আমি এখন যে ঘটনাটি লিখবো এটা আমাদের নিজের বাড়ি নিয়ে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা। আজ থেকে ৮ বছর আগে আমাদের সাভারের এই বাড়িটি কেনা হয়। তার আগে আমি আমার পরিবারের সাথে টংগি, গাজীপুর এ থাকতাম। সেখান থেকে ২০১১ এর দিকে আমার পরিবার এখানে চলে আসে। আর ঘটনার শুরু ঠিক তার পর থেকেই। সাভারের এই বাড়িতে আসার পর থেকেই আশেপাশের প্রতিবেশিরা অনেকে অনেক কথা বলেছে এই বাড়ি নিয়ে। কিন্তু আমরা কখনই সেগুলো মানতাম না। তবে এটা আমরা জানতাম যে দীর্ঘ ১ যুগেরও বেশি এই বাড়িতে কোন মানুষ বসবাস করতো না। আর এই বাড়িটি এই এলাকার কয়েকটা পুরাতন বাড়ির মধ্য ছিল অন্যতম। আমরা এই বাড়িতে এসে সুন্দর করে মেরামত করে বসবাসের উপযোগী করে তুলি। আমরা নিজেরা কয়েকটা রুম থাকার জন্য রেখে বাকি রুম গুলো ভাড়া দিয়ে দেই। একদিন শীতের সময় আমরা সবাই স্পষ্ট দেখতে পেলাম রাতে কোন বাতাস না থাকা সত্ত্বেও পিছনের গ্রীলের গেট একা একাই অনেক জোরে জোরে দুলছে। মনে হচ্ছিল কেউ শক্তি দিয়ে দরজাটা নাড়ছে। ভাড়া দেওয়া রুম গুলোর মধ্য একটা রুম ছিল যেটাতে প্রতিদিন সমস্যা হতো। রুমটি যখন প্রথম ভাড়া দেওয়া হয়, একরাত পরেই ভাড়াটিয়া এসে বলে এই রুমে সমস্যা আছে। গভীর রাতে নাকি ফ্লোর থেকে একটা কালো ছায়া উঠে বড় হতে হতে উপরে টিন পর্যন্ত গিয়ে মিলিয়ে যায়। আর তখন নাকি রুমের তাপমাত্রা অনেক কমে যায়। ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পরের রাত আমি আর আমার বাবা থাকি ওই রুমে। রাতে ঘুমিয়ে গিয়েছি। হঠাৎ অনেক ঠান্ডা লাগার কারনে ঘুম ভেঙে যায়। চোখ মেলে তাকাতেই দেখি একটা কালো ছায়া ফ্লোর থেকে উঠে টিন পর্যন্ত গিয়ে মিলিয়ে গেছে। এরকম কয়েকবার হলো। ভয়ে আমি পুরো জমে গিয়েছিলাম। পরে খেয়াল করলাম আমার বাবাও ভয়ে আমার হাত শক্ত করে ধরে আছে। তারপর রুমটা কিছুদিন বন্ধ রাখলাম। অনেক দিন পর আবার ভাড়া দিলাম। আবার সেই একই সমস্যা। এরপর আাবার বন্ধ করে দিলাম। আর আমরা প্রায়ই স্বপ্ন দেখতাম যে একটা লোক এসে বলছে। এই বাড়ি ছেরে দে এটা আমার জায়গা। একদিন গরমের সময় কারেন্ট না থাকার জন্য পাশের রুমের এক লোক ফ্লোরে ঘুমিয়েছিল। হঠাৎ তার ঘুম ভাংতেই দেখতে পেলো তার দু পাশে দুজন সাদা কাপড় পড়া লম্বা লোক দাড়িয়ে আছে।আস্তে আস্তে দুজন লোক দরজা দিয়ে বাহিরে চলে গেলো। লোকটি সাহসি ছিল তাই সেও উঠে দরজা থেকে বাহিরে আসলো। কিন্তু বাহিরে এসে দেখলো কেউ নেই। রাতে ঘুমালেই মনে হতো যে টিনের চালে কেউ একজন হাটছে। অনবরত হাটতেই থাকতো। অনেকবার উপরে লাইট মেরে দেখেছি কিন্তু কাউকেই পাইনি। এছাড়াও মনে হতো কেউ গোসল করছে, কেউ হাড়ি-পাতিল পরিস্কার করছে অথবা কেউ টয়লেটে গেলে টয়লেটের পিছনের দেয়াল অপর পাশ থেকে জোড়ে জোড়ে আঘাত করছে। আর দুম দুম আওয়াজ হচ্ছে।
.
.
একদিন আমাদের বাড়িতে আমাদের এক আত্মীয় বেড়াতে আসে। রাতে তাকে পাশের রুমে ঘুমাতে দেওয়া হয়। হঠাৎ তার মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে যায়। সে খেয়াল করে দেখে যে কে যেন বাহির থেকে দরজায় নক করছে। সে ভাবলো যে আমরা কেউ হবো। তাই সে বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলে। তারপর সে যা দেখতে পায় তার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। সে দেখতে পেল যে একটা লোক তার চেহারা বুঝা যাচ্ছিলো না। কিন্তু সে ছিল অনেক লম্বা প্রায় ১০-১২ ফুট। আর তার ছিল অনেক বড় লম্বা দাড়ি। সে সেটা দেখে সেখানেই সেন্সলেস হয়ে যায়। ভোর বেলা আমার মা ঘুম থেকে উঠে দেখে যে সে অজ্ঞান হয়ে দরজার সামনে পড়ে আছে। পরে আমরা সবাই তাকে ঘরে নিয়ে আসি। এবং তার জ্ঞান ফেরার পরে আমরা জানতে পারি যে সে কি দেখেছে। তার কিছুদিন পরে আমাদের বাসায় একটা পরিবার ভাড়া আসে। তো ওনাদের পরিবারের একজন ছিল যে কিনা কবিরাজি করতো। সে আমাদের বাসায় ঢুকেই বলেছিল যে এই বাসায় সমস্যা আছে। আমরা আর তেমন কিছু বলিনি তার সাথে। একদিন রাতে সে ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎ তার জানালায় কেউ নক করলো। সে তখনই বুঝতে পারলো যে এটা কোন মানুষ টোকা দেয়নি। সাথে সাথে সে তার শরীর বন্ধ করে দরজা খুলে বাহিরে আসলো। এবং সে দেখলো একটা লোক অনেক লম্বা সে একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। আর লোকটা ছিল প্রায় গাছের সমান লম্বা। কবিরাজ লোকটি বলল তুই এখানে কি চাস। আর ঐ লম্বা দেখতে লোকটি বলল এটা আমার বাড়ি। এবং সে হাত দিয়ে দেখিয়ে বলল এই পুরো এলাকাটা আমার। ওর হাত নাকি অনেক লম্বা ছিল। এবং আরো বলল তোরা সবাই এই বাড়ি থেকে চলে যা। তখন কবিরাজ লোকটি বলল তুই এই বাড়ি থেকে বের হ। এই বলে একটা ঝাড়ু হাতে নিয়ে তাড়া করে। আর ঐ লম্বা দেখতে লোকটি তখন বাড়ির দেয়ালের উপর দিয়ে লাফ দিয়ে বাহিরে চলে যায়। পরের দিন লোকটি আমাদের বলল বাড়িটি বন্ধ করার জন্য। কিন্তু উনি কুফরি বিদ্যা প্রয়োগ করে বাড়ি বন্ধ করে দিতে পারবে। যেটা আমাদের ইসলাম ধর্মে সম্পূর্ন নিষিদ্ধ। তাই আমরা কেউ রাজি হলাম না। ওই খারাপ জিনিষটি প্রায় প্রতিদিন আমার মায়ের স্বপ্নে আাসতো আর বলতো এখান থেকে চলে যা। একই স্বপ্ন আমার মা বার বার দেখতো। আমাদের বাড়ির ভিতরে কয়েকটা আম গাছ আছে। যেটা রাতের বেলা খুবই অন্ধকার হয়ে থাকে। আর টয়লেটে যেতে হলে ওই গাছের নিচ দিয়েই যেতে হয়। এক রাতে এক মহিলা টয়লেটে যাওয়ার জন্য বের হয়। টয়লেট থেকে ঘরের দিকে ফেরার সময় যখন সে গাছের নিচে আসলো তার মনে হলো কেউ একজন আছে যে গাছের উপরে বসে ছিলো। তাই সে গাছের দিকে তাকালো আর সে অন্ধকারের মধ্যও স্পষ্ট দেখতে পেলো একটা লোক অনেক লম্বা দাড়ি আর সাদা কাপড় পরা গাছের উপর বসে আছে। তার দিকে তাকিয়ে বড় বড় দাঁত বের করে হাসছে। আর চোখগুলো অসম্ভব বড় ছিলো আর অনেক লাল ছিলো অনেকটা আগুনের গোলার মতো। মহিলাটি একটা চিৎকার করে দৌড়ে ঘরে এসে অজ্ঞান। এখনও আমি রাতে ঘর থেকে বের হলে সেই ঘটনার কথা মনে পড়ে। কখনো রাতে ঘর থেকে বের হলে ভয়ে গাছের দিকে তাকাই না। অনেকদিন সেই নিষিদ্ধ ঘরটি বন্ধ রাখার পরে আবার ভাড়া দিলাম। এবার একটা পরিবার আসলো বাবা-মা এবং তাদের ছেলে। ছেলেটা প্রায় আমার বয়সি ছিল। বাবা-মা অন্য রুমে থাকতো আর ছেলেটি সেই রুমে থাকতো। এবার আর তেমন কোন সমস্যা হয়নি। রাতে কখনও ছেলেটি ঘরের ভিতর কোন ছায়া দেখতে পায়নি। আমরাও একটু নিশ্চিত হলাম। কিন্তু ছেলেটি বলতো ওর নাকি রাতে অনেক ভয় লাগে। কারন ও প্রায় রাতেই নাকি একটা বাশির সুর শুনতে পেত। অনেক দূর থেকে বাশি বাজাতে বাজাতে ওর ঘরের কাছে এসে থেমে যেত। একদিন রাতে ও ঘুমিয়ে ছিল হঠাৎ সেই বাশির সুর শুনতে পেল। এবার ওর একটু রাগ হলো। বাশির সুর কাছে আসতেই ও জোরে জোরে বলতে লাগলো কে প্রতিদিন বাশি বাজাস সাহস থাকলে সামনে এসে বাজা। প্রায় ৩০ মিনিট পর ওর রুমের তাপমাত্রা কমে গেল। ও চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলো একটা মেয়ে ওর রুমের ফ্লোরে দাড়িয়ে আছে। আর মেয়েটার চুল গুলো অনেক বড় ছিল ফ্লোর পর্যন্ত। লাফ দিয়ে এসে মেয়েটা ওর বুকের উপর বসলো। আর বললো আমাকে ডাকছিস কেন। ও তখন অনেক জোরে জোরে চিৎকার করছিল। কিন্তু মুখ দিয়ে কোন আওয়াজ বের হচ্ছিল না।মেয়েটার সাথে ওর ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। একসময় ও মেয়েটাকে লাথ্থি মেরে নিচে ফেলে দেয়।আর ছেলেটিও খাট থেকে নিচে নামে ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য। কিন্তু যখনই ফ্লোরে পা রাখলো ও দেখতে পেলো সারা ফ্লোরে চুল আর চুল। চুলগুলো ওর পা আটকে ধরছে। ও কোনরকম দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে মা বলেএকটা চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলো।ছেলেটার চিৎকার শুনে আমরা সবাই দৌরে আসলাম আর ওর বাবা-মাও বের হলো। এসে দেখি ছেলেটা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। তারপর ওর জ্ঞান ফেরার পরে আমরা জানতে পারি যে ওর সাথে কি ঘটেছিল। তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম এই রুমটা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিব আর খুলবো না। একটা মহিলা ছিল আমাদের বাড়িতে যে প্রতিদিন ভোর ৫ টার দিকে উঠে রান্না করতো। একদিন সে শুনতে