাইনসের উপর বিশ্বাস উইঠা গেছে”।
এবার ড্রাইভারের কথার সাথে আমাকে তাল মেলাতে হবে। মুহুর্তের মধ্যে একটা বানোয়াট কাহিনী ফেঁদে ফেললাম আমি। “আমারও একই অবস্থা ভাই। এক মেয়ের সাথে প্রেম ছিলো। সে কোটিপতির ছেলে পেয়ে আমাকে ভুলে গেলো। বিয়ে করলো টাকার লোভে। সেই থেকে মেয়ে মানুষ আমার কাছে ভোগের সামগ্রী। তাদের মন পাওয়ার চেষ্টা করি না”।
“ভোগ ক্যামনে করুম মন না পাইলে?” ড্রাইভারের প্রশ্ন।
“মন না পেলেও ভোগ করা যায়, জাকির ভাই!”
“ক্যামনে?”
“জোর করে”। বলেই আমি খিক খিক করে হাসলাম।
ড্রাইভারের মুখেও ক্রুর হাসি ফুটে উঠলো।
“বাসে একটা মেয়ে দেখতেছ? অনেক সুন্দর না?”
“হ”।
আমি এক চোখ টিপে বললাম, “আজীবন সাধনা করলেও এমন মাইয়া বিয়ার জন্য পাইবা না! আজকে কিন্তু সুযোগ আছে ভোগ করার”।
ড্রাইভারের চোখ দুটো লোভে চকচক করে উঠলো, “কিন্তু ক্যামনে করুম?”
“সেই ব্যবস্থা আমি করবো কিন্তু শর্ত আছে”।
“কি শর্ত?” ড্রাইভারের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে এই সুযোগের বিনিময়ে সে যেকোনো শর্ত পুরনে রাজি আছে!
“আগে আমার পালা… আমি মজা লুটবো যতক্ষণ খুশি। ততক্ষন তুমি পাহাড়া দিবা। তারপর তোমার পালা আসবে”।
ড্রাইভার জিভ বের করে ঠোঁট চাটলো। বললো, “আমি রাজি”।
“বাসের এই বুড়া যাত্রীগুলারে নামায় দেওয়ার সিস্টেম কর। মেয়েটাকে আমি সামলাচ্ছি। তারপর তুমি সামনে নির্জন রাস্তা দেখে গাড়িটা হাইওয়ে থেকে ঝোপ ঝাড়ের আড়ালে নিয়ে নামিয়ে দিবা। তাহলেই হবে”।
আমি আবার আমার সিটে এসে বসলাম। ড্রাইভার খানিকবাদে বাস থামালো। বুড়ো লোকগুলার দিকে তাকিয়ে বললো, “আপনেরা বাঁশ তলা যাইবেন না? সবাই নাইমা যান”।
“বাঁশতলা তো আরো অনেক দূর”। একজন বললো।
“এই খান থেকেই হেঁটে যান। বাস অন্য রাস্তায় যাইব”।
লোকগুলো ড্রাইভারকে গালাগালি করতে করতে নেমে গেলো।
ড্রাইভার বাস আবার স্টার্ট দিল। মেয়েটা গান শোনায় মগ্ন ছিল এতক্ষন। সে হঠাৎ কান থেকে ইয়ারফোন খুলে ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বললো, “ড্রাইভার ভাই, অন্য রাস্তায় এলেন কেন? ঐ রাস্তা দিয়েই তো নিয়মিত যাতায়াত করি!”
“নতুন রাস্তা হইছে আফা। ভালা রাস্তা”।
মেয়েটা সন্তুষ্ট হতে পারছে না দেখে আমি অভয় দিয়ে বললাম, “আপনি বসেন, টেনশন করার কিচ্ছু নাই। এই রাস্তা ভাল”।
মেয়েটা উঠে দাঁড়াল, “ভাই, গাড়ি থামান আমি নেমে যাব”।
আমিও উঠে দাঁড়ালাম। মেয়েটার কাছে এসে হাসি মুখে বললাম, “এমন আচরণ কেন করছ মাদিহা, শান্ত হয়ে বস!”
“প্লিজ আমাকে নামিয়ে দিন”। মেয়েটি হাত জোর করে বলল। মনে হচ্ছে কেঁদে ফেলবে।
“তোমাকে একটা আদর সোহাগ করতে চাইছি। তাতে কেন এত আপত্তি তোমার?” আমার মুখে টিটকারির হাসি।
“আল্লাহর দোহাই লাগে”। মেয়েটার দুই চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে। আতংকে কাঁপছে ঠকঠক করে।
“ভয় পেও না, খুব বেশি ব্যাথা দেব না তোমাকে”। আমার মুখের হাসিটা চওড়া হলো।
“প্লিজ…”
সাধুখালি গ্রামের কাছে পৌঁছে বাসের গতি কমিয়ে আনল ড্রাইভার। হাইওয়ে ছেড়ে জঙ্গলের ভেতর খানিকটা ঢুকে গেলো। আমরা প্রথমে মেয়েটার দুই হাত আর মুখ ভালো করে বাঁধলাম। তারপর তাকে টেনে হিঁচড়ে দুজনে মিলে জঙ্গলের দিকে টেনে নিয়ে গেলাম। বেশ খানিকটা ভেতরে ঢোকার পর একটু ঘন ঝোপ-ঝাড় দেখে থামলাম। পারফেক্ট যায়গা, কেউ আসবে না এখানে। চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে। কাকপক্ষীও টের পাবে না এখানে ঘটতে চলেছে!
ড্রাইভার জাকিরের চোখ দুটো লোভে চকচক করছে। একটু পর পর জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটছে সে নিজের। এদিকে আমি দ্রুত হাতে নিজের শরীরে অপ্রয়োজনীয় কাপড় খুলতে শুরু করলাম। ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম, “বাসে কি ছুরি চাকু কিছু আছে?”
ড্রাইভার তার পকেট থেকে একটা ছুরি বের করলো। আমাকে ছুরিটা দেখিয়ে শয়তানি ভঙ্গিতে হাসছে।
আমিও এক চোখ টিপে হাসলাম। বললাম, “মিয়া, তুমি তো চালু চিজ! এই জিনিসও রেডি রেখেছ? ভাল হইছে। আমাদের কাজ শেষে মেয়েটার লাশ কয়েক টুকরা করে ফেলতে হবে”।
বলার সাথে সাথেই ড্রাইভার ছুরি হাতে মেয়েটির দিকে এগিয়ে গেলো। আমি ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললাম, “আরে করসিস কি ব্যাটা? এখনই মেরে ফেলবি মেয়েটাকে? তারপর করবি কি লাশের সাথে?”
ড্রাইভার শব্দ করে হাসলো। সে হাসি শুনে আমার মত বিকৃত মস্তিস্ক লোকেরও গা শিউরে উঠলো। এই শালা তো মনে হয় আগেও লাশের সাথে করেছে!
আমার অপ্রয়োজনীয় কাপড় খোলা শেষ। জাকিরকে তাগাদা দিলাম, “এই ব্যাটা সর। আমাকে মজা শুরু করতে দে। আজ আগে আমার পালা…”।
এগিয়ে গেলাম মাটিতে শুয়ে থাকা মাদিহার দিকে। মেয়েটা এতক্ষন খুব ধস্তাধস্তি করছে। এখন আর নড়া চড়াও করছে না। চোখের পানিতে কাজল ধুয়ে গিয়ে চোখের চারিদিকে কালো ছাপ ফেলেছে। এক দৃষ্টিতে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। মনে হচ্ছে মেনে নিয়েছে নিজের নিয়তিকে। সমস্যা কি? আমারই ভাল!
হঠাৎ বুকের বাম পাশে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করলাম আমি। মনে হচ্ছে কিছু একটা পিঠ দিয়ে ঢুকে বুক দিয়ে বেরিয়ে এসেছে। সমস্ত শরীরে ব্যাথার আগুন জ্বলে উঠলো আমার। হাটু গেড়ে বসে পড়লাম আমি। বিস্ময়ের আতিশয্যে জরবস্তুর মতো স্থির রইলাম। চিৎকার করতে চাইছি কিন্তু মুখ দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না!
বুকের ভেতর ঢোকা বস্তুটা আবার বেরিয়ে গেলো। জাকির আমার পেছন থেকে ঘুরে সামনে এসে দাঁড়ালো। তার হাতে রক্তমাখা ছুরি। আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম। আমার দু চোখে আজন্ম বিস্ময়। জাকিরের ঠোঁটের কোনে এখনও সেই শয়তানি হাসি লেগে আছে। সে এগিয়ে গেল মাটিতে পড়ে থাকা মাদিহার দিকে। মেয়েটির হাত পায়ের বাঁধন কেটে দিলো সে, মুখের বাঁধনও। মাদিহা উঠে বসল। তার ঠোঁটের কোনেও দুর্বোধ্য হাসি। চোখ দুটোতে খেলা করছে খুনের নেশা।
আমার মাথা ঝিমঝিম করছে। মনে হচ্ছে হারিয়ে যাচ্ছি ঘুমের রাজ্যে। আর বসে থাকতে পারলাম না। কাত হয়ে এক পাশে পড়ে গেলাম। জাকির আর মাদিহা এগিয়ে এলো আমার কাছে। আমার মুখের উপর ঝুঁকে জাকির বললো, “মাদিহা আমার আদরের ছোটবোন”।
মাদিহা বললো, “তোর মতো বেজন্মাগুলোকে সমাজ থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতেই আমি আর আমার ভাই মিলে এই ফাঁদ পেতে রেখেছি। প্রতিদিন বাসের শেষ ট্রিপের সময় ভাইয়ার গাড়িতে উঠি আমি। প্রায়ই তোর মতো একটা নরপশু পাওয়া যায় বাসে, তাকে আমরা কেটে টুকরো টুকরো নদীতে ভাসিয়ে দেই। আজ তোর পালা…”
আমার চোখের সামনের পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে আসছে। আমি জানি আমার মৃত্যুতে কোন বিশেষ খবর হবে না। মেয়েটা আমার লালসার স্বীকার হয়ে মারা গেলে হয়তো রাতারাতি তোলপাড় হয়ে যেত। কিন্তু আমার মতো সাইকোপ্যাথের মৃত্যু কাউকে ভাবাবে না…
গল্পের বিষয়:
ভৌতিক