সন্ধে অনেকক্ষণ পেরিয়ে গেছে।
পল্লি অঞ্চলের পথঘাট কাদায় মাখামাখি। একটি টিনের ঘরে ছোট্ট একটি চায়ের দোকান। ঝম্ ঝম্ করে বৃষ্টি পড়ছে—আর টিনের ঘরে সেই শব্দ অদ্ভুতভাবে একটি ঝিমঝিমে আমেজ এনে দিচ্ছে।
চার বন্ধু বসে সেই বৃষ্টিভেজা রাতে একটু একটু করে চা খেতে খেতে সান্ধ্য-মজলিস জমিয়ে তুলেছে।
খেলার খবর, ভুখা মিছিলের বার্তা, ইলেকট্রিক ট্রেনের কাহিনি, সিনেমার নানাবিধ গল্প.অবশেষে আপনা থেকেই গল্পের মোড়টা যেন ভূতের কাহিনির দিকেই এগিয়ে গেল। রক্ত যাদের গরম, জীবনটাকে যারা তুড়ি দিয়ে উড়িয়ে দিতে ভালোবাসে—তারা চট করে ভূতকে বিশ্বাস করতে চায় না। ভূতটা যেন একটা রসিকতার ব্যাপার। চায়ের মজলিশে গরম পাপড়ের মতেই তা মুখরোচক। না হলেও ক্ষতি নেই, কিন্তু গরম গরম পেলে অতি সহজেই সান্ধ্য-মজলিশটা বেশ জমে ওঠে।
এমনিভাবেই চারটি তরুণ বন্ধু ভূতের গল্পে মশগুল হয়ে উঠল। বাইরের দিকে ওদের তাকাবার ফুরসত ছিল না। কেননা বাইরেটা ছিল বড় অন্ধকার… তাকলেও চট করে কিছু চোখে পড়ে না! অনেকক্ষণ ধরে একঘেয়ে সুরে যে বৃষ্টি পড়ছিল— তাতে যে-কোনো মিয়োনো গল্পও দিব্যি জমে ওঠে। আর এ তো ছিল সান্ধ্য-মজলিশের সেরা অনুপান—ভূতুড়ে গল্প। কাজেই ছেলেরা নিজেদের মধ্যেই যেন মাকড়সার জাল বুনে একেবারে সমাধিস্থ হয়ে গিয়েছিল!
এমন সময়ে হঠাৎ ঘরে এসে ঢুকল একটা লোক। তার সারা অঙ্গ ঢেকে রয়েছে একটি বর্ষাতি। আর সেই বর্ষাতি থেকে ক্রমাগত জল ঝরে পড়ছে।
চার বন্ধু অবাক হয়ে সেই দিকে তাকাল। তাদের মনে হল—যেন কোনো ভূতের গল্পেরই একটি চরিত্র বাইরের ওই সূচীভেদ্য অন্ধকার ভেদ করে তাদের সামনে আত্মপ্রকাশ করল। ওদের বিস্ময় অবশ্য সেইখানেই কেটে যায়নি। কেননা আরো ভালো করে তাকিয়ে ওরা বুঝতে পারল যে, আগন্তুক তাদের পল্লি অঞ্চলের কেউ নয়—একেবারে খাটি সায়েব।
তখন ওদের বিস্ময়ের আর পরিসীমা রইল না!
সায়েবটি সরাসরি তাদের কাছেই চলে এল, তারপর ওদের দিকে চোখ রেখে অস্ফুট কণ্ঠে প্রশ্ন করল, এখানে Haunted House কোথায় আছে?
চার বন্ধুই কলেজের পড়ুয়া, তাই বিদেশি সায়েবের সঙ্গে কথাবার্তা চালাতে তাদের কোনো অসুবিধেই হল না!
বন্ধুদের মধ্যে প্রথমে রমেনই কথার উত্তর দিলে। বললে, এই গ্রামের ভেতর মাইলখানেক পথ চলে গেলে—একটি বিরাট জমিদার বাড়ি আছে। বহুদিনের পুরোনো বাড়ি। কেউ এখন বসবাস করে না সেখানে। তারই দোতলায় একটি কামরা আছে—কেন, সেখানে যেতে চাও নাকি?
শৈলেশ তার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে ফোড়ন কাটলে,—হ্যাঁ, সেই নির্জন ঘরে যদি একরাত কাটাতে পারো তা হলেই ভূতের ঠিকানা ঠিক পেয়ে যাবে সায়েব।
এই কথা শুনে সায়েব বিচ্ছিরি গলায় কেমন যেন হেসে উঠল। ক্রমাগত চিৎকার করার পর যে ভাবে মানুষের গলা ভেঙে যায়–অনেকটা সেই রকম তার গলার আওয়াজ।
সায়েব তারপর ওদের দিকে একবার বাকা চোখে তাকালে, আর নিজের কোমরে গুজে রাখা রিভলভারটি খুলে নিয়ে ডান হাতের চেটোয় ঘন-ঘন নাচাতে লাগল।
ওর ধরন-ধারণ দেখে চার বন্ধু বড্ড অস্বস্তি বোধ করতে লাগল। কোত্থেকে এল এই সায়েব? ওর নিয়তিই কি ওকে এই জলঝরা রাত্রে এই অজ পাড়াগাঁয়ে হাতছানি দিয়ে ডেকে এনেছে নাকি?
বুদ্ধ রসিকতা করে প্রশ্ন করলে, তা সায়েব সেই ভূতুড়ে বাড়িতে তুমি একাই যেতে পারবে— না, লোক আর লণ্ঠন সঙ্গে জুটিয়ে দিতে হবে?
সায়েব আর একবার তার সেই রহস্যময় হাসি হেসে উঠল। তারপর পকেট থেকে নিজের টর্চটি বের করে বাইরের মিশকালো আঁধারের উদ্দেশ্যে যেন আলোর বুলেট ছেড়ে দিলে! সত্যি জোরদার টর্চ বলতে হবে! একটা গাছের মাথায় আলোটা গিয়ে পড়তে—কয়েকটি বাদুড় ডানা ঝটপট করে আকাশে উড়ে গেল।
যেমন আকস্মিকভাবে সায়েব ঘরে ঢুকেছিল—ঠিক তেমনি রহস্যজনকভাবে বৃষ্টির ভেতর সে বেরিয়ে গেল। অনেক দূর পর্যন্ত তার সেই টর্চটিকে জ্বলতে আর নিভতে দেখা গেল।
ঘরের ভেতর বন্ধু চারজন নির্বাক হয়ে বসে রইল। সায়েবকে পোড়ো জমিদার বাড়িতে পাঠানো ঠিক হল কিনা—সেই কথাই ওরা হয়তো ভাবতে লাগল। প্রতিবাদ করবার সময়ও যে সায়েব দিলে না! এই কথা মনে করে ওদের সবাইকার নিভৃত অন্তরে যেন একটা অজানিত আশঙ্কা ঘনীভূত হয়ে উঠল।
চার বন্ধুর বাড়ি ফিরবার তাড়া ছিল না। কেননা তারা গ্রীষ্মের ছুটিতে দেশে ফিরে এসেছে। রাত যত গভীরই হোক, বাড়িতে ভাত ঢাকা পড়ে থাকবে—জানা কথা।
ওরা কিন্তু আরো খানিকক্ষণ বসে থেকে সায়েবের জন্যে অস্বস্তি বোধ করতে লাগল। সত্যি, এই বিদেশি লোকটি যদি কোনো বিপদে পড়ে, তবে তো ওরা চারজনই নিমিত্তের ভাগী হয়ে পড়বে। বাইরের মিশকালো অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে আর ঝিমঝিম বৃষ্টির কথা ভেবে ওদের মন সত্যি ব্যাকুল হয়ে উঠল।
মানুষটাকে একটা খেয়ালের ঝোঁকে মরণের মুখে ঠেলে দেওয়া হল না তো? চার বন্ধুরই বাইক ছিল। ওরা নিঃশব্দে চায়ের দোকানের পয়সা চুকিয়ে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এল। তারপর রওনা হল সেই পোড়ো বাড়ির উদ্দেশ্যে। বহুকাল তারা ও অঞ্চলে যায়নি। তারপর সম্প্রতি কলেজ ছুটি হতে দেশে এসেছে। ওখানে পৌছে তো সবাই থমকে দাঁড়াল। সেই পোড়ো বাড়ির সামনে এমন আগাছা ও কাঁটা গাছ গজিয়েছে যে, ভেতরে ঢোকে কার সাধ্যি!
