রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন সমীর বাবু। তিনি এই গ্রামের ছেলে। ছোটো থেকেই এই গ্রামেই মানুষ তিনি। রাত তখন ১১.০০ টা ১১.৩০। তার মস্ত বড়ো একটা বাগান আছে। যেখানে পেয়ারা,আম,কুল,খেজুর আরও নানান ফলের গাছ আছে। বন্ধুর বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন। আজ একসপ্তাহ পর বাড়ি ফিরছেন। তার বাড়ি থেকে একটু আগেই মাঠপাড়ে একটা পতিত জমি ছিলো, যেটা কিনে তিনি বাগান করেছেন। গল্পটা অনেক দিন আগেকার। তিনি বাড়ি ফিরছিলেন গ্রামের সেই চেনা পথের মধ্যে দিয়ে। এমন সময় তিনি নিজের বাগান টার কথা খুব করে চিন্তা করছিলেন।
অনেকদিন সে বাড়ির বাইরে ছিলো বাগান পরিচর্যা তার করার সুযোগ হয়ে উঠেনি। আজ এই রাতে বাগান দেখবার ইচ্ছে মনে জাগলো কেন সেটা তিনি ওই সময় বুঝতে পারছিলেন না।
উনি বাড়ি যাওয়ার পথে বাগানের রাস্তা-টার দিকে পা বাড়ালেন। আশেপাশে সব নিস্তব্ধ।
বাগানের মধ্যে পা রাখামাত্র, তরতাজা হাওয়া-তে তার মনঃপ্রাণ ভরে উঠলো।
বাগানের চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো উনি। কিন্তু উনার চোখ কপালে উঠলো সেই সময় যখন উনি দেখলেন খেজুর গাছের উপর একজন ঝুলে আছে, সে বোধহয় খেজুররস চুরি করতে এসেছিলো।
মনেমনে সমীর বাবু ঠিক করেই নিলেন – এ ব্যাটা পাক্কা চোর। তিনি দৌড় দিলেন ওই গাছের দিকে, গাছের নীচে গিয়ে তিনি গাছের উপরে তাকিয়ে বললেন – কে তুই। কি করছিস এখানে?
খেজুর গাছে যিনি ঝুলছিলেন তিনি কোনো উত্তর দিলেন না।
সমীর বাবু আবার জিজ্ঞেস করলেন – কে তুই, এতো রাতে আমার বাগানে খেজুর গাছের উপর কি করছিস তুই।
উপর থেকে কোনো উত্তর পেলেন না।
সমীর বাবু – তারমানে তুই কথাও বলবিনা, আর বাগানের মালিকের গাছ থেকেও নামবিনা তাইতো। দেখ তোর মজা দেখাচ্ছি। সমীর বাবুর ঘ্যাম জিনিস – টা একদম ভালো লাগেনা। তার সামনে তার করা প্রশ্নের-ই উত্তর দিলোনা ওই ঝুলন্ত লোক-টা
সমীর বাবু চেঁচিয়ে লোক ডাকলেন। দুইজন তার চিৎকার এ চলে দৌড়ে এলো। আসলে এটা গ্রামের এলাকা এখানে রাত ৮.০০ টার পর রাত ঘনিয়ে আসে এমনি তেই। তার উপর এই গল্প-টা অনেক বছর আগেকার কথা।
পাশে দুইজন কে পেয়ে সমর বাবুর বুকের জোর আরও বেড়ে গেলো। সমর বাবু সহ ওই দুইজন জোর গলায় চেঁচিয়ে বললেন – গাছ থেকে নাম, নেমে পড়। কিন্তু গাছে যিনি ঝুলছিলেন সে কিছুতেই নামতে ইচ্ছুক না।
তখন সমীর বাবু – ঠিক করলেন গাছ-টা জ্বালিয়ে দাও তোমরা। ও ঠিক নেমে যাবে। বলামাত্র কাজ, গাছের গোড়ার আশেপাশে কার কাগজ, রবাটের টায়ারের টুকরো এইসব জোগাড় করে জড়ো করলেন তারা সকলে কিন্তু গাছের উপরে থাকা ঝুলন্ত মানুষ-টার মধ্যে কোনো আক্ষেপ – ই নেই।
শেষে সমীর বাবু শেষবারের মতন জিজ্ঞেস করলেন – নীচে নামবি হ্যাঁ কি না।
গাছের উপর থেকে একটা কথা ভেসে এলো – তোরা যাবি না কি তোদের ঘাড় মটকাবো।
সমীর বাবু বললেন – তবে রে, এই বলে দিলেন গাছের গোড়ায় আগুন দিয়ে। নিমেষের মধ্যে গাছ-টা পুরে ছাই হয়ে গেলো।
কিন্তু আশেপাশে কোনো মানব দেহের অস্তিত্ব খুঁজে পেলেন না তারা কেউ। তাহলে ওই লোক-টা কে ছিলো যে এতক্ষণ এই খেজুর গাছে ঝুলছিলো। ওরা তো সবাই অবাক। কিছু দেখতে পেয়ে সমীর বাবু সহ আরও যে দুজন ছিলো তারা, বাড়ির দিকে এগোতে যাবে বলে যেই ঠিক করলো তখনি বাগানে একটা বো….ম করে আওয়াজ হলো।
যার আওয়াজে কেঁপে উঠেছিলো পুরো গ্রাম। গ্রামবাসীরা সকলে ঘর থেকে বেড়িয়ে আশেপাশের জায়গা গুলো ভালো করে দেখতে থাকে, না অজানা কিছু তাদের চোখে পড়লোনা। আসল রহস্য ভেদ হলো পরেরদিন সকালে,
বাগানের মধ্যে থেকে সমীর বাবু সহ আরও দুইজন কে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে।
কে যেন তাদের মাথা, বড়ো পাথরের টুকরো দিয়ে থেঁতলে দিয়েছে। সমীর বাবুর গলার নলি – টা বিচ্ছি ভাবে ছেঁড়া, হাতের অর্ধেক মাংস টুকরো টুকরো হয়ে বাইরে ঝুলছিলো।
জানিনা এটা কত-টা কোনো ভৌতিক। তবে ওই রাতে আপনি হলে একা একা ওই খেজুর গাছের নীচে যাওয়ার সাহস দেখাতেন।