আজ আমাদের কলেজে নবিণ বরণ অনুষ্ঠান,চারদিকটা অসম্ভব ভাবে সাজানো হয়েছে। বেশ ভালোই লাগছে বন্ধুদের এক সাথে পাশে পেয়ে।এই দুইটা বছরে হয়ত এতটা খুশি হয়নি।কারন সব বন্ধুরা কখনই এভাবে একসাথে হতে পারিনি।
আমার গল্পটা এই বন্ধুদের মাঝেই স্পেশাল কোন এক বন্ধুকে নিয়ে।হয়ত তার কাছে আমি বন্ধু,শুধুই বন্ধু।
আমারটা কে ভাবে? হয়ত আমিই। এই সব ভাবতেই তিথি হাজির।দেখতে জানিনা কতটা সুন্দর লাগছে,তবে আমি তাকে এখনও দেখিনি।দেখতেও চাইনা,যদি আবারো তার মায়ায় পড়ি?খুব ভয় হয়।তাই তিথি আমার কাছে আসতেই আমি সেখান থেকে চলে এলাম।হয়ত সবাই একটু অবাক,কিন্তু আমার তাতে কিছু করার নাই।
বন্ধুদের মাঝে থেকে চলে এসে কলেজের পুকুর পাড়ে একা একা বসে আছি।আজ থেকে দুটি বছর আগের কথা…!! তখন আমি ফাষ্ট কলেজে ভর্তি হই।কলেজটা আমার বাসা থেকে ছয় কিঃমিঃ হবে।ধরতে গেলে অনেকটাই দূরে। আর যে কলেজে ভর্তি হলাম,সেখানকার সম্পর্কিত কিছুই জানে নেই,আর কলেজটা আমাদের থানা মাঝে পড়ে না,খানিকটা উল্টো।তেমনি ভাগ্যটাও উল্টো,কোন বন্ধু নেই। কলেজে কেবল আমি অচেনা অতিথি মাত্র। প্রথম প্রথম নিজেকে খুব একা লাগতো।ক্লাস তেমন করতাম না,কলেজে আসলেই আনমোনা বসে থাকতাম।
মনটা সব সময় দ্বগ্ধ বালির মতো শুকনো থাকতো। সময়টা কতটা ধিরে যায় তখন বুঝতে পারলাম। একদিন ক্লাসে আনমোনা হয়ে বসে আছি,ক্যাম্পাসএ যাই না,কারন ক্যাম্পাসেতো সবাই আড্ডা,মজা করে। কিন্তু আমারতো আর সেই বন্ধুটাও নাই।যে তার সঙ্গে মজা করব। তাই ক্লাস রুমেই বসে আছি।তিনটা মেয়ে আসল ক্লাস রুমে,আমি আড়ি চোখে সেটা খেয়ালও করলাম।তখন বুকের বাম পাশটা ধুক ধুক শুরু করল,ভয়। কারন এ পর্যন্ত কোন অচেনা মেয়ের সাথে কথা বলা হয়নি।স্কুল লাইফে খুব কম মেশা হতো বন্ধুদের সাথে।যে সব বন্ধু ছিলো তারা আমাদের পাড়ার,তাই তাদের সাথে কথা বলতে কিসের ভয়? কিন্তু অচেনা কেউ? অসম্ভব।
মেয়েগুলো বসে বসে কি যেন খাচ্ছিলো,আর খুব হৈচৈ করছিলো।কিছু বলতেও পারছি না,যদি বড় ভাইদের বলে ধুলাই দেয়।সব ভয় যেন আমাকে গ্রাস করে নিচ্ছে।কি করব বুঝতেই পারছি না। এদিকে রাগ মাথার ওপর উঠে গেছে,আমার আবার রাগ অনেক।হাতে মোবাইল ছিলো,একচাপে গরিলা গ্লাসটা ভেঙে ফেললাম,এবং হাত থেকে মোবাইলটা পড়ে গেল। তিন মেয়ের মাঝে কেউ একটা এগুলা খেয়াল করেছে।যখনই মোবাইলটা তুলতে যাব,দেখি একটা মেয়ের পা। মোবাইলটা তুলেই সোজা ওপরে চোখ তুললাম।দেখি একটা মেয়ে।আমার নাক বরাবর তাকিয়ে আছে। আমিও তার নাক বরাবরই তাকালাম। কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম দুজন।
তার পর মেয়েটির মুখে কথা ফুটল, সে বলল, –“প্রবলেম কই? –“কিসের প্রবলেম? –“ফিডার খাবেন?বুঝেন না? এতো কিসের রাগ হু? –“রাগ? সেটাও আমার? মানে কেমনে কি? –“দেখি(ফোনটা হাত থেকে ঝটাং করে কেড়ে নিয়ে) ফোনটা?
ও মাই গট,ফোনের গ্লাসটা ভেঙে ফেলছেন? এতো রাগ আপনার,বাসা কই? তার পর আরো দুইটা যোগ হলো,মানে একটার মধ্যে আরো দুইটা।এবার কি হবে কে জানে? খালি খালি কথা বলতে গেলাম। –“উওর দিন?(ধমক মেরে) এবার উওর না দিলে সোজা নাকের ওপর তিনটা পড়বে,তার পর হাসপাতাল। নিশ্চিত ছিলাম। এবং এসব ভাবায় কিছুই বলা হলো না। সোজা তিনটা নাকের ওপর,তার হাসপাতাল।
তিনটা খাওয়ার পর কিছু মনে নাই,যখন চোখ মিললাম,তখন আশে পাশে তাকালাম। আমি শুয়ে আছি,একটা বেডএ। নিচে তাকাতে একটু কষ্ট হলো,কারন নিচে তাকালে তো নাক।আর সেটাই এট্যাক হয়েছে বেশ বুঝতে পারছি। এটাও চিন্তা করছি,আমাকে এখানে আনলোটা কে?কার এতটা দয়া হলো আমার ওপর?সে মনে হয় খুব ভালো মানুষ,এই বলতেই আমার খুনি হাজির।মানে যে আমার নাকটার এমন অবস্হা করছে।কি সাংঘাতিক মেয়েরে বাবা?এ দেখি আমার বেড এর দিকেই আসছে,আবার ফাটাবে নাকি?
এবার আমারে বাচাঁবে কে? মেয়েটা কাছে আসাতেই আমি বলে উঠলাম, –“দেখুন আপনার সাথে আমার কোন শত্রুতা নাই,আপনি কেন এমন করলেন?(কাঁদার ভান করে)
–“সেটা তো আমি জানি।
–“তাহলে আমার মতো বাচ্চা ছেলের নাক ফাটালেন?(ইমোশনাল মুড)
–“আহারে কাঁদবেন না,আমিই ক্ষমা চাচ্ছি। আসলে আমার না রাগ চেক দিতে পারি না।আর যখন কথার উওর দিচ্ছিলেন না,তখন রাগটা চেক দিতে পারি নাই,তাই আপনার নাকটা। নাক বলার সময় কি হাসি,মনে হলো তখন তার নাকের বাম্পারটা ফাটাই। কিন্তু সে একজন বুচি।তাই ছেড়ে দিলাম। . তার পর মেয়েটি চলে গেল।নার্স আসলেন।বড্ড জানতে ইচ্ছে করছিলো আমাকে কোন ভালো মানুষ এখানে নিয়ে এলো?তাই নার্সকে প্রশ্ন করলাম,
–“আচ্ছা নার্স আপা আমারে কে এখানে নিয়ে এলো?
–“ঢং,,,এখনও ফিডার চুষেন নাকি?
–“মাইরি বলছি জানিনা।
–“যার সাথে এতক্ষণ কথা বললেন সে আপনাকে এখানে এনেছে। তখন নিজেকে আবুল ভাই এর পার্ট দিতে মন চাইতাছিলো,কিন্তু আমি একখান ভদ্র পোলা। হাইরে,নাক ফাটিয়েও আজ কাল হসপিটাল এ নিয়ে আসে? কি ডিজিটাল।
সেদিন তো কোন মতে বাড়ি ফিরলাম।নাকটা অসম্ভব ব্যাথা করছে। কি দজ্জাল মেয়ে? আমার নাকটা। পরের দিন কলেজে গেলাম নাক ফাটা অবস্হায়। কলেজ গেট এ ঢুকতেই আমার আসামির সঙ্গে দেখা,আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।আর তার বজ্জাত বান্ধবিগুলো বাঘ এর মতো তাকিয়ে আছে। কিজানি মনে হয় নাকের ওপরেই তাকিয়ে আছে। এসব ভাবার ওপর ঠাস করে হেসে দিলো তিনটা আসামি।কি হাসি,কে দেখে?আমিতো লজ্জায় আছি,দেখার সময় কই? দিলাম এক দৌড়,এক দৌড়ে ক্লাস রুমে।
আধা ঘন্টা ক্লাস রুমেই বসে রইলাম,কিন্তু কোন বালক,বালিকা নাই? ঘড়ির দিকে এবার চোখটা রাখলাম। আমি তো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে আকাঁশ থেকে পড়লাম। সাতটা বাজে? মোবাইলটা ঝট করে পকেট থেকে বের করলাম,পাওয়ার বাটন চেপে দেখি দশটা বাজে।এখন কোনটা ভূল? ডাটা অন করলাম।তার পর মোবাইলেও সাতটা বাজল। তখন আমিই হেসে ফেললাম।হাসি মুখটা নিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখি আমার আসামি,একা সে। আমার দিকেই এগিয়ে আসতে লাগল।একটু একটু ভয় করতে শুরু করল। কিজানি কি করবে?
কাছে এসেই বলল, –“সরি কাল নাকটা,বুঝেনইতো? আমার তখন রাগ হলো। সালা নাক ফাটিয়ে বড় বড় কথা বলছে।রাগের মাথায় বলে দিলাম, –“মগের মুল্লুক পাইছেন?নাক ফাটাবেন আর সরি বললে সব শেষ? আমার রাগ আমারেই ফেরৎ দিলো, শার্টটা ধরে দেওয়ালের সাথে ঠেকিয়ে বলল, –“শোন তোরিয়,আমাকে রাগাস না প্লিজ,মেরে ফেলব কিন্তু। তিথি আমার চোখে দিকে তাকিয়ে এসব বলতে লাগল।
বেশিক্ষণ তাকিয়ে সে রইল না। আমাদের মাঝে বেশি দুরত্ব ছিলো না,ছেলেদের চোখে নাকি মায়া আছে। তিথি আমার শার্টটা ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে লাগল,এবং সে যেতে পারল না। আটকা পড়ল,আমার শার্টের বোতাম এর সঙ্গে। চুলগুলা আমিই ছাড়িয়ে দিলাম,এবং আমার মনে হলো তিথিকে কিছু বলা দরকার।
তাই তাকে উপদেশ স্বরূপ বললাম, –“ছেলেদের এতোটা কাছে আসতে নাই,এবং এতো রাগও দেখাতে নাই। এসব শুনেই চলে যেতে শুরু করল,কারণ চুলগুলো ছাড়ানো হয়ে গেছে।
পিছন থেকে আরেকটা কথা বললাম, –“আমাকে মেরে ফেলবেন না? দূর থেকেই শুনে দাড়িয়ে পড়ল তিথি,এবং আমার প্রশ্নের উওর দিলো, –“আপনার চোখে অনেক মায়া,মারতে গিয়ে যদি মরে যাই। এই বলেই দিলো এক দৌড়।বুঝতে পারলাম না কিছুই। তার পর বাড়ি চলে আসলাম,কারন সবাই নাক ফাটা বলে চিল্লাবে।
নাকটা সারতে তিন দিন লেগে গেল।আজ তিন দিন পর কলেজে যাচ্ছি। সামনে নাকি কলেজে নবিন বরণ অনুষ্টান। তাই কলেজে যাওয়া। আজও একাই কলেজে ঢুকলাম।সালা একটা বন্ধুও নাই,যারা আছে (ছেলে বন্ধু)তারা ভর্তি হয়েই নাই।শুধু পরিক্ষার সময় সালারা আসবে,কিন্তু তখন আমি ওরে দিয়া কি করুম?এখন রোহিঙ্গার মতো আছি কেউ বুঝল না।