অনেকক্ষণ বৃথা চেষ্টা করে তারা জীর্ণপ্রায় ভবনটিতে ঢোকবার আশা একেবারে ত্যাগ করল। ভূত ছাড়া সাপের ভয়ও তো আছে! এই আঁধার রাতে পোড়ো বাড়িতে ঢোকা মানে নিজের জীবনটিকে যমের হাতে তুলে দেওয়া!
তাদের আগে যে আর কেউ এই বাড়িতে ঢুকেছে—এমন কোনো চিহ্নও তারা খুঁজে পেলে না। দূর থেকে তারা অপরিচিত সায়েবকে উদ্দেশ করে ডাকাডাকি করলে। সে-শব্দ ভাঙা দেয়ালে প্রতিহত হয়ে ফিরে এল। কোনো সাড়াই মিলল না।
শৈলেশ বললে, কাল ভোরে খবর নেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় তো দেখতে পাচ্ছি নে! জনার্দনের মাথায় একটা বুদ্ধি এল। সে বললে, আমরা বড় জোর গ্রামের চৌকিদারকে খবরটা দিয়ে যেতে পারি। সে যদি রাত্রে বাড়িটার ওপর একটু নজর রাখে।
এই পরামর্শে সবাই বেশ খুশি হল—আর যাওয়ার পথে চৌকিদারের কাছে খবরটা পৌছে দিয়ে তারা যে যার বাড়ি চলে গেল।
তখন জলটা একটু ধরেছে বটে—তবে পথের দু’পাশের বড় বড় গাছ থেকে টুপটাপ করে ফোটা পড়ছে।
রাত্তিরের খাওয়া-দাওয়া চুকিয়ে চার বন্ধু একটা বাড়িতে মিলিত হল। সেটা শৈলেশদের বাড়ি। ওদের বৈঠকখানা ঘরটা খালিই পড়ে থাকে। চার বন্ধু ঠিক করলে—সেই ঘরেই রাত্তিরটা কাটিয়ে দেবে। কেন যেন ওদের মনের কোণে বৃশ্চিক দংশন হতে লাগল যে, সায়েবের যদি কোনো অনিষ্ট হয়—তবে আইনের চক্ষে না হোক, পরোক্ষভাবে ওরাই কিন্তু দায়ী থাকবে।
জনাৰ্দন মন্তব্য করলে, এসো, আমরা একটা রাত জেগেই কাটাই। কি জানি, যদি কোনো খারাপ খবর থাকে—তবে চৌকিদার এসে আমাদের ডেকে তুলবেই।
রাত জাগা ঠিক হল না। গল্প করতে করতে কখন যে ওরা ঘুমের কোলে ঢলে পড়েছে— সে কথা নিজেরাই জানতে পারেনি।
আচমকা সক্কলের ঘুম ভেঙে গেল শেষ রাত্তিরে—চৌকিদারের হাকডাকে। চৌকিদার ওই বাড়িটার ওপর দৃষ্টি রেখেছিল। তার শেষ টহলের সময় ওই বাড়ির ভেতর থেকে নাকি একটা বিচ্ছিরি খিলখিলে হাসি শুনে সে থমকে দাঁড়ায়। তারপর সে ক্রমাগত রাম-রাম চিৎকার করতে থাকে। একা সেবাড়িতে ঢোকবার সাহস চৌকিদারের ছিল না, তাই কলেজের বাবুদের ডাকতে এসেছে।
চৌকিদারের সঙ্গে ওরা গিয়ে যখন জমিদারের ভাঙা বাড়িতে হাজির হল—তখন পুব আকাশটা প্রায় ফর্সা হয়ে এসেছে।
চৌকিদার লাঠি দিয়ে আগাছা সরিয়ে ওদের পথ করে দিলে। ওরা সবাই তার পেছন পেছন এগিয়ে চলল। মানুষের সাড়া পেয়ে একটা শেয়ালের বাচ্চা একবার মুখ বাড়িয়েই—একেবারে দে ছুট! একতলায় জায়গায় জায়গায় বেশ ভেঙে গেছে। দোতলায় উঠবার সিঁড়িটা খুঁজে নিয়ে ওরা যেই ওপরের দিকে রওনা হয়েছে অমনি একদল চামচিকে সবাইকার মাথার ওপর চক্কর দিয়ে ঘুরতে লাগল। কিন্তু ওরা সে-সব কিছুই ভূক্ষেপ করলে না! হাজির হল গিয়ে দোতলার বিরাট বারান্দায়। সামনের একটা ঘর থেকে কেমন যেন গো-গো শব্দ শোনা যাচ্ছে। দরজাটা ধাক্কা মেরে খুলে ফেলে সবাই একসঙ্গে ঢুকে পড়ল সেই ঘরে।
কি আশ্চর্য ব্যাপার!
সেই সায়েবটাই তো!
লোকটার গোঁ আছে বলতে হবে। এই ভাঙা জঞ্জালে ভর্তি জনমানবহীন বাড়িতে ঢুকতে ওর এতটুকু ভয় করেনি। কিন্তু সায়েবটা যে অর্ধচেতন হয়ে পড়ে আছে—আর তারই মুখ থেকে ওই রকম একটা গোঁ-গোঁ শব্দ বেরুচ্ছে!
শৈলেশ বললে, কি আশ্চর্য। টর্চটা জেলে সায়েব যেন কী লিখছিল! বুদ্ধ নিচু হয়ে বসে পড়ে মন্তব্য করলে, ডায়েরি দেখছি যে! সায়েব ডায়েরি লিখছিল! জনাৰ্দন বললে, তাজ্জব ব্যাপার! ডায়েরিটা তাহলে পড়ে দেখতে হয়! সেও নিচু হয়ে বসে পড়ল। সবাই একসঙ্গে বলে উঠল, পড়—পড়। সায়েব কি লিখতে লিখতে অজ্ঞান হয়ে গেছে—সেটা আগে জানা দরকার।
জনাৰ্দন তখন ডায়েরি দেখে পড়তে লাগল—
১২-১৫ মিঃ—অনেক কষ্টে ওপরে উঠে এসেছি। ভয়ের কিছুই নেই। শেয়াল আর চামচিকের আস্তানা হয়েছে বাড়িটা। ঠিক করেছি রাতটা এই ঘরেই কাটিয়ে দেব। বর্ষাতিটা ভালো করে মেঝেতে পেতে নিলাম। বেশ শীত করছে যেন! ঘরের জানালাগুলো বন্ধ করে দিলাম। টর্চটা জ্বালানোই থাকল।
১-২০ মিঃ—হয়তো একটু ঘুমই এসেছিল। হঠাৎ কিসের শব্দে চোখ মেলে তাকালাম। কি আশ্চর্য! ঘরের জানালাগুলো দড়াম-দড়াম করে খুলে যাচ্ছে। এর কারণ কি? জানালাগুলো আবার বন্ধ করলাম।
১-৩০ মিঃ—একটা পৈশাচিক হাস্যে আবার চমকে উঠলাম। তাকিয়ে দেখি—জানালাগুলো আবার ভীষণ শব্দ করে খুলে যাচ্ছে! এবার সত্যি আশ্চর্য হলাম। উঠে দাঁড়ালাম। বৃষ্টি অনেকক্ষণ থেমে গেছে। ক্ষীণ চাঁদের আলোতে বাইরেটা ভালো করে নজরে পড়ে না। পাশের ঘরে কি কেউ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে?
১-৪৫ মিঃ—হঠাৎ ভেসে এল একটা বুক-ফাটা কান্নার শব্দ। তাকিয়ে দেখি–বন্ধ দরজা ভেদ করে একটি কঙ্কাল আসছে। কঙ্কালটা যেন দু’হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢাকছে। কি কর্কশ কান্না!
তাড়াতাড়ি কোমর থেকে রিভলভার বের করে কয়েকটা গুলি ছুড়লাম। ধোয়ায় ঘরটা ভর্তি হয়ে গেল। টর্চ তুলে দেখি, কঙ্কালটা আর ঘরের ভেতর নেই!
২-৫ মিঃ–এবার আর কান্না নয়—প্রচণ্ড খিলখিলে হাসি। তাকিয়ে দেখি, মাথার ওপর অনেকগুলি কঙ্কাল ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের ঠান্ডা নিঃশ্বাস যেন আমার ঘাড়ে এসে লাগছে। মনে হচ্ছে, সেই জায়গাটা যেন জমে বরফ হয়ে গেল! তাড়াতাড়ি লাফিয়ে উঠলাম মেঝে থেকে। প্রচণ্ড চিৎকার করে উঠলাম আমি নিজে। সেটা ভয় থেকে-না, ওদের ভয় দেখানোর জন্যে—নিজেই বুঝতে পারলাম না! হঠাৎ ওপরের দিকে তাকিয়ে দেখি-কঙ্কালগুলো যেন হাওয়ায় মিশে গেছে!
২-৩০ মিঃ—ঘুম চোখ থেকে একেবারে পালিয়ে গেছে! ভয়ানক শীত করছে আমার মনে হচ্ছে, যেন দাৰ্জিলিং কিংবা লন্ডনে আছি। গরমের কাল বলে সঙ্গে উলের কিংবা গরম জামা কিছু নেই। সবগুলো জানালা দিয়ে হু-হু করে শীতের হাওয়া আসতে লাগল। জানালাগুলো আবার বন্ধ করে দিলাম।
৩-১০ মিঃ—কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি জেগে আছি, না—ঘুমিয়ে পড়েছি? মনে হল শ্বেতশুভ্ৰ কঙ্কালগুলো আস্তে আস্তে পা টিপে-টিপে এসে আমার গায়ের ওপর একটি বরফের চাদর বিছিয়ে দিলে! আমি শত চেষ্টা করেও গা থেকে সে চাদর খুলে ফেলতে পারলাম না।
…. কী কাল ঘুম যে এল আমার চক্ষে..কী প্রচণ্ড শীত….. ডায়েরিতে এই পর্যন্তই লেখা আছে। চার বন্ধু অবাক হয়ে ডায়েরির দিকে তাকিয়ে রইল। ওদিকে চৌকিদার এরই মধ্যে নীচে গিয়ে এক মগ জল সংগ্রহ করে এনেছে। সেই জল অজিলা করে নিয়ে সায়েবটির মুখে-চোখে ছিটিয়ে দিতেই সে দু’চোখ মেলে তাকাল। চোখ দুটো জবা ফুলের মতো লাল। হা হা করে হেসে উঠল সেই সায়েব। সায়েবের গায়ে এত জোর যে ওরা চার বন্ধু মিলেও তাকে ধরে রাখতে পারছে না। তারপরই তার দেহটা একেবারে নেতিয়ে পড়ল!
কিছুক্ষণ বাদে এই বাড়িরই প্রাচীন বুড়ো দারোয়ান লাঠি ঠক্ ঠক্ করতে করতে এসে হাজির হল। সে এই ভূতুড়ে বাড়িটার কাছেই কোথায় যেন থাকে। এই বাড়িতে লোকজনের আনাগোনার শব্দ পেয়ে আর চিৎকার শুনে দেখতে এসেছে যে, আসল ব্যাপারটা কি !
দারোয়ানের বয়স নাকি ১০৮ বছর। তার কাছেই সব কথা জানা গেল। এই জমিদার পরিবারে তিন পুরুষ আগে একজন নাকি ছিল খুব অত্যাচারী। হেন অন্যায় কাজ নেই—যা করতে তার হাত কাঁপত! একবার একদল দুর্ভিক্ষ-পীড়িত প্রজাকে অতি সামান্য কারণে ধরে এনে খেতে না দিয়ে দিনের পর দিন শুকিয়ে রেখে মেরে ফেলে। তারপর থেকেই এ বাড়িতে ভূতের উপদ্রব। শোনা যায়, সেই জমিদার নিজেও নাকি ভূতের হাতেই মারা পড়েছিল!
কাহিনি শেষ করে সেই অতি বৃদ্ধ দারোয়ান আকাশের দিকে হাত তুলে বললে, নসিব! নসিব! সবই নসিব! নইলে এই পরদেশি সায়েব এখানে প্রেতাত্মার হাতে প্রাণ দিতে আসবে কেন ??….
গল্পের বিষয়:
ভৌতিক