একটি ভূতের গ্রামের গল্প

এক দেশে ছিল একটি বন। বনে ছিল অসংখ্য গাছ। গাছে থাকত অসংখ্য প্রাণী ও পাখ-পাখালি। বনের ঠিক মাঝখানে ছিল একটা পোড়োবাড়ি। কোন পশুপাখি ওই পোড়োবাড়ির ধারে কাছে ঘেঁষত না। কারণ ওই বাড়িতে অনেকগুলো ভূত বসবাস করত ( মানুষের আদলে )। তাদের মধ্যে কেউ ছিল অফিস-আদালতের কর্মজীবী, কেউ ছিল জেলে। ভূতেরা মাছ খেতে ভালোবাসে। তাই জেলে ছিল তাদের প্রধান পেশা। ভূতের সকল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পোড়োবাড়ির আশেপাশে বিভিন্ন দালান ও কিছু ছোট ছোট বসতবাড়ি রয়েছে। কয়েকটি পুকুর রয়েছে মাছ চাষের জন্য। সব রকমের ভূতের মধ্যে অনেক সম্প্রীতি ছিল। দেখলে মনে হবে, অজস্র গাছের মধ্যে যেন একটি গ্রাম। ভূতেদের আর কাজ নেই, সারাদিন কাজ করে, খায়-দায়, ঘুমায় আর পশুপাখিদের ভয় দেখায়। কিন্তু যে করেই হোক, মানুষেরা এই বন এবং এই গ্রামের সন্ধান পেয়ে যায়। সেই এলাকাটি ছিল ভূত বিরোধী। তাই তারা এই গ্রাম ধ্বংসের পরিকল্পনা করে। সেই উদ্দেশ্যে তারা বনে যায়। মানুষদের দেখে ভূত-সরদার তাদের হাতে-পায়ে এসে ধরে। কাকুতি-মিনতি করে বলে, ‘‘আমাদের এই নির্মল, সুন্দর, সবুজ গ্রামটি ধ্বংস করবেন না। গ্রামটি ধ্বংস করলে আমরা আমাদের এই সুন্দর, শৃঙ্খল জীবনচক্র সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারব না। তাছাড়া আমরা থাকবো কোথায়?’’ মানুষেরা তাদের কোন কথায় কান দিল না। তারপর অন্যান্য ভূতেরা সমস্বরে প্রতিবাদ করে উঠল, ‘‘আপনারা সংখ্যায় কম, আমরা সংখ্যায় অনেক বেশি। আর বুদ্ধি আমাদেরও আছে। আপনারা কেন এত ভূত বিরোধী? আমরা তো আপনাদের কোন ক্ষতি করিনি। আপনারা অন্যায় ভাবে গ্রামটি ধ্বংস করতে এসেছেন। আমরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। যুদ্ধ না চাইলে জলদি ফিরে যান। না হলে আমরা আপনাদের ঘাড় মটকে খাব।’’ শুনে মানুষদের মধ্যে থেকে একজন বলল, ‘‘আমাদের এলাকার লোকেরা ভূতেদের ভয় পায়।’’ ভূত সরদার বললেন, ‘‘আমরা তো আপনাদের ভয় দেখায়নি, আপনারা তাহলে এই গ্রামের সন্ধান কিভাবে পেলেন আর ধ্বংসই বা কেন করতে আসলেন?’’ ওই লোকটিই উত্তর দিল, ‘‘আসলে আমাদেরই শহরের একটি পরিবার এই বনে ঘুরতে এসে এই গ্রামের সন্ধান পায়। তারা ভীত হয়ে ফিরে এসে এই বন সম্পর্কে আমাদেরকে জানায়। মোড়ল মশাই তখন আমাদের কয়েকজনকে এই গ্রাম ধ্বংসের জন্য পাঠান। তবে যাই হোক, আমরা এই গ্রাম ধ্বংস করব‌ই।’’ ভূতেরা বলল, ‘‘যুদ্ধ হয় সমানে সমানে। ভুত আর মানুষে তো কখনো যুদ্ধ হয় না। আমরা তো আর মানুষ হতে পারব না, তাই আগে আপনাদের ঘাড় মটকে জলযোগ করব। আমাদের গায়েও শক্তি হবে আর আপনারাও ভূত হয়ে যাবেন। তারপর হবে যুদ্ধ। আর এই প্রস্তাব মানতে না চাইলে যুদ্ধ বাতিল। অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চলে যান।’’ অগত্যা, মানুষেরা সবকিছু নিয়ে চলে গেল। কারণ আর যাই হোক, ভূত তো হওয়া যাবে না। ভূত হলে তো নিজেদের এলাকাতেই তারা আর ফিরতে পারবে না। এভাবেই বুদ্ধির জোরে ভূতেরা বেঁচে গেল এবং তাদের গ্রামে তাদের জীবন চক্র সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারলো। অতএব, বুদ্ধি থাকলে অনেক বিপদ থেকে বাঁচা যায়।

 

 

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত