দ্যা ভ্যাম্পায়ার

কুয়াশাচ্ছন্ন রাস্তায় আধা ঘন্টা ধরে হাটছি।সারা গায়ে চাদর পেচানো। উদ্দেশ্য মহিলা কলেজ। দিনের আলোয় বাইরে আসার অভ্যেস নেই আমার। কিন্তু কিছুই করার নেই। আজ যে করেই হোক একটা মেয়েকে প্রেমের জালে আটকাতেই হবে।
..প্রায় আটটা বেজে গেছে।আমি কলেজ মোড়ে এসে একটা টি স্টলের সামনে বসলাম। একটু পরেই হাজারো মেয়ে কলেজে ঢুকবে। তাদের মধ্যে একজনকেই প্রেমের জালে ফাসাতে হবে। এ আর কঠিন কি কাজ। অনেক করেছি আগে। কেউ না কেউ ফেসে যাবেই।
…এসব ভাবতে ভাবতেই সকালের পত্রিকাটা হাতে নিলাম। একটা খবরে চোখ আটকে গেলো। গতকাল জংগলের ধারে এক মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে। লাশে ধর্ষণের কোনো চিহ্ন নেই। কিন্তু লাশ ছিলো রক্তশূণ্য। আরো রহস্যের ব্যাপার হলো লাশের গলায় দুটি ফুটো রয়েছে। কে বা কারা এইকাজ করেছে তার কোনো রহস্যই উদ্ঘাটিত হয়নি।
…এসব দেখে আমি কিঞ্চিত হাসলাম। গত কয়েক বছর ধরে এই খবর দেখে আসছি। পরবর্তীতেও হয়তো দেখতে হবে। কিন্তু রহস্যের উদঘাটন হবে কিনা কে জানে? …
…. ভাবতে ভাবতেই পত্রিকা রেখে কলেজ গেইটের সামনে দাড়ালাম। একটা মেয়েকে তারগেট করেছি। রিক্সা থেকে মেয়েটা নামলো।
_হাই। আমি রকি। আপনার সংগে কিছু কথা বলা যাবে?
মেয়েটা সামান্য অবাক হয়েছে। হয়তো এই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলনা তাই সামান্য ভরকে গেছে। মেয়েটার মায়াবী চেহারা। দুধে আলতা গায়ের বরণ। সাধারণ পোশাক। ভরাট বক্ষ। সব মিলিয়ে অসাধারণ এক যুবতী যেমনটা আমার দরকার। মেয়েটা সামান্য ইতস্তত করে বললো
_জী বলুন
_আসলে কি করে বলবো বুঝতে পারছি না। চলুন না কোথাও বসি। তারপর বসে বসে নাহয় বলা যাবে।
ভাবছি মেয়েটা হয়তো না বোধক কিছু বলবে। কিন্তু সে আমাকে তার মায়াবী চোখ দিয়ে পরখ করতে থাকলো। গায়ের চাদরটা অনেক আগেই খুলে ফেলেছি। আমার ভরাট দেহ আর সুন্দর চেহারা যেকোন মেয়ের মনে শিহরণ জাগাতে পারে এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। তাই মেয়ে পটাতে কোনো কস্ট হয় না। মেয়েটা কিছুক্ষণ তাকানোর পরে কি মনে করে যেনো বল্লো
_হ্যাঁ চলুন কোথাও বসে বসেই শুনা যাক।
আমি খুশি মনে তাকে সাথে নিয়ে চল্লাম। একটা নির্জন জায়গায়। সেখানে শুধুই আমরা দুজন। মধুর কিছু বাক্য উচ্চারণ করে তাকে প্রভাবিত করে প্রস্তাব টা করেই দিলাম। আর উত্তরও হ্যাঁ সূচক এলো। হ্যাঁ প্রথম প্রথম ও বল্লো ভেবে দেখবে কিন্তু পরক্ষণেই কেন যেনো হ্যাঁ বলে দিলো। হয়তোবা এত সুন্দর সুদর্শন যুবককে যদি অন্য কেউ নিয়ে নেয় সেই ভয়ে।
…ওর নাম নীলা। শুরু হয়ে গেলো নীলার সাথে আমার প্রেমের অধ্যায়। দুজন প্রেমিক প্রেমিকা যা করে আমরাও তাই করতাম। কিন্তু আমার কিছু কিছু বিষয় ও মেনে নিতে পারছে না। আমি ওকে আমার বেশি কিছু পরিচয় দেইনি। আমার বাসা কোথায় সেটাও ওকে দেখাইনি। ফোন ইউজ করি না। দিনের চেয়ে রাতেই বেশি দেখা করি। এসব কেনো করি এই প্রশ্ন ও হাজার বার করেছে। এসব প্রশ্নের সম্মুখীন হলেই আমি কথা ঘুরিয়ে ফেলি।ওর হয়তো এসব বিষয় অসাভাবিক লাগে। অবশ্য লাগারি কথা আমি তো আর অন্যদের মতো সাধারণ জীবনযাপন করি না। আর সান্তনা দিয়ে বলি একদিন সব বলবো তোমায়।
.
পূর্ণিমা রাত। সোনার থালার মতো চাঁদ উঠেছে আকাশে। চারদিক জোসনা। আমি জঙ্গলের একপাশে রাস্তার ধারে বসে আছি। নীলাকে চিঠি দিয়েছি। চিঠিতে বলেছি জংগলের ধারে আসতে। হয়তো প্রথমে অবাক হবে। তবে তার কৌতুহল তাকে নিয়ে আসবেই। কারণ আমি আমার সম্পর্কে আজ সব জানাতে চেয়েছি। আর আজ আমাদের প্রেমের একবছর পূর্তি হতে চলছে। তাই আমি নিশ্চিত সে না এসে থাকতে পারবে না।
.
দূর রাস্তায় কাউকে দেখা যাচ্ছে ওড়না মাথায় কেউ আসছে। হ্যাঁ এটা নীলা। আমাকে দেখেই ও অবাক হলো। চোখের দিকে তাকিয়ে বল্লো
_,কি হয়েছে তোমার চোখে? আর এতো রাতে কেনো এই নির্জন জঙ্গলে?
আমি আমার শিকারি চোখ নীলার চোখের থেকে সরিয়ে নিলাম। সে হয়তোবা আমার চোখ দেখে অবাক হয়েছে। চোখদুটো আমার ক্ষুধার জালায় জলছে। জলন্ত চোখ দেখে যেকোন মানুষের অবাক হওয়ারই কথা। আর একটু পর হয়তো সব শুনে আরো বহুগুণে অবাক হয়ে যাবে নীলা।
আমি বলতে লাগলাম …
_আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি নীলা।
_আমিও। তোমাকে ছাড়া বাচবো না আমি।
_তাই? আচ্ছা আমার জন্য কি করতে পারবে তুমি?
_তোমার জন্য নিজের জীবন ও বলীদান দিতে পারবো।
_তো সেটাই দাও এখন
নীলা আমার এই কথা শুনার জন্য প্রস্তুত ছিলো না। বিস্ফোরিত চোখে আমার দিকে তাকালো। একটু ভয়ও পেয়েছে হয়তো। তবুও আমি বলতে লাগলাম।
_নীলা আমি আসলে তোমার কাছে অনেক অসাভাবিক তাইনা। তবে অসাভাবিক হওয়াটাই তো সাভাবিক। কারণ আমি তো আর তোমাদের মতো মানুষ নই।
_মানুষ নও তাহলে তুমি কি?
_আমি অাসলে একটা ভ্যাম্পায়ার। রক্ত পিপাসু ভ্যাম্পায়ার। প্রতি বছর এই দিনে আমি তোমার মতো যুবতী নারীর রক্ত পান করি। আর আমার বেচে থাকার মেয়াদ একবছর বেড়ে যায়। আমার এই সুদর্শন ভরাট দেহ আমি পাই তোমার মতো যুবতী নারীর তাজা রক্ত থেকে। এখন আসো আমার প্রিয়তমা নিজের প্রেমিকের জন্য প্রাণ দাও।
নীলা ভয়ার্ত চোখে তাকাচ্ছে আমার দিকে। সে অসহায় নিরুপায়। চিৎকার করলেও এখানে সাহায্যের জন্য কেউ আসবে না। জঙ্গলটা লোকালয় থেকে বেশ খানিকটা দূরে। নীলা প্রাণ ভীক্ষা চাইতে লাগলো ..
_প্লিজ তুমি পাগলামি করো না। এমনটা করতে পারো না তুমি। আমি তোমাকে ভালোবাসি আর বিনিময়ে এই প্রতিদান দিবে আমায়?(কান্নাজরি
ত কন্ঠে)
_সবাইকে এই প্রতিদানি দিয়ে এসেছি। আর তুমি বেচে গেলে আমি বাচতে পারবো না। উপায় নেই নীলা। এখন তোমার তাজা রক্তই পারে আমার প্রাণ বাচাতে।
ক্রমশই আমার চোখের জলন্ত ভাবটা বেড়ে গেলো।চোখদুটো লাল হতে শুরু করলো। চোয়াল থেকে দুইপাশের দুইটা দাত বড় হতে থাকলো। দাঁতগুলো আজ একবছর পর রক্তের সাদ পাওয়ার জন্য ব্যকুল।সারা শরীরে নেকড়ের দেহের মতো লোমে আবৃত হয়ে গেলো। সব মিলিয়ে বড় আকারের এক দানবে পরিণত হয়ে গেলাম আমি। আমার এই ভয়ঙ্কর রূপ দেখে নীলা চিৎকার করে উঠলো। আমি নীলার মুখ চেপে ধরে তার গলায় আমার লম্বা দূটো দাত বসিয়ে দিলাম। শুষে নিতে থাকলাম নীলার শরীরের সমস্ত রক্ত। আস্তে আস্তে নীলার শরীর নিস্তেজ হয়ে গেলো। আমি রাস্তার ধারেই তার রক্তশূন্য লাশটা রেখে জংগলের ভিতরে হাটা দিলাম
(পরের দিন সকালে)
পত্রিকা পড়ছিলাম। হঠাৎ চোখ গেলো একটা খবরে। গতকাল জংগলের ধারে এক মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে। লাশে ধর্ষণের কোনো চিহ্ন নেই। কিন্তু লাশ ছিলো রক্তশূণ্য। আরো রহস্যের ব্যাপার হলো লাশের গলায় দুটি ফুটো রয়েছে। কে বা কারা এইকাজ করেছে তার কোনো রহস্যই উদ্ঘাটিত হয়নি।
….আমার ঠোঁটের কোণায় তখন রহস্যের হাসি। এই রহস্য আমি ছাড়া আর কেই বা জানতে পারবে। আর যতদিন এই রহস্য উদঘাটিত হয়নি ততদিন প্রতিবছরই পত্রিকায় এই খবরের পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকবে। পত্রিকা রেখে কলেজ গেইটের দিকে হাটতে লাগলাম। উদ্দেশ্য আজকে যে করেই হোক একটা মেয়েকে প্রেমের জালে ফাসাতেই হবে।
…………………………………………সমাপ্ত ……………………………………..

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত