আমি আগে ৯ -১০ টার মধ্যেই ঘুমায় পড়তাম, কিন্তু এখন কেন জানি ১২টার আমি ঘুমায়ই না! হয়তোবা এর কারণ টিভি দেখা! আমি ৮:৩০ পর্যন্ত টিভি দেখে পড়তে বসি তখম থেকে ১২ টা পর্যন্ত পড়ে নামাজ পড়ে ঘুমাই! তেমনি সেদিনও বই পড়েছিলাম। তখন সবাই ঘুমায় পড়েছে, আপুর জ্বর ছিলো তাই আপুও অনেক আগেই ঘুমায় পড়ছিল। সারা বাড়িতে শুধু আমিই জাগনা ছিলাম। আমার ভয় করে না একা জাগে থাকতে কিন্তু সেদিন কেন জানি গা টা ছমছম করছিল! মনের মধ্যে কেমন জানি একটা আতঙ্ক কাজ করছিল! মনে হচ্ছিল কেউ হয়তো আমার দিকে এক নজরে তাকায় আছে! আমাকে দেখছে, আমি কি করছি সব সে দেখছে! মনে হচ্ছিল সে আমার পিছনেই দাঁড়িয়ে আছে! আমি তখন একটা গল্পের বই পড়ছিলাম তাই ওতো বেশি কৌতুহলী হলাম না! কিন্তু অদ্ভুত লাগছিল!!
গল্প পড়া শেষ করার পর ভয়টা আরও বেড়ে গেল। নামাজ পড়বো তাই ওযু করতে ওয়াশরুম এ গেলাম।
বেসিনে হাত-মুখ ধুচ্ছি , খেয়াল করলাম বেসিনের আয়নায় আমার প্রতিফলনটিকে কেমন জানি অচেনা লাগছে! মনে হচ্ছে সেটা আমি না। আতঙ্কটা ধীরে ধীরে বেড়েই যাচ্ছে!
ওজু করে নামাজে দাঁড়ালাম। মনের মধ্যে এখনো সেই অদ্ভুত ভয়! এখনও মনে হচ্ছে, আমার পিছনে কেউ আছে, আমাকে দেখছে! সে জানে আমি সেটা বুঝতে পারছি, তাই সে ইচ্ছে করে আরও আমাকে আতঙ্কিত করছে!! নামাজে ছিলাম, মনে মনে বললাম “ভয় কি রিদা! আল্লাহ আছে, কিছু হবে না!” চেষ্টা করলাম ওইসব চিন্তা মাথা থেকে বের করতে।
নমাজ শেষ করলাম। তারপর ডেসিং টেবিলের সামনে যেয়ে চুল চিরুনি করছিলাম , এখনো মনে হচ্ছে আয়নায় যে আছে সে আমি না ! অন্য কেউ! কেমন ভাবে জানি তাকায় আছে!! ওসব চিন্তা মাথা থেকে বের করতে চাচ্ছিলাম কিন্তু বের হচ্ছিল না!!
তখন আমার খুব তৃষ্টা পাচ্ছিল, তাই রান্না ঘরে গেলাম পানি খেতে। রান্না ঘরে ঢুকতেই শরীরটা আমার হঠাৎ করে কেঁপে উঠল! কেন কেঁপে উঠল বুঝতে পারছিলাম না! গায়ের লোম একদম খাড়া হয়ে গেছে!! মনে হচ্ছে কাপড় পড়া কেউ আমার পিছনে দাড়িয়ে আছে! মনে হচ্ছিল একটা জরে চিল্লান দিয়ে আম্মুর ঘরে চলে যাই!! আমি ওমন কিছুই করলাম না! পানির গ্লাস নেওয়ার জন্য পা বাড়ালম! হঠাৎ মনে হলো কোনো ইদুর মনে হয় আমার পাশ কেটে গেল!! হালকা একটা চিৎকার দিয়ে উঠলাম!! আজব তো! ইদুর আসবে কোথা থেকে! আমাদের ফ্লাট চারতলায়! চারতলায় ইদুঁর আসবে কই থেকে!!! আমি বেশি জরে চিল্লাই নাই , তাই বাসার কারোরি ঘুম ভাঙ্গে নাই!! ঘুম ভাঙ্গলেই মনে হয় ভালো হইতো!!
! দৌড় দিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে রুমে আসতে চাচ্ছিলাম কিন্তু আমার পাগুলো মনে হচ্ছিল অবশ হয়ে গেয়িছে! হাঁটতেও পারছিলাম না, নাড়াতেও পারছিলাম না! এবার সত্যি সত্যি আমার খুব ভয় করছিল!!
হঠাৎ করে দেখলাম ডাইনিং রুমে অন্ধকারে কেউ দাঁড়ায় আছে! যেতে মন চাচ্ছিল না কিন্তু পাগুলো সেদিকেই যাচ্ছিল, কেমন একটা ঠান্ডা বাতাস বইছে বলে মনে হচ্ছিল! ঘরটাও কেমন ঠান্ডা অথচ জানালা- থাই সব বন্ধ!! মুখে কোনো কথা বলতে পারছিলাম আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে, অনেক কষ্টে বললাম “কে…কে ওখানে???” কোনো সাড়া এলো না! ভালো করে কাছে যেতেই দেখি কেউ নেই! খুব ভয় পেলাম! এখনই তো দেখলাম কেউ একজন দাড়ায় ছিল এখানে, হঠাৎ কই ভ্যানিশ হয়ে গেল?? চারপাশে ভালো ভাবে তাকাই! না কেউ নেই!! তাহলে কি আমার মনের ভুল? না আমি স্পষ্ট দেখছি এখানে কেউ একজন দাড়ায় ছিল!! কাছে আসতেই কই গেলো!!
ভাবতে ভাবতে নিজের রুমে আসছি এমন সময় পিছন থেকে কেউ যেনো ডাক দিল! থমকে দাঁড়ালাম! কে ডাক দিলো?? পিছনে ঘোরার সাহস পাচ্ছিলাম না তাও ঘুরলাম! না কেউ ই তো নাই!! কে ডাক দিলো?? আমার হার্টবির্ট একদম ফাস্ট হয়ে গিয়েছিল!! মনে হলে কোনো এক ছায়ামূর্তি পাশ কাটে গেল! আমার প্রচন্ড ভয় করছিল!!কেমন একটা উদ্ভট গন্ধও পাচ্ছি!!! একটা হালকা বাতাস বইতে থাকলো পিছন দিক থেকে!! কেউ তো এগিয়ে আসছে আমার দিকে! চোখ বন্ধ করে ফেললাম! পিছন থেকে কেউ আমার কাঁধে হাত দিছে! আমি চমকে উঠলাম!! একটা চোখ খুলে টেরা চোখে তাকায় দেখলাম একটা ভয়ংকর হাত আমার কাঁধে!! পিছনে ঘুরতেই দেখি… আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম!!শুয়া থেকে উঠে বসছি!! চোখ খুলে গেল আমার!! দেখি আমি বিছানায়! ঘামে গেছি পুরা! হাঁপাচ্ছি!! পাশে আপু ঘুমাচ্ছিল ! আমার চিৎকার শুনে ঘুম ভাঙ্গে গেছে বলল “কি হইছে?? চিৎকার দিলি কেন??” তারমনে ওটা স্বপ্ন ছিল!! আমি স্বপ্ন দেখছিলাম!! আমি আপুকে বললামঃ ” কিছু না, ভয়ের স্বপ্ন দেখছিলাম! তুমি ঘুমাও!! ” আপু অসুস্থ তাই আপু আর কিছু বললো না। অন্য পাশ হয়ে ঘুমায় গেলো। আমিও আয়তুল কুরসি পড়ে ঘুমায় যাই। সকালে উঠে বুঝতে পারি ওইসব আসলেই স্বপ্ন ছিল!
________________সমাপ্ত_________________
…..রোদেলা রিদা…….