পেল যে আমার মা তাকে রান্না করার জন্য ডাকছে। সচারাচর আমার মা কাউকে রান্না করার জন্য কখনো কাউকে ডাকে না। আর অত সকালে রান্নাও করে না। তবুও মহিলাটি ভাবলো যে আমার মা ই তাকে ডাকছে। তাই সে উঠে গেলো। ঘড়ির দিকে একবারও তাকালো না। এবং বাহিরে গিয়ে দেখলো যে সত্যিই আমার মা রান্না করছে। মহিলাটি এসে জিজ্ঞাসা করলো যে ভাবি আজ আপনি এত সকালে রান্না করছেন। আমার মা নাকি বলেছে যে রায়হান খুব সকালে আজ একটু ঢাকার দিকে যাবে তাই রান্না করছি। মহিলাটি আর কিছু বলল না সে ও এসে রান্না বসালো। তারপর রান্না করতে করতে আমার মায়ের সাথে অনেক গল্পও করলো। একসময় মহিলাটি দেখলো আমার মা হাত দিয়ে ভাত নাড়ছে কোন চামচ ব্যাবহার না করেই। আর বলছে এখনও ভাত সিদ্ধ হয় নাই। মহিলাটি এই দৃশ্য দেখে অনেকটা ভয়ও পেলো আর অবাকও হলো। মহিলাটি কোন কথা বলল না। একটু পরে মহিলাটির স্বামী ঘুম থেকে উঠে দেখে যে তার স্ত্রী নেই মোবাইলে সময় দেখলো রাত ৩ টা। সে ভাবলো হয়তো টয়লেটে গিয়েছে। কিছু সময় পার হওয়ার পরও যখন আসছিল না তখন লোকটি উঠলো এবং বাহিরে গেলো। উনি গিয়ে দেখলো যে তার স্ত্রী রান্না ঘরে একা অন্ধকারে বসে আছে। চুলায় ভাতের পাতিল। কিন্তু কোন আগুন জ্বলছে না। সে রান্না ঘরের লাইট জ্বালিয়ে তার স্ত্রীর কাধে হাত রেখে বলল যে এখানে কি করছো। তার শরীরে হাত রাখার সাথে সাথে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো গেলো। তারপর তাকে রুমে নিয়ে আসা হয়। জ্ঞান ফেরার পর বলল যে আমার মা নাকি তাকে রান্না করার জন্য ডেকেছে। অথচ আমার মা তখন ঘুমিয়ে ছিল। সে নাকি আমার মায়ের সাথে বসে গল্প করছিলো। তারপর আর কিছু মনে নেই তার। একদিন সেই কবিরাজ লোকটি রাতে টয়লেটে যাওয়ার জন্য বের হলো। আর দেখলো যে একটা বুড়ি তার পা চুলার ভিতরে দিয়ে বসে আছে। কবিরাজ লোকটি জিজ্ঞাসা করলো ও বুড়ি তুমি ওখানে বসে কি রান্না করো। বুড়িটা নাঁকা সুরে উত্তর দিলো কিঁছুঁ নাঁন্দিঁ নাঁ। তারপর লোকটা টয়লেট থেকে ফেরার সময়ও দেখলো যে বুড়িটা তখনও বসে আছে। আর তার দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটা আর কিছু বললো না সোজা রুমে চলে আসলো। তার কিছুদিন পরে এক নব-দম্পতি আমাদের বাসায় আসলো। শুরুটা ভালোই ছিল কিন্তু কিছুদিন পর থেকেই ছেলেটা প্রায়ই রাতে শুনতে পেতো কে যেন কাঁদছে। কখনো কোন মহিলার কান্নার আওয়াজ আবার কখনও শিশুদের কান্নার আওয়াজ। তার কিছুদিন পরে এই সমস্যার কারনে তারাও চলে যায়। বিভিন্ন সমস্যার কারনে আমাদের বাসায় কেউ এসে বেশিদিন থাকতো না। একদিন রাতে আমি জানালা খুলে ঘুমিয়েছিলাম। কারন সেই সময় অনেক গরম ছিলো। রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় আর আমার জানালা দিয়ে বাহিরে চোখ চলে যায়। আমি দেখতে পেলাম গাছের উপরে একটা বাতি একবার জ্বলছে আবার নিভছে। এরকম অনেক সময় যাবৎ হলো। তারপর একসময় আমি আবার ঘুমিয়ে গেলাম। আমি জানি না সেটা কি ছিলো। একদিন রাতে আমি ঘুমিয়ে আছি হঠাৎ স্বপে দেখতে পেলাম একটা ভয়ংকর চেহারার লোক আমার দিকে তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে বলছে কিরে এই বাড়ি ছারস না ক্যন? আর কত কইতে হইবো তোগো। বাইর হ আমার বাড়ি থিকা। এই বলে খপ করে হাতটা ধরে টানতে শুরু করলো। আর আমি বলছি আমি যাবো না। কিন্তু ওর শক্তির সাথে পারলাম মা। টানতে টানতে আমাকে একটা মাঠের মাঝে নিয়ে আসলো। হাতটা পুরো ব্যাথা হয়ে গিয়েছে। আশে-পাশে তাকিয়ে দেখি এই জায়গা আমার পরিচিত না। কোন বাড়ি ঘর নেই। যতদূর চোখ যায় শুধু মাঠ আর মাঠ। ও আমাকে আবার জিজ্ঞাসা করল এই বাড়ি থেকে যাবি কিনা। আমি বললাম না যাবো না। এই বাড়ি ছেড়ে আমরা কোথায় যাবো। এটা বলার সাথে সাথেই আমাকে ধরে একটা আছাড় মারলো। তারপর আর কিছু মনে নেই।আমার বাবা-মা আমার চিৎকার শুনে দৌড়ে আসে। এসে দেখে আমি ফ্লোরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছি। পরে যখন আমার জ্ঞান ফিরেছে আমি তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে অনেক হয়েছে এবার কিছু করতে হবে। পরের দিনই আমি গিয়ে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবের সাথে কথা বলি। আমাদের বাড়ির কথা বলতে ইমাম সাহেব একটু চমকিয়ে উঠলেন। কারন উনি আমাদের বাড়ি সম্পর্কে আগেই জানতেন। এবং উনি বললেন ওনার দ্বারা কিছু করা সম্ভব না।
.
.
ইমাম সাহেব বললেন তোমাদের বাড়িতে যেটা আছে সেটা খুব শক্তিশালী। আমি ওর সাথে পারবো না। পরে আমার সমস্যা করতে পারে। এই কথা শুনে আমি একটু হতাশ হলাম। পরে আমি ওখান থেকে বাড়ি চলে আসলাম। রাতে আমি রুমে বসে পড়ছিলাম। পাশের রুমে একটা মেয়ে ছিল হঠাৎ বিকট একটা চিৎকার করে উঠলো। মেয়েটা হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই ছুড়ে মারছে। সবাই থামানোর চেষ্টা করছে। আমি তখনও বুঝতে পারিনি যে আসলে সমস্যাটা কি। আমি দৌড়ে গিয়ে মেয়েটাকে থামানোর জন্য ধরলাম। ওকে ধরার সাথে সাথে আমাকে এতো জোড়ে একটা ধাক্কা দিলো। আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না। একটা মেয়ের শরীরে এতো শক্তি!!!! আমি সহ সবাই অবাক হয়ে গেলো। মেয়েটা আমাকে অকথ্য ভাষায় বকা দিচ্ছে আর বলছে আমারে তাড়াবি এই বাড়ি থিকা তা কখনও পারবি না। যে আমার সামনে আসবি সব গুলোরে খাইয়া ফেলামু। তোগো ইমাম সাফ আমার কিছু করতে পারবো না। এই বলে একটা পিড়ি আমার দিকে ছুড়ে মারে। সেটা এসে আমার কপালে লাগে। এবং কপাল ফেটে সাথে সাথে রক্ত বের হয়। তারপর আমার কপালে ৪ টা সেলাই লাগে। এখনও সেই দাগটা রয়ে গেছে। হয়তোবা বাকি জীবনটাও থাকবে। আপনাদের কারো সাথে কখনও দেখা হলে আমার কপালের দাগটা দেখতে পাবেন। তারপর আমি যখন অচেতন অবস্থায় ঘুমিয়ে ছিলাম তখন স্বপ্নে দেখতে পেলাম সেই সাদা কাপড় পড়া লম্বা লোকটি আমার কাছে এসে বলছে চলে যা এখান থেকে নইলে এখানে শান্তিতে থাকতে পারবি না। তারপর আমাকে একটা পাহাড়ের উপর টেনে নিয়ে গেল আর সেখান থেকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দিলো। আর সাথে সাথে আমার ঘুম ভেঙে যায়। আর আমি ভয়ে লাফ দিয়ে উঠি। আমাদের পরিবারের সবাই অনেক টেনশনে ছিল এই সমস্যার কারনে। এর মধ্য আমাদের আশেপাশে সব বাড়িতে ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে গেল। তারপর আমার এক পরিচিত আংকেল আমাকে এক হুজুরের কথা বললো। যে সেই হুজুর নাকি এসব কাজ করে। আর সে নাকি অনেক জ্বিন বশ করে রেখেছে। আমি সেই হুজুরের ঠিকানা নিলাম আর কিছুদিন পর সুস্থ হয়ে তার কাছে গেলাম। এবং সেখানে গিয়ে সব ঘটনা খুলে বললাম। হুজুর বললো আগে তোমার বাড়িটা আমি একটু ঘুরে দেখতে চাই। তুমি আগামীকাল আসবে। আর আমাকে একটি শরীর বন্ধ করার তাবিজ দিল। যাতে করে আমার কোন সমস্যা না হয়। তারপর আমি চলে আসলাম। রাতে সেই সাদা কাপড় পড়া লম্বা লোকটি আমার কাছে আবার আসলো। এবার দেখলাম ওই লোকটা আমার কাছ থেকে অনেক দূরে দাড়িয়ে আছে। আর বলছে তোর এত বড় সাহস আজকে আবার গেছিলি। তোর কিন্তু খুব খারাপ হইবো। আর যাবিনা। এই বলে চলে গেলো। পরেরদিন আমি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়েই সেই হুজুরের বাড়ি চলে গেলাম। তারপর সে আমার সাথে আামাদের বাড়ি আসলো। বাড়িতে ঢুকেই সে চারদিক তাকাতে লাগলো মনে হচ্ছিলো কি যেন একটা খুচছে। আর বির বির করে কি যেন বলছিল। তারপর পুরো বাড়ি ঘুরা শেষে আমাকে বলছে। তোমাকে একটা কাজ দিবো করতে পারবা।আমি বললাম জ্বি পারবো। উনি বললো ভয় পেয়ো না। আর তাবিজটা যেন সাথে থাকে। তারপর উনি বললো বাড়িতে যারা আছে সবাইকে বলো আজ বাহিরে অন্য কোথাও থাকার জন্য। শুধু আমি আর তুমি থাকবো। তারপর আমি সবাইকে তাই বললাম। সবাই রাজি হলেও আমার বাবা-মা রাজি হচ্ছিল না আমাকে একা রেখে যাওয়ার জন্য। তারপর হুজুর তাদেরকে বুঝিয়ে বললো। শেষে রাজি হলো। সবাই চলে যাওয়ার পর আমি হুজুরকে জিজ্ঞাসা করলাম। কেন সবাই কে বাহিরে পাঠানো হলো। হুজুর বললো এতগুলো মানুষকে একসাথে প্রোটেক্ট দেওয়া সম্ভব না। কিন্তু একজনকে দেওয়া সম্ভব। তাই তোমাকে একা রেখেছি। তারপর হুজুর আমাকে বললো বাজার থেকে ৪ টা বড় বড় লোহা কিনে আনার জন্য। প্রতিটা লোহার সাইজ হতে হবে আধা হাত করে। আর ৪ টা বোতল লাগবে। আমি সাথে সাথে বাজারে চলে গেলাম। কোন দোকানেই এত বড় লোহা পাচ্ছিলাম না। শেষে একটা দোকানে পাওয়া গেলো। ৪ টা লোহা আর ৪টা বোতল নিয়ে আমি বাড়ি ফিরলাম। এসে দেখি হুজুর বসে বসে একধরনের তরল লাল রং দিয়ে সাদা কাগজে কি যেন নকশা তৈরী করছে। আর অনেক আরবি লেখা ছিল নকশাটাতে। তারপর হুজুর আমাকে বললো বাড়ির ৪ কর্নারে ৪ টা গর্ত করতে অনেক বড় বড় গভীর গর্ত। আর বললো গর্ত করার সময় যেন কখনো পিছনে না তাকাই। যা কিছু হয়ে যাক না কেন পিছনে যেন না তাকাই। তারপর বললো তুমি গর্ত করতে থাকো। আমি একটু বাহির থেকে আসছি। গর্ত করা হয়ে গেলে আমাকে একটা ফোন করবে। আমি একা একা একটু ভয় পাচ্ছিলাম। তারপরও বললাম ঠিক আছে। উনি যাওয়ার আগে বললো ভয় পেওনা আমি আছি তো তোমার সাথে। আর বলে গেলো আমরা সন্ধ্যার পর কাজ শুরু করবো। এর আগে তোমাকে গর্ত তৈরী করতে হবে। তারপর উনি চলে গেলো। আমি পুরো বাড়িতে একা হয়ে গেলাম। আমি তাড়াতাড়ি একটা শাবল নিয়ে বাড়ির এক কর্নারে বসে পড়লাম। গর্ত করার জন্য। আমি গর্ত করছি হঠাৎ শুনতে পেলাম আমার আব্বু পিছন থেকে বলছে। কিরে বাবা তুই এখানে কি করতাছস। আমি থেমে গেলাম। তারপর ভাবলাম না এটা আমার আব্বু হতে পারে না। কিন্তু কন্ঠটা একদম তার মতই ছিল। এভাবে প্রথম গর্তটা শেষ করলাম। তারপর দ্বিতীয় গর্ত শুরু করলাম। কিছুু সময় পর আমার মনে হচ্ছে চারদিকে প্রচন্ড বাতাস বইছে। মনে হচ্ছ ঝড় শুরু হবে। তারপর দ্বিতীয় গর্তটাও যখন শেষ হলো তখন দেখলাম সব ঠিকই আছে। এরপর যখন তৃতীয় গর্ত করা শুরু করলাম তখন শুনলাম হুজুর এসে বলছে রায়হান হয়েছে আর গর্ত করতে হবে না তুমি এদিকে এসো। আমি ভেবেছিলাম সত্যিই হুজুর হবে। যখনই মাথাটা ঘুড়াতে যাবো ঠিক তখনই শুনলাম একটা অপরিচিত কন্ঠ আমাকে বলছে। রায়হান তুমি তোমার মাথা ঘুরাবে না। তুমি তোমার কাজ কর।তখনই বুঝতে পেরেছিলাম যে ওটা হুজুর ছিলো না। কিন্তু একটা প্রশ্ন মাথার ভিতর ঘুরছিল যে অপরিচিত কন্ঠটি কার। তারপর চতুর্থ গর্তটি করার সময় শুনতে পেলাম হুজুর কন্ঠে কেউ একজন আরবিতে উচ্চস্বরে কি যেন বলছে। এভাবে চতুর্থ গর্তটাও করা শেষ। পিছনে তাকিয়ে দেখি হুজুর সহ আরো ৮ জন লোক দাড়িয়ে আছে। আমি একটু অবাক হলাম। কারন এরা কেউ আমাদের এলাকার ছিলো না। আর হুজুর ছিলো অন্য এলাকার। তাহলে এতো তাড়াতাড়ি এই ৮ জনকে কোথা থেকে আর কিসের জন্য নিয়ে আসলো হুজুর। মনে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। আর তারা সবাই ছিলো দেখতে অনেক সুন্দর সুদর্শন যুবক। সবাই পান্জাবি আর মাথায় পাগড়ি পড়া ছিলো। হুজুর বললো তোমরা ৮ জন এক এক কর্নারে ২ জন করে গিয়ে দাড়াও। হুজুরকে জিজ্ঞাসা করলাম ওনারা কারা। হুজুর বললো এগুলো ওনার ছাত্র। এটা বলেই আমাকে বললো এক বালতি বালি নিয়ে আসার জন্য। আমাদের বাড়ির ভিতরই বালু ছিল তাই বালু আনতে বেশি সময় লাগলো না। এসে দেখি হুজুর বোতলের ভিতর সেই কাগজ গুলো ঢুকাচ্ছে। তারপর লোহা ৪ টা হাতে নিয়ে বিড় বিড় করে কি যেন কয়েকবার বলে ফু দিল। তারপর আমাকে বললো লোহা ৪ টা আর বোতল ৪ টা ৪ কর্নারে দাড়িয়ে থাকা ছেলে গুলোর কাছে দিয়ে আসতে। আমি সেগুলো নিয়ে তাদের কাছ যেতেই একটা অনেক সুন্দর সুবাস পেলাম। আর তাদের সবার কাছে গিয়েই একই ঘ্রান পেলাম। ওগুলো দিয়ে আমি আবার হুজুরের কাছে আসলাম। হুজুর আমাকে বললো ওরা ১ কর্নার থেকে একজন আজান দিবে আর আরেকজন মটিতে প্রথম লোহাটা গাড়বে তারপর তার উপরে বোতলটা বসাবে তারপর মাটি দিয়ে গর্তটা ঢেকে দিবে। এই সম্পূর্ণ কাজ আজান শেষ হওয়ার মধ্য করতে হবে। এভাবে এক কর্নারের আজান দেওয়া শেষ হলে আরেক কর্নারে আজান দেয়া শুরু হবে এবং সেখানেও ঠিক একই ভাবে লোহা এবং বোতল গাঢ়তে হবে। এভাবে ৪ কর্নারেই করতে হবে। আর এই ৪ কর্নারে আজান শেষ হওয়ার আগেই তোমাকে এই বালু বাড়ির চারদিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। এই বলে আরবিতে উনি কি যেন বলে বালুতে ফু দিলেন। আর আমাকে বললেন কখনো পিছনে তাকাবে না। তারপর সাথে সাথেই ডান পাশের কর্নার থেকে একজন আজান দেয়া শুরু করলেন। আর আমিও সাথে সাথে বালির বালতি নিয়ে দৌড়াতে শুরু করলাম। একহাতে বালতি আর এক হাত দিয়ে বালি ছড়াচ্ছি। যখন বালি ছরাচ্ছিলাম তখন আমার মনে হচ্ছিল যে কেউ একজন আমাকে পিছন থেকে টেনে ধরছে। তারপরও আমি কোনদিকে না তাকিয়ে আামার কাজ করে যাচ্ছিলাম। এভাবে বাড়ির চারদিকে বালি ছড়ানো শেষ হওয়ার সাথে সাথে আজানও শেষ হয়ে গেল। আমি খুব হাপিয়ে গিয়েছিলাম। ৮ জন ছেলে এসে হুজুরকে বললো হুজুর তাহলে আমরা এখন আসি। এই বলেই ছেলে গুলো হাঁটা শুরু করলো। হুজুর বললো আজ থেকে আর কোন সমস্যা হবে না ইনশাআল্লাহ। এখন থেকে তোমাদের বাড়ি বন্ধ। হুজুরের এতটুকু কথা শুনে আমি পিছনে তাকাতেই দেখি ছেলেগুলো নাই।এত তাড়াতাড়ি কোথায় চলে গেলো। আমি সেটাই ভাবলাম। তারপর হুজুর বললো সাবধান কখনো যেন এই বোতল গুলো কেউ মাটি থেকে না বের করে। তাহলে অনেক বড় সমস্যা হবে। আর বললো তাবিজটা ৪১ দিন পর গিয়ে আমাকে ফেরত দিয়ে আসবে। কারন তারপর আর ওটা তোমার প্রয়োজন হবে না। এই বলে হুজুর চলে গেলো। আমি তারপর অনেক ভেবেছি যে সেই ৮ জন ছেলে আসলে কে ছিল। তারা কি সত্যিই মানুষ ছিল নাকি অন্য কিছু। তারপর থেকে এই পর্যন্ত আল্লাহর অশেষ রহমতে কোন সমস্যাই আর হয়নি। আর আমরা এখনো সেই বাড়িতেই থাকি।
…………………………………………………………সমাপ্ত…………………………………………………….