জ্বিন-ভূত !

জ্বিন-ভূত !

ঘটনা # ১

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় নিজের গ্রামে গিয়েছি ঈদের ছুটিতে, ঈদ পালন করতে। ক্বোরবানির আগে বসেছে গরুর হাট। গরুর হাট পেরিয়ে আমরা আরো সামনে চলে গেলাম, কারণ আমাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। ‘আমরা’ মানে, আমি; [চাচাতো ভাই] আউয়াল, আকবর, আমযাদ; [ফুফাতো ভাই] শাকির, নাসিম- এদের মধ্যে আমিই বয়সে সবার বড়; সবারই ‘বড় ভাই’, তাই অঘোষিত নেতৃত্ব আমিই দিচ্ছি; আমার পরে ‘বড় ভাই’ হলো শাকির। সৌভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্যবশত আমরা কাযিনরা সবাইই ঐ এক রাতের জন্য একসাথে হতে পেরেছি। আমাদের উদ্দেশ্য স্থানীয় হাই স্কুল: সিদ্দেক আলী উচ্চ বিদ্যালয়। এই স্কুলের পাশেই [সরকারি] প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জীর্ণপ্রায় পুরোন, আর নতুন ভবন। প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে আমি যখন পড়তাম, তখন প্রায়ই শুনতাম, দেখতাম, হাই স্কুলের কোনো না কোনো মেয়েকে ধরাশায়ী অবস্থায় রিকশায় করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। …কী হয়েছে? …জ্বিনে ধরেছে।

এটা ছিল এই হাই স্কুলের নৈমিত্তিক ঘটনা। স্কুলের পিছনের একটা গাছে স্থায়ী আবাস জ্বিনদের। মাঝে মাঝেই তারা মেয়েদের সাথে জুড়ে যায়, মেয়েরা অজ্ঞান হয়ে যায়। লোকমুখে শোনা যায়, স্থানীয় মাদ্রাসার প্রধান পণ্ডিত, নাজিম সাহেব নিজেই এই জ্বিনগুলোকে পুষতেন। কেননা, মেয়েগুলোর জ্বিন একমাত্র তিনিই ছাড়াতে পারতেন। এর পিছনে নাকি তাঁর গভীর একটা ষড়যন্ত্র ছিল, তিনি মাদ্রাসার প্রধান হিসেবে দীর্ঘদিন থাকতে চান। তবে এই কথার কোনো সত্যতার প্রমাণ যেমন আমি খুঁজে পাইনি, তেমনি কথাটা উড়িয়েও দিতে পারিনি।

যেহেতু হাই স্কুলটি জ্বিনের আবাস হিসেবে এখনও বিখ্যাত বা কুখ্যাত, তাই আমরা একসাথে হয়ে প্রথমেই সেখানে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমাদের সাথে সুইস আর্মি নাইফ, টর্চ- এগুলোর সংগ্রহ ছাড়া আর রয়েছে বিজ্ঞানসম্মত গবেষক মন, আগ্রহী চেতনা। আর আমাদের সাথে এসেছে আউয়ালের এক বন্ধু, আশফাক। দলটা ভারি, সত্যি; তবুও আমরা (বিশেষ করে শাকির আর আমি) কিছু একটার প্রত্যাশা করছিলাম। অবশ্য আকাশে উজ্জ্বল চাঁদ আমাদের পথে খানিকটা কাঁটা হয়ে আছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়টির পুরোন জীর্ণশীর্ণ ভবনের পাশ কাটালাম, কিছুই নেই। সামনে অগ্রসর হচ্ছি হাই স্কুল লক্ষ করে। লোহার গেটে ধাক্কা দিলাম, গেটটা মরিচাজনিত ক্যাচক্যাচ শব্দে খুললো। গেট পেরিয়ে স্কুলের মাঠে গেলাম। সেখান থেকে দোতলা স্কুল ভবনে। সবগুলো কক্ষই খালি- বেঞ্চ, বোর্ড, চেয়ার ছাড়া বাড়তি কিছুই নেই। টর্চের আলোয় চোখে পড়লো না অস্বাভাবিক কোনো সাদা কাপড়। স্কুলের পেছনে গেলাম। সেখানে পেশাব করার বেষ্টনি দেয়া জায়গা। টর্চের আলো ফেললাম গাছে; না, কিছুই নেই। কোথাও কিছুই নেই।

আমরা চললাম স্কুলের অন্যপাশে। আউয়াল হাঁটছে তার বন্ধুর সাথে, আমি হাঁটছি শাকির আর আমযাদের সাথে। আকবর হাঁটছে নাসিমের সাথে। ওপাশে গিয়েও কিছুই মিললো না, শুধু আরেকটা ভাঙা [বদ্ধ প্রস্রাবখানা ছাড়া। ব্যর্থ মনোরথে ফিরে চললাম সবাই। কিছুটা রাগ ঝাড়লাম চাঁদের উপরও। নতুন ভয়ঙ্কর স্থান খোঁজার অভিপ্রায়ে আপাত ক্ষান্ত দিলাম এই অভিযানে। বাড়ি ফিরে চললাম।

ঘটনা # 

সেদিন রাতে আউয়ালের প্রচণ্ড মাথাব্যাথা। মাথাব্যাথার জন্য সে নড়তে পর্যন্ত পারছে না। আমরা কাযিনরা সবাই যেখানে ক্যারাম, মনোপলি খেলছি, হা হা হু হু ডাকিয়ে চিৎকার করছি, সে সেখানে নীরবে বসে আছে, মলিন হাসি হাসছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আউয়াল আমাদের থেকে সরে পড়লো, গিয়ে শুয়ে থাকলো নির্জন একটা কক্ষে। আমরা সারা রাত ধরেই ‘ধনী হবার মজার খেলা’ খেললাম। কিন্তু আউয়ালকে আর পেলাম না।

সারা রাত জেগেও সকালে আমরাই আগে উঠলাম। গিয়ে তুললাম আউয়ালকে, তার গায়ে জ্বর এসেছে। সে নাকি সারারাত প্রচণ্ড মাথাব্যাথায় ছটফট করেছে। সারারাতই নাকি সেও সজাগ ছিল- অর্ধ্বঘুমন্ত। নাস্তা সেরে আমরা বাকি কাযিনরা আবারও ব্যস্ত হয়ে পড়লাম ক্রিকেট খেলায়। তার কিছুক্ষণ পর এসে হাজির হলো আউয়াল, জানালো, সে গিয়েছিল স্থানীয় হুজুর, সুফিয়ান সাহেবের কাছে মাথাব্যথা সারাতে ফু দেয়াতে। তিনি তাকে ফু দেয়ার সময় জানিয়েছেন, কাল রাতে হাই স্কুল থেকে আউয়ালের ‘বাতাস’ লেগেছিল, তা-ই আউয়ালের এই প্রচণ্ড মাথাব্যথার কারণ। গ্রামে ‘বাতাস লাগা’ মানে বুঝানো হয় খারাপ, অস্পৃশ্য কিছুর প্রভাব লাগা- যা এখানে বদ জ্বীনের অতিন্দ্রীয় ছোঁয়া বোঝাচ্ছে। …আমি শুনলাম। মুসলমান হিসেবে আমি জ্বিনের অস্তিত্বে অস্বীকার করিনা। কিন্তু সব ঘটনাকে জ্বিনের কাজ বলেও স্বীকার করিনা। আমি খুঁজে দেখতে চাই; বিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব হলে হুট করে তা জ্বিনের কাজ বলতে নারাজ।

যাহোক, ঘটনা এপর্যন্তই। আউয়াল আপাত সুস্থ হলো, তবে দুর্বল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আউয়ালের সাথে সিদ্দেক আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এরও আগে একবার একটা জ্বিন এসেছিল, সে অনেকদিন কষ্ট দিয়েছে তাকে, আর তার নাম ছিল ‘ছনু মিয়া’ (উচ্চারণ: সনু মিয়া)। তাই আমি আর শাকির, এমনকি আউয়ালও পরদিন থেকে যেকোনো ভৌতিক গল্পে বারবার এই সনু মিয়ার উল্লেখ করে মজা পাচ্ছিলাম। জ্বিন (কিংবা ভূত) আমাদের জন্য মজাদার বিষয় হয়ে গিয়েছিল। …সেদিনই শাকির আর নাসিম চলে গেলো ওদের বাড়িতে ঈদ করতে। আমরা আমাদের বাড়িতে ক্বোরবানির ঈদ পালন করতে রয়ে গেলাম।

ঘটনা # 

ঐদিনই দুপুর পৌনে ১টার দিকে আউয়াল জানালো, আমাদের বাড়ির পশ্চিম দিকের হাকালুকি হাওড়ের একটা গাতের (গর্তের) পানি সেচা হচ্ছে, মাছ ধরা হবে। আমি, আউয়াল আর আমযাদ ছাতা মাথায় দিয়ে খালি পায়ে চললাম বাড়ির কাজের লোক ফয়ায ভাইয়ের সাথে সেখানেই, মাছ ধরা দেখতে। প্রথমে মাথার উপরের ছাতাটাকে অবাঞ্চিত মনে হলেও কিছুক্ষণ হাঁটার পরই টের পেলাম, এই শীতেও [নিম্নচাপের কারণে] তীব্র হয়ে আছে রোদ। পথে পরিচিত এক বাড়িতে উঠে পানি খেয়ে নিলাম সবাই, বাড়ির সবাই আমাকে অনেকদিন পর দেখতে পেয়ে আনন্দিত। পানি পান করে আবার হাঁটা। হাঁটছি তো হাঁটছিই, পথ আর ফুরোতে চায় না। ‘হাওর’ নামটির উৎপত্তি হয়েছে ‘সাগর’ শব্দ থেকে। বর্ষকালে পুরো হাওরাঞ্চলই পানির নিচে তলিয়ে থাকে, তখন সাগরেরই মতো এই হাওরেরও কোনো কুল দেখা যায় না; সেই থেকেই এই নাম। কিন্তু আমি এই শুষ্ক শীতকালেও হাওরের কোনো কিনারা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।

সেই কিনারাহীন হাওরের মাঝে লোকালয়হীন এলাকায় পথে পড়লো দুটো গাছ। একটা বেশ ঝাপড়া, আম গাছের মতো, গোঁড়ার দিকটা দেয়াল দিয়ে ঘেরা; অন্যটা বেশ খাড়া, ঋজু, ছড়ানো, উঁচু। এই দ্বিতীয় গাছটার স্থানীয় নাম ঢিপি গাছ (উচ্চারণ: ঢীপি গাস্‌)। এই ঢিপি গাছটা বেশ ছিমছাম, আমার খুব ভালো লাগলো। আমি আর আউয়াল দুজনেই মোবাইল ফোন বের করে গাছটার ছবি তুললাম। ওটার নিচ দিয়েই আমাদের যেতে হলো গাতের দিকে।

হাঁটতে হাঁটতে অবশেষে গিয়ে পৌঁছলাম সেই গাতের কাছে। সেখানে পানি সেচা হচ্ছে মোটর দিয়ে, আর কাদার মধ্যে মাছেরা অনবরত লাফাচ্ছে। ছাতা মাথায় দিয়ে কাদা খুঁড়ে মাছ ধরা দেখতে থাকলাম আমরা তিন ভাই। এমন সময় আকবরও এলো চাচার সাথে। রোদের মধ্যে ছাতার নিচে বসে বসে চালতার আচার খাচ্ছি আমি, আমযাদ আর আকবর মিলে। কিন্তু আউয়ালের আচার খাবার কোনো ইচ্ছে নেই, তার আবার মাথাব্যথা করছে। কী এক মহাযন্ত্রণা!

এরপর ওরই কারণে উঠে পড়তে হলো আমাদের। এক ব্যাগ ভর্তি ছোট মাছ নিয়ে ফিরতি পথ ধরলাম আমি আর আউয়াল। ওর শারীরিক অসুস্থতাহেতু আমি কিছুক্ষণ মাছের ব্যাগ বহন করলাম। কিন্তু বেশিক্ষণ রাখতে পারলাম না ওজন। তাই আউয়ালকে বহন করতে হলো ব্যাগটা। আবারও ঢিপি গাছের নিচ দিয়ে চলতে থাকলাম। পায়ের নিচে ধান কেটে নেয়া নাড়া পথ চলতে কিছুটা কষ্টই দিচ্ছে। তার উপর উঁচু-নিচু জমিতে খালি পায়ে হাঁটতে যতটুকু কষ্ট হবার কথা, তা-তো আছেই। কিন্তু তারপরও আউয়ালের খুব খারাপ লাগতে থাকে। বারবার ঐ এক গ্লাস পানির প্রতি দোষারোপ করছে – ঐ একগ্লাস পানিই নাকি সব নষ্টের মূল – সে বেশ ক্লান্ত। অথচ ঐ একগ্লাস পানি না খেলে এতক্ষণে আমার বেশ খানিকটা তৃষ্ণা লেগে যেত। এক পর্যায়ে একটা ট্রাকটর পেয়ে তার পিছনে বসে বিশ্রাম নিল সে। আবারও পথ চলা।

বাড়িতে ফিরে দাদুর কাছে মাছ দিয়ে আউয়াল গিয়ে শুয়ে পড়লো। তার গোসল করতেও ইচ্ছে করছে না। পুরোটা বিকেলই সে পড়ে থাকলো মাথায় ব্যথা নিয়ে। রাতে মাছের তরকারি খেতে খেতে শুনলাম নতুন কথা, ‘বড় চাচা’ (আউয়ালের বাবা) জানালেন, ঐ গাছ দুটোই ‘দুষি’ (দোষি)। গ্রামে এই ‘দোষি’ শব্দটা দ্বারা বুঝানো হয় ‘জ্বিন-ভুতের আসর’। ওগুলো নাকি জ্বিনের আড্ডাখানা। তিনি আরো জানালেন, ঐ গাছ দুটোতে নাকি এই সন্ধ্যা-রাতে গেলেও আলোর নাচন দেখতে পাওয়া যাবে খালি চোখে। সেখানে বহু দিনের আস্তানা তাদের।

তার একদিন পরে সকালে ঈদ পালন করলাম আমরা। গরু ক্বোরবানি দেয়া হলো, আমি হাত লাগালাম, কিন্তু আউয়ালের তাতে হাত লাগাবার ইচ্ছে নেই। সকাল থেকেই তার পেটে ব্যাথা করছে, পায়খানা ভালো হচ্ছে না; ইতোমধ্যেই ফার্মেসী চালান যে চাচা, তাঁর পরামর্শে ইমোটিল ঔষধও খেয়েছে। আমরা যখন গরু, ছাগল ক্বোরবানি নিয়ে মহাব্যস্ত, বাড়ির এই এত্তোটুকুন চাচাতো ভাইগুলোও হাত লাগাতে উদগ্রীব, তখন অনার্স পড়ুয়া আউয়াল তার বিছানায় মশারি টাঙিয়ে শুয়ে আছে নির্জন ঘরে।

তাকে জিজ্ঞাসা করে সত্যিকার শারীরিক অবস্থা সম্বন্ধে কোনো ধারণাই পেলাম না। সে গ্রাম্য বক্তব্যে জানালো, ক্যামন ক্যামন জানি করছে এই ‘ক্যামন ক্যামন’ শব্দটা কোনো রোগেরই ইশারা করে না। তার এই বক্তব্য বাড়ির আর কেউ শুনলে ঠিকই ভাববে, ওর উপর জ্বিনের আসর হয়েছে। আর আমার মতো প্রতিটা ঘটনার সাক্ষী দুয়ে দুয়ে চার মিলাবে: নিশ্চয়ই ঐ গাছ দুটোর পাশ দিয়ে আসার সময়, আমাদের সাথে মাছ আছে দেখে আমাদের সাথে এসে পড়েছে কোনো দুষ্ট জ্বিন। কারণ জ্বিনেরা নাকি মাছ খায়। সামান্য কয়টা ছোট মাছের এতো ওজন লাগছিল কেন? …তারপর সে আউয়ালের সাথে লেগেছে। আউয়ালের এই শারীরিক অসুস্থতা (ক্যামন ক্যামন ভাব) সেই দুষ্ট জ্বিনের জন্যই, আর কিছু না।

ঘটনা # 

ঈদের রাতেই আউয়াল সুস্থ হয়ে গেল, ওর বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা দিয়ে এসে দেখা করলো আমার সাথে। পুরোদমে সুস্থ। আমি হেসে হেসে ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, কীরে, তোর সনু মিয়া চলে গেছে? সেও হাসলো। …আউয়াল সুস্থ হয়ে গেছে।

ঈদের চারদিন পরে শাকির আবার এলো বাড়িতে। আবারও আমাদের জ্বিন সন্ধানী আগ্রহ চাঙ্গা হয়ে উঠলো। সেও যেন সব প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে। কিন্তু আমাদের হাতে মাত্র দুদিন সময় আছে, এরপর দুজনেই যে যার পথ ধরতে হবে, আমাকে ঢাকার, আর ওকে সিলেট শহরের। তাই এরই মধ্যে সারতে হবে আমাদের কাজ। ঠিক করলাম, জ্বিন দেখতে হলে অভিযান হতে হবে রাতে, গভীর রাতে। আগেই আলোচনা করে ঠিক করে নিলাম, আউয়ালকে নেয়া ঠিক হবে না, কারণ ওর সাথে সনু মিয়া-বাহিনীর যে হারে যোগাযোগ, তাতে ফেরার পর আবারো যদি সে অসুস্থ হয়ে যায়, তাহলে সব দোষ গিয়ে পড়বে আমাদের ঘাঢ়ে। তাই শুধু দুজনেই যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম, আর কাউকে নেয়া যাবে না।

এখন ক্বোরআন যদি সত্যি হয়, তবে জ্বিন জাতি আছে। আর চাচার কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে ঐ দুই গাছে জ্বিনদের আবাস রয়েছে। এই অনুপাতে যখন পৌঁছলাম, তখন আমাদের দুজনেরই কিছু প্রস্তুতি নেবার প্রয়োজন পড়লো। আমরা মস্তিষ্কের পাতা উল্টে বের করলাম জ্বিনদের অতীত কাহিনীগুলো কীরকম ছিল। সেখানে জ্বিনদের কাছে যারা গেছে, তারা নিজেরাই জ্বিনদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। অনেকে, সাথে জ্বলন্ত আগুন থাকার কারণে বেঁচে গেছে। কাজের লোক ফয়ায ভাই থেকে জেনে নিলাম গাছ দুটো যেখানে, সেখানে কীরকম ঘটনা ঘটেছে। ফয়ায ভাই জানালেন, ওখানে গেলে জ্বিনেরা মানুষকে ‘আউরি লাগিয়ে দেয়’ (পথ ভুলিয়ে দেয়); বন্যার সময়ও একই কাজ করে ওরা। বিশেষ করে যারা ঐ গাছগুলোর নিচে পায়খানা-প্রস্রাব করে, তাদের বিশেষ ক্ষতি করে।

আমরা তো আর পায়খানা-প্রস্রাব করছি না, যাচ্ছি ওদের সাথে দেখা করতে। এখন সমস্যা একটা রয়ে যাচ্ছে- ‘আউরি লাগিয়ে দেয়া’। এটা থেকে বাঁচার উপায় কী? আমাদের কাছে কম্পাসও নেই। শাকির তার শোনা একটা কাহিনী বললো, ভারতের কামরূপ-কামাক্ষায় এক লোক আটকা পড়েছিল যাদুকরের হাতে। সেখানে তাকে বাড়ির পেছনে বেঁধে রাখা হয়েছিল। রাতে কোনো রকমে যখন সে ছুটতে পেরেছে, তখন সে পালাতে উদ্যত হলো। সারা রাত ধরেই সে দৌঁড়ে চললো, যত দূরে পারা যায় সরে পড়তে হবে। এক সময় দিনের আলো ফুটলে সে আবিষ্কার করলো, সারা রাত ধরেই সে ঐ বাড়ির চারপাশে চক্কর দিয়েছে। ‘আউরি লাগা’র এই মোক্ষম উদাহরণটা আমাদের পরিকল্পনাটাকে আরেকটু জটিল করে দিলো। ঠিক করলাম, বাড়ির কাউকে জানিয়ে যেতে হবে, সারা রাত ধরেই আমরা ওখানে ‘আউরি লেগে’ ঘুরতে ফিরতে থাকলেও কেউ একজন যেয়ে আমাদেরকে উদ্ধার করতে পারবে তাহলে।

পরিকল্পনামতো শুধু আউয়ালকে জানানো হলো। কিন্তু আমরা দুজন রাতে শু’বো [ছোট চাচা] সাজু চাচার ঘরে। তাঁকেওতো তাহলে জানিয়ে যেতে হবে। কিন্তু তিনি যদি বাধ সাধেন? তারপরেও, তাঁকে না জানিয়ে উপায় নেই। শেষ পর্যন্ত তাঁকে আর আউয়ালকে জানাবো, ঠিক করলাম। আউয়ালকে জানিয়ে গেলাম, যদি আমরা চার ঘণ্টা পার হবার পরেও না ফিরি, তাহলে যেন সে সাজু চাচার সাথে পরামর্শ করে পরবর্তি ব্যবস্থা নেয়। এতো কিছুর পরেও আমরা ছোটখাটো কিছু সাবধানতা নিলাম: যেমন, আমরা কেউই সিগারেট না খাওয়াসত্ত্বেয় বাজার থেকে একটা গ্যাস-লাইটার কিনে নিলাম; কিনে নিলাম দুটো মোমবাতি, যাতে আগুন লাগিয়ে জ্বালিয়ে রাখা যাবে। বাড়িতে ফিরে টর্চগুলো চার্জ করে নিলাম।

রাতে যখন সবাই ঘুমাতে যাবে, তখন আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুত। বাড়িতে আমাদের উপস্থিতি [চাচাতো ভাই] আকবরের কাছে বেশ আনন্দের, তাই সে সুযোগ পেলেই রাতে আমাদের দুজনের (আমার আর শাকিরের) সাথে থাকে, ঘুমায়। সেদিনও সে আমাদের সাথে ঘুমাবে বলে আমাদের সাথেই আছে। শাকির হয়তো দল ভারি করতেই তাকেও সঙ্গী করতে চাইলো। আমি মানা করলাম। কারণ, আকবর যদিও হাফেযে ক্বোরআন, তবুও ভীতু মানুষ। টয়লেটে গিয়ে রাতের বেলা জানালা খুলে দিলে একমাত্র মানুষ সে-ই যে, টয়লেটে ঢোকার আগ-মুহূর্তে শাকিরকে অনুরোধ করে জানালাটা লাগিয়ে টয়লেটে যায়। সুতরাং যে ভয় পায়, তাকে সাথে নেয়া মানে সাক্ষাৎ বিপদ ডেকে আনা।

কারণ সূরা (৭২) জ্বিনের ৬ নম্বর আয়াতে পড়েছি,

কতক মানুষ কতক জ্বিনের আশ্রয় চাইতো, ফলে তারা জ্বিনদের আত্মম্ভরিতা বাড়িয়ে দিত।

অর্থাৎ প্রথমদিকে জ্বিনেরা মানুষকে ভয় পেত। কিন্তু পরে যখন তারা দেখলো, মানুষই তাদেরকে ভয় পায়, ক্ষেত্রবিশেষে তাদের কাছে আশ্রয় চায়, তাদের সহায়তা চায়, তখন তারা মানুষকে ভয় দেখাতে শুরু করলো। আর যারা ভয় পায়, তারাই তাদের দ্বারা আক্রান্ত হয়, তাদের উপরই তারা প্রভাব ফেলতে পারে। তাই আকবরকে নেয়া নিরাপদ না।

কিন্তু শাকিরই আকবরকে বগলদাবা করে নিল। বাড়ির কাউকে জানতে দিতে চাইনা বলে সবার শুয়ে পড়ার অপেক্ষা করলাম। তারপর তিনজনেই দুই রাকাত নফল নামায পড়ে নিলাম। পাঠক হয়ত ভাববেন, ভয় পাচ্ছি বলে- আসলে ভয় ব্যাপারটা সবার মধ্যেই আছে। কিন্তু ভয়কে জয় করতে হয়। আর মুসলমানদের কর্তব্য, সব কাজে যাবার আগে দু’রাকাত নফল নামায পড়ে যাওয়া, যাতে আল্লাহ’র দয়ায় কাজটা সহজ হয়ে যায়। আমি সবসময়ই তা পালন করার চেষ্টা করি, তাই এবারও করলাম- ভয় কমাতে নয়, ভয়কে জয় করতে।

তারপর আমাদের প্রস্তুতি। রাত তখন ১২টা ৩০মিনিট। ঘরে যেমন, বাইরে তার চেয়েও বেশি শীতের প্রকোপ। জ্যাকেট পরে নিয়ে, কুয়াশা ঠেকাতে মাথায় দিলাম জ্যাকেটের খসখসে ক্যাপটা, হাতে পরে নিলাম হাতমোজা। শাকির পরে নিলো জিন্সের জ্যাকেট, মাথায় আলাদা শীত-ঠেকানো টুপি। আকবরকে দিলাম আমার মাফলার, তা দিয়ে কান-মাথা প্যাঁচিয়ে নিলো। সাজু চাচার ঘরে রাখা হকি-স্টিকটা তুলে নিলাম- সাপ-বিচ্ছু থেকে বাঁচা দরকার; জ্বিন আক্রমণ না করলেও এরা আক্রমণ করতে দ্বিধা করবে না, কারণ এরা ভিতু খুঁজে না। শাকির ওর ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে নিলো, তাতে নিলো এক বোতল খাবার পানি, ফার্স্ট এইড, ওর নিজস্ব সুইস আর্মি নাইফ (বিভিন্ন প্রকারের চাকু-জাতীয় সরঞ্জাম সম্বলিত সেট), প্যান্টের পকেটে নিজের মোবাইল ফোন সেট। শাকির বিভিন্ন অপারেটরের সীমও নিয়ে নিলো সাথে। আমি প্যান্টের পকেটে নিলাম কিনে নেয়া মোমবাতি দুটো, গ্যাস-লাইটার, ক্যামেরা ও ভিডিও সুবিধা সম্বলিত নিজের মোবাইল ফোন সেট, কলম, প্যাড, আমার সুইস আর্মি নাইফ, আর হাস্যকর হলেও একটা আতশী কাচ; আতশী কাচ কেন নিলাম, জানি না; তবুও নিয়ে নিলাম সাথে। তিনজনের হাতে তিনটা টর্চলাইট।

জুতাগুলো খুলে রাখতে গিয়েও রাখলাম না কী মনে করে। ওগুলো পায়ে নিয়ে উঁচু-নিচু জমিতে চলা কষ্টকর হবে জেনেও পরে নিলাম। তারপর মোবাইল ফোনে আমাদের একটা দলীয় ছবি তুলে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। সাজু চাচা দেখিয়ে দিলেন কী করে বাইরে থেকে ধাক্কা দিয়ে ভেতরের ছিটকিনিটা ফেলে দিয়ে তারপর ভিতরে ঢুকে যেতে হবে। আমরা রওয়ানা করলাম। রাত তখন পৌনে ১টা। নিশ্চুপে বেরোলাম, বাড়ির আর কেউ টের পেলে চোর ধরতে উঠে যাবে। চললাম বাড়ির পিছন দিকে, বাঁশঝাড়ের পাশ দিয়ে। ছোটবেলায় বাড়ির এই বাঁশঝাড়কেও ভয় পেতাম আমি, এখন মনে হচ্ছে নস্যি। বাইরে থেকে ওরা দুজন দুটো বাঁশ তুলে নিলো হাতে। মোটামুটি বাড়ির সীমানা পেরোতেই আকবর আটকালো আমাদের। বললো, চার ক্বুল (সূরা কাফিরূন, ইখলাস, ফালাক্ব, নাস) পড়ে নিতে, আর ‘আয়াতুল কুরসি’ পড়ে নিতে। ওর কথামতো দোয়া পড়ে নিয়ে বেরোলাম, আকবরকে সাহস দিতে বললাম, ভয় পাওয়ার কিছুই নাই; যদি মনের মধ্যে ভয়ের উদ্রেক হয়, তাহলে স্মরণ করবি আল্লাহকে, কারণ তাঁর কাছে সব ভয় ম্লান। আকবর হয়তো ভীতি কাটিয়ে সাহস সঞ্চয় করলো। তাছাড়া দোয়াগুলো যে ওকে চাঙ্গা করলো, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা চললাম কুয়াশার চাদর ভেদ করে, শিশির ভেজা ঘাস মাড়িয়ে।

আমাদের সবকিছুই ঠিকঠাক, এপর্যন্ত একেবারে সোনায় সোহাগা, একটা জিনিস ছাড়া- আর সেটা হচ্ছে চাঁদ। আকাশের পূর্ণিমার ঐ জ্বলজ্বলে চাঁদটাই যেন ভয়গুলোকে যতটা হবার কথা ছিল, ততটা চাঙ্গা হতে দিচ্ছে না। আর ভয় চাঙ্গা না হলে জ্বিন দেখার মজা থাকলো কোথায়? শুক্লপক্কের ঐ চাঁদটাকে না পারা যাচ্ছে বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে, না পারা যাচ্ছে অভিযান রোহিত করতে, কারণ শাকির আর আমার হাতে সময় বড় কম। এটা অবশ্যই বোকামি যে, আমরা পূর্ণিমার রাতে ভূত খুঁজতে বেরোচ্ছি; এর অবশ্য একটা যুক্তি থাকতে পারে, আমরা পূর্ণিমার অশুভত্ব সম্বন্ধেও ওয়াকিবহাল, তাই পূর্ণিমার অশুভত্বের দেখা পাওয়ার জন্যও বেরিয়ে পড়েছি বলা যায়।

‘মাউন্টেন ডিউ’ ড্রিঙ্কসের একটা বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, ‘ভয় সবারই লাগে, কিন্তু ভয়ের সামনেই জয় রয়েছে’। এই কথাটিকে সামনে রেখেই আমরা অগ্রসর হচ্ছিলাম। ভয় আমার মধ্যে তেমন একটা কাজ করছিলো না, সত্যি; তবে আমার সহযোগী অভিযাত্রীদ্বয়ের মধ্যে ভয় কিছুটা ছিলো, কেউই অস্বীকার করেনি। আমরা জ্বীনের অস্তিত্বকে অস্বীকার করছিলাম না, কারণ আমরা মুসলমান; তারপরও আমরা যথেষ্ট বিজ্ঞানমনষ্কতা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম, এই এলাকার বিখ্যাত (কুখ্যাত) ভূতের/জ্বীনের আড্ডাখানা, দুটো গাছকে লক্ষ্য করে। দুই সঙ্গীকে বলে দিলাম, আমাদেরকে পেছন থেকে কেউ অনুসরণ করছে মনে হতে পারে, কারণ আমাদের কানে বাঁধা মাফলার, ক্যাপ- এগুলোর খসখস আওয়াজ সবসময়ই আমাদের সাথে প্রতারণা করবে। তাই এতে বিব্রত হবার কিছু নেই।

যাহোক, আমরা ধান কাটা নাড়াময় জমি ধরে চলেছি তিন অভিযাত্রী। আকবরকে আনায় একটা সুবিধা ঠিকই হয়েছে, আর তা হলো, পথ-ঘাট চেনা। আমি এই পথ ধরে দিনের বেলা গিয়েছিলাম, তাই আমি চিনলেও আকবরই মূলত পথ দেখিয়ে নিয়ে চললো। যখনই পথটা কোনো বাড়ির আশপাশ দিয়ে যাচ্ছে, তখনই আমরা নিশ্চুপে হাঁটছি, শুধু আমাদের জুতার আওয়াজ, আর আমার খসখসা প্যান্টের খসখস আওয়াজ হচ্ছে। আমাদের বড় রকম একটা সমস্যা সৃষ্টি করলো এই হকিস্টিকটা। কারণ এখন যদি কারো সাথে দেখা হয়ে যায়, তাহলে এই হকিস্টিকটা আমাদের পরিচয় দিবে, আমরা গুন্ডা। তাই আমি হকিস্টিকটার মাথাটা বগলে ঢুকিয়ে নিয়ে হাতলটা বাইরের দিকে রাখলাম। কারো সাথে দেখা হলে সরাসরি বলবো, আমরা ওমুক বাড়ির ছেলেরা, একটু হাঁটতে বেরিয়েছি। লোকজনকে পরিচয় দিলে আমাকে চিনতে পরবে, কিন্তু আমি বেশিরভাগ সময় ঢাকায় থাকি, তাই না চেনার সম্ভাবনা বেশি। তবে আকবরকে এলাকার সবাইই চিনতে পারবে। আমরা এগিয়ে চললাম। গ্রামের পাশেই খোলা মাঠে খেকশিয়ালরা ডেকে উঠলো দলে দলে। মনে মনে হাতে লাঠি থাকায় সাহসই পেলাম, শিয়ালতো অন্তত তাড়ানো যাবে।

আমি তীব্র ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে মাথা থেকে ক্যাপটা নামিয়ে নিলাম। কারণ একটা খসখসে ক্যাপের দোহাই দিয়ে বিজ্ঞানকে অপমাণ করতে পারিনে। এবারে আমার কানে সব আওয়াজ স্পষ্ট আসতে লাগলো, যেগুলো বাকিদের কানে আসতে গেলে টুপি আর মাফলারে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। চাঁদনি রাতে পাতাঝরা গাছগুলোর চিকন চিকন ডালপালা আকাশে যেন কেউ কালো কালি দিয়ে এঁকে দিয়েছে। তারই মাঝে একটা দুটো পাতা যেগুলো ঝুলে আছে, সেগুলোর কোনো কেনোটা হাওরের মুক্ত বাতাসের তাড়নে নির্দিষ্ট তালে দুলছে। শহুরে কেউ এগুলোকে নিশ্চিত ভূতের হাতছানি ভেবে ভুল করতে পারে। আমরা গ্রাম্য মেঠো পথ পেরিয়ে এবারে পুরো হাওরে নেমে গেলাম। চারিদিকে সুনসান নীরবতা, শুধু আমাদের পথ চলার শব্দ। শিয়ালগুলোকেও দেখতে পাচ্ছি না আশেপাশে, ডাকছেও না ওরা। নীরব মধ্যরাত, হাওরের মাঝখানে আমরা তিনজন।

শিশির আমাদের পা ভিজিয়ে দেয়ায় পা থেকে জুতাগুলো পিছলে খুলে যেতে চাইছে; তবুও চলছি। একটা ব্যাপার লক্ষ করছি, আমরা নাড়া মাড়িয়ে সামনে চললেও বারবারই মনে হচ্ছে ঠিক পিছনেই কেউ একজন আমাদেরকে অনুসরণ করছে। এর কারণ আবিষ্কার করলাম, আমরা যে নাড়া মাড়িয়ে চলেছি, আমরা পা তুলে নিলেই সেগুলো আবার খসখস করে আগের অবস্থানে ফিরে আসছে। ফলে আওয়াজটা আমাদের ঠিক পিছনে হচ্ছে। পিছন ফিরে দেখলাম, কিছুই নেই। মাঝে মাঝে টর্চের আলো ফেলছি গোবর শনাক্ত করতে। হঠাৎ সামনে পেলাম কালো বিশাল এক স্থান, টর্চের আলো ফেলে দেখি পুরো জমির নাড়া আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে ছাই করে রাখা হয়েছে (জমির উর্বরতা বাড়াতে এমনটা করা হয়ে থাকে); ওগুলো মাড়ালাম না, ভেজা পায়ে সব ছাই লেগে যাবে বলে। জমিটা পাশ কাটিয়ে চললাম আরো সামনে। আইল ধরে হাঁটলে নাড়া মাড়াতে হয় না, তাই ঐ অনুসরণ-জাতীয় আওয়াজটাও পাওয়া যায় না। বিজ্ঞানকে ধন্যবাদ।

নাড়ায় নেমে এলে শাকির হঠাৎ বলে উঠলো, ভাইয়া, একটা কিছু হচ্ছে; আমি বুঝতে পারছি। তবে এখন বলবো না, পরে বলবো। ব্যাপারটা ঠিক সুবিধার না। শাকিরের কথাকে আমি তেমন আমল দিলাম না। বিজ্ঞানমনষ্ক ব্যক্তি যুক্তি (logic) আর প্রমাণ (evidence) ছাড়া কোনো কিছুতে কান দেয় না। আমি যতক্ষণ সেরকম কিছু পাচ্ছি না, ততক্ষণ সেগুলোতে আমল দিব না।

দূরে দেখা গেলো আমাদের কাঙ্ক্ষিত গাছ দুটো। কিন্তু ‘বড় চাচা’র কথামতো কোনো আলোর নাচন দেখলাম না। অথচ তিনি বলেছিলেন, সন্ধ্যারাতেও আলোর নাচন দেখতে পাওয়া যাবে। কিন্তু আমরা মধ্যরাতেও তা দেখতে পাচ্ছি না। আমরা জুতা হাতে নিয়ে একটা ছোট্ট খাল পেরোলাম, পায়ে খানিকটা কাদা-পানি লাগলো; তোয়াক্কা করলাম না। এগিয়ে চললাম প্রথম গাছটা লক্ষ করে, আমগাছের মতো গাছটা, দেয়াল দিয়ে ঘেরা যেটা- সেটার দিকে। ধীরে ধীরে ওটার কাছে যাচ্ছি। আমি উপলব্ধি করলাম, যতই ‘ভয় লাগছে না’ বলছি, তবুও কিছুটা ভয় মনের খুব ভিতরের কোথাও শক্ত হতে চাইছে; এটা খারাপ লক্ষণ। দুর্বল হওয়া চলবে না, তাহলে জ্বিনেরা সাহস সঞ্চয় করবে। আমরা গাছটার একেবারে নিচে চলে গেলাম।

টর্চের আলো ফেললাম গাছের নিচের দেয়ালটাতে। মোটামুটি ছয় ইঞ্চি উঁচু বর্গাকৃতি দেয়াল দিয়ে ঘেরা গাছটা। দেয়ালের গায়ে টর্চের আলো ফেলতেই দেয়ালে এমবুশ করা একটা লেখা চোখে পড়লো:!!

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত