ইদানীং এক ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে রকি। দিন-দুপুরে, রাতে- মোটকথা চোখে ঘুম এলেই স্বপ্নটা ওকে তাড়া করে বেড়ায়। যে কারণে রাতে ঠিক মতন ঘুমতে পারছে না ও। ফলে দিন দিন কাহিল হয়ে যাচ্ছে রকি। ভেঙে আসছে শরীর। সবাই শুনে হাসবে ভেবে কাউকে খুলেও বলতে পারছে না ও সমস্যাটার কথা।
একদিন বিকেলে পরিচিত এক ডাক্তারের চেম্বারে হাজির হলো রকি। ডাক্তার ভদ্রলোক মন দিয়েই ওর কথা শুনতে লাগলেন।
‘অস্পস্টভাবে, আবছা আবছা দেখলাম আমি বাইরে থেকে বাসায় এসেছি।’ ঘটনাটা বলতে লাগলো রকি। দুঃস্বপ্নের ঘটনা,‘মনে হলো রাতের বেলা। এ ঘর থেকে ও ঘরে যাচ্ছি। চারদিকে আলো-আঁধারীর খেলা। মাঝেমধ্যে কাউকে ডাকছি বলে মনে হলো। এবং যাকে ডাকছি তাকেই সম্ভবত খুঁজছি সারা ঘরময়। এ ঘর থেকে ও ঘরে ঢুকে বাতি জ্বালাচ্ছি। একসময় রান্না ঘরে পৌছুলাম। এবং যা দেখলাম…’ থেমে গেলো রকি। বিভৎস কিছু কল্পনায় এসেছে বলে কথা আটকে গেছে ওর মুখে।
ওকে অভয় দিলেন ডাক্তার,‘রিলেক্স রকি, ধৈর্য্যে নিয়ে বলতে থাকো।’
ঠোঁটজোড়া কেঁপে উঠল রকির। কাঁপাকাঁপা ঠোঁটে আবার শুরু করল ও,‘দেখি…দে-দেখি সারা কিচেন জুড়ে রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। বেসিনে টিপটিপ করে রক্তের ফোঁটা পড়ছে। আর…চুলোয় বিভৎস এক দৃশ্য। চুলোর উপর বসানো এক হাড়িতে সেদ্ধ হচ্ছে কারো ছিন্নমুন্ডু! আরো জনাদুয়েকের কাটামাথা গড়াগড়ি খাচ্ছে ফোরে…উফ্!’ বলতে বলতে দু’হাত দিয়ে মুখ ঢাকলো রকি।
ওকে শান্ত্বনা দিলেন ডাক্তার সাহেব। তারপর প্রাথমিক কিছু টেস্ট সেরে একটা প্রেসক্রিপসন লিখে দিলেন তিনি। বললেন, দিন পাঁচেক ট্রাই করে দেখতে।
প্রেসক্রিপসন হাতে ডাক্তারের চেম্বার ছাড়ল রকি।
নিকটস্থ এক ফার্মেসী থেকে ঔষুধ কিনে বাসায় ফিরলো।
এবং তারপরের দিন ঘটল আসল ঘটনা।
গভীর রাতে ঘুম ভাঙলো রকির। সারা শরীর ঘেমে নেয়ে গেছে। কপালের ঘাম মুখ বেয়ে নামছে রেখা টেনে টেনে।
হাঁপাচ্ছে ও হাপরের মতন।
যেন হিস্টিরিয়া রোগী শ্বাস কষ্ঠে ভুগছে প্রচন্ড।
বেড সুইচ টিপে অন্ধকার ঘরে আলো জ্বালালো রকি। বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।
প্রচন্ড পানির পিপাসা পেয়েছে। প্রতিদিনের মতন আজও সেই একই দুঃস্বপ্ন দেখেছে ও। তবে আজ স্বপ্নে একটু অন্যরকম ছাপ এসেছে। সেই ছিন্নমুন্ডুগুলোকে শনাক্ত করতে পেরেছে রকি। মোটেও বিশ্বাস হচ্ছিল না ওর, স্বপ্নের মধ্যেই। ওগুলো ওর পরিবারের মুন্ডু ছিলো! ওর ছোটভাই, বড় বোন আর মা’র। অসহ্য!
হঠাৎ কিছু একটা ভেবে পাশের ঘরে এল রকি। এ ঘরে ওর মা আর ছোটবোন ঘুমোয়। কিন্তু অন্ধকার ঘরে কিছুই নজরে এল না। লাগোয়া ঘরটা বড়ভাই হাফিজের। ও ঘরে গিয়েও কিছুই দেখতে পেল না রকি। অথচ সবকিছুই কেমন জানি ঠেকছে ওর কাছে। মনে হচ্ছে স্বপ্নের মাঝেই ঘটছে এসব। আসলে হয়ত ঘুমের ঘোর এখনো কাটেনি।
ধীর পায়ে ঠলতে ঠলতে কিচেনের দিকে এগোলো রকি।
ঠিক তখুনী ওর মনে হল কেউ একজন ওকে অনুসরণ করছে। ঝট্ করে চারদিকে নজর ঢালল ও, নাহ্! কেউ নেই!
অল্প অল্প কিচেনের সামনে আসতে লাগলো ও। কিচেনে বাতি জ্বলছে। সেই আলার মধ্যে রকি হতবাক হয়ে ল্য করল কিচেনের ফোর জুড়ে টকটকে লাল তরল পদার্থের বন্যা!
অসম্ভব!
এতো হুবুহু স্বপ্নে দেখা ঘটনার পূনরাবৃত্তি ঘটছে!
অজান্তেই আতঙ্কিত চিৎকারের আওয়াজ বেরিয়ে আসছিলো রকির মুখ দিয়ে। চট করে মুখে হাত চাপা দিল ও।
আরো কয়েক কদম এগোতেই স্টোভ থেকে স্পস্ট ফুটন্ত পানির শব্দ কানে ভেসে এল।
জায়েগায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেল রকি!
স্বপ্নটা, স্বপ্নটা কি তবে সত্যি হতে চলেছে!
বিড়বিড় করে উঠল রকি।
এমন সময় পেছনে কারো গরম নিঃশ্বাসের শব্দ স্পস্ট অনুভব করল ও। ঘুরে দাঁড়াতে যাচ্ছিল, কিন্তু অনেক দেরী হয়ে গেছে ততণে…!
পুরো মহল্লায় প্রচন্ড আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। চারিদিকে ভীষণ গুঞ্জন। একটি বাসার সামনে বেশ ক’টা পুলিশের গাড়ি। আর পুলিশ ও সাংবাদিকদের ছুটোছুটি করতে দেখা যাচ্ছে।
সীল কওে দেয়া হচ্ছে পুরো বাসা।
উৎসুক জনতার উপচে পড়া ভীড় সামলাতে পুলিশের নাজেহাল অবস্থা।
সেই ভীড়ের মাঝে ঘটনা কি কেউ একজন জানতে চাইল। এবং জবাবও দিল কেউ একজন,‘গতরাতে চারটি খুন হয়েছে ভাই্ চারজন মানুষের মুন্ডুহীন লাশ পাওয়া গেছে এ বাসায়…