আজকের সকালটা অনেক ভালো ছিলো।
সবচেয়ে প্রিয় মানুষটার ফোন পেয়ে ঘুম থেকে উঠলাম।
আমার সবচেয়ে প্রিয় হলো ফারিয়া।
অনেক পছন্দ করি ওকে।
ফারিয়ারও আমার প্রতি দূর্বলতা আছে আমি বুঝি।
তবুও কোনোদিন কেউ এই ভালো লাগার বিষয়টা প্রকাশ করিনি।
ফারিয়া ফোন করে জানালো, কলেজ থেকে বনভোজনে যাওয়া হবে বিরামপুর।
আমাকেও যাওয়ার কথা বলেছে।
ইদানিং লেখালেখির চাপে অনেক একঘেয়ে লাগছিলো।
তাই একঘেয়েমি কাঁটাতে আমিও রাজী হয়ে গেলাম।
….
…
..
বনভোজনের দিন সকালে আমরা ক্যাম্পাসে হাজির হলাম।
কিছুক্ষণের মধ্যে বাস চলে এলে আমরা সবাই বাসে চড়ে বসলাম।
আমি ফারিয়ার পাশের সীটে বসে আছি।
বাস আপন গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
অনেকক্ষণ ধরে বসে থাকার ফলে ফারিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।
আমি তার নিষ্পাপ মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছি।
অনেক সুন্দর লাগছে ফারিয়াকে।
একটা ধাক্কা লাগার ফলে ফারিয়া জেগে উঠলো।
আমাকে এই অবস্থায় দেখে ফেলায় নিজেই লজ্জিত হলাম।
আমি অন্যদিকে তাঁকিয়ে থাকলাম।
কিছুক্ষণ পর আমাদের বাস বিরামপুরে এসে থামলো।
আমরা থাকার জন্য এখানের বহু বছরের পরিত্যক্ত রাজবাড়ী নির্ধারিত করেছি।
রাজবাড়ীটা বিরামপুর জঙ্গলের উত্তর দিকে অবস্থিত।
আমরা সেখানে হেঁটে পৌঁছালাম।
আমরা ৯ জন এসেছি।
রাজবাড়ীটা অনেক বড়।
জঙ্গলের মধ্যে বিরাট জায়গা দখল করে দাঁড়িয়ে আছে রাজবাড়িটা।
স্থানীয় লোকমূখে শোনা যায়,,, বৃটিশ শাসকরা যখন বাংলাদেশে এসেছিলো তখন তারা এই বাড়ীটা তৈরী করে।
কোনো এক অজানা কারণে এই বাড়ীতে আগুন লেগে যায় এবং সকলে পুড়ে মারা যায়।
সেই থেকে রাজবাড়িটি এখনো পরিত্যক্ত হয়ে আছে।
আমরা রাজবাড়ীতে দুপুরের খাওয়া সেরে নিলাম।
সকলে বাড়ী থেকে আসার সময় টিফিন বক্সে করে যে খাবার এনেছে তা সব দুপুর বেলাতেই শেষ হয়ে গেছে।
রাতের বেলা নিজেদের রান্না করে খেতে হবে।
আমি আর আমার এক বন্ধু অভি গেলাম বাজারে।
বাজার করার পর সবাই মিলে রাজবাড়ীতে বিশ্রাম নিলাম।
বিকাল হলে সবাই জঙ্গলটা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম।
জঙ্গলের পরিবেশটা একদম শুনশান নিরব।
আমরা যখন জঙ্গলের প্রকৃতির ছবি তুলতে ব্যস্ত তখন ফারিয়া জোরে চিৎকার করে উঠলো।
তার চিৎকার কানে আসার পরই আমার তার কাছে ছুঁটে গেলাম।
ফারিয়ার পা একটা কবরের মধ্যে আঁটকে গেছে।
আমরা ফারিয়াকে ওপরের দিকে যতই টানছি ও ততই কবরের মধ্যে যেতে লাগলো।
অনেক চেষ্টার পর আমরা ফারিয়াকে কবরটা থেকে টেনে তুলতে সক্ষম হলাম।
ওর পায়ের উপর কারো ৫ আঙুলের শক্ত ছাপ পড়ে আছে।
ফারিয়া তো কান্না করেই যাচ্ছে।
আমরা তাকে অনেক বুঝিয়ে রাজবাড়ীতে ফেরৎ নিয়ে আসলাম।
সে এই মুহুর্তে বাড়ী ফিরে যেতে চাচ্ছে।
তবে সেটা সম্ভব না।
তাই আমাদের রাজবাড়ীতেই ফিরতে হলো।
আমরা ভেবে পাচ্ছিনা ফারিয়াকে কবরের মধ্যে কে টানছিলো?
তবে বনভোজনটা মাটি করার জন্য আর কেউ সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করলো না।
কিন্তু আমার কেমন একটা সন্দেহ হলো।
যে করেই হোক ব্যাপারটা আমাকে জানতে হবে।
কে ফারিয়াকে কবরের মধ্যে টানছিলো?
রাতের বেলা সকলে ঘুমিয়ে পড়লে আমি আমার টর্চ জ্বালিয়ে সেই কবরের কাছে গেলাম।
কবরের উপরের মাটি অনেকটা ঝরঝরে।
আমি হাত দিয়ে সরাতে লাগলাম।
এক পর্যায়ে সকল মাটি সরে গিয়ে একটা কাঠের বাক্স হাতে এসে ঠেকলো।
মনে হচ্ছে একটা কফিন।
অনেক দিনের পুরনো হয়ে যাওয়ার ফলে কেমন একটা হালকা মতো লাগছে।
হঠাৎ খটখট আওয়াজ করে উঠলো কফিনটা থেকে।
দেখে মনে হচ্ছে কেউ ভিতর থেকে বাইরের দিকে ঠেলে কফিনের দরজা খুলতে চাচ্ছে।
আমি দুই ব্যাটারীর একটা লাইট সেই কফিনের দিকে তাঁক করে আছি।
অনেকক্ষণ যাবৎ জ্বলে থাকার ফলে লাইটের জ্যোতিও অনেক কমে এসেছে।
হঠাৎ আমার সামনে থাকা কফিনের বুক চিরে একটা ভয়ংকর রক্তাক্ত হাত বেরিয়ে আসলো।
আমার এই অবস্থা দেখে একদম গলা শুঁকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।
রহস্যের গন্ধ পেয়ে ছুটে এসে এখন দেখছি নিজের জীবনটাই হারাতে বসেছি।
কফিনের ভেতর থেকে আস্তে আস্তে একটা শরীর বের হয়ে আসলো।
পুরো শরীর থেকে মাংস পঁচা গন্ধ বের হচ্ছে।
চোখের গর্তটা একদম ফাঁকা।
মুখের উপরে কোনো মাংস নেই।
চুলগুলো বাতাসে উড়ছে।
এই অবস্থা দেখেই আমার জীবনটা বেরিয়ে যাওয়ার অবস্থা।
আমি হাতের টর্চটা সেই কফিন ভাঙা জীবন্ত লাশের মুখের উপর লক্ষ্য করলাম।
দেখলাম এই লাশটা আমার চিরচেনা ফারিয়া।
নিজের চোখের সামনে দেখতে পেলাম ফারিয়া আমার দিকে তাঁকিয়ে ভয়ংকর ভাবে হাসছে।
আমি আর এক মুহুর্ত সেখানে থাকতে পারলাম না।
শরীরে যতটুকু শক্তি পেলাম তত জোরে রাজবাড়ীর উদ্দ্যেশ্যে ছুটতে লাগলাম।
তবে কেউ একজন পেছন থেকে আমার পা দু’টো টেনে ধরে রেখেছে।
আমি অনেক চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারছিনা।
অবশেষে ব্যর্থ হয়ে মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে গেলাম।
গলার কাছে কেঁটে গিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগলো।
শরীরটা অনেক দুর্বল অনুভব করতে লাগলাম।
পেছনে কেউ একজন এগিয়ে আসছে আমি বুঝতে পারছি।
আমি পালানোর জন্য অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়ালাম।
কিন্তু পেছন থেকে কেউ আমাকে টেনে ধরে গলায় রক্তপাত হওয়ার স্থানে দাঁত বসিয়ে দিলো।
নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে।
হয়তো কাল সকালে বন্ধুরা কফিনের পাশে আমার নিথর দেহটা পড়ে থাকতে দেখবে।
আর কেউ জানতেও পারবেনা ফারিয়া নামের মেয়েটি তাদের মধ্যে ঘুরে বেড়াবে পিশাচিনী হয়ে।
হয়তো অন্য কাউকে আমার মতো তার শিকার হতে হবে।
এসব কথা ভাবতে ভাবতে আমার শরীরটা নিথর হয়ে গেলো এবং ফারিয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে আবার ফিরে গেলো রাজবাড়ীতে।
………………………………………সমাপ্ত…………………………………..