কবরের ডাক

কবরের ডাক

রাহিয়া নয় বছর পর বাংলাদেশে ফিরেছে, এতো দিন সে সিঙ্গাপুর ছিলো, শুধু ছিলো বল্লে ভুল হবে ডাক্তারী পরার জন্ন্য সে নয় বছর দেশের বাহিরে ছিলো।
এখন সে ডাক্তার কিন্তু তার নামের প্রথমে ডা. লিখতে বিরক্ত লাগে, রাহিয়ার প্রথম থেকেই ইচ্ছা সপ্তাহের তিন দিন সে গ্রাম্য শিশু দের বিনা মূল্যে চিকিৎসা করবেন।
রাহিয়ার পরিবার থাকে উত্তরাতে ফ্লাট ভারা করে, রাহিয়ার বাবাও একজন ডাক্তার, ইকবাল আহম্মেদ তার ইচ্ছা শহরের কাছে শান্ত এমন জায়গায় বাড়ি কেনার, মেয়ে নয় বছর দেশের বাহিরে ছিলো বলে তার ইচ্ছা বাস্তবে রুপান্তরিত করে নি, কিন্তু এখন তারা এমন একটি বাসা খুজে চলছে দিন রাত।
অবশেষে অনেক খুজা খুজির পর রাহিয়ার পরিবার এমন একটি বাড়ি পেয়েছে, এখন শুধু বাকি রাহিয়ার পরিবার বাড়িটাতে উঠা।
রাহিয়ার পরিবারে চার জন সদস্য সংখ্যা, তার মধ্যে রাহিয়ার বাবা, মা, রাহিয়া আর ওর একমাত্র ছোটো ভাই রামিন, রামিন এবার ক্লাশ নাইনে পড়ছে।
নতুন বাড়িটা তাদের খুবই পচ্ছন্দ হয়েছে, বিশেষ করে রামিনের করণ বাড়ির সামনে অনেকটা খোলা জায়গা, রামিন প্রতিদিনই এখানে খেলতে পারবে তার বন্ধুদের নিয়ে, এতো দিন ঢাকায় বন্ধ অবস্থায় তার দম বন্ধ হয়েগেছে।
সব কিছু ঠিক করে রাহিয়ার পরিবার কাজের জন্ন্য আবার ব্যস্ত হয়ে পরে, নতুন বাড়ি সম্পর্কে তেমন কোনো খোজ খবরই নেওয়া হইনি, বাড়িতে শুধু কাজের মেয়ে ঝুমা আর রাহিয়ার মা থাকে, রামিন যেদিন স্কুলে যায় না সে দিন সে সারা দিন সেই খোলা জায়গায় খেলে তার বন্ধু দের নিয়ে।
কিন্তু ঘটনার শুরু হয় সেদিনই, রামিনরা ক্রিকেট খেলছিলো, ব্যাটিং করছিলো জিহাদ, এক সময় হঠ্যাৎ করে মাটি কাপা শুরু হয়, এমন করে কেপে উঠায় রামিন এবং তার বন্ধুরা অনেক ভয় পেয়ে যায়, ঘটনা এতো জলদি ঘটে যে কেউ কেনো কথা বলার সাহস রাখেনি, হঠ্যাৎ করে আবার সব কিছু আগের মতো হয়ে গেছে, ওরা ভূমিকম্প ভেবে আর কাউকে কিছু বলেনি।
এখানেই থেমে থাকেনি কিছু দিন পর শুরু হয় আসল ঘটনা, সেদিন রাহিয়ার মা রান্না করছে ছুটির দিন বলে সবাই এক সাথে খাবে, রাহিয়া গ্রাম্য শিশুদের চিকিৎসা করে বাসায় এসে দুপুরের খাবার খাবে এক সাথে মিলে, রামিন কম্পিউটারে গেমস্ খেলছে, ইকবাল আহম্মেদ বাগানে মালি দের সাথে থেকে কাজ দেখি দিচ্ছেন, কাজের মেয়ে ঝুমা গেছে ছাদে কাপড় শুকাতে, একা রান্না ঘরে শুধু রাহিয়ার মা, আনমনে রান্না করছেন হঠ্যাৎ তার মনে হলো ঝুমাকে কেউ ছাদ থেকে নিচে ফেলে দিচ্ছে, রাহিয়ার মার ঘোর কেটে যখনি ছাদের দিকে যাওয়া প্রস্তুতি নেয় তখনি ইকবাল আহম্মেদ হন্তদন্ত হয়ে ঘরে আসে, তার এই অবস্থা দেখে, রাহিয়ার মা: কি হয়েছে তোমার?
ইকবাল আহম্মেদ: ঝুমা ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
রাহিয়ার মা: কি বল্লে তুমি, ঝুমা কেনো আত্মহত্যা করবে।
ইকবাল আহম্মেদ: আমি কিছু জানিনা, পুলিশ কে এখনি যানাতে হবে।
রাহিয়ার মা: হ্যা তুমি পুলিশ কে জানাও।
রাহিয়া বাসায় এসে এসব দেখে নিশ্চুপ হয়ে যায়, পুলিশী ঝামেলা শেষ করে ঝুমাকে কবর দেওয়া হয় এই বাড়িতেই।
শুরু হয় আবার নতুন ঘটনার, রাহিয়ার মা প্রতি রাতেই ঝুমাকে নিয়ে ভয়ংকর স্বপ্ন দেখতে থাকে, প্রথম প্রথম খুব একটা পাত্তা দিতোনা রাহিয়ার মা, কিন্তু আস্তে আস্তে সে স্বপ্নের মধ্যে দেখতো লাগলো ঝুমা তাকে মারতে চাইছে, একই স্বপ্ন প্রায় প্রতিদিনই দেখতে লাগলো, একটা সময় রাহিয়ার মার ঘুমাতেই মন চাইতো না, ইকবাল আহম্মেদ অনেক রকম চিকিৎসা করাতে থাকলেন স্ত্রী কে, কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছেনা রাহিয়াও খুব চিন্তিত তাদের এতো সুখের সংসার কেমন এক অনিশ্চয়তার মধ্যে ডুবে যাচ্ছে ইদানিং রাহিয়ার খুব ভয় হয় এই বাড়িতে থাকতে, প্রায় রাতে রাহিয়ার ঘুম ভেংঙে যায়, আর তখন সে অদ্ভুদ একটা ডাক শুনতে পায়, কিন্তু এ নিয়ে সে কারো সাথে কথাও বলতে পারেনা, কারণ তার মায়ের অবস্থা খুবই খারাপ।
একদিন বিকেলে রাহিয়া হসপিটাল থেকে বাসায় এসে দেখে রামিন তাদের বাসার খোলা জায়গায় কিছু খুজতেছে, রাহিয়া পিছন থেকে রামিন কে ডাকে, রামিন কে হঠ্যাৎ করে ডাক দেয়াতে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।
রাহিয়া: রামিন কি করিস এখানে?
রামিন: না মানে আপি, কিছুনা।
রাহিয়া: কিছুনা? আচ্ছা ঠিক আছে ঘরে আয়।
রামিন: আপি তোমাকে একটা কথা বলবো?
রাহিয়া: কি কথা বল।
রামিন: আপি, প্রতিদিন রাতে আমাকে কে যেনো ডাকে,
রাহিয়া: কে ডাকে?
রামিন: জানিনা, অদ্ভুদ শুরে আমার নাম নিয়ে, শুধু বলে আয় এখনি মাটিতে ঢুকেযা, এখনি আয় এখনি।
রাহিয়া: (ভাইকে শান্তনা দিয়ে বলে) কিযে বলিস এতো রাতে তোকে কে ডাকবে এগুলা তোর মনের ভুল।
রামিন: আপি, বিশ্বাষ করো আমার কথা, আমি একদম মিথ্যে বলছিনা, কাল রাতে আমি ঘর থেকে বের হয়েছিলাম কে আমাকে ডাকে, তখন এই খানের মাটি অনেক জোরে কেপে উঠে, আরও একদিন এইখানের মাটি কেপে উঠেছিলো, ওই দিন আমরা সবই ক্রিকেট খেলছিলাম তখন ভেবে ছিলাম ভুমিকম্প কিন্তু কাল রাতের পর মনে হচ্ছে এখানে কিছু একটা আছে যা এখানের মাটিতে কাপুনি তোলে।
ঘোর লাগা হয়ে ছোটো ভাইয়ের অদ্ভুদ কথা শুনতে থাকে রাহিয়া।
রাহিয়া: ঠিক আছে তোর কথা বিশ্বাষ করলাম, এখন ঘরে চল, আর এখানে আসবিনা।
রাহিয়া ঘরে এসে অনেক ভেবে চিন্তে এই বাড়ির মালিকের কাছে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়,
সকালেই তাকে যেতে হবে সেখানে,
রাত ০২:৩৫ মিনিট রামিনের ঘুম ভেংঙে যায় আবার সেই ডাকে, খুব অসয্য লাগতে থাকে রামিনের, অসয্য হয়েই ঘর থেকে বের হয়, তাকে আজ জানতেই হবে কে তাকে ডাকে আর কেনো ওই খানের মাটি কাপে।
রুম থেকে বের হওয়ার পরই রামিনের মনে হয় তার আপি তাকে ওই খানে যেতে নিষেধ করেছে, কিন্তু রামিন কিছুতেই ঘরে ফিরে যেতে পারছে অদ্ভুদ এক মোহ তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে সে খানে।
সকালে ঘুম ভাংঙে রাহিয়ার আগে সে উঠে ফ্রেস হয়ে সকালের নাস্তা তৈরি করে মা, বাবা কে নাস্তার জন্ন্য ডাকে, তারপর রামিনকে ডাকতে গিয়ে দেখে রামিনের ঘরের দরজা খোলা, ঘরে রামিন নেই, অনেক ডাকা ডাকির পরও রামিনকে না পেয়ে ইকবাল আহম্মেদ পুলিশকে খবর দেয়, পুলিশ এসে বাড়ি তল্লাশি করে এবং তাদের কে কিছু প্রশ্ন করে, পুলিশ যখন চলে যেতে ঘর থেকে যখন বের হয় তখনি রামিনের লাশ চোখে পরে ওদের, লাশের অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো, ডান চোখ উপ্রে ফেলা হয়ছে, ডান হাত কেটে নেওয়া হয়েছে, দেখলেই বোঝা যায় খুব কষ্ট দিয়ে মারা হয়েছে।
রামিনের অকাল মৃত্যুতে সবাই গম্ভীর হয়েগেছে।
পুলিশ তদন্ত চালি যাচ্ছে কিন্তু কোনো কিনারা হচ্ছেনা, পুত্র শোকে রাহিয়ার মায়ের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে, রাহিয়ার অবস্থাও খারাপ কিছুতেই কোনো কিছুতে মন দিতে পারছেনা, হঠ্যাৎ রাতে ঘুম ভেংঙে গেলে সেই অপাইয়া ডাক শুনতে পায় সে।
পরদিন সকালে,
ইকবাল আহম্মেদ: রাহিয়া তোর মায়ের শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ ভাবছি দেশের বাহিরে নিয়ে যাব।
রাহিয়া: বাবা তা ঠিক আছে, কিন্তু বাবা এই বাড়িটাতে একটা সমস্যা আসে।
ইকবাল আহম্মেদ: তুই একজন ডাক্তার হয়ে এগুলো কেনো বিশ্বাষ করিস, আর কিইবা সমস্যা এই বাসায়?
রাহিয়া: বাবা জানিনা কি সমস্যা, কিন্তু দেখো পর পর দুটো মৃত্যু রামিন কে কি রকম অসয্য যন্ত্রণা দিয়ে মারলো, কেনো বাবা, আমরা তো কোনো হ্মতি করিনি কারো, তা হলে কেনো হচ্ছে আমাদের সাথে এগুলো,
তাই আমি ঠিক করেছি, এই বাড়ির মালিকের সাথে কথা বলবো, তাকে জোড় করবো সত্যি বলার জন্ন্য।
ইকবাল আহম্মেদ: হ্যা তুই ঠিক বলেছিস, আমিও যেতাম তোর সাথে কিন্তু তোর মাকে একা রেখে যাওয়া ঠিক হবেনা।
রাহিয়া: হুম্ম বাবা তুমি মার সাথে থাকো আমি যাচ্ছি।
ইকবাল আহম্মেদ: সাবধানে যাস।
বিদায় নিয়ে রাস্তায় বের হয় রাহিয়া, কিন্তু সে ভুলেও বুঝতে পারেনি, সে বের হবার পরেই রাহিয়ার মা তার বাবাকে খুন করে, এবং পরে নিজেই আত্মহত্যা করে, রাহিয়ার পুরো পরিবার আজ শেষ হয়ে গেলো নিমিষেই এই অভিশপ্ত বাড়িতে।
মোহাম্মদপুর ডুপ্লেক্ম বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে রাহিয়া, গন্তব্য সামিউল ইসলামের সাথে দেখা করা, শিড়ি বেয়ে উপরে আসে রাহিয়া,
সামিউল ইসলাম: আপনি কে, আপনাকে তো চিনলাম না।
রাহিয়া: আমি রাহিয়া, ডা. ইকবাল আহম্মেদের মেয়ে, যে আপনাদের পুরানো বাড়িটা কিনেছিলো।
সামিউল ইসলাম: ওহ আচ্ছা, বসুন।
তা আমার কাছে হঠ্যাৎ?
রাহিয়া: আপনার বাড়িতে কি সমস্যা, মানে কি এমন আছে যা আপনি আমাদের কাছে গোপন করেছেন।
সামিউল ইসলাম: আমার বাড়িটাতো ভালো, কোনো সমস্যা তো নেই।
রাহিয়া: মিথ্যে বলছেন আপনি, আপনার বাড়িতে উঠার পর থেকে দু দুটো মৃত্যু হয়েছে, তাও আবার অসাভাবিক ভাবে, আমার ছোটো ভাইটাকেএ ছাড়েনি, আমার মা অসুস্থ বিছানায় পরে আছে, শুধু ওই অভিশপ্ত বাড়ির জন্ন্য।
সামিউল ইসলাম: আসলে, আমি বুঝতে পারিনি, বাড়ি বিক্রি করার পরও এমন কিছু ঘটবে, আমাকে মাফ করবেন,
আসলে, আমার দাদু ছিলেন এক ঘেয়ে বদ মিজাজি, সে যা বলতো তাই করতো, এক সময় আমরা জানতে পারলাম উনি ব্লাক মেজিক টাইপ কিছু করেন, উনাকে আমরা কেউ থামাতে পারিনি, দাদু ওই বাড়িতেই থাকতো একা, উনি মারা যাওয়ার আগে নিজের কবর নিজেই তৈরি করে রাখেন যাতে মরার পরও তার শক্তি বজয় থাকে, কিন্তু সে মারা যাওয়া পর তাকে আমরা অন্ন্য জায়গায় দাফন করি, এর পর ওই বাড়িতে আমার ছোট চাচা থাকা শুরু করলেন, ছোট চাচার পুরো পরিবার ভয়ানক ভাবে মারা যায়, আমরা ভেবে ছিলাম, আমাদের বংশের উপর তার জেদ তাই, এমন করেছে অন্যত্র বিক্রি করলে হয়তো এমন হবেনা, কিন্তু আপনার পরিবারের সাথে যা হয়েছে তাতে আমি খুবই দুঃখিত।
রাহিয়া: এখন এর থেকে বাচার উপায় কি?
সামিউল ইসলাম: আমি নিজেও তা জানিনা, চলুন আপনার সাথে একটু আপনাদের বাসায় যাই, যদি কিছু করা যায়।
রাহিয়া: চলুন।
সন্ধে হয় এমন সময় বাসায় আসে সামিউল আর রাহিয়া,
রাহিয়া: কি বেপার বাসায় কোনো বাতি জ্বলছেনা কেনো?
সামিউল: চলুন ভেতরে গিয়ে দেখি।
ঘরের ভেতরে আসার পর, রাহিয়ার জ্ঞান হারায়, অনেক কষ্টে রাহিয়ার সেন্স ফিরায় সামিউল, রাহিয়ার সব থেকে বড় কষ্ট আজ, তার কিছুই নেই অভিশপ্ত কবর কেরে নিলো সব, সামিউল লাশ কবর দিয়ে রাহিয়ার কে নিয়ে বের হয়ে যায় অভিশপ্ত বাড়ি থেকে,
কে জানে হয়তো আবার কারো প্রাণ নিবে এই অভিশপ্ত কবর, কিন্তু তাও অজানা রয়ে গেলো, এই কবরের রহস্য।

